এক কেজি চিনির জন্য কারওয়ান বাজারের অন্তত ১০টি দোকান ঘুরেছেন রবিউল ইসলাম। কিচেন মার্কেটের নিচ ও দ্বিতীয় তলায় সোমবার তন্নতন্ন করে খুঁজেও চিনির দেখা পাননি এ শিক্ষক।
তার ভাষ্য, ‘এক কেজির দাম যদি ৫০০ টাকাও হয়, তারপরও তো পণ্যটি বাজারে থাকবে! উধাও করে দেয়ার উদ্দেশ্য কী?’
এক মাসের বেশি সময় ধরে বাজারে চিনির তীব্র সংকট দেখছেন রবিউলের মতো অনেকে। দুই-এক দোকানে পাওয়া গেলেও দাম আকাশচুম্বী। সরকারের তরফ থেকেও সরবরাহ বাড়াতে উদ্যোগ নেই। ফলে এ বাজার থেকে ও বাজারে ঘুরেও চিনির দেখা মিলছে না।
এদিকে এ মাসের শুরু থেকে বাজার থেকে উধাও হয়েছে ভোজ্যতেল। উৎপাদন কম হচ্ছে অজুহাতে সব পর্যায়ে সংকট সৃষ্টি করে বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে দাম, কিন্তু সত্যতা যাচাই করতে বাজার যাচাই করেনি সরকারের কোনো প্রতিষ্ঠান। শুধু চিনি আর তেলই নয়। আটা ও মসলার দাম বাড়ছে হু হু করে।
লম্বা সময় চিনির সংকট
লম্বা সময় ধরেই চিনি নিয়ে সংকটে পড়েছে ক্রেতা। বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্যের দেখা মিলছে না। যাও দুই-এক দোকানে পাওয়া যাচ্ছে, তার কেজি ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা।
চিনি সংকটে ব্যাহত হচ্ছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা পরিচালনা। বাসাবাড়িতেও স্পষ্ট চিনির শূন্যতা, কিন্তু সরবরাহ নিশ্চিতে নেয়া হচ্ছে না কোনো পদক্ষেপ।
রাজধানীর শেওড়াপাড়া এলাকায় চা বিক্রি করেন বিল্লাল মিয়া। প্রতিদিন প্রয়োজন হয় তিন কেজি চিনি, কিন্তু এতটুকু চিনি জোগাড় করতেই যেন ঝক্কির শেষ নেই।
তিনি বলেন, চিনি জোগাড় করতে অনেক কষ্ট করতে হয়। দোকান বন্ধ করে রাতে চিনির জন্য বের হতে হয়।
কারওয়ান বাজারে শরবত বিক্রি করেন মোশাররফ হোসেন। দিনে এই ব্যবসায়ীর দরকার হয় অন্তত ছয় থেকে সাত কেজি চিনি, কিন্তু একে তো দাম বেশি, অন্যদিকে পাওয়া যায় না। তাই চিনির বদলে এখন গুড়ই ভরসা।
তিনি বলেন, চিনি পেলেও দাম বেশি। গুড়েই পড়তা হয়।
কারওয়ান বাজারের ফুটপাতে জিলাপি তৈরি করে বিক্রি করেন মিলটন। তিনি বলেন, চিনি না পাওয়ায় জিলাপি বিক্রি কমিয়ে দিতে হয়েছে।
বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে চিনি উৎপাদক সমিতির বৈঠক হয় গেল সপ্তাহে। সেখানে ব্যবসায়ীরা উৎপাদন কম হওয়ার পেছনে গ্যাস স্বল্পতাকে দায়ী করেন।
মন্ত্রী আশ্বাস দেন স্বল্প সময়ে এ সংকট কেটে যাবে, কিন্তু এখনও পরিস্থিতির উন্নতি নেই। ওদিকে বাজারে যাও চিনি মিলছে, তা সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে না।
নির্ধারিত দাম কত
৪ নভেম্বর আন্তর্জাতিক ও দেশীয় চিনির বাজারমূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দেশি প্যাকেটজাত এক কেজি চিনির দাম ৮৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯৯ টাকা নির্ধারণ করে দেয় বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি)।
সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয়, কোনো বিক্রেতা এর থেকে বেশি দামে দেশি চিনি বিক্রি করতে পারবেন না।
এর আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ৬ অক্টোবর খোলা চিনি ৯০ টাকা ও প্যাকেটজাত চিনির দাম ৯৫ টাকা নির্ধারণ করে দেয়, কিন্তু বাস্তবে নির্ধারণ করে দেয়া কোনো দামই কার্যকর হয়নি। উল্টো সরবরাহ ঘাটতির উল্লেখ করে দাম ক্রমে বেড়ে চলেছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বছরে চিনির চাহিদা ১৮ থেকে ২০ লাখ টন। এর মধ্যে দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত মিলগুলোতে ৩০ হাজার টন চিনি উৎপন্ন হয়। বাকি চিনি বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়।
চিনি চেয়ে ব্যবসায়ীদের চিঠি
চিনির সরবরাহ নির্বিঘ্ন করতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে চিঠি দিয়েছেন অনেক ব্যবসায়ী।
কারওয়ান বাজারের মেসার্স রাহা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মাহফুজুর রহমান চারটি কোম্পানি থেকে চিনির চাহিদা দেন।
তিনি তীর ব্র্যান্ডের ৩২০ বস্তা, ফ্রেশের ৩২০ বস্তা, ইগলুর ৩২০ বস্তা এবং দেশবন্ধু চিনির ৩২০ বস্তার চাহিদা দেন।
এই বাজারের মেসার্স আমিন জেনারেল স্টোরের মিজানুর রহমানও ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের (ডিজি) কাছে চিনি চেয়ে চিঠি দিয়েছেন। এই ব্যবসায়ীও ৩২০ বস্তা করে চারটি কোম্পানি থেকে চিনি চেয়ে আবেদন করেন।
ব্যবসায়ীরা বলেন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এক সভায় চিনির সংকট হলে অবগত করতে নির্দেশ দেয়া হয়। ব্যবসায়ীরা তাই চিনি চেয়ে আবেদন করেন।
দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব, তেল হাওয়া
লিটারে বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৫ টাকা বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে তেল উৎপাদক সমিতি। নতুন প্রস্তাবে ১ লিটার বোতলজাত সয়াবিন ১৯৩ টাকা, ৫ লিটার ৯৫৫ টাকা, ১ লিটার খোলা সয়াবিন ১৭৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
চলতি মাসের প্রথমেই দাম বৃদ্ধির আবেদন করা হলে ট্যারিফ কমিশনকে সার্বিক বিষয় পর্যালোচনার জন্য নির্দেশনা দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সে অনুযায়ী দাম প্রস্তাব হলে মন্ত্রণালয় থেকে নতুন করে কোনো দাম নির্দিষ্ট করা হয়নি। ফলে দাম কার্যকর না করায় তেলের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
খুচরা কিংবা পাইকারি সব পর্যায়ে তীব্র হয়েছে তেলের ঘাটতি। ক্রেতারা ঘুরছেন এ দোকান থেকে ও দোকান, কিন্তু দ্রুত পাচ্ছেন না তেলের দেখা। দোকানিরা বলছেন, কোম্পানি ডিও বা চাহিদাপত্র নেয়া বন্ধ করে দিয়েছে।
এর আগে বেশ কয়েকবার তেলের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবের পরই সরবরাহে সংকট তৈরি করে তেল উৎপাদক একাধিক প্রতিষ্ঠান। তৈরি হয়, বাজারে অস্থিরতা। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
বছরে দেশে ভোজ্যতেলের চাহিদা ২০ লাখ টন।
মসলার বাজারেও উত্তাপ
বাড়ছে মসলাজাতীয় পণ্যের দাম। আমদানিনির্ভর বেশিরভাগ মসলায় কেজিতে দাম বেড়েছে ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত। জিরা, কাজু বাদাম, লবঙ্গ, এলাচসহ কয়েকটি পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। চাহিদার তুলনায় বাজারে সরবরাহ কমায় বাড়ছে দাম।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বেশিরভাগ মসলার দামই ঊর্ধ্বমুখী। পাইকারি পর্যায়ে দাম বৃদ্ধির প্রভাব গিয়ে পড়ছে খুচরা পর্যায়ে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, এক সপ্তাহের ব্যবধানে জিরার দাম কেজিপ্রতি বেড়েছে প্রায় ১০০ টাকা; বেড়েছে লবঙ্গের দামও। কাজু ও কাঠ বাদামেও বাড়ার প্রবণতা।
পাইকারি পর্যায়ে সাড়ে ৪০০ টাকার কিসমিসের কেজি এখন হয়েছে প্রায় ৬০০ টাকা। এলাচের কেজি এখন সাড়ে ১৩০০ টাকা। বেড়েছে দেড় শ টাকার বেশি। দারুচিনির দামও ক্রেতার নাগালে নেই।
দামের দৌড়ে আছে আটাও
সপ্তাহ দুয়েক আগে এক দফা বেড়েছিল আটার দাম। তখন প্রতি কেজির দাম ছিল ৬৫ টাকা, তবে আরেক দফা বেড়েছে সব ধরনের আটার দাম। বাজারে নতুন আসা প্যাকেটজাত দুই কেজি আটার সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য এখন ১৪০ থেকে ১৪২ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কেজি আটার দাম পড়ছে ৭০/৭১ টাকা। দুই কেজি প্যাকেটজাত লাল আটা ১৪৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
উৎপাদন ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, গ্যাস সংকটে উৎপাদন কমে গেছে। ডলারের দাম বাড়ার কারণে বেসরকারি পর্যায়ে গম আমদানিও কমেছে। ফলে চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত আটা বাজারে নেই। আবার উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় দাম সমন্বয় করা হয়েছে।
বাড়তি দরের আটা বাজারে আসার আগে কয়েক দিন বাজারে এর সংকট ছিল। প্রতিষ্ঠানগুলো তখন সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে বলে জানান খুচরা ব্যবসায়ীরা।
আরও পড়ুন:দেশে বৈদেশিক মুদ্রার কোনো ঘাটতি নেই উল্লেখ করে বাজারের চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করতে ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার অর্থ মন্ত্রণালয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ে এক সভা শেষে ড. মনসুর সাংবাদিকদের বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রায় কোনো ঘাটতি নেই, যে কেউ এলসি খুলতে পারবেন।’
বাজারে চাহিদা পূরণে প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে ড. মনসুর ব্যবসায়ীদের দৃঢ়তার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘এলসি খুলুন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করুন এবং বাজারের চাহিদা মেটান।’
গভর্নর মুক্তবাজার অর্থনীতিতে নিজের বিশ্বাস ও আস্থা পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ‘বাজার শক্তি বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল করতে সহায়তা করবে। আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। তবে পরিস্থিতি শান্ত হতে সময় লাগবে।’
ড. মনসুর রেশনিং কর্মসূচি সম্প্রসারণসহ মূল্যস্ফীতি কমানোর লক্ষ্যে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি ঘোষণা করেন সরকার শিগগিরই কে কোটি সুবিধাভোগী পরিবারের প্রত্যেকের জন্য বর্তমান পাঁচ কেজি থেকে বাড়িয়ে ১০ কেজি করে প্রয়োজনীয় পণ্য বিতরণ করবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা সাশ্রয়ী মূল্যে নিত্যপণ্যের সহজলভ্যতা বাড়ানোর লক্ষ্যে ওপেন মার্কেট সেল (ওএমএস) উদ্যোগের জন্য ট্রাকের সংখ্যা বাড়াচ্ছি।’
ড. মনসুর বলেন, ‘মুদ্রাস্ফীতি শেষ পর্যন্ত একটি আর্থিক ঘটনা এবং এটি অবশ্যই কার্যকর মুদ্রানীতির মাধ্যমে পরিচালনা করতে হবে।’
তিনি অতিরিক্ত বাজার হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে সতর্ক করেন এবং অতীতের ঘটনাবলী স্মরণ করিয়ে দেন, যেখানে কঠোর পদক্ষেপের ফলে পণ্যের ঘাটতি দেখা দিয়েছিল।
গভর্নর বলেন, ‘আমরা যদি খুব বেশি চাপ প্রয়োগ করি তবে পণ্যগুলো বাজার থেকে অদৃশ্য হয়ে যাবে। ১/১১-এর সময়কালে এবং সাম্প্রতিক ডিম সংকটের সময়ও আমরা তা দেখেছি। বরং এর পরিবর্তে আমরা সংলাপের মাধ্যমে চাপ দিচ্ছি, অতিরিক্ত পর্যবেক্ষণ নয়।
‘আমরা বিশ্বাস করি যে পরিস্থিতি স্থিতিশীল হবে, এটি কেবল সময়ের প্রয়োজন।’
সরবরাহ বাড়ানোর সরকারি প্রচেষ্টা শেষ পর্যন্ত স্বস্তি আনতে সহায়তা করবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
আরও পড়ুন:সরকার নভেম্বর মাসে ডিজেল ও কেরোসিনের খুচরা মূল্য ১০৫ টাকা ৫০ পয়সা থেকে কমিয়ে ১০৫ টাকা করেছে, তবে অকটেন ও পেট্রলের দাম আগের মতো যথাক্রমে ১২৫ ও ১২১ টাকা রাখা হয়েছে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, ‘১ নভেম্বর থেকে খুচরা ক্রেতাদের আর্থিক সাশ্রয় নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দামের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে একটি স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে এই মূল্য সমন্বয় করা হয়েছে।’
বিগত আওয়ামী লীগ সরকার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শ অনুযায়ী বিশ্ববাজার দরের সঙ্গে সমন্বয় রাখতে ২০২৩ সালের মার্চে স্বয়ংক্রিয় জ্বালানি মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি চালু করে।
যশোরের বেনাপোল বন্দরে ভারত থেকে আমদানি করা ডিমের ৫ শতাংশ শুল্কায়ন মূল্যের ২ লাখ ৩১ হাজার ৮৪০টি ডিমের আরও একটি চালান এসে পৌঁছেছে।
এখন থেকে ২৫ শতাংশের পরিবর্তে ৫ শতাংশে শুল্কায়ন হবে। আগামী ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ শুল্ক সুবিধা পাবেন আমদানিকারকরা।
ডিমের এ চালান বুধবার সকালে খালাসের জন্য কাস্টমস হাউসে প্রয়োজনীয় নথি জমা দিয়েছে বেনাপোলের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট রাতুল ইন্টারন্যাশনাল।
এর আগে মঙ্গলবার রাত সাড়ে আটটার দিকে ডিমের এ চালান বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করে।
কাস্টমস হাউস সূত্রে জানা যায়, গত ৮ সেপ্টেম্বর থেকে ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত ৫ চালানে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ১১ লাখ ৫৯ হাজার ২০০টি ডিম আমদানি হয়েছে।
এর আগে গত বছরের ৫ নভেম্বরে আমদানিকারক ঢাকার রামপুরার বিডিএস করপোরেশন ৬১ হাজার ৯৫০ টিম ডিম আমদানি করে। এর বাইরে আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে সরকারের পক্ষ থেকে আমদানির অনুমতি দেয়া হলেও এসব প্রতিষ্ঠান এখনও ডিম আমদানি করেনি।
ডিমের সরবরাহ বৃদ্ধি ও বাজার দর কমাতে গত ১৭ অক্টোবর শুল্ক কমানো সংক্রান্ত আদেশ জারি করেছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। আদেশটি বেনাপোল কাস্টমসে আসে গত ২০ অক্টোবর।
আদেশ পাওয়ার পর ২১ অক্টোবর একটি চালানের ২ লাখ ৩১ হাজার ৮৪০টি ডিম ৭৬ পয়সায় শুল্কায়ন করা হয়। গত ৯ সেপ্টেম্বর থেকে ২৯ অক্টোবর ডিমের ৫টি চালান আসে বেনাপোল বন্দরে।
আর এসব চালান কাস্টমস থেকে ছাড় করতে কাজ করছে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট মেসার্স রাতুল ইন্টারন্যাশনাল।
আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান হাইড্রোল্যান্ড সল্যুশনের ম্যানেজার ইকরামুল হাসান সজিব বলেন, ‘নতুন নির্ধারণ করা শুল্কে ডিম খালাস নিচ্ছি। গত ২১ অক্টোবর ৫ শতাংশ শুল্কের ডিম খালাস শুরু হয়। প্রতিটি ডিম আগে ১ টাকা ৯৬ পয়সা শুল্কায়ন করা হতো। শুল্ক কমানোয় এখন থেকে প্রতিটি ডিমে মাত্র ৭৭ পয়সা শুল্ককর পরিশোধ করতে হবে।
‘এতে আমদানি করা নতুন চালানের এসব ডিম বাজারে ৯ টাকা দরে বিক্রি করা যাবে। এই ডিমের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের নাম হাইড্রোল্যান্ড সল্যুশন। রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ভারতের শ্রী লক্ষী এন্টারপ্রাইজ।’
বেনাপোল কাস্টমস হাউসের ডেপুটি কমিশনার অথেলো চৌধুরী জানান, কম শুল্কে গত ২১ অক্টোবর ২ লাখ ৩১ হাজার ৮৪০টি ডিম খালাস দেয়া হয়েছিল এবং আজ ২ লাখ ৩১ হাজার ৮৪০টি খালাস দেয়া হচ্ছে।
আরও পড়ুন:বাজার নিয়ন্ত্রণে ভোক্তা অধিকারের অভিযানের পাশাপাশি দেশের প্রতিটি জেলায় টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি অডিটরিয়ামে শনিবার ভোক্তা অধিকার সংস্থা কনশাস কনজ্যুমার্স সোসাইটি (সিসিএস) আয়োজিত ভোক্তা অধিকার সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, ভোক্তা অধিকার আইন সংশোধনের ব্যাপারে ইতোমধ্যে কমার্স মিনিস্ট্রির অনারেবল অ্যাডভাইজারের সঙ্গে কথা বলেছি। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। খুব দ্রুতই ভোক্তা অধিকার আইনকে আরও শক্তিশালী করা হবে।’
আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘বাংলাদেশে কৃষকের মার্কেটটা অনেক বড়। জিডিপির প্রায় ১৫ শতাংশ। এটা ব্যবসার জন্য ভালো সুযোগ। যারা এটা নিয়ে কাজ করতে চাইবে তাদের নিজের উন্নতি হবে; একইসঙ্গে জনকল্যাণেও কাজে আসবে।
‘তরুণদের প্রতি আহ্বান থাকবে- তারা কৃষি সেক্টরে এগিয়ে আসুক। সরকারের পক্ষ থেকে তাদের সবরকম সহযোগিতা করা হবে। কোনো বাধা এলে সরকার তা মোকাবিলা করবে।’
সকাল ৯টায় এই সম্মেলন শুরু হয়ে চলে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। এবারের সম্মেলনে ১০ জন সাংবাদিককে ‘ভোক্তা অধিকার সাংবাদিকতা পুরস্কার’ দেয়া হবে।
এই সম্মেলনে দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের পাশাপাশি প্রায় ৫০টি জেলা ও ৫০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বাছাইকৃত ভোক্তা সংগঠকরা অংশ নেন।
আরও পড়ুন:দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে গত ছয় দিনে ৩ হাজার ৫৮৭ টন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীরা দাবি করেছেন, পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে।
হিলি স্থলবন্দর আমদানি- রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন শিল্পী শুক্রবার রাতে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, হিলি স্থলবন্দর পাইকারি বাজারের আড়তগুলোতে শুক্রবার বিকেলে ভারতীয় পেঁয়াজের দাম এক লাফে কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা দাম কমেছে। দেশের বাজার স্বাভাবিক রাখতে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি অব্যাহত রয়েছে।
প্রতিদিন ভারত থেকে ২২ থেকে ২৭ ট্রাক পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে। গত ১৯ থেকে ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত এ বন্দর দিয়ে ভারতীয় ১২৭টি ট্রাকে ৩ হাজার ৫৮৭ টন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে। এসব পেঁয়াজ নতুন শুল্ক ২০ শতাংশ দিয়ে আমদানি করা হচ্ছে।
আমদানির তুলনায় পেঁয়াজের দাম কেন কমছে না, এই বিষয়টি সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নজরদারি ও মনিটরিং বাড়ানো প্রয়োজন বলে তিনি দাবি করেন। এতে হতাশা প্রকাশ করেছেন সাধারণ ক্রেতারা।
হিলি খুচরা বাজার শুক্রবার রাতে ঘুরে দেখা গেছে, মানভেদে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা কেজি দরে ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। দুই সপ্তাহ আগে ওই পেঁয়াজ মানভেদে ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। আর দেশি পেঁয়াজ ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
হিলি স্থলবন্দরের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী আরুজুল্লাহ সরকার বলেন, ‘অন্যান্য জায়গার তুলনায় হিলি স্থলবন্দরে কিছুটা হলেও পেঁয়াজের দাম কমে গেছে। আগে যেখানে ৮ থেকে ১০ ট্রাক পেঁয়াজ আমদানি হতো, এখন প্রতিদিন ২২ থেকে ২৭ ট্রাক পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে, তবে আশা করছি আর কয়েক দিন পর পেঁয়াজের দাম ৫০ টাকার নিচে নেমে আসবে।’
আরও পড়ুন:সিন্ডিকেট ভাঙতে বিকল্প কৃষিবাজার চালুর চিন্তা-ভাবনা করছে সরকার।
শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এমনটা জানিয়ে বলেছেন, এই বাজারের মাধ্যমে উৎপাদন পর্যায় থেকে কৃষকের পণ্য সরাসরি ভোক্তাদের কাছে পৌঁছে যাবে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর বেগুনবাড়িতে ঢাকা শহরের ৫০টি স্থানে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে সাধারণ ভোক্তাদের কাছে ভর্তুকি মূল্যে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অফ বাংলাদেশের (টিসিবি) পণ্য বিক্রি কার্যক্রম উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা জানান।
উপদেষ্টা বলেন, বাজার সিন্ডিকেট ভাঙতে বিকল্প কৃষিবাজার চালুর কথা ভাবা হচ্ছে। উদ্দেশ্য, কৃষক যেন সরাসরি ভোক্তা পর্যায়ে পণ্য বিক্রি করতে পারে। যারা এটি করবে তাদের সহায়তা করবে সরকার। টাস্কফোর্স সিন্ডিকেট ভাঙার জন্য সরকার ইতোমধ্যে দীর্ঘমেয়াদি কাজ শুরু করেছে বলেও জানান শ্রম উপদেষ্টা।
বন্যাসহ আরও কিছু কারণে বাজারে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সিন্ডিকেট কিংবা ফরিয়াদের মজুদসহ কারসাজির কারণে বাজারে দ্রব্যমূল্য ও জনদুর্ভোগ বাড়ে। এর বিরুদ্ধে সরকার কঠোর অবস্থানে থাকবে।
তিনি আরও বলেন, বেসরকারিভাবে কৃষক থেকে ভোক্তা পর্যায়ে পণ্য পৌঁছে দেয়ার যে কার্যক্রম শুরু হয়েছে তা আরও ছড়িয়ে দিতে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসতে হবে। এ ছাড়া সিন্ডিকেট ভাঙতে সহায়তা করবে কৃষিবাজার। দীর্ঘমেয়াদে এই সমস্যা সমাধানে কাজ করবে সরকার।
আরও পড়ুন:চালের সরবরাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে আমদানি শুল্ক ও রেগুলেটরি শুল্ক কমানোর পাশাপাশি আগাম কর প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে রোববার জানিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাজারে চালের সরবরাহ বৃদ্ধি, দেশের আপামর জনগণের ভবিষ্যৎ খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং চালের মূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে ও সহনীয় পর্যায়ে রাখার লক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড চালের ওপর আমদানি শুল্ক ও রেগুলেটরি শুল্ক হ্রাস এবং আগাম কর প্রত্যাহার করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড হতে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
‘চালের ওপর বিদ্যমান আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ হতে হ্রাস করে ১৫ শতাংশ, বিদ্যমান রেগুলেটরি শুল্ক ২৫ শতাংশ হতে হ্রাস করে পাঁচ শতাংশ এবং বিদ্যমান পাঁচ শতাংশ আগাম কর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হয়েছে।’
এতে আরও বলা হয়, ‘চাল আমদানিতে বিদ্যমান শুল্ক-করাদি হ্রাস করার ফলে আমদানি পর্যায়ে প্রতি কেজি চালের আমদানি ব্যয় ১৪.৪০ টাকা কমবে। আমদানি শুল্ক ও রেগুলেটরি শুল্ক হ্রাস এবং আগাম কর প্রত্যাহারের ফলে বাজারে চালের সরবরাহ বৃদ্ধি পাবে, দেশের আপামর জনগণের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে এবং চালের মূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকবে মর্মে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আশা করছে।’
মন্তব্য