প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে ছাত্রের সংখ্যা কেন কমে যাচ্ছে, তার কারণ জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্যে উপবৃত্তি, টিউশন ফি, ভর্তিসহায়তা ও চিকিৎসা অনুদান বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করে রোববার সকালে এমন জবাব চান তিনি।
অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন সরকারপ্রধান।
এ সময় তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকসহ মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষায় সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ বাড়াতে ছাত্র-ছাত্রী উভয়ের জন্য বর্ধিত হারে উপবৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে। ফলে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের জেন্ডার সমতা অর্জন করায় বাংলাদেশ বিশ্বে প্রশংসা অর্জন করেছে।
‘এখানে মেয়েদের সংখ্যা বেশি, ছেলেদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। এটা যেন না হয় সেদিকে নজর দিতে হবে। আমাদের জেন্ডার সমতাটা একটু অন্য রকম হয়ে যাচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘অনেক স্কুলে দেখা যায়, মেয়ে শিক্ষার্থী বেশি হয়ে যাচ্ছে, ছেলেরা কমে যাচ্ছে। তবে ছেলেরা কেন কমে যাচ্ছে, এটা আমাদের দেখা দরকার।
‘এ বিষয়টা অবশ্যই একটু নজরে দেবেন সকলে। আমরা মনে করি, অভিভাবক, শিক্ষক সকলকেই এটা দেখতে হবে।’
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের মাধ্যমে স্নাতক পর্যায়ের ২০২০-২১ অর্থবছরে ১ কোটি ৬৩ লাখ ৮৮২ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে উপবৃত্তি ও টিউশন ফি বাবদ ৮৭ কোটি ৪৩ লাখ ৭৭ হাজার ৪০০ টাকা এবং ভর্তি সহায়তা বাবদ ১২৩ শিক্ষার্থীকে ৬ লাখ ৭৮ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের আর্থিক অনুদান বাবদ ৪ শিক্ষার্থীকে ২ লাখ টাকাসহ ৮৭ কোটি ৫২ লাখ ৫৫ হাজার ৪০০ টাকা বিতরণ করা হয়।
শিক্ষক-কর্মচারীদের টিকা দিতে নির্দেশ
স্কুল-কলেজের কার্যক্রম শুরু করতে দ্রুত শিক্ষক-কর্মচারীদের করোনাভাইরাসের টিকা দিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘কোভিডের জন্য এখন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। এটা একটা কষ্টকর ব্যাপার। তবে আমরা আশা করছি যে, আগামী ৩০ মার্চ আমরা সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে সক্ষম হব।
‘ইতিমধ্যে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর যত শিক্ষক-কর্মচারী যারা আছে সকলকেই টিকা নিতে হবে। এর জন্য ব্যবস্থা নিতে ইতিমধ্যে আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়ে দিয়েছি। টিকা সবাইকে দেয়া হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়া হবে বলেও জানান সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, ‘আর ইউনিভার্সিটি বা কলেজে ডব্লিউএইচও এর নির্দেশ মোতাবেক যে বয়স পর্যন্ত টিকা নেয়া যাবে না তার উপরের বয়সের যারা, সেসব শিক্ষার্থীকেও টিকা দেয়া হবে। কাজেই সকলেই সুরক্ষিত থাকুক এটাই আমরা চাই।’
শিক্ষা খরচ নয়, বিনিয়োগ
দেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করতে শিক্ষার কোনো বিকল্প দেখছেন না প্রধানমন্ত্রী। আর এ কারণেই শিক্ষাকে খরচের পরিবর্তে বিনিয়োগ হিসেবে দেখেন বলে জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ করতে হলে অবশ্যই শিক্ষা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
‘জাতির পিতার চিন্তা আদর্শ নিয়েই আমরা চলি। শিক্ষার খরচকে আমরা খরচ মনে করি না, বিনিয়োগ মনে করি। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বিনিয়োগ।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশ। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমরা যে স্বীকৃতি পেয়েছি এটা আমাদের ধরে রাখতে হবে।
‘ধরে রাখার জন্যই দরকার শিক্ষার প্রসার এবং উপযুক্ত দক্ষ নাগরিক। আমরা সেই দক্ষ ও উপযুক্ত নাগরিক গড়ে তুলতে বদ্ধপরিকর।’
শিক্ষার উন্নয়নে সমাজের বিত্তশালীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, ‘আমাদের যারা বিত্তশালী তারাও এগিয়ে আসবেন। নিজ নিজ এলাকা বা নিজ স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে যে যেখানে পড়াশোনা করেছেন, সে সেখানে উন্নয়নে মনোযোগী হবেন।
‘যেখান থেকে লেখাপড়া শিখে আজ বিত্তশালী হয়েছে সেই জায়গাগুলির প্রতি যদি সবাই যত্নশীল হয়, তাহলে মনে হয় আর সমস্যা হয় না।’
এ সময় আওয়ামী লীগ সরকারের সময় শিক্ষার প্রসারে নেয়া নানা উদ্যোগ তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। সমালোচনা করেন বিএনপি-জামায়াত সরকারের।
তিনি বলেন, ‘২১ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। আমরা সরকার গঠন করে সবচেয়ে বেশি উদ্যোগ নিয়েছিলাম যে শিক্ষার প্রসার ঘটাতে। এ জন্য নিরক্ষরমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে একটি প্রকল্প আমরা হাতে নিই। সেখানে আমরা আনুষ্ঠানিক কিংবা অনানুষ্ঠানিক বা মসজিদ- ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানভিত্তিক শিক্ষা, বয়স্ক শিক্ষার ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছিলাম। এমনকি বিভিন্ন এনজিওকেও আমরা কাজে লাগাই, বয়স্কদের শিক্ষা দেয়ার জন্য।
‘আমাদের এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল একেকটা জেলাকে নিরক্ষরমুক্ত ঘোষণা করা হবে। সেখানে ৪৫ বছরের নিচে বয়স যাদের কেউ যদি নিরক্ষর থাকে, তাকে সাক্ষরজ্ঞান দেয়া হবে। সে প্রকল্প আমরা বাস্তবায়ন করতে শুরু করি এবং শুভ ফলও আমরা পেতে শুরু করি। অনেক জেলায় তখন অল্প সময়ের মধ্যে নিরক্ষরতামুক্ত ঘোষণা করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘এর কারণে ইউনেসকোর পক্ষ থেকে আমরা একটা পুরস্কারও পাই। আবার সেই পুরস্কারের টাকা দিয়ে আমরা বৃত্তি দেয়ার ব্যবস্থা করি। আমরা যখন সরকার গঠন করি মাত্র ৪৫ ভাগ ছিল সাক্ষরতার হার। খুব অল্প সময়ের মধ্যে সেটা ৬৫ দশমিক ৫ ভাগে উন্নীত করতে সক্ষম হই।
‘আমাদের দুর্ভাগ্য হলো ২০০১-এ আমরা ক্ষমতায় আসতে পারিনি। বিএনপি-জামায়াত জোট আসল। আমাদের সব কার্যক্রম বন্ধ করে দিল।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘দ্বিতীয়বার যখন আমরা সরকার গঠন করি, আমরা পুনরায় উদ্যোগ নেই। সেই সময়েই এই ট্রাস্ট ফান্ড করবার একটি পরিকল্পনা নিয়েছিলাম। সেখানে এই কথাটা আমি লিখেছিলাম সরকার বদল হলেও যেন কেউ এটা বন্ধ করতে না পারে।
‘কারণ আমার তিক্ত অভিজ্ঞতা ছিল। অনেকগুলো গণমুখী কাজ আমরা নিয়েছিলাম হাতে। বিএনপি সেগুলো বন্ধ করে দিয়েছিল। এ জন্য এখন থেকে যাই করি, চেষ্টা করি যে সরকার বদল হলেও যেন এগুলো বন্ধ না হয়, সে প্রচেষ্টা আমাদের সবসময় রয়েছে।’
প্রথম মেয়াদে সরকারে এসে সারা দেশে ১২টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের কথা জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমরা সেই সাথে সাথে সারা দেশে শিক্ষার প্রসার ঘটানোর ব্যবস্থাও নেই। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় ছিল, বিজ্ঞান শিক্ষায় মানুষের তেমন একটা আগ্রহ ছিল না। আমরা ১২টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের জন্য আইন পাস করি, কাজও শুরু করি।
‘এর মধ্যে গোপালগঞ্জে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ বিএনপি বন্ধ করে দেয়। ১২টার মধ্যে দুটো আমরা শেষ করেছিলাম। একটি দিনাজপুরের হাজী দানেশ এবং পটুয়াখালীর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। এ দুটিকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যলয় হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার আমার নির্দেশনা ছিল, যেটা কৃষির ওপর সবচেয়ে বেশি শিক্ষা দেবে এবং গবেষণা হবে।’
শিক্ষায় বিনিয়োগের মাধ্যমে দক্ষ মানবশক্তি সৃষ্টিই সরকারের লক্ষ্য বলে জানান সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, ‘কারিগরি শিক্ষা প্রসারে প্রতিটি উপজেলায় একটি করে কারিগরি স্কুল স্থাপন করা হচ্ছে। প্রতিটি বিভাগীয় শহরে একটি করে মহিলা টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ এবং প্রতিটি জেলায় একটি করে সরকারি বা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় করা হচ্ছে।
‘অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আমরা প্রত্যেক জেলায় করে দিচ্ছি যাতে ছেলেমেয়েরা বাবা-মায়ের চোখের সামনে থেকে পড়াশোনা করতে পারে। আর এ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আমরা বহুমুখী করে দিচ্ছি। যেমন টেক্সটাইল করছি, ডিজিটাল করছি, আমাদের প্রত্যেক বিভাগে একটি করে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ও আমরা করে দিচ্ছি। ফ্যাশন ডিজাইন থেকে শুরু করে অর্থাৎ আধুনিক যুগে কী কী ধরনের বিষয় লাগে সেদিকে লক্ষ্য রেখেই কিন্তু আমরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে যাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিজ্ঞান-প্রযুক্তি শিক্ষা বা কারিগরি শিক্ষা এটাই হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে, শুধু দেশে না বিদেশেও।
‘আমাদের এ জন্য আরও বেশি প্রয়োজন, আমরা ১০০টা অর্থনৈতিক অঞ্চল করছি, সেখানে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ হচ্ছে। সেখানে অনেক টেকনিক্যাল লোক লাগবে। দক্ষ জনশক্তির প্রয়োজন হবে। সেই জনশক্তিই আমরা সৃষ্টি করতে চাই।’
আরও পড়ুন:ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুইমিংপুলে গোসলে নেমে বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মঙ্গলবার এ তথ্য জানানো হয়।
ঢাবির প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. মাকসুদুর রহমানকে আহ্বায়ক এবং সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল মুহিতকে সদস্য সচিব করে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
দর্শন বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র মো. সোহাদ হকের এ মৃত্যুকে অপমৃত্যু দাবি করে এর কারণ চিহ্নিত করে প্রতিবেদন প্রদানের জন্য কমিটিকে বলা হয়েছে।
পাশাপাশি কমিটিকে তদন্ত কাজ সম্পন্ন এবং সুইমিংপুলের ব্যবস্থাপনায় কোনো অবহেলা বা ত্রুটি আছে কি না, তা চিহ্নিত করে আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের রুটিন দায়িত্বে নিয়োজিত উপ উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ এই কমিটি গঠন করেন।
কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন দর্শন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শাহ্ কাওসার মুস্তাফা আবুলউলায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য এবং তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ শরিফ উল ইসলাম এবং বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের আবাসিক শিক্ষক মো. জসিম উদ্দিন।
এর আগে সোমবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ সংলগ্ন সুইমিংপুলে গোসল করতে নেমে পানিতে তলিয়ে যান মোহাম্মদ সোয়াদ।
পরে আশেপাশের শিক্ষার্থীরা তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে বেলা সোয়া ২টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী জামিল নামের এক শিক্ষার্থী ফেসবুকে লিখেছেন, ‘যে পুলে সোয়াদ তলিয়ে যায় সেটির গভীরতা ছিল ৮ থেকে ১০ ফিট। এটাতে কেউ ডুবে মারা যাবে, এটা স্বাভাবিকভাবে কারোর চিন্তায়ই আসবে না। পানির তলে গিয়ে ওপরের দিকে লাফ দিলেই ওপরে উঠে আসার কথা!’
তিনি বলেন, ‘আমরা শতাধিক ছাত্র ছিলাম, কিন্তু কেউই খেয়াল করিনি যে সে ডুবে গেছে।’
আরও পড়ুন:বাসের ধাক্কায় গুরুতর আহত হয়ে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) দুই শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে আরও একজন।
সোমবার বিকেল চারটার দিকে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার জিয়ানগরে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা জানান, এদিন বিকেলে জিয়ানগরে মোটরসাইকেল নিয়ে ঘুরতে যায় চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শান্ত সাহা, দ্বিতীয় বর্ষের তাওফিক হোসাইন ও জাকারিয়া হিমু। পথিমধ্যে শাহ আমানত নামের একটি বাসের ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন শান্ত সাহা। গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যান তাওফিক হোসাইন। মোটরসাইকেলের আরেক যাত্রী জাকারিয়া হিমুকে গুরুতর আহত অবস্থায় চট্টগ্রাম শহরের এভার কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা শাহ আমানতের কয়েকটি বাস আটক করার পর চট্টগ্রাম-কাপ্তাই মহাসড়ক অবরোধ করেছেন। একটি বাসে আগুনও দিয়েছেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
চুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের (২১ ব্যাচ) শিক্ষার্থী পল্লব ঘোষ বলেন, ‘শান্ত ভাই আমার খুবই কাছের বড় ভাই এবং একজন মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলেন, কিন্তু বাসের বেপরোয়া গতির জন্য আজ একটি প্রাণ ঝরে গেল। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের পাশাপাশি উপযুক্ত বিচার দাবি করি ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম বলেন, ‘ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের ব্যাবস্থা করা হবে। এ ধরনের ঘটনা ভবিষ্যতে যাতে না হয়, সে ব্যাপারে যথাযথ ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সুইমিংপুলে গোসল করতে গিয়ে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে।
মারা যাওয়া শিক্ষার্থীর নাম মোহাম্মদ সোয়াদ। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের প্রথম বর্ষে পড়তেন।
সোমবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ সংলগ্ন সুইমিংপুলে গোসল করতে নামলে পানিতে তলিয়ে যান তিনি।
পরে আশেপাশের শিক্ষার্থীরা তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে বেলা সোয়া ২টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী জামিল নামের এক শিক্ষার্থী ফেসবুকে লিখেছেন, যে পুলে সোয়াদ তলিয়ে যায় সেটির গভীরতা ছিল ৮/১০ ফিট। এটাতে কেউ ডুবে মারা যাবে, এটা স্বাভাবিকভাবে কারোর চিন্তায়ই আসবে না। পানির তলে গিয়ে ওপরের দিকে লাফ দিলেই ওপরে উঠে আসার কথা!
তিনি বলেন, আমরা শতাধিক ছাত্র ছিলাম। কিন্তু কেউই খেয়াল করিনি যে সে ডুবে গেছে!
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. বাচ্চু মিয়া বলেন, পানিতে পড়ে গুরুতর আহত হওয়ার পর মেডিক্যালে নিয়ে আসা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মারা গেছেন। মরদেহ মর্গে নেয়া হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্রের পরিচালক শাহজাহান আলী বলেন, দর্শন বিভাগের সোয়াদ নামে এক শিক্ষার্থী সুইমিংপুলের পানিতে লাফালাফি করতে গিয়ে পানির সাথে ধাক্কা বা আঘাত পেয়ে গুরুতর আহত হয়। তখন সেখানে তার বন্ধুবান্ধব ছিল এবং আশেপাশে আমাদের লোকজনও ছিল।
তিনি বলেন, এ সময় তারা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টারে পাঠায়। পরে ঢাকা মেডিক্যালে নেয়া হয়। বিষয়টি আমি আমাদের প্রক্টর মহোদয়কেও জানিয়েছি।
আরও পড়ুন:সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগে তৃতীয় ধাপে ঢাকা-চট্টগ্রাম বিভাগের লিখিত পরীক্ষার প্রকাশিত ফল স্থগিত করা হয়েছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার মাহবুবুর রহমান তুহিন স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে রোববার রাতে এ তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রকাশিত ফলাফলে দুটি সেট কোডের উত্তরপত্র মূল্যায়নে কারিগরি ত্রুটি দেখা দিয়েছে। ফল পুনরায় মূল্যায়ন শুরু করেছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ টিম। পুনঃমূল্যায়ন শেষে রোববার রাত ১২টার মধ্যেই সংশোধিত ফল প্রকাশ করা হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সহকারী শিক্ষক নিয়োগে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের ফল রোববার দুপুরে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এক স্মারকে প্রকাশ করা হয়। এতে উত্তীর্ণ হন ২৩ হাজার ৫৭ জন প্রার্থী। প্রকাশিত ফলাফলে মেঘনা ও যমুনা সেটের পরীক্ষার্থীদের উত্তরপত্র মূল্যায়নে কারিগরি ত্রুটি পরিলক্ষিত হয়েছে।
মেঘনা ও যমুনা সেটের পরীক্ষার্থীদের উত্তরপত্র আইআইসিটি, বুয়েটের কারিগরি টিম ইতোমধ্যে পুনঃমূল্যায়নের কাজ শুরু করেছে। রাত ১২টার মধ্যে মেঘনা ও যমুনা সেটের পরীক্ষার্থীদের উত্তরপত্র পুনঃমূল্যায়ন করে নিরীক্ষান্তে সংশোধিত ফল প্রকাশ করা হবে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে রোববার দুপুরে প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগের তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ করা হয়। অনেক প্রার্থী ভালো পরীক্ষা দিয়েও ফল না পাওয়ার অভিযোগ তোলেন। অনেকে ফেসবুকে পোস্ট দেন। পরে মেঘনা ও যমুনা কোডের প্রার্থীরা গ্রুপ খুলে সেখানে কারা কারা ভালো পরীক্ষা দিয়েও ফল পাননি তা জানাতে থাকেন।
বিষয়টি গণমাধ্যমকর্মীরা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিপদপ্তরের দৃষ্টিগোচর করলে দুই সেটের উত্তরপত্র পুনঃমূল্যায়নের সিদ্ধান্ত হয়।
আরও পড়ুন:সার্টিফিকেট বাণিজ্যে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে বাংলাদেশ কারিগরি বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আলী আকবর খানকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এরই মধ্যে তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে।
রোববার এ সিদ্ধান্ত হয়। তবে এ বিষয়ে সোমবার প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
আলী আকবরকে ওএসডি করে তার জায়গায় দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বোর্ডের পরিচালক অধ্যাপক মামুন উল হককে। এ ঘটনায় কারিগরি বোর্ডের সচিবও নজরদারিতে আছেন।
এর আগে শনিবার রাজধানীর উত্তরা থেকে আলী আকবর খানের স্ত্রী সেহেলা পারভীনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে সার্টিফিকেট-বাণিজ্যে সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
রাজধানীর মিণ্টো রোডে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে রোববার সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন ডিবিপ্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
তিনি বলেন, ‘সার্টিফিকেট-বাণিজ্যের এ ঘটনার সঙ্গে যারাই জড়িত থাক না কেন কাউকে ছাড় দেব না। তথ্য-উপাত্তে কারিগরি বোর্ড চেয়ারম্যানের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করব। যেকোনো সময় তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকব।’
হারুন অর রশীদ বলেন, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) লালবাগ বিভাগ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে জাল সার্টিফিকেট তৈরির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ১ এপ্রিল রাজধানীর পীরেরবাগ এলাকার একটি বাসা থেকে দুজনকে গ্রেপ্তার করে। তারা হলেন- বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের কম্পিউটার সেলের সিস্টেম অ্যানালিস্ট এ কে এম শামসুজ্জামান এবং একই প্রতিষ্ঠানের চাকরিচ্যুত ও বর্তমানে শামসুজ্জামানের ব্যক্তিগত বেতনভুক্ত সহকারী ফয়সাল।
এরপর ৫ এপ্রিল কুষ্টিয়ার সদর থানা এলাকা থেকে গড়াই সার্ভে ইনস্টিটিউটের পরিচালক সানজিদা আক্তার কলিকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার এই তিনজন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।
তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে বিপুল পরিমাণ জাল সার্টিফিকেট, মার্কশিট, রেজিস্ট্রেশন কার্ড ও প্রবেশপত্র এবং শত শত সার্টিফিকেট ও মার্কশিট তৈরির মতো বিশেষ কাগজ, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, প্রিন্টার, কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে চুরি করে নেয়া হাজার হাজার অরিজিনাল সার্টিফিকেট এবং মার্কশিটের ব্লাঙ্ক কপি, শতাধিক সার্টিফিকেট, ট্রান্সক্রিপ্ট, বায়োডাটা ও গুরুত্বপূর্ণ দলিলাদি জব্দ করা হয়।
ডিবিপ্রধান বলেন, গ্রেপ্তার আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ ও তাদের মোবাইল ফোন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চক্রের সঙ্গে জড়িত কামরাঙ্গীরচর হিলফুল ফুযুল টেকনিক্যাল অ্যান্ড বি এম কলেজের অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমানকে ১৮ এপ্রিল গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর চক্রের সঙ্গে জড়িত ঢাকা টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরিচালক মো. মাকসুদুর রহমান ওরফে মামুনকে গ্রেপ্তার করা হয় ১৯ এপ্রিল।
চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সবশেষ বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী সেহেলা পারভীনকে শনিবার রাজধানীর উত্তরা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
হারুন অর রশীদ বলেন, গ্রেপ্তার এ কে এম শাসমুজ্জামান ও তার ব্যক্তিগত সহযোগী ফয়সাল গত কয়েক বছরে পাঁচ হাজারের বেশি সার্টিফিকেট ও মার্কশিট বানিয়ে ভুয়া লোকদের কাছে হস্তান্তর করেছে। একইসঙ্গে সরকারি ওয়েবসাইটে সরকারি পাসওয়ার্ড, অথরাইজেশন ব্যবহার করে ভুয়া লোকদের মধ্যে বিক্রি করা সার্টিফিকেটগুলোকে বাংলাদেশ সরকারের কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে আপলোড করেছে। ফলে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর যে কোনো দেশে বসে এই ওয়েবসাইটে গিয়ে রোল নম্বর, রেজিস্ট্রেশন নম্বর গুগলে সার্চ করলে তা সঠিক পাওয়া যায়।
এই অতিরিক্ত কমিশনার আরও বলেন, কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীর তথ্য সংযোজন, বিয়োজন ও পরিবর্তন সংক্রান্ত আবেদন-নিবেদনের ফোকাল পারসন সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান বা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক; কোনোক্রমেই ই-সিস্টেম অ্যানালিস্ট বা কম্পিউটার অপারেটররা নন।
সিস্টেম অ্যানালিস্ট বা কম্পিউটার অপারেটররা প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রকদের নির্দেশে কঠোর গোপনীয়তা বজায় রেখে সংবেদনশীল এই কাজগুলো করার কথা। কিন্তু বাংলাদেশের বিভিন্ন উপজেলা, জেলা এবং বিভাগীয় শহরে অবস্থিত সরকারি-বেসরকারি কারিগরি স্কুল ও কলেজ, পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট, সার্ভে ইনস্টিটিউটের পরিচালক, প্রিন্সিপালরা সম্পূর্ণ অবৈধ ও অনৈতিকভাবে শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন, রোল নম্বর তৈরি, রেজাল্ট পরিবর্তন-পরিবর্ধন, নাম ও জন্মতারিখ সংশোধনের তথ্য হোয়াটসঅ্যাপে টাকার বিনিময়ে আদান-প্রদান করেছেন কম্পিউটার অপারেটর ও সিস্টেম এনালিস্টদের সঙ্গে।
তিনি বলেন, এরকম প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতিপরায়ণ ২৫/৩০ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।
ডিবি প্রধান বলেন, বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের কিছু দুর্নীতিপরায়ণ সিবিএ দালাল কর্মচারী-কর্মকর্তা, কম্পিউটার ও পরিদর্শন শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারী দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে রেজাল্ট পরিবর্তন, নাম-ঠিকানা পরিবর্তন, প্রার্থীদের বয়স পরিবর্তন ও সময়ে অবৈধভাবে রেজিস্ট্রেশন নম্বর ও রোল নম্বর প্রদান সংক্রান্ত কাজগুলো করার জন্য সিন্ডিকেট বানিয়েছে।
তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কলেজগুলো ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় শিক্ষার্থীদের তাপ থেকে সুরক্ষিত রাখতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে ক্লাসের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে।
নিউজবাংলার সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন বিস্তারিত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনিভার্সিটি অফ এশিয়া প্যাসিফিক ও ইউনিভার্সিটি অফ ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্সেস তাদের ক্লাস অনলাইনে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এ ছাড়াও বেশকিছু বিশ্ববিদ্যালয় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য বৈঠক ডেকেছে। আর যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাসের সময়সীমা কমিয়ে এনেছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসও বন্ধ রাখা হয়েছে অনির্দিষ্টকালের জন্য।
চলমান তাপপ্রবাহে শিক্ষার্থীদের শারীরিক সুস্থতার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে অনলাইন ক্লাসের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। তবে এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম মেনে পরীক্ষাগুলো শিক্ষার্থীদের সশরীরে উপস্থিত থেকে দিতে হবে। পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত কার্যকর থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগগুলো নিজেদের মতো করে অনলাইন ক্লাস পরিচালনা করতে পারবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে রোববার এসব তথ্য জানানো হয়।
তীব্র দাবদাহের কারণে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় চলতি সপ্তাহে অনলাইনে ক্লাস নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এসময় সব পরীক্ষা স্থগিত থাকবে। রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরের সভাপতিত্বে এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আইনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চলমান দাবদাহের কারণে স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা বিবেচনায় শনিবার (২৭ এপ্রিল) পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সশরীরে সব ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ থাকবে। তবে অনলাইনে ক্লাস ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য কার্যক্রম যথারীতি চালু থাকবে।
তীব্র দাবদাহের কারণে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাসও অনলাইনে নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে পরীক্ষা সশরীরেই হবে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াতের অন্যতম বাহন শাটল ট্রেন ও শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাস নিয়মিত সূচিতে চলবে।
এক জরুরি সভা শেষে এসব সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রো-ভিসি, ডিন ও সিন্ডিকেট সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সিরাজ উদ দৌল্লাহ বলেন, অফিস খোলা থাকবে। শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি বিবেচনায় ক্লাস অনলাইনে নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত কার্যকর থাকবে।
শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তীব্র দাবদাহের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস ২২ এপ্রিল থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত অনলাইনে অনুষ্ঠিত হবে। তবে ওই সময়ে অনুষ্ঠিতব্য সব পরীক্ষা যথারীতি চলমান থাকবে।
সশরীরে ক্লাস বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনিভার্সিটি অফ এশিয়া প্যাসিফিক ও ইউনিভার্সিটি অফ ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্সেস। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস অনলাইনে চলবে।
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাসের সময়সীমা কমিয়ে এনেছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির ক্লাস সকাল ৮টা থেকে ১২টা পর্যন্ত চলবে। আগে তা সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত হতো।
আরও পড়ুন:চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের সময় ৫ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক মো. আবুল বাশারের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে রোববার এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের সময় ৫ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। সোনালী সেবার মাধ্যমে ৬ মে পর্যন্ত ফি পরিশোধ করা যাবে। বিলম্ব ফিসহ ফরম পূরণের সময় ৭ মে থেকে শুরু হয়ে চলবে ১২ মে পর্যন্ত। আর সোনালী সেবার মাধ্যমে ফি পরিশোধ করা যাবে ১৩ মে পর্যন্ত।
এবার বিজ্ঞান শাখার পরীক্ষার্থীদের দুই হাজার ৬৮০ টাকা এবং মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষার জন্য দুই হাজার ১২০ টাকা করে ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখার কোনো পরীক্ষার্থীর চতুর্থ বিষয়ে ব্যবহারিক পরীক্ষা থাকলে এ ফির সঙ্গে অতিরিক্ত ১৪০ টাকা যুক্ত হবে। মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখার কোনো শিক্ষার্থীর নৈর্বাচনিক বিষয়ে ব্যবহারিক থাকলে বিষয়প্রতি আরও ১৪০ টাকা যোগ করা হবে।
এছাড়া পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফি বাবদ পত্রপ্রতি ১১০ টাকা, ব্যবহারিকের ফি বাবদ পত্রপ্রতি ২৫ টাকা, একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্টের ফি বাবদ পরীক্ষার্থীপ্রতি ৫০ টাকা, মূল সনদ বাবদ ১০০ টাকা, বয়েজ স্কাউট ও গার্ল গাইডস ফি বাবদ ১৫ টাকা এবং জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ফি বাবদ পরীক্ষার্থীপ্রতি ৫ টাকা নেয়া হবে।
অনিয়মিত শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে পরীক্ষার্থী প্রতি ১০০ টাকা অনিয়মিত ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। জিপিএ উন্নয়ন ও প্রাইভেট পরীক্ষার্থীদের জন্য ১০০ টাকা তালিকাভুক্তি ফি নির্ধারণ এবং রেজিস্ট্রেশন নবায়ন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ২৫০ টাকা। বিলম্ব ফি ১০০ টাকা।
কেন্দ্র ফি বাবদ প্রত্যেক পরীক্ষার্থীকে ৪৫০ টাকা ও ব্যবহারিক পরীক্ষার ফি বাবদ পরীক্ষার্থীদের পত্রপ্রতি ২৫ টাকা দিতে হবে। আর ব্যবহারিক উত্তরপত্র মূল্যায়ন ফি দিতে হবে ২০ টাকা।
প্রসঙ্গত, এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফরম পূরণ শুরু হয় ১৬ এপ্রিল। এই কার্যক্রম ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত কার্যকর করার সময়সূচি ছিল। আর বিলম্ব ফি দিয়ে ফরম পূরণের সুযোগ ছিল ২৯ এপ্রিল থেকে ২ মে পর্যন্ত।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য