বিটকয়েনের দাম কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্রিপ্টোকারেন্সির অন্যান্য মুদ্রাতেও এর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। এরই মধ্যে দেউলিয়া হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ও আমেরিকার ওয়ালস্ট্রিটের তালিকাভুক্ত ক্রিপ্টোমুদ্রার কেনাবেচার অনলাইন প্ল্যাটফর্ম কয়েনবেজ।
বিটকয়েন, ইথারিয়ামের মতো দাম হারিয়েছে অন্যান্য অল্টা কয়েনেরও। তবে সবচেয়ে বেশি দাম হারিয়েছে ক্রিপ্টোমুদ্রা টেরা (লুনা)। প্রতিশ্রুত মুদ্রা হিসেবে পরিচিতি পাওয়া লুনা ৯৯ শতাংশ দাম হারিয়েছে মুহূর্তেই। গত মাসে ক্রিপ্টোকারেন্সির তালিকায় শীর্ষ দশে থাকা ১২০ ডলার দামের লুনা গত বুধবারে ১ ডলারের নিচে নেমে আসে।
ভবিষ্যতে দাম বাড়বে এই আশায় যারা লুনা আঁকড়ে ধরেছিলেন, তারা ব্যাপক মাত্রায় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় লুনা হোল্ডারদের হতাশা ব্যক্ত করতে দেখা যায়। এমন পরিস্থিতিতে অনলাইনে ছড়িয়ে পড়েছে যে লুনার দাম কমায় ৮ জন আত্মহত্যা করেছেন।
পাকিস্তানভিত্তিক মিডিয়া আউটলেট পাকিস্তান রিপাবলিকের এক টুইটবার্তায় এমন দাবির একটি সংবাদ মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। যদিও পরবর্তী সময়ে পাকিস্তান রিপাবলিকের টুইটার হ্যান্ডেল থেকে পোস্টটি সরিয়ে ফেলা হয়।
এ ছাড়া ক্রিপ্টোভিত্তিক টুইটার হ্যান্ডেল ব্লকচেইন বাকেও ৮ জনের আত্মহত্যার খবর প্রচার করা হয়। সেখানে অনেককেই হতাশাজনক মন্তব্য করতে দেখা যায়। তাদের এই পোস্টটি রিটুইট হয়েছে ৮৪১ বার। এ ছাড়া ফেসবুকের অসংখ্য পেজ ও গ্রুপে এই খবরটি শেয়ার করা হয়।
Apparently there has been 8 confirmed suicide due to the $Luna crash.
— Blockchain BUK (@BlockchainBuk) May 11, 2022
Stay strong and reach out to those struggling right now
Source: @Cryptocraziac
এই তথ্য নেটিজেনদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার অন্যতম প্রধান কারণ হলো বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে লুনা হোল্ডারদের সর্বস্ব হারানোর খবর আসতে থাকে। লুনার দাম কমায় অনেকে নিজের সর্বস্ব হারিয়েছেন বলে প্রতিবেদন করেছে ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউকে।
তবে দ্য রিপোটার্স টাইমস বলছে, লুনার দাম কমায় সর্বস্ব হারানোর খবর পাওয়া গেলেও আত্মহত্যার কোনো খবর পাওয়া যায়নি। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, এখন পর্যন্ত কোনো স্বীকৃত সংবাদমাধ্যমে আত্মহত্যার খবর পাওয়া যায়নি।
তবে আত্মহত্যার ঘটনা না ঘটলেও অনেকেই মুষড়ে পড়েছেন লুনার এই দাম কমায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সহসা লুনার দাম বাড়ার সম্ভাবনা নেই। ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান প্রভাব ফেলেছে ক্রিপ্টোমুদ্রাতেও। ভার্চুয়াল সম্পদে আস্থা হারাচ্ছে মানুষ, এর বদলে দৃশ্যমান সম্পদ কিনতে চাইছে সবাই। ফলে দাম বাড়ছে সোনা ও ডলারের মতো মুদ্রার।
আরও পড়ুন:বিটকয়েনের দাম কমছেই। কয়েন মার্কেট ক্যাপের তথ্য মতে, এরই মধ্যে এর দাম এসে ঠেকেছে ৩৩ হাজার ৬৩১ ডলারে। সেই হিসাবে গত নভেম্বরের তুলনায় সবচেয়ে বড় ক্রিপ্টোকারেন্সির দাম কমল ৫০ শতাংশ। এ পর্যন্ত বিটকয়েনের সর্বোচ্চ দাম ৬৮ হাজার ৯৯০ ডলার হয়েছিল।
বিটকয়েনের পর ইথারিয়ামকেই দ্বিতীয় বড় ক্রিপ্টোকারেন্সি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। গত সপ্তাহের তুলনায় এটিও দাম হারিয়েছে ১০ শতাংশ। কয়েন মার্কেট ক্যাপের তথ্য মতে, ইথারিয়ামের বর্তমান দাম ২ হাজার ৪৬১ ডলার।
২০২২ সালের শুরু থেকেই ক্রিপ্টোকারেন্সিতে কোনো চাঙ্গা ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। ইউক্রেনে চলমান রুশ সামরিক অভিযান দরপতনের গতি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
ভক্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেন আশঙ্কা প্রকাশ করছে, রাশিয়া ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে অবরোধ এড়ানোর চেষ্টা করতে পারে। সে ক্ষেত্রে ক্রিপ্টোকারেন্সির দাম আবারও বাড়তে পারে।
এদিকে ইলন মাস্কের সমর্থন পাওয়া ডজকয়েনের দামও কমছে। যদিও ইলন মাস্ক টুইটার কিনে ফেলার পর ডজকয়েনের দাম কিছুটা বেড়েছিল। কিন্তু অন্যান্য কয়েনের মতো আবারও দাম হারাচ্ছে ডজকয়েন। বর্তমানে কয়েন মার্কেট ক্যাপের তথ্য মতে, এর দাম রয়েছে ০.১২৮ সেন্ট।
গত এক সপ্তাহে সোলানার দাম কমেছে ১৬.৪৭ শতাংশ। কয়েন মার্কেট ক্যাপের তথ্য মতে,সোলানার দাম ৭৫.৮৬ ডলার। গত বছর এর দাম ২০০ ডলার ছাড়িয়ে যায়। ইনভেস্টিং.কমের তালিকায় সোলানার অবস্থান এখন ৭ নম্বরে।
এ ছাড়া গত বছরের ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প নিজস্ব এনএফটির ঘোষণা দিলে তিনি সোলানা প্ল্যাটফর্মে তার প্রথম এনএফটি নিলামে তোলেন। সে সময় প্রযুক্তি জগতে এটিকে নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেশ কয়েক বছর ধরে ক্রিপ্টোকারেন্সিতে ব্যক্তিগত বিনিয়োগের আধিপত্য থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে বাজারে হেজ ফান্ডস ও মানি ম্যানেজারসের মতো পেশাদার বিনিয়োগকারীর আবির্ভাব ঘটে।
এল সালভাদর ও সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক এরই মধ্যে বিটকয়েনকে রাষ্ট্রীয় মুদ্রা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। সর্বশেষ গুচির মতো বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠান ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিলেও দামে এর কোনো প্রভাব পড়েনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে মানুষের এনএফটি, ক্রিপ্টোর মতো ডিজিটাল সম্পদে আগ্রহ কমছে এবং বাড়ি, সোনার মতো দৃশ্যমান সম্পদে আগ্রহ বাড়ছে।
এর আগে ক্রিপ্টো ফার্ম নেক্সোর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এন্টনি ক্রেনচেভ ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, এক বছরের মধ্যে বিটকয়েনের দাম ১ লাখ ডলার স্পর্শ করবে।
এর আগে ২০২০-এর জানুয়ারিতেও ক্রেনচেভ ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে বছর শেষে বিটকয়েনের দাম ৫০ হাজার ডলার ছাড়িয়ে যাবে। যদিও সে সময় তার ভবিষ্যদ্বাণী হয়নি। ২০২০-এর শেষে বিটকয়েনের সর্বোচ্চ দাম দাঁড়ায় ২৯ হাজার ডলার।
কিন্তু তার দুই মাস পরই ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিটকয়েনের দাম ৫০ হাজার ডলার ছাড়িয়ে যায়।
তবে বিটফিনিক্সের প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা পাওলো আরদোইনো একমত নন ক্রেনচেভের সঙ্গে।
আরদোইনো বলেছিলেন, ‘আমরা ক্রিপ্টোর ভলিউম কমে যেতে দেখছি, এমনকি কয়েক সপ্তাহ ধরে বিটকয়েনের ভলিউমও পড়তির দিকে। বিটকয়েনের দাম ৪০ হাজার ডলারের নিচে নেমে যেতে পারে ও বছর শেষে বৃদ্ধি পেয়ে ৫০ হাজার ডলার হতে পারে।’
আরও পড়ুন:বিশ্বব্যাপী বিটকয়েনের মতো ক্রিপ্টোকারেন্সির গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছেই। এরই মধ্যে একাধিক দেশ রাষ্ট্রীয় মুদ্রা হিসেবে বিটকয়েনকে স্মীকৃতি দিয়েছে। এ ছাড়াও অনেক প্রতিষ্ঠানই বিটকয়েনের মতো ক্রিপ্টো মুদ্রাকে গ্রহণ করে নিচ্ছে।
এবার এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইতালির বিলাসবহুল ব্র্যান্ড গুচি বলেছে যে তারা এই চলতি মাস থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কিছু আউটলেটে ক্রিপ্টোকারেন্সিতে পণ্যের মূল্য প্রদানের সুবিধা চালু করবে।
উচ্চবিত্ত গ্রাহকদের কথা মাথায় রেখেই বিলাসবহুল পণ্য ও হ্যান্ডব্যাগ বাজারে আনার জন্য পরিচিত গুচি জানিয়েছে, প্রতিষ্ঠানটি বিটকয়েন, ইথারিয়াম, ডজকয়েন, শিবা ইনু, লাইটকয়েন ছাড়াও আরও পাঁচটি স্টাবল কয়েনে অর্থ প্রদান ও গ্রহণ শুরু করতে যাচ্ছে।
গ্রাহকরা তাদের ই-মেইলে পাঠানো লিঙ্কের মাধ্যমে দোকানে অর্থ পরিশোধ করতে পারবে। লিঙ্কটিতে একটি কিউআর কোড থাকবে, যার মাধ্যমে গ্রাহক তার ক্রিপ্টোওয়ালেট থেকে তার কেনা পণ্যের মূল্য পরিশোধ করতে পারবে।
এ ক্ষেত্রে পণ্য বিক্রেতা চাইলে ক্রিপ্টোকারেন্সি আকারেই পণ্যের মূল্য ধরে রাখতে পারবে কিংবা তা প্রচলিত মুদ্রায় পরিণত করতে পারবে।
গুচির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে এই সেবা নিউ ইয়র্কের উস্টার স্ট্রিটে, মিয়ামি ডিজাইন ডিস্ট্রিক্ট, লস অ্যাঞ্জেলসের রোডিও ড্রাইভে, লাস ভেগাসের ক্রিস্টালের শোরুমে ও আটলান্টার ফিপস প্লাজার আউটলেটগুলোতে চালু করা হবে।
প্রতিষ্ঠানটির প্রেসিডেন্ট ও সিইও মার্কো বিজ্জারি এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘গুচি সবসময় নতুন প্রযুক্তি গ্রহণ করতে চায়, যাতে প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকদের উন্নত অভিজ্ঞতা দিয়ে যেতে পারে।’
ফ্রান্সের কেরিং-এর মালিকানাধীন গুচি হলো ক্রিপ্টো গ্রহণ করা সর্বশেষ বড় মাপের ব্র্যান্ড।
আরও পড়ুন:বিশ্বের দ্বিতীয় দেশ হিসেবে বিটকয়েনকে রাষ্ট্রীয় মুদ্রা হিসেবে অনুমোদন দিয়েছে আফ্রিকার দেশ সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক। দেশটির আইনপ্রণেতারা সর্বসম্মতভাবে ভোট দিয়ে বিটকয়েনের আইনি স্বীকৃতি দিয়েছেন।
সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র দেশ, কিন্তু তা হীরা, সোনা ও ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ। কয়েক দশক ধরে দেশটিতে সংঘর্ষ চলছে। যেহেতু বিটকয়েন একটি ক্রিপ্টোকারেন্সি এবং এর ব্যবহার অনলাইননির্ভর, কিন্তু সংঘর্ষপ্রবণ ও দারিদ্র্যপীড়িত হওয়ায় দেশটিতে টেকসই ইন্টারনেট অবকাঠামো গড়ে ওঠেনি।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এমন অবস্থায় বিটকয়েনকে রাষ্ট্রীয় মুদ্রা করার বিষয়ে রাজধানী বাঙ্গুইতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
অর্থনীতিবিদ ইয়ান ডাওরো বিবিসি আফ্রিকাকে বলেন, ‘এ সিদ্ধান্ত জীবনকে সহজ করে তুলবে কারণ স্মার্টফোনের মাধ্যমে লেনদেন করা যাবে এবং বিটকয়েনকে অন্য কোনো মুদ্রায় রূপান্তর করা সহজ।
‘ব্যবসায়ীদের আর ফ্রাঙ্কের স্যুটকেস নিয়ে ঘুরে বেড়াতে হবে না যা অন্য দেশে কেনাকাটা করতে ডলার বা অন্য কোনো মুদ্রায় রূপান্তর করতে হবে।’
কম্পিউটার বিজ্ঞানী সিডনি টিকায়া একমত নন ইয়ান ডাওরোর সঙ্গে। তিনি মনে করেন ক্রিপ্টোকারেন্সি গ্রহণ করা ‘অপরিণত’ ও ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’।
এর আগে ক্রিপ্টোকারেন্সির ১২ বছরের ইতিহাসে প্রথম কোনো দেশ হিসেবে বিটকয়েনকে সরকারি মুদ্রা ঘোষণা করেছিল মধ্য আমেরিকার দেশ এল সালভাদর।
বিটকয়েন কী
বিটকয়েন হলো এক ধরনের অনলাইন মুদ্রা। ব্লকচেইন প্রযুক্তিতে তৈরি হয়। ২০০৯ সালে এটি চালু করেন সাতোশি নাকামোতো (ছদ্মনাম)। তবে অস্ট্রেলীয় নাগরিক ক্রেগ রাইটসও নিজেকে বিটকয়েনের উদ্ভাবক বলে দাবি করেন।
বলা হচ্ছে, এই মুদ্রার অস্তিত্ব টের পাওয়া যায় না। একজনের ব্যক্তিগত ওয়ালেট থেকে আরেকজনের ওয়ালেটে লেনদেন হয়। এই ওয়ালেট হলো ব্যক্তিগত ডাটাবেজ, যা কম্পিউটার, স্মার্টফোন বা ক্লাউড যাতে তথ্য সঞ্চিত থাকে। বিটকয়েন ব্যবস্থা এতটাই গোপনীয় যে ব্যবহারকারীরাও নিজেদের পরিচয় লুকিয়ে রাখতে পারেন। এ কারণে যারা তথ্য গোপন রাখতে চান, তাদের মধ্যে বিটকয়েন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
আরও পড়ুন:মিমকয়েন হিসেবে আবির্ভাব হলেও এরই মধ্যে ক্রিপ্টোকারেন্সিতে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা করে নিয়েছে ডজকয়েন। ইনভেস্টিং-এর তথ্যমতে বর্তমানে ক্রিপ্টোকারেন্সির তালিকায় এর অবস্থান ১১তম।
ডজকয়েনের পেছনে রয়েছেন বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ক, যিনি নিজেকে ডজফাদার হিসেবে দাবি করেন। এ ছাড়া ইথারিয়ামের প্রতিষ্ঠাতা ভিটালিক বুটেরিন লেক্স ফ্রিডম্যানের পডকাস্টে ডজকয়েনের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশার কথা শুনিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, হয়তো ইথারিয়ামের থেকেও ডজকয়েনের ভবিষ্যৎ ভালো।
এবার নিউ ইয়র্ক পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের স্বনামধন্য আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠান রবিনহুডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ভ্লাদ তেনেভ বলেছেন, ডজকয়েনের পক্ষে ‘ইন্টারনেটের ভবিষ্যৎ মুদ্রা’ হয়ে ওঠা সম্ভব, যদি ডেভেলপাররা এর কার্যকারিতা বাড়ানোর বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়।
রবিনহুডে খুচরা বিনিয়োগকারীদের জন্য ডজকয়েন বেচাকেনার সুযোগ চালু করার পরই এক টুইটার পোস্টে তিনি ডজকয়েন নিয়ে কথা বলেছেন।
তিনি বলেন, ডজকয়েনের প্রধান সুবিধা হলো এর লেনদেনের ফি প্রথাগত ক্রেডিট কার্ডের তুলনায় অনেক কম। কিন্তু এর সমস্যাটি হলো, ডজকয়েনের ব্লকটাইম কম। সেকেন্ডে মাত্র ৪০টি লেনদেন সম্পন্ন করতে পারে, অথচ ভিসা নেটওয়ার্ক তাত্ত্বিকভাবে ৬৫ হাজার টিপিএস পরিচালনা করতে পারে।
তবে এর অত্যধিক সাপ্লাইয়ের কারণে এর মুদ্রাস্ফীতি অত্যন্ত বেশি। যদিও ডলারের সঙ্গে তুলনা করলে এর সংখ্যা অনেক কম।
কয়েন মার্কেট ক্যাপের হিসাবে ডজকয়েনের বর্তমান দাম ০.১৩ ডলার। মার্কেট ক্যাপিং ১৮.২০ বিলিয়ন ডলার। এর আগে একবার ডজকয়েনের দাম ০.৭০ ডলার ছাড়িয়ে যায়। সে সময় কয়েন মার্কেট ক্যাপের তালিকায় বিটকয়েন, ইথারিয়ামের পর ডজকয়েন জায়গা করে নেয়।
ইলন মাস্ক সম্প্রতি ৪৩ বিলিয়ন ডলারে টুইটার কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তিনিও মনে করেন, সামাজিকমাধ্যমটির উচিত ডজকয়েনকে নিজের প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে একীভূত করে নেয়া।
আরও পড়ুন:অনলাইন জগতে চলছে ক্রিপ্টোকারেন্সি ও এনএফটির জোয়ার। অনেকেই এখান থেকে লাভ করছেন, আবার অনেকেই না বুঝেই খোয়াচ্ছেন সর্বস্ব। সংগ্রহের উদ্দেশে নয়, যারা ব্যাবসায়িক কারণে এনএফটি কিনছেন, তাদের অনেকেই বেচার ক্ষেত্রে কেনা মূল্যের দামটিও পাচ্ছেন না।
ঠিক এমনই পরিস্থিতিতে পড়েছেন ক্রিপ্টো উদ্যোক্তা সিনা এস্তাভি।
ইরানি বংশোদ্ভূত সিনা এস্তাভি বৈশ্বিকভাবে আলোচনায় আসেন গত বছরের মার্চে, যখন তিনি টুইটার প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক ডরসির করা প্রথম টুইটের এনএফটি ২.৯ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ২৫ কোটি টাকা) ডলার দিয়ে কেনেন। সে সময় গুটিকয়েক ব্যয়বহুল এনএফটির মধ্যে ডরসির টুইটও ছিল।
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এবার পুনরায় ডরসির টুইট বিক্রির চেষ্টা করতে গিয়ে দেখেন এর দাম উঠেছে মাত্র ৬ হাজার ৮০০ ডলার।
ইস্তাভি জনপ্রিয় এনএফটি মার্কেটপ্লেস ওপেনসিতে বিক্রির জন্য রেখেছিলেন। প্রাথমিকভাবে তিনি ৪৮ মিলিয়ন ডলার প্রত্যাশা করেছিলেন।
কিন্তু দেখা গেছে, প্রথম সপ্তাহে এর দাম হাজার ডলারেও পৌঁছায়নি এমনকি সর্বোচ্চ দাম উঠে মাত্র ৬ হাজার ৮০০ ডলার।
তবে স্তাভি রয়টার্সকে বলেছেন, তিনি নিশ্চিত নন। এই এনএফটি তিনি বেচবেন কি না।
যদিও ৬ এপ্রিল একটি টুইটে এনএফটি বেচার ঘোষণা দেয়ার সময় তিনি বলেছিলেন, টুইটার এনএফটির দামের অর্ধেক তিনি দাতব্য প্রতিষ্ঠানে দেবেন। আশা করেছিলেন, এই সংখ্যাটা হবে ২৫ মিলিয়ন ডলার। অথচ এর দাম ৭ হাজার ডলারও ওঠেনি।
এনএফটি কী?
এনএফটির পূর্ণরূপ ‘নন ফাঞ্জিবল টোকেন’। ব্লকচেইন প্রযুক্তির মাধ্যমে ইমিউটেবল লেজারে যুক্ত হওয়ায় এনএফটি যেকোনো ডিজিটাল অ্যাসেটের ওপর একজন ব্যক্তির নিরঙ্কুশ মালিকানা দেয়।
ইমিউটেবল লেজার বলতে বোঝায় অপরিবর্তনীয় লেজার। এতে কোনো ধরনের পরিবর্তন ঘটানো প্রায় অসম্ভব। এই পদ্ধতিতে ডিজিটাল আর্টকে কপি করা অসম্ভব হয়ে যায়। আপনি অবশ্যই কোনো কিছু নকল করতে পারেন, তবে সেটি আর যাই হোক, পুরোপুরি আগেরটির মতো হবে না।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির দ্য লাস্ট সাপারের হুবহু নকল একটি ছবি কেনা যেতে পারে। তবে তা আর যা-ই হোক, লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির আঁকা মূল ছবিটি হবে না। সত্যিকার দ্য লাস্ট সাপারের দামও নকলের সমান হবে না।
ঠিক তেমনি যখন একটি ডিজিটাল আর্টকে এনএফটি করা হয়, তখন সেটি একটি টোকেনে কনভার্ট হয়ে যায়। এরপর সেই ডিজিটাল আর্টে যদি এক মেগাপিক্সেলও পরিবর্তন করা হয়ে থাকে, সেটির টোকেন বদলে যাবে। কখনোই তা আগেরটির সঙ্গে মিলবে না।
এনএফটি হচ্ছে একটি দলিলের মতো। এটি ডিজিটাল দুনিয়ার যেকোনো কনটেন্টের ওপর ব্যক্তির মালিকানা প্রতিষ্ঠিত করে। ভিঞ্চির আঁকা ছবি নিয়ে কেউ জালিয়াতি করতে পারে, কিন্তু এনএফটি নিয়ে জালিয়াতি অসম্ভব।
এককথায় এনএফটি হলো এমন একটি সম্পদ, যা ডিজিটাল দুনিয়ায় একটিই আছে। এটি অন্যান্য সম্পদের মতোই কেনাবেচা করা সম্ভব।
অর্থের অভাবে শেষ করতে পারেননি শিক্ষাজীবন। মাসিক ২০০ ডলারে কাজ করেছেন রেস্টুরেন্টের ওয়েটার হিসেবে। আর্থিক সচ্ছলতার জন্য একসময় চালিয়েছেন উবার। সেই ব্যক্তিই আজ ক্রিপ্টো গেম খেলে কোটিপতি। শুধু তা-ই নয়, অন্যদেরও শেখাচ্ছেন এই গেম। তিনি অনলাইনে কোকো ক্রিপ্টো নামে পরিচিত।
মহামারির সময় অন্য অনেকের মতোই গৃহবন্দি জীবন কাটাতে হচ্ছিল ফিলিপাইনের কোকোকে। উবারচালক হিসেবে তার আয়-রোজগারও বন্ধ। এমন সময় ক্রিপ্টো গেম ‘এক্সি ইনফিনিটির’ ওপর লেখা আর্টিক্যালে তার চোখ পড়ে। সেই আর্টিক্যাল পড়ে উৎসাহিত হয়েই তিনি গেমটি ডাউনলোড করেন ও ক্রিপ্টো গেমের মতো নন-ফাঞ্জিবল টোকেন গেম নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন।
এরপরে ‘কোকো ক্রিপ্টো’ শিখতে থাকেন, কিভাবে তার এক্সি চরিত্রগুলোর র্যাঙ্ক বাড়ানো ও নতুন এক্সি কিভাবে ব্রিড করতে হয়। এরপরে ব্রিড করা নতুন এক্সিগুলো তিনি অন্য অনলাইন গেমারদের কাছে ৫০ থেকে ১০০ ডলারে বিক্রি শুরু করেন।
বর্তমানে তার গেমিং কমিউনিটির সদস্য সংখ্যা ১৫ হাজার। এই গেমারদের জন্য তিনি এখন অনুপ্রেরণা। শুধু তা-ই নয়, ইউটিউবেও তার এক্সি ইনফিনিটি নিয়ে চ্যানেল রয়েছে, যেখানে তার ফলোয়ার সংখ্যা ১ লাখ ৬৭ হাজার।
বিখ্যাত ভিডিও কনটেন্ট ক্রিয়েটর নাসের হুসেনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, শুধু এই গেম খেলেই তিনি তার স্বপ্নের বাড়ি কিনতে পেরেছেন, তার বাবা-মাকে অবসর জীবন দিতে পেরেছেন।
নাসের হুসেনের আহ্বানে তার গড়া নাস একাডেমিতেও এনএফটি গেম নিয়ে মাস্টার ক্লাস নিচ্ছেন। যেখানে তিনি এনএফটি গেমে তার অভিজ্ঞতা, পরিকল্পনা ও পরামর্শ শেয়ার করছেন।
ক্রিপ্টো গেমে আর্থিক ঝুঁকি
তবে ক্রিপ্টো গেমগুলোতে আর্থিক ঝুঁকিও তৈরি হচ্ছে। ‘কোকো ক্রিপ্টো’ যেই ‘এক্সি ইনফিনিটি’ খেলে কোটিপতি হয়েছেন। সেই গেমের নিজস্ব ক্রিপ্টো ওয়ালেট রোনিন নেটওয়ার্ক থেকে হ্যাকিংয়ের ঘটনায় গেমারদের প্রায় ৬০০ মিলিয়ন ডলার চুরি হয়েছে।
ভিয়েতনামভিত্তিক প্রতিষ্ঠান স্কাই ম্যাভিসের রোনিন নেটওয়ার্ক বলছে, তারা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ফরেনসিক ক্রিপ্টোগ্রাফার ও বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে কাজ করছে, যাতে চুরি যাওয়া অর্থ ফেরত আনা যায়।
এরই মধ্যে নেতিবাচক মন্তব্যের কারণে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক্সি ইনফিনিটির প্ল্যাটফর্মে মন্তব্য করার অপশন বন্ধ করে দিয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি।
এক্সি ইনফিনিটি খেলেন এমন একজন ব্যক্তি ড্যান, যিনি এরই মধ্যে তার অর্থ হারিয়েছেন রোনিন ওয়ালেট থেকে। তিনি বলেন, ‘আমি রোনিনের কাস্টমার কেয়ারে যোগাযোগ করিনি। কারণ আমি জানি, কোনো লাভ হবে না।
‘আমি শুধু আশা করতে পারি, তারা সবকিছু ঠিক করবে ও আমি আমার ইথারিয়াম (ক্রিপ্টোকারেন্সি) ফেরত পাব।’
রোনিন নেটওয়ার্ক এখনও জানায়নি গ্রাহকের অর্থের আসলে কী হয়েছে এবং তারা কখন ক্রিপ্টোকারেন্সি ফেরত পাবে।
এক্সি ইনফিনিটি কী
এক্সি ইনফিনিটি মূলত ব্লকচেইন প্রযুক্তিনির্ভর একটি অনলাইন গেম। যেখানে একজন খেলোয়াড় বেশ কয়েকটি উপায়ে টোকেন অর্জন করতে পারেন। তবে এই গেম খেলার শুরুতে একজন গেমারকে এনএফটি পেট (কারেক্টার) কিনতে হয়। এগুলোকে এক্সি বলা হয়। এনএফটি হলো নন-ফাঞ্জিবল টোকেন। অর্থাৎ এর প্রতিটি স্বতন্ত্র। গেম খেলে প্রতিপক্ষকে হারিয়ে কিংবা এক্সি কেনাবেচা ও ব্রিডিং করেও গেমাররা এখানে এসএলপি টোকেন জোগাড় করে, যা পরে চাইলে একজন গেমার ক্রিপ্টোকারেন্সি ইথারিয়ামে বদলে নিতে পারে। এক্সি ইনফিনিটির নিজস্ব অনলাইন ওয়ালেটই রোনিন ওয়ালেট।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য