পাথর ছোড়া প্রতিরোধে ট্রেনের জানালায় বসবে নেট, এমন খবর ছড়িয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। জানালায় নেট লাগানো ট্রেনের ছবিও ভাইরাল হয়েছে ফেসবুকে। তবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, এমন কোনো সিদ্ধান্ত এখনও নেয়া হয়নি বা বাস্তবায়ন করা হয়নি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখা যায়, ‘পাথর নিক্ষেপের হাত থেকে যাত্রীদের রক্ষা করতে এবার ট্রেনের জানালায় লাগানো হবে নেট। নেট লাগানো নিয়ে ইতোমধ্যে বৈঠক করেছেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। কয়েকটি ট্রেনে লাগানো হয়েছে নেট।’ এমন খবর গত কয়েক দিন ধরেই ছড়াচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
সারা দেশে চলাচল করা যাত্রীবাহী ট্রেনের সংখ্যা ৩৫২টি। এর মধ্যে আন্তনগর ট্রেন ৯০টি, লোকাল ১২৬টি।
নিউজবাংলার পক্ষ থেকে রেলের জানালায় নেট বসবে কি না বা এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে কি না, তা জানার জন্য যোগাযোগ করা হয় বাংলাদেশ রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) সরদার সাহাদাত আলী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এমন কোনো খবর আমার কাছে নেই। আমি আছি অপারেশন বিভাগে। আমাকে যেভাবে দেয়া হবে আমি সেভাবেই চালাব।’
তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ গণমাধ্যমে এমন খবর ছড়িয়ে পড়েছে জানালে তিনি বলেন, ‘এটা দেখার বিষয় রেলওয়ের মেকানিক্যাল (যান্ত্রিক) বিভাগকে। তারা হয়তো এ বিষয়ে কাজ করছে। তারা বলতে পারবে নেট লাগানো যাবে কি না।’
নেট লাগানো হবে কি না, তা জানতে যোগাযোগ করা হয় বাংলাদেশ রেলওয়ের যুগ্ম মহাপরিচালক (যান্ত্রিক) তাবাসসুম বিনতে ইসলামের সঙ্গে।
তিনি বলেন, ‘আমি এমন কোনো নির্দেশনা বা চিঠিপত্র দেখিনি বা পাইনি। এ বিষয়ে ডিভিশনাল যারা প্রধান আছেন, তারা বলতে পারবেন।’
রেলওয়ের প্রধান যান্ত্রিক প্রকৌশলী (পূর্ব) বোরহান উদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ট্রেনের জানালায় নেট বসানো হবে, এমন কোনো নির্দেশনা আমরা পাইনি।’
তবে বিভিন্ন জায়গায় এমন তথ্য ছড়িয়ে পড়ছে জানালে তিনি বলেন, ‘আমরা মৌখিক বা লিখিত কোনো কিছুই পাইনি। তাই এমন কোনো কাজ আমরা করিনি বা করছিও না।’
রেলওয়ে আইনের ১২৭ ধারা অনুযায়ী, ট্রেনে পাথর ছোড়া হলে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ডসহ ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান আছে। ৩০২ ধারা অনুযায়ী পাথর নিক্ষেপে কারও মৃত্যু হলে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে।
ট্রেনে পাথর ছোড়ার ঘটনা প্রতিনিয়তই সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হলেও এসব ঘটনায় দেশে এখন পর্যন্ত কারও শাস্তি দিতে পারেনি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে ১১০টি। এতে ১০০টি ট্রেনের জানালার গ্লাস ভেঙেছে এবং ২৯ যাত্রী আহত হয়েছেন বলে জানান খোদ রেলমন্ত্রী।
এসব ঘটনায় কোনো ব্যক্তিকেই শাস্তির আওতায় আনা যায়নি বলে মন্ত্রীও স্বীকার করেন।
এমন ঘটনা রোধে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ তৎপর থাকলেও জড়ির ব্যক্তিদের শনাক্ত করে ব্যবস্থা নিতে পারছে না রেল মন্ত্রণালয়।
রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, ট্রেনে পাথর ছোড়ার ঘটনায় জড়িত ৮০ ভাগই বস্তির শিশু-কিশোর এবং মাদকাসক্ত ব্যক্তি। বস্তির শিশুদের আটক করা হলেও প্রমাণের অভাবে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়।
ট্রেনে পাথর ছোড়া প্রতিরোধ দিবস পালন হয় ৩ অক্টোবর। এ বছরও এর বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরির কথা জানায় মন্ত্রণালয়।
দিবসটি উপলক্ষে সেদিন সংবাদ সম্মেলনে রেলমন্ত্রী বলেন, ‘এ অবস্থা থেকে আমরা রক্ষা পেতে চাই। ট্রেনে পাথর ছোড়া রোধে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে চাই। আমরা সচেতনতায় জোর দিচ্ছি। একটা ঘটনা ঘটলে দেখা যায়, অনেক দিন আর কোনো ঘটনা ঘটে না।’
সেদিনই মন্ত্রী জানান, পাথর ছোড়া হয় এমন এলাকাগুলো রেলওয়ে চিহ্নিত করেছে।
ছোড়া পাথর ঠেকাতে ট্রেনের জানালায় নেট বসানো হবে কি না, জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কোনো ধরনের তথ্য জানাননি।
ঢাকা-পঞ্চগড়গামী একতা/দ্রুতযান ট্রেনের জানালায় নেট লাগানো হয়েছে, এমন ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
বিষয়টি নিয়ে কমলাপুর রেলস্টেশনের ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নতুন কোনো ট্রেনেই যেগুলো লাল-সবুজ তাতে নেট লাগানো হয়নি। আমি জানিও না। তবে পুরোনো কিছু ট্রেনে নেট লাগানো আছে। দ্রুতযান/একতাতে আছে এমন ছবি যদি থাকে আমাকে খোঁজ নিতে হবে।’
কী বললেন মহাব্যবস্থাপক (পশ্চিম)
সার্বিক বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (পশ্চিম) মিহির কান্তি গুহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এমন কোনো নির্দেশনা এখনও দেয়া হয়নি। তবে সামনের দিকে যেসব কোচ আনা হবে, সেগুলোতে আমাদের নিচের থেকে প্রস্তাব আছে। ওপরের থেকে এমন কোনো নির্দেশনা আমরা পাইনি।’
তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে যে কোচ কেনা হবে, সেগুলোতে নেট থাকলে ভালো হয়, এমন একটা প্রস্তাব আমাদের আছে।’
তবে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘এখন পাথরের হাত থেকে রক্ষা পেতে কী কী করা যেতে পারে তার আলোচনা হচ্ছে। এই আলোচনার ভেতরে যে প্রস্তাব আছে, সেখানে এটিও একটি প্রস্তাব।’
মিহির কান্তি বলেন, ‘এখন যেগুলো কোচ আছে সেগুলো চাইলেও কনফিগারেশন চেঞ্জ করা যাবে না। এগুলো সব বিদেশ থেকে আসে। আপনি আগে থেকে অর্ডার না দিলে তারা তো সেভাবে বানাবে। এখন একটা জিনিস চলে এলে তার ওপর ওইভাবে নেট বসানো যায় না।’
তবে পাকিস্তান আমলের সবগুলো কোচে নেট আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এরপর এগুলো মডিফাই করা হয়েছে। তারা তো আর জানে না যে দেশে ট্রেনে পাথর মারবে, লোকজন এত খারাপ যে তারা নেট বসাবে। আর আমাদের এখান থেকেও ওইভাবে ডিমান্ড প্লেস করা হয়নি।’
নেট লাগানোর পরিকল্পনা আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যেভাবে পাথর মারা হয় সেটা অপ্রয়োজনীয়। এদের সঙ্গে কারও কোনো শত্রুতা নেই।’
ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ যেসব এলাকায়
পূর্বাঞ্চলের চার জেলার পাঁচ এলাকা হলো চট্টগ্রামের পাহাড়তলী, সীতাকুণ্ড-বাড়বকুণ্ড, ফেনীর ফাজিলপুর কালীদহ এলাকা, নরসিংদী সদর, জিনারী ও ঘোড়াশাল এলাকা।
অন্যদিকে পশ্চিমাঞ্চলের ১০ জেলার ১৫ এলাকা হলো চুয়াডাঙ্গার আউটার, নাটোরের আব্দুলপুর রেলওয়ে স্টেশন, সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী রেলওয়ে স্টেশন, বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম রেলওয়ে স্টেশন, পাবনার মুলাডুলি রেলওয়ে স্টেশন এলাকা, পঞ্চগড় জেলা ও ঠাকুরগাঁও জেলার কিসমত-রুহিয়া।
এ ছাড়া পাবনার ভাঙ্গুরা রেলওয়ে স্টেশন এলাকা, বগুড়ার ভেলুরপাড়া রেলওয়ে স্টেশন এলাকা, গাইবান্ধার বামনডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশন এলাকা, জয়পুরহাটের আক্কেলপুর রেলওয়ে স্টেশন এলাকা, সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া রেলওয়ে স্টেশন, সলপ রেলওয়ে স্টেশন এলাকা, জামতৈল রেলওয়ে স্টেশন এলাকা, পাবনার বড়াল ব্রিজ রেলওয়ে স্টেশন এলাকা, খুলনার ফুলতলা রেলওয়ে স্টেশন এলাকা।
আরও পড়ুন:কদিন ধরেই তীব্র গরম। দেশের কোথাও মাঝেমধ্যে বৃষ্টি হচ্ছে, তবে গরম অবশ্য কমছে না। আবহাওয়া আপাতত এমনই থাকবে।
শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে এ তথ্য দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কুমিল্লা ও কিশোরগঞ্জ অঞ্চলসহ ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
এতে বলা হয়, একই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
অধিদপ্তর বলছে, রাজশাহী, পাবনা ও টাঙ্গাইল জেলাসহ খুলনা বিভাগের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং চাঁদপুর ও মৌলভীবাজার জেলাসহ ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগের অবশিষ্টাংশ ও বরিশাল বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বৃদ্ধি পেতে পারে।
আবহাওয়ার সার্বিক পর্যবেক্ষণে বলা হয়, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।
আগামী পাঁচ দিনের পূর্বভাসে বলা হয়েছে, তাপপ্রবাহ প্রায় একই রকম থাকতে পারে। আবহাওয়ায় তেমন পরিবতর্তন আসবে না।
দেশে চলমান দাবদাহ শুক্রবার থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর।
রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি শুক্রবার তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তায় এ কথা জানায়।
আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক স্বাক্ষরিত সতর্কবার্তায় বলা হয়, ‘দেশের ওপর দিয়ে চলমান তাপপ্রবাহ আজ (১৯ এপ্রিল, ২০২৪) হতে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে এবং তাপমাত্রা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।
‘জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বৃদ্ধি পেতে পারে।’
৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাস
আবহাওয়া অধিদপ্তর শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে সিনপটিক অবস্থা নিয়ে বলেছে, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে রয়েছে।
তাপপ্রবাহ বা দাবদাহের বিষয়ে বলা হয়, বাগেরহাট, যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে দিনাজপুর, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, খুলনা, সাতক্ষীরা, বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলা এবং ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এটি অব্যাহত থাকতে পারে।
আরও পড়ুন:প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে মোট বৈধ প্রার্থী দাঁড়িয়েছে এক হাজর ৭৮৬ জন। মাঠ পর্যায় থেকে পাঠনো তথ্য একীভূত করার পর এ তথ্য জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ।
তিনি জানান, প্রথম ধাপে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন এক হাজার ৮৯০ জন। এদের মধ্যে বাছাইয়ে ১০৪ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল, আর বৈধতা পেয়েছে এক হাজার ৭৮৬ প্রার্থীর।
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ১৮ থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত আপিল করা যাবে। আপিল নিষ্পত্তি ২১ এপ্রিল, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২২ এপ্রিল। এরপর প্রতীক বরাদ্দ ২৩ এপ্রিল এবং ১৫০ উপজেলায় ভোটগ্রহণ হবে আগামী ৮ মে।
অপপ্রচার রোধে প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হলে ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের সহায়তা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত।
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে প্রতিমন্ত্রীর নিজ দপ্তরে ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মার সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
আরাফাত বলেন, ‘অপপ্রচার রোধে ভারতের কিছু প্রতিষ্ঠান কাজ করে। তারা কীভাবে কাজ করে, তাদের অভিজ্ঞতা এবং প্রক্রিয়া-পদ্ধতি বিনিময় জানা-বোঝার চেষ্টা করব। এক্ষেত্রে কোনো প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হলে আমরা তাদের কাছ থেকে সহায়তা নেব।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে যেসব কো-অপারেশন আছে, সেসব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে বিটিভিতে দুই ঘণ্টার একটি চাংক নিয়ে আমরা আন্তর্জাতিক সংবাদ বিশ্লেষণ, চলমান ঘটনাপ্রবাহ এবং সংবাদ উপস্থাপনা শুরু করতে যাচ্ছি। সেক্ষেত্রে ভারতের যে সংবাদ সংস্থাগুলো আছে, বিশেষ করে এএনআইয়ের সঙ্গে কোলাবরেশন করা যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
‘যেহেতু বিটিভি ইন্ডিয়াতে দেখানো হয়, সেহেতু দুই ঘণ্টার এ চাংক আমরা ধীরে ধীরে দুই, তিন, চার ঘণ্টা পর্যন্ত বাড়াব। আমরা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী করতে চাচ্ছি, যেখানে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের খবর থাকবে। এর বাইরেও বিভিন্ন দেশের খবর থাকবে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করব ভারতীয় দর্শকদের আকৃষ্ট করতে। এ ছাড়া ইন্ডিয়ান ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন নিয়ে ইনস্টিটিউশন আছে, তাদের সঙ্গে কোলাবরেশন করা, বিভিন্ন ধরনের প্রোগ্রাম ও ট্রেনিং করা।’
‘সম্প্রতি মুজিব শিরোনামের যে সিনেমাটি সহ-প্রযোজনা হয়েছে, এমন অন্য কোনো সিনেমায় সহ-প্রযোজনার সুযোগ আছে কি না তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে’- যোগ করেন প্রতিমন্ত্রী।
ভারতের সিনেমা যেহেতু বাংলাদেশের বাজারে চলে সেহেতু বাংলাদেশেরও ভালো মানের সিনেমা ভারতে চালানোর বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘দর্শককে জোর করে কিছু দেখানো যায় না। বাজারে কোনো জিনিসের চাহিদা থাকলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই যাবে-আসবে। সিনেমা যেহেতু প্রোডাক্ট, সেহেতু ভারতের বাজারে দর্শক থাকলে অবশ্যই যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যে বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের আরও কো-অপারেশনের সুযোগ আছে, সেসব নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। আমি মনে করি- বাংলাদেশ এ বিষয়ে বেশি লাভবান হবে। কারণ ভারতের ফিল্মে, টেলিভিশনে বা অন্যান্য জায়গায় যে অভিজ্ঞতা আছে, তা আমরা যত বেশি নেয়ার চেষ্টা করা যায়। দেশের উন্নয়নের জন্য এসব জরুরি।’
আরও পড়ুন:সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি অর্জনে অবদান রাখতে এবং দেশকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত করায় অবদান রাখতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সবকিছু করছে।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) মিলনায়তনে ‘ডিফেন্স ডিপ্লোমেসি: স্ট্র্যাটেজি ফর বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সূত্র: ইউএনবি
সেনাপ্রধান বলেন, ‘মাতৃভূমিকে রক্ষা করা, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য এবং আমরা তার জন্য প্রস্তুত আছি। আমরা সবকিছুই করছি।’
বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্র নীতির বাণী ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই পররাষ্ট্রনীতি বাস্তবায়নে আমরা সবকিছু করছি।’
জাতীয় নিরাপত্তা বজায় রেখে টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করে সেনাপ্রধান বলেন, ‘কূটনীতি যেকোনো ধরনের জাতীয় স্বার্থ অর্জনের প্রচেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়।’
বেসামরিক শক্তির সহায়তায় সেনাবাহিনী কীভাবে দেশে গঠনমূলক কর্মকাণ্ড, দেশ-বিদেশে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে সে কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
সেনাপ্রধান বলেন, ‘যেখানেই সুযোগ আছে, তা প্রত্যক্ষ হোক বা পরোক্ষ, আমরা সুযোগ গ্রহণ করি এবং বাংলাদেশের স্বার্থে সবকিছু করি।’
সামরিক কূটনীতির কথা বলতে গিয়ে জেনারেল শফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আরও সম্পদ ও বাজেট বরাদ্দ করে তাদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। আমরা জানি কীভাবে এটা করতে হয়। কিন্তু আমাদের এটা করার সামর্থ্য থাকা উচিত।’
মিয়ানমার ইস্যু প্রসঙ্গে সেনাপ্রধান বলেন, ‘মিয়ানমারের সামরিক নেতাদের কেউ কেউ আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হচ্ছেন এবং এখানে নিজেদের সমস্যায় ফেলার ঝুঁকি রয়েছে।
‘এক বন্ধুকে খুশি করার জন্য আমরা আরেক বন্ধুর বিরোধিতা করতে পারি না। বেশকিছু বিষয় রয়েছে যা আমাদের খেয়াল করতে হবে। এসব ঘটনার প্রভাবও বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি এবং আমরা সঠিক পথেই রয়েছি।’
জেনারেল শফিউদ্দিন বলেন, দূর থেকে চালানো যায় এমন কিছু যানবাহন দেশেই তৈরি হচ্ছে যা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্য বেশ উপকারে আসবে। আগে এসব যন্ত্রপাতি আমদানি করতে হতো। তাই এখন আমাদের প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হচ্ছে।’
সেনাপ্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কেবল যুদ্ধে লড়াই করাই শেখে না, বরং জাতীয় স্বার্থে কীভাবে যুদ্ধ প্রতিরোধ বা এড়াতে হয় তা-ও জানে। আমরা সঠিক পথেই আছি এবং আমরা আমাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হবো না।’
একইসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা সামরিক বাহিনীর প্রধান দায়িত্ব। এটি তারা কখনও ভুলে যায় না এবং এ কাজে সবসময় তাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।
‘উদ্দেশ্য রাতারাতি পরিবর্তন হতে পারে। কিন্তু সক্ষমতা রাতারাতি পরিবর্তন হয় না। আজ আপনি আমার বন্ধু, আগামীকাল বন্ধু না-ও হতে পারেন। কিন্তু জাতীয় স্বার্থ, মাতৃভূমি রক্ষায় আমাদের সক্ষমতা থাকতে হবে- পররাষ্ট্রনীতির এই আদেশ আমাদের সবার জন্য সমান।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিআইআইএসএস চেয়ারম্যান রাষ্ট্রদূত এ এফ এম গওসোল আযম সরকার ও মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. আবু বকর সিদ্দিক খান।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
বিজিবি মহাপরিচালক বৃহস্পতিবার সকালে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ১১ বিজিবি ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরের কোয়ার্টার গার্ড পরিদর্শন শেষে বিজিবি কার্যালয় পরিদর্শন করেন। দুপুরে মিয়ানমারের রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা বর্ডার গার্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেয়া প্রতিবেশী দেশটির জান্তা বাহিনীর সদস্যদের খোঁজখবর নেন তিনি।
পরে তিনি ১১ বিজিবির অধীন চাকঢালা বিওপি (বর্ডার অবজারবেশন পোস্ট) পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি মিয়ানমার থেকে জান্তা বাহিনীর সদস্যদের পালিয়ে আসার স্পটগুলো সম্পর্কে খোঁজখবর নেন। সীমান্তে বিজিবিকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেন।
পরিদর্শনকালে বিজিবি মহাপরিচালকের সঙ্গে ছিলেন কক্সবাজার রিজিয়ন কমন্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মোরশেদ আলমসহ বিজিবি রামুর সেক্টর ও অধীনস্ত বিজিবি ব্যাটালিয়নে নাইক্ষ্যংছড়ি ১১ বিজিবি’র জোন কমন্ডার ও অধিনায়ক লে. কর্নেল সাহল আহমদ এসিসহ বিজিবির কর্মকর্তারা।
বান্দরবানে কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়া ৫৩জনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। রুমা থানার দুটি মামলায় বৃহস্পতিবার এই আদেশ দেয়া হয়। পাশাপাশি এক নারীকে জেল গেটে জিজ্ঞাসাবাদসহ মামলায় ৫৭জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
বান্দরবান সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মোহাম্মদ নাজমুল হোছাইন বৃহস্পতিবার দুপুরে মামলার শুনানি শেষে এই আদেশ দেন।
আদালতে আসামি পক্ষে একাধিক আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন। আইনজীবীরা জানান, রুমা থানার জিআর মামলা নং- ৪ ও ৭ মামলায় পুলিশ আসামিদের আদালতে হাজির করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করে। আদালত উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ৫৩জনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। এর মধ্যে ৫২জনকে দু’দিন করে রিমান্ড এবং একজনকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেয়া হয়।
এর আগে বান্দরবান জেলা কারাগার থেকে কঠোর নিরাপত্তায় ১৮জন নারী ও ৩৯জন পুরুষ বন্দিকে দুটি গাড়িতে করে আদালতে হাজির করা হয়। সম্প্রতি বান্দরবানের রুমায় সোনালী ব্যাংকে লুটের ঘটনায় তাদেরকে রুমা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে বান্দরবানে চলমান যৌথ অভিযানে সন্দেহভাজন আরও একজনকে আটক করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৬৬জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
মন্তব্য