অল্প দিন হলো বিয়ে করেছেন আরিফ ও সুস্মিতা। দুজনই চাকরিজীবী। আগামীর নিরাপত্তায় সংসারের শুরু থেকে সঞ্চয় করতে আগ্রহী এই দম্পতি, কিন্তু সঞ্চয়ের জন্য উপযুক্ত মাধ্যম কোনটি? ব্যাংক এবং সঞ্চয়পত্রের স্কিম যাচাই-বাছাই নিয়ে তৈরি হয়েছে দ্বিধাদ্বন্দ্ব।
তারা বলেন, প্রতি মাসে নির্ধারিত হারে অর্থ জমা করতে চান তারা। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকে নিরাপত্তা আছে, কিন্তু মুনাফার হার খুবই কম। আর জমানো কিছু টাকা আছে, সেটা রাখার ক্ষেত্রে সঞ্চয়পত্রে তুলনামূলকভাবে মুনাফার হার বেশি, তবে টিআইএনসহ নানা ক্ষেত্রে ঝক্কিঝামেলার শেষ নেই।
আরিফ এবং সুস্মিতার মতোই সিদ্ধান্তহীনতায় বেসরকারি চাকরিজীবী আনিসুর রহমান। নতুন চাকরি তার। এ জন্য মাসে যে বেতন পান, তা থেকে সঞ্চয় করতে চান কিছু টাকা। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকই তার কাছে ভরসার জায়গা। কিন্তু মুনাফার হার খুবই কম। তিনি বলেন, কয়েক বছর ধরে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিনিয়োগ করে পাঁচ বছর পর যে মুনাফা পাওয়া যাবে, তা আকাঙ্ক্ষার চেয়ে খুবই কম। অথচ কয়েক বছর আগেও মুনাফার হার ছিল বেশি, যা বিপদ-আপদে নিশ্চিত করত জীবনের নিরাপত্তা।
ব্যাংক খাতে আমানতের সুদহার নিয়ে বাড়ছে হতাশা।
বর্তমানে ব্যাংকের সুদহার এত কমে গেছে যে, টাকা রেখে যে সুদ আসছে, তা দিয়ে মূল্যস্ফীতির ঘাটতিই মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। বর্তমানে আমানতের সুদহার সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ বেঁধে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর ওপর বিভিন্ন মাশুল কাটার পর চলতি বছরের জুন শেষে ব্যাংক খাতে আমানতের গড় সুদ হার দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ১৩ শতাংশ। অবশ্য ব্যাংকভেদে এর চেয়ে সামান্য বেশি সুদ পাওয়া যায়। অথচ পাঁচ বছর আগেও সুদহার ছিল ৬ দশমিক ৮০ শতাংশ।
দেশে গত জুন শেষে গড় মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ।
এর অর্থ হলো, ব্যাংকে টাকা রাখলে তা কমে যায়।
ধরুন, ব্যাংকে কেউ ১০০ টাকা জমা রেখেছেন। সুদের হার ছয় ভাগ হলে বছর শেষে তিনি ১০৬ টাকা পাবেন। কিন্তু মূল্যস্ফীতির হারও যদি ছয় ভাগ হয়, তাহলে ১০০ টাকায় এখন যে পণ্য বা সেবা পাওয়া যায়, বছর শেষে তার জন্য ১০৬ টাকা খরচ করতে হবে। সে ক্ষেত্রে ব্যাংকে টাকা জমা রেখে সেই টাকা থেকে প্রকৃতপক্ষে কোনো আয় হবে না আমানতকারীদের।
আর সুদের হার ছয়ের নিচে নামা মানেই মূল্যস্ফীতি ও টাকার ক্রয়ক্ষমতা বিবেচনায় বছর শেষে মূল টাকা কমে যাচ্ছে।
ব্যাংকসংশ্লিষ্টরা জানান, কয়েক বছর আগেও ব্যাংকে মেয়াদি আমানত রেখে ৯ থেকে ১২ শতাংশ সুদ পাওয়া যেত। তবে ব্যাংকগুলোর কাছে প্রচুর অলস অর্থের কারণে হাতে গোনা দু-একটি ব্যাংক ছাড়া ৫ থেকে ৬ শতাংশের বেশি সুদ মিলছে না।
ব্যাংকভেদে বর্তমানে ৫ লাখ টাকায় বছরে ব্যাংক সুদ দেয় ৩০ থেকে ৩২ হাজার টাকা। এর মধ্যে কর শনাক্তকরণ (টিআইএন) নম্বর থাকলে কেটে নেয়া হয় ৩ হাজার টাকা। টিআইএন না থাকলে কাটা হয় সাড়ে ৪ হাজার টাকা। আর বছরে হিসাব পরিচালনার জন্য কাটা হয় ২৫০ টাকা। চেক বইয়ের জন্য আরও ৩০০ টাকা। এর ওপর কাটা রয়েছে ১৫ শতাংশ কর, যা ৮২ টাকা ৫০ পয়সা। আর প্রতিবছর সরকার আবগারি শুল্ক কেটে নেয় ৫০০ টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সুদহার নির্দিষ্ট করে দেয়ার কারণে ক্ষুদ্র আমানতকারীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। দরিদ্র, মধ্যবিত্তদের মূল সম্পদ হচ্ছে টাকা। সামান্য টাকা তারা নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে ব্যাংকে রাখেন। কিন্তু সুদ এত কম যে, তাদের টাকা কমে যাচ্ছে। ফলে সঞ্চয়ের অভ্যাস কমে যাবে।’
ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আরফান আলী বলেন, ‘বর্তমানে আমানতে যে সুদ দেয়া হচ্ছে, তা মূল্যস্ফীতির চেয়ে কম। এর চেয়ে বেশি সুদ দেয়ার সুযোগও নেই। যারা আমানতের সুদের ওপর নির্ভরশীল, তাদের চলা আসলেই কঠিন হয়ে পড়েছে।’
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘ঋণের সুদহার নির্দিষ্ট করে দেয়ায় ব্যাংকগুলো আমানতে বেশি সুদ দিতে পারছে না। এ জন্য যারা সুদের ওপর নির্ভরশীল, তাদের সমস্যা হচ্ছে। অনেকেই অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করছেন। কিন্তু ব্যাংকে টাকা রাখা যত সহজ, সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ তত সহজ নয়। ফলে মানুষ ঘুরেফিরে ব্যাংকেই ফিরে আসছেন।’
কোন ব্যাংকে কত সুদ
জুন শেষে রাষ্ট্রীয় মালিকানার সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের গড় সুদহার ৪ দশমিক ৩৫ শতাংশ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সুদ বেসিক ব্যাংকে ৬ দশমিক ১০ শতাংশ।
বিশেষায়িত কৃষি, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ও প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের গড় সুদহার ৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ। এর মধ্যে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক আমানতে ৭ দশমিক ৭০ শতাংশ সুদ দিচ্ছে।
বেসরকারি ব্যাংকগুলোর গড় সুদহার ৪ দশমিক ১৯ শতাংশ। এসব ব্যাংকের মধ্যে আমানতকারীদের বেশি সুদ দিচ্ছে পদ্মা ব্যাংক ৭ দশমিক ৬৮ শতাংশ, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ৭ দশমিক ১০ শতাংশ ও ন্যাশনাল ব্যাংক ৭ শতাংশ।
এ ছাড়া ইউনিয়ন ব্যাংক ৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক ৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ , সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক ৫ দশমিক ৮৪, মেঘনা ৫ দশমিক ৫৯, এনআরবি ৫ দশমিক ৩৩, মধুমতি ব্যাংক ৫ দশমিক ২৪ ও মার্কেন্টাইল ব্যাংক ৫ দশমিক ০৯ শতাংশ আমানতে সুদ দিচ্ছে।
বিদেশি মালিকানার নয়টি ব্যাংকের আমানতে গড় সুদহার মাত্র দশমিক ৯৩ শতাংশ।
সুফল নেই সঞ্চয়ে
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সব মিলিয়ে দেশে ব্যাংক খাতে আমানতের বিপরীতে গড় সুদহার ৪ দশমিক ১৩ ভাগ। অন্যদিকে একই মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হারও দাঁড়িয়েছে সাড়ে পাঁচ ভাগের বেশি। সুদহার যতটুকু, তার সবটাই আবার হাতে আসে না। কেটে রাখা হয় ব্যাংকের চার্জ ও সরকারের শুল্ক। এর মানে টাকার মূল্যমানের অবচয় বিবেচনায় আমানতকারী যে পরিমাণ টাকা রাখছেন, বছর শেষে পাচ্ছেন তার চেয়ে কম।
এ কারণে ব্যাংকে টাকা রেখে সঞ্চয়কারীরা এখন আর প্রকৃত অর্থে লাভবান হতে পারছেন না। বরং তাদের জমা করা টাকার মূল্যমান বা আয় কমে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
ব্যাংকের সুদহারের সাথে বড় ধরনের তফাতে গত কয়েক বছরে সাধারণ মানুষের টাকা জমা রাখার নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হয়ে উঠেছিল সঞ্চয়পত্র। ব্যাংকের বাইরে এখন সঞ্চয়পত্রে টাকা রাখতে বেশি আগ্রহী আমানতকারীরা। তবে এখানে বিনিয়োগে নানা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। বিশেষ করে কেউ সঞ্চয়পত্র কেনার পর এক বছরের মধ্যে ভাঙালে কোনো সুদ পান না। তবে সুদহার বেশি হওয়ার কারণে গত কয়েকটি অর্থবছরে এর বিক্রি সরকারের বাজেটে ধরা লক্ষ্যমাত্রাকে ছাড়িয়ে যেতে থাকে। ফলে বাড়তে থাকে সরকারের সুদব্যয়।
এমন অবস্থায় সঞ্চয়পত্র বিক্রির রাশ টানতে গত বছরের জুলাই থেকে সঞ্চয়পত্র কেনার ক্ষেত্রে টিআইএন ও ব্যাংক হিসাব বাধ্যতামূলক করে দেয় সরকার। অনলাইনে আবেদনের পাশাপাশি উৎসে করের হার পাঁচ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়।
ব্যাংক ও সঞ্চয়পত্রের বাইরে বিনিয়োগের একটি বড় জায়গা সরকারের বিল ও বন্ড। তবে এখানে টাকা রেখে গত জুনে শূন্য দশমিক ৬৫ শতাংশ থেকে ২ দশমিক ৪৪ শতাংশ সুদ মিলেছে। এখানে বিনিয়োগ সুবিধার বিষয়ে সাধারণ মানুষের বেশির ভাগই জানেন না।
আর ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানে এখনও ৮ থেকে ১১ শতাংশ পর্যন্ত সুদ পাওয়া গেলেও কিছু প্রতিষ্ঠানের অবস্থা রুগ্ণ হওয়ায় এ ধরনের প্রতিষ্ঠানে সঞ্চয়ের প্রবণতা কম।
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ সবার জন্য উন্মুক্ত থাকলেও পুঁজি হারানোর ভয়ে সেখানে যান না অনেকে।
সুদ যত কমই হোক, এই মুহূর্তে ব্যাংকে টাকা রাখা ছাড়া মানুষের সামনে আর কোনো সুযোগ নেই বলে মনে করেন সালেহউদ্দিন আহমেদ৷ তিনি বলেন, ‘মানুষ তো ঘরে টাকা ফেলে রাখবেন না। বিকল্প সঞ্চয়ের মাধ্যমও তেমন নেই। একটি অংশ বেশি লাভের আশায় এমএলএম কোম্পানি, কো-অপারেটিভসহ এ ধরনের প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করে পুরো টাকা খোয়ানোর ঝুঁকিতে পড়েছেন। ফলে ঘুরেফিরে ব্যাংকই সাধারণ মানুষের ভরসা। ব্যাংকে টাকা রেখে তাৎক্ষণিক তোলার সুযোগ, জমানো টাকা অনলাইন ও কার্ডে ব্যবহার, ফেরত পাওয়ার নিশ্চয়তাসহ বিভিন্ন কারণে ব্যাংকেই টাকা রাখতে বেশি আগ্রহী মানুষ’।
আরও পড়ুন:দেশের বাজারে ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ২ হাজার ৬৫ টাকা বাড়িয়ে রেকর্ড ১ লাখ ১৯ হাজার ৬৩৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছরের সাড়ে তিন মাসে অষ্টমবারের মতো স্বর্ণের দাম সমন্বয় করা হলো।
বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রাইসিং অ্যান্ড প্রাইস মনিটরিং কমিটি বৃহস্পতিবার বৈঠক করে দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। পরবর্তীতে কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, স্থানীয় বাজারে তেজাবী স্বর্ণের (পাকা স্বর্ণ) দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে এই দাম বাড়ানো হয়েছে। নতুন নির্ধারিত এই দাম বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকেই কার্যকর হবে।
বিজ্ঞপ্তির তথ্য অনুযায়ী- ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ২ হাজার ৬৫ টাকা বেড়ে ১ লাখ ১৯ হাজার ৬৩৮ টাকা, ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণ ১ হাজার ৯৯৪ টাকা বেড়ে ১ লাখ ১৪ হাজার ২০২ টাকা, ১৮ ক্যারেট প্রতি ভরি স্বর্ণ ১ হাজার ৬৫৬ টাকা বেড়ে ৯৭ হাজার ৮৮৪ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণ ১ হাজার ৩৮৮ টাকা কমে ৭৮ হাজার ৮০২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, সবশেষ দশ দিন আগে ৮ এপ্রিল বাজুস ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ১ হাজার ৭৪৯ টাকা বাড়িয়ে ১ লাখ ১৭ হাজার ৫৭৩ টাকা নির্ধারণ করে। এতে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে স্বর্ণের সর্বোচ্চ দামের নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়। ১০ দিনের ব্যবধানে আবারও দাম বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে দেশের স্বর্ণের বাজারে উচ্চ দামের নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হলো।
অবশ্য স্বর্ণের গহনা কিনতে ক্রেতাদের আরও বেশি অর্থ গুনতে হবে। কারণ বাজুস নির্ধারণ করা দামের ওপর ৫ শতাংশ ভ্যাট যোগ করে স্বর্ণের গহনা বিক্রি করা হয়। সেসঙ্গে ভরি প্রতি মজুরি ধরা হয় ন্যূনতম ৩ হাজার ৪৯৯ টাকা। ফলে ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের গহনা কিনতে ক্রেতাদের গুনতে হবে ১ লাখ ২৯ হাজার ১১৯ টাকা।
এদিকে স্বর্ণের দাম বাড়ানো হলেও অপরিবর্তিত রয়েছে রুপার দাম। ২২ ক্যারেটের এক ভরি রুপার দাম ২ হাজার ১০০ টাকা, ২১ ক্যারেট ২ হাজার ৬ টাকা, ১৮ ক্যারেট ১ হাজার ৭১৫ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির এক ভরি রুপার দাম ১ হাজার ২৮৩ টাকা নির্ধারণ করা আছে।
আরও পড়ুন:বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু।
খোলা সয়াবিন তেলের দাম কমার কথাও জানিয়েছেন তিনি।
সচিবালয়ে বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান তিনি।
সয়াবিন তেলের দাম নিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘…১৪৯ টাকা যেটা খোলাবাজারে ছিল, সেটাকে দুই টাকা কমিয়ে ১৪৭ টাকা সর্বোচ্চ খোলাবাজারে সয়াবিন তেল বিক্রি হবে।
‘আর আমাদের সয়াবিন তেলের প্রতি লিটার, বোতল যেটা, পেট বোতলে যেটা, যেটার মধ্যে সিল করা থাকে, সেইটা আমাদের নির্ধারিত ছিল ১৬৩ টাকা। সেইখান থেকে বৃদ্ধি করে ১৬৭ টাকায় নির্ধারণ করা হয়েছে।’
খোলা সয়াবিন তেলের পাঁচ লিটারের বোতলের দামের বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আর খোলাবাজারে সয়াবিন তেল পাঁচ লিটারের বোতল ৮০০ টাকা ছিল। সেটাকে ৮১৮ টাকায় নির্ধারণ করা হয়েছে।’
পাম অয়েলের দাম নিয়ে টিটু বলেন, ‘সুপার পাম অয়েল তেল প্রতি লিটার, এটা আগে নির্ধারণ করা ছিল না। এবার আমরা নির্ধারণ করে দিচ্ছি। সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ১৩৫ টাকা লিটার।
‘তো এই চারটা পণ্যের দাম, এইটা কিন্তু আমরা নির্ধারণ করলাম না। আমাদের যারা অ্যাসোসিয়েশনের, তাদের রিকমেন্ডেশনে এবং আমাদের ট্যারিফ কমিশনের অনুমোদনক্রমে উনারা উনাদের অ্যাসোসিয়েশন থেকে চিঠি দিয়ে আগামীকাল থেকে এই মূল্য উনাদের মিল গেট থেকে উনারা কার্যকরী করবে।’
আরও পড়ুন:কেন্দ্রীয় ব্যাংক সম্প্রতি জানিয়েছিল যে আর কোনো ব্যাংককে একীভূতকরণের সুযোগ দেয়া হবে না। তবে সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে বিদেশি ব্যাংক আলফালাহকে অধিগ্রহণের জন্য ব্যাংক এশিয়াকে অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
নতুন মাত্রার অংশ হিসেবে বাংলাদেশের বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক এশিয়া বিদেশি ব্যাংক আলফালাহকে অধিগ্রহণের পরিকল্পনা করছে। সূত্র: ইউএনবি
করাচিভিত্তিক ব্যাংক আলফালাহ বুধবার (১৭ এপ্রিল) পাকিস্তান স্টক এক্সচেঞ্জকে এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, ব্যাংক আলফালাহ লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদ ব্যাংক এশিয়া লিমিটেডের বাংলাদেশ পরিচালনা, সম্পদ ও দায় অধিগ্রহণের জন্য প্রাপ্ত বাধ্যবাধকতামুক্ত ইঙ্গিতমূলক প্রস্তাবের ক্ষেত্রে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে।
এতে বলা হয়, ব্যাংক আলফালাহ বাংলাদেশের ব্যাংক এশিয়ার জন্য যথাযথ কার্যক্রম শুরুর জন্য স্টেট ব্যাংক অফ পাকিস্তানের অনুমোদন চাইছে।
ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহেল আর কে হুসেইন বলেন, ‘এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া এবং এটি একীভূতকরণ নিয়ে খুব বেশি আলোচনার অংশ নয়।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে দুই ব্যাংকের নির্বাহীদের সঙ্গে বৈঠকে অধিগ্রহণের বিষয়টি চূড়ান্ত রূপ পাবে বলে।
বিষয়বস্তু অবহিত না করে ওয়ালটনের আদর্শ ও নীতিমালার পরিপন্থিভাবে ‘রূপান্তর’ শিরোনামের একটি নাটক প্রচার করায় বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠান ‘লোকাল বাস এন্টারটেইনমেন্ট’কে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছে ওয়ালটন।
পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে সব ধরনের বিজ্ঞাপনী চুক্তি বাতিল করা হয়েছে। একইসঙ্গে বিষয়টির জন্য ওয়ালটন গ্রুপ ক্রেতা ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের নিকট আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছে।
ওয়ালটনের পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠান ‘লোকাল বাস এন্টারটেইনমেন্ট’ এর স্বত্বাধিকারী মোহন আহমেদকে মঙ্গলবার ওই আইনি নোটিশ পাঠানো হয়।
ওয়ালটনের পক্ষে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট রাইসুল ইসলাম রিয়াদ স্বাক্ষরিত আইনি নোটিশে উল্লেখ করে যা বলা হয়, ‘আপনি লোকাল বাস এন্টারটেইনমেন্ট বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠান এর স্বত্বাধিকারী। আপনার প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে আপনার নির্মিত ছয়টি নাটকে ওয়ালটন ফ্রিজ ব্র্যান্ডিং করতে সম্মত হয়। শর্ত থাকে যে, উক্ত নাটকসমূহে দেশের আইন, নীতি, নৈতিকতা বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হয় এরকম কোনো বিষয় অর্ন্তভুক্ত হবে না। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক যে, উক্ত নাটকসমূহের মধ্যে ‘রূপান্তর’ নাটকটিতে এমন কিছু বিষয় অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে, যাতে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে ও মানুষের অনুভূতিতে আঘাত লেগেছে।’
নোটিশে আরও বলা হয়, ‘ওয়ালটন কর্তৃপক্ষকে নাটকটির বিষয়বস্তু সম্পর্কে পূর্বে অবহিত না করে রূপান্তর নাটক প্রচার করায় আপনার সঙ্গে চুক্তি বাতিল করা হলো এবং সেই সঙ্গে কেন আপনার বিরুদ্ধে ওয়ালটনের আদর্শ ও নীতিমালার পরিপন্থিভাবে নাটক প্রচারের জন্য আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা নোটিশ প্রাপ্তির সাত দিনের মধ্যে জানানোর জন্য বলা হলো।’
এর আগে ফেসবুক-ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম থেকে ‘রূপান্তর’ নাটকটি প্রত্যাহারের জন্য বিজ্ঞাপনী সংস্থাকে নির্দেশ দেয় ওয়ালটন। তাৎক্ষণিকভাবে ফেসবুক-ইউটিউবসহ সব মাধ্যম থেকে নাটকটি প্রত্যাহার করে নেয়া হয়।
এরপর বিজ্ঞাপনী সংস্থার সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে ওয়ালটন গ্রুপের আদর্শ ও নীতিমালার পরিপন্থি নাটকে বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য কেন আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না তা জানতে চেয়ে বিজ্ঞাপনী সংস্থা ‘লোকাল বাস এন্টারটেইনমেন্ট’কে লিগাল নোটিশ দেয় ওয়ালটন কর্তৃপক্ষ।
আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে ওয়ালটনের ভাষ্য, দেশের মানুষের ধর্মীয় ও সামাজিক অনুভূতিতে আঘাত করে এমন কোনো কর্মকাণ্ড কখনও তারা সমর্থন করে না এবং এসব কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত থাকে না। অনাকাঙ্ক্ষিত এই বিষয়টির জন্য ওয়ালটন গ্রুপ মর্মাহত এবং সম্মানিত ক্রেতা ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের নিকট আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছে।
আরও পড়ুন:রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে পদোন্নতি পেয়েছেন রূপালী ব্যাংক পিএলসির মহাব্যবস্থাপক মো. ফয়েজ আলম। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সরকার কর্তৃক পদোন্নতিপ্রাপ্ত হয়ে তিনিসহ রাষ্ট্রায়ত্ত বিভিন্ন ব্যাংকের আট জন মহাব্যবস্থাপককে উপব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে পদোন্নতি দেয়া হয়।
ডিএমডি হিসেবে পদোন্নতি হওয়ার আগে তিনি রূপালী ব্যাংক পিএলসিতে মহাব্যবস্থাপকের দায়িত্ব পালন করেছেন।
মো. ফয়েজ আলম ১৯৯৮ সালে বিআরসির মাধ্যমে সিনিয়র অফিসার পদে রূপালী ব্যাংকে যোগদান করেন। কর্মজীবনে ব্যাংকের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শাখার শাখা ব্যবস্থাপক, জোনাল অফিস এবং প্রধান কার্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। পেশাগত প্রয়োজনে তিনি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপ ও আরব অঞ্চলের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণসহ দেশ-বিদেশে ব্যাংকিং বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও সেমিনারে অংশগ্রহণ করেছেন।
ফয়েজ আলমের জন্ম ১৯৬৮ সালে নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলার যোগীরনগুয়া গ্রামে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে বিএ অনার্সসহ এমএ পাশ করার পর এমফিল ডিগ্রিও অর্জন করেন খ্যাতিমান এই ব্যাংকার।
পেশাগত জীবনের বাইরে ফয়েজ আলম একজন সফল লেখকও। বাংলাদেশে তিনি অগ্রণী উত্তর উপনিবেশী তাত্ত্বিক, প্রাবন্ধিক ও কবি হিসেবে বিশেষ খ্যাতিমান। এডওয়ার্ড সাঈদের বিখ্যাত গ্রন্থ অরিয়েন্টালিজম-এর অনুবাদক হিসেবেও তার আলাদা খ্যাতি আছে। তার পনেরটির বেশি গ্রন্থ এ পর্যন্ত প্রকাশিত হয়েছে।
ভোজ্যতেলের ওপর শুল্ক অব্যাহতির সময়সীমা শেষ হয়েছে সোমবার (১৫ এপ্রিল)। এ অবস্থায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটির দাম লিটারে ১০ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন ব্যবসায়ীরা। তবে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেছেন, ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই।
বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিভিওআরভিএমএফএ) সোমবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে একটি চিঠি পাঠিয়েছে।
বিভিওআরভিএমএফএ’র নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম মোল্লার পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, কাঁচামাল আমদানি ও ভোজ্যপণ্য উৎপাদনে কর অব্যাহতির মেয়াদ ১৫ এপ্রিল শেষ হচ্ছে বিধায় পরদিন ১৬ এপ্রিল থেকে ভ্যাট অব্যাহতির আগের নির্ধারিত মূল্যে পণ্য সরবরাহ করা হবে।
নতুন দাম অনুযায়ী, প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের বোতল ১৭৩ টাকা, পাঁচ লিটারের বোতল ৮৪৫ টাকা ও এক লিটার পাম তেল ১৩২ টাকায় বিক্রি করা হবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড গত ফেব্রুয়ারিতে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত (অপরিশোধিত) সয়াবিন ও পাম তেলের মূল্য সংযোজন কর ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ নির্ধারণ করে।
এদিকে মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, ‘ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। ভোজ্যতেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজার দরের সঙ্গে সমন্বয় করা যেতে পারে, তবে সময় লাগবে।
‘ভোজ্যতেলের নতুন চালান আমদানির ক্ষেত্রে দাম বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।’
আরও পড়ুন:প্রবাসীদের আয়ের একটি বড় অংশই আসে ঢাকায় অবস্থিত ব্যাংকের শাখাগুলোতে। অর্থাৎ প্রবাসীদের পরিবারের বেশিরভাগই ঢাকায় থাকেন বা তাদের অধিকাংশ অ্যাকাউন্ট ঢাকার ব্যাংক শাখায়।
ইউএনবি জানায়, রেমিট্যান্সের জেলাভিত্তিক চিত্র নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক বিশ্লেষণে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্সে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে চট্টগ্রাম। সিলেট তৃতীয় এবং কুমিল্লা চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে।
এরপরে রয়েছে উপকূলীয় জেলা নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফেনী, মৌলভীবাজার, চাঁদপুর ও নরসিংদীর অবস্থান।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জেলাভিত্তিক প্রবাসী আয় প্রতিবেদনে গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত হিসাব প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৮ মাসে প্রবাসীরা ১ হাজার ৫০৭ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। এর মধ্যে গত ফেব্রুয়ারিতে এসেছে ২১৬ কোটি ডলার। তার আগের মাস জানুয়ারিতে দেশে প্রবাসী আয় ছিল ২১০ কোটি ডলার।
জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়কালে ঢাকা জেলায় এসেছে ৫২৩ কোটি ডলার এবং চট্টগ্রাম জেলায় এসেছে ১৪২ কোটি ডলার।
এই সময়ে সিলেট জেলা ৮৭০ মিলিয়ন ডলার, কুমিল্লা ৮১০ মিলিয়ন ডলার এবং নোয়াখালী ৪৬০ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে। এর মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৩৮ কোটি, ফেনীতে ৩৭ কোটি, মৌলভীবাজারে ৩৬ কোটি, চাঁদপুরে ৩৫ কোটি ডলার এবং নরসিংদীতে ২৫০ মিলিয়ন ডলার এসেছে।
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, প্রবাসী অধ্যুষিত জেলাগুলো থেকে বেশি প্রবাসী আয় আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। কিন্তু এমনটা হচ্ছে না। কারণ অনেক প্রবাসী বিদেশে স্থায়ী হয়েছেন। বরং তারা (প্রবাসীরা) দেশে থাকা সম্পদ বিক্রি করে বিদেশে নিয়ে যাচ্ছেন। ফলে অর্থ পাচার বাড়ছে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য