করোনার নেতিবাচক প্রভাব থেকে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে নতুন অর্থবছরের জন্য মুদ্রানীতি প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হবে জুলাইয়ের শেষদিকে। এ লক্ষ্য নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কাজ করছে। প্রতিবছরই মুদ্রানীতির বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের মত নেয়ার জন্য বৈঠকের আয়োজন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরই মধ্যে পরামর্শ দিতে অংশীজনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এ বিষয়ে সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মানিটরি পলিসি বিভাগ থেকে সংশ্লিষ্টদের চিঠি দেয়া হয়েছে। এতে ১০ জুলাইয়ের মধ্যে ব্যক্তিগত বা প্রতিষ্ঠানিক মত জানানোর অনুরোধ করা হয়েছে।
এবার করোনাকালে মুদ্রানীতিতে বাজারে টাকার প্রবাহ বৃদ্ধির পথ অনুসরণ করা হবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা। সবচেয়ে বেশি অর্থের জোগান বাড়ানো হবে উৎপাদন ও ব্যবসা খাতে।
এর মধ্যে বড় শিল্পের পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতকেও গুরুত্ব দেয়া হবে। নতুন উদ্যোক্তা তৈরি এবং তাদের ঋণের জোগান দেয়াতেও গুরুত্ব থাকবে।
চলতি অর্থবছরের মুদ্রানীতি বাজারে টাকার প্রবাহ, সরকারি ও বেসরকারি খাতে ঋণ বাড়ানোর যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল, তার বেশির ভাগই অর্জিত হয়নি। তবে বৈদেশিক সম্পদ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি বেড়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের মুদ্রানীতিতে বাজারে টাকার প্রবাহ (ব্যাপক মুদ্রা সরবরাহ) বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৫ দশমিক ৬ শতাংশ। কিন্তু গত এপ্রিল পর্যন্ত বেড়েছে ১৩ দশমিক ১৫ শতাংশ। অর্থবছর শেষে এটি বেড়ে ১৪ শতাংশ ছাড়াতে পারে। ওই সময়ে ব্যাংকিং খাতে আমানত প্রবাহ বাড়লেও ঋণের চাহিদা খুব একটা বাড়েনি। এছাড়া নতুন বিনিয়োগ হয়নি। যে কারণে টাকার প্রবাহ বাড়ানো সম্ভব হয়নি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা জানান, মুদ্রানীতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণের যে সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে, সেগুলো অব্যাহত থাকবে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো যাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দেয়া অর্থের ব্যবহার বাড়াতে পারে, এ ব্যাপারেও নীতি সহায়তা দেয়া হবে।
চলতি অর্থবছরের যেসব অর্থ অব্যবহৃত আছে সেগুলো ছাড় করতে প্রণোদনা প্যাকেজগুলোর মেয়াদ প্রয়োজন হলে জুনের পর আরও বাড়ানো হবে। একই সঙ্গে প্যাকেজে নতুন অর্থের জোগানও দেয়া হবে।
দোয়া মাহফিল, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা ও জাতীয় স্মৃতিসৌধে বীর শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস-২০২৩ উদযাপন করেছে সোনালী ব্যাংক লিমিটেড।
রোববার সকালে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে বীর শহীদদের স্মৃতির প্রতি এবং ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ব্যাংকের পক্ষ থেকে সিইও এন্ড ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো. আফজাল করিমের নেতৃত্বে পুস্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
এর আগে দিনের শুরুতে ব্যাংকের সম্মেলন কক্ষে দিবসটি উপলক্ষে বিশেষ দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। পরে ব্যাংক ভবনে স্থাপিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান জিয়াউল হাসান সিদ্দিকী এবং সিইও এন্ড ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো. আফজাল করিম।
এসময় পরিচালনা পর্ষদের সদস্যবৃন্দ, ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টরগণ, জেনারেল ম্যানেজারবৃন্দসহ অন্যান্য নির্বাহী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
মহান স্বাধীনতা দিবসে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) লিমিটেড।
ডিএসইর নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবুর নেতৃত্বে রোববার সকালে শহীদ বেদিতে পুস্পস্তবক অর্পণ করা হয়।
নবনিযুক্ত পরিচালনা পর্ষদের সদস্য অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ, মো. আফজাল হোসেন, রুবাবা দৌলা, ডিএসইর শেয়ারহোল্ডার পরিচালক মো. শাকিল রিজভী, শরীফ আনোয়ার হোসেন ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) এম. সাইফুর রহমান মজুমদার এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
আরও উপস্থিত ছিলেন ডিএসই’র প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা সাত্তিক আহমেদ শাহ, প্রধান রেগুলেটরি কর্মকর্তা খাইরুল বাসার, সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার মো. ছামিউল ইসলাম, সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার, কোম্পানি সচিব মোহাম্মদ আসাদুর রহমান, উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. শফিকুর রহমান প্রমুখ।
ময়মনসিংহ শহরের মেছুয়া বাজারে খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ২৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। রোজা শুরুর আগের দিন বৃহস্পতিবারও একই দামে বিক্রি হয়েছে মুরগি। বেশি দামে কিছুদিন আগে মুরগি কেনার কারণেই দাম কমাতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।
এদিকে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অসাধু ব্যবসায়ীরা উচ্চ দরে মুরগি বিক্রি করে পকেট ভারি করছেন বলে মনে করছেন ক্রেতারা।
আনোয়ার হোসেন নামের এক মুরগি বিক্রেতা নিউজবাংলাকে জানান, গত এক মাস আগে মুরগি ১৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি করতে পেরেছেন। এরপর থেকেই মাসজুড়ে হু হু করে বেড়েছে দাম। পাইকারি পর্যায়ে দাম বেড়ে যাওয়ায় তারাও বাধ্য হয়ে বেশি দামে বিক্রি করছেন।
তিনি আরও জানান, বর্তমানে পাইকারিভাবে মুরগির দাম কিছুটা কমলেও তারা বাজারে আগের দামেই বিক্রি করছেন। কারণ মুরগিগুলো বেশিরভাগ ব্যবসায়ীদের কিছুদিন আগের কেনা ছিল। তবে কিছুদিনের মধ্যে দাম কমে আসবে বলে জানান তিনি।
আমিরুল ইসলাম নামের আরেকজন বিক্রেতা বলেন, ‘আমরা সিন্ডিকেট করে মুরগি বিক্রি করি না। কোনো বিক্রেতা কিছুদিন আগে মুরগি কিনেছেন আবার কেউ পরে। এজন্য একজনের সঙ্গে আরেকজনের দামটাও কিছুটা পার্থক্য হচ্ছে। যে যার মতো কিছুটা লাভ করে বিক্রি করছেন।‘
তবে ক্রেতারা বলছেন ভিন্ন কথা। তারা মুরগি ব্যবসায়ীদের খোঁড়া যুক্তি মানতে নারাজ।
মুরগি কেনা শেষে মইনুল হোসেন নামের এক ক্রেতা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গোপনে বাজার মনিটরিং করতে একজন কর্মকর্তা এসেছিল। কিছুক্ষণ পর বাজারদর জানতে আরেকজন সাংবাদিক আসে। দুইজনকেই দাম কত জিজ্ঞেস করলে বিক্রেতা বলেছে ২১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অথচ আমার কাছ থেকে ২৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হয়েছে। যদি বাজারে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা না করে তাহলে ইচ্ছেমতো দামেই বিক্রি চলবে।’
নগরীর ঐতিহ্যবাহী শম্ভুগঞ্জ বাজারে গিয়ে দেখা যায়, সেখানেও ২৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে মুরগি। মুরগির দাম হাতের নাগালের বাইরে থাকায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন নিম্ন-মধ্যবিত্তরা। অনেকে মুরগি থেকে মুখ ফিরিয়ে মাছ কিংবা শুঁটকির বাজারে ছুটছেন।
মুরগির দাম এতো বেড়ে যাওয়ার কারণ খুঁজতে যাওয়া হয় জেলার গৌরীপুর উপজেলার ঢৌহাখলা ইউনিয়নের নন্দীগ্রামে। সেখানে কথা হয় খামারি শামসুল হকের সঙ্গে।
তিনি বলেন, ‘আমার খামারে ৫০০ মুরগির বাচ্চা ৬০ টাকা দরে কেনা ছিল। মুরগির বয়স এখন ২৬ দিন। ৩২ দিন হলে বাচ্চা বিক্রি করব। ৩২ দিনে প্রতি মুরগি গড়ে ১ হাজার ৭০০ গ্রাম ওজন হবে। তাহলে প্রতি কেজিতে উৎপাদন খরচ দাঁড়ায় ১৬০ টাকা। কিন্তু খুচরা পর্যায়ে বাজারে বিক্রি হচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত দামে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক খামারি বলেন, ‘মূলত মুরগির বাচ্চার সংকটের কারণেই ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে। কোম্পানির মালিকরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাচ্চার কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে আমাদের মতো খামারিদের কাছ থেকে ভালো ব্যবসা করতে চাইছে। এগুলোও সংশ্লিষ্টদের তদারকি করা প্রয়োজন।’
রফিক মিয়া নামের আরেকজন খামারি বলেন, ‘খুচরা বাজারে মুরগির দাম মাত্রাতিরিক্ত বাড়লেও আমরা (খামারিরা) বেশি লাভবান হইনি। সুযোগকে কাজে লাগিয়েছে এক শ্রেণির অসাধু খুচরা বিক্রেতারাও। তারা সিন্ডিকেট করে কিছুদিনের জন্য হলেও নিজেদের পকেট ভারি করেছে।’
এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ময়মনসিংহের সহকারী পরিচালক নিশাত মেহের বলেন, ‘নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। মনমতো দামে মুরগিসহ কোনো পণ্য বিক্রি করার প্রমাণ মিললে জরিমানার আওতায় আনা হবে।’
আরও পড়ুন:রমজান উপলক্ষে শত শত পণ্যে ছাড় দিচ্ছে সুপারমার্কেট রিটেইল ব্র্যান্ড চেইনশপ ‘স্বপ্ন’।
প্রতি সপ্তাহের শুক্র এবং শনিবার ক্রেতারা ‘স্বপ্ন’ থেকে সবসময় বিভিন্ন পণ্যে ছাড় পেয়ে থাকেন। আর এবার মাহে রমজান উপলক্ষে সবচেয়ে বেশি পণ্যের ওপর ছাড় ঘোষণা করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
স্বপ্নর হেড অফ মার্কেটিং মাহাদী ফয়সাল বলেন, ‘রমজানের শুরুতে টানা অফার থাকছে আমাদের। বিশেষ করে রমজানের শুরুতেই প্রয়োজনীয় পণ্যগুলোতে বিশাল ছাড় থাকছে। এছাড়া পুরো রমজানজুড়ে শত শত পণ্যে ছাড় দিচ্ছে স্বপ্ন।’
বিশেষ করে রমজানের শুরুতেই, পুষ্টি সয়াবিন তেল ৫ লিটার ৮৭০ টাকা, ছোলা প্রতি কেজি ৮৫ টাকা, এসিআই লবণ ১ কেজিতে ৮ টাকা ছাড়, খোলা চিনি প্রতি কেজি ১১২ টাকা, মসুর ডাল প্রতি কেজি ৯৯ টাকা, ট্যাং ২ কেজিতে ১৫০ টাকা ছাড়, ম্যাগি নুডলস ৭৪৪ গ্রামে ৩০ টাকা ছাড়, ডানো মিল্ক পাউডার ১ কেজিতে ৫১ টাকা ছাড়, হেড অ্যান্ড শোল্ডারস শ্যাম্পু ৬৫০ মিলিতে ৩০০ টাকা ছাড়, ইস্পাহানি চা পাতা ৪০০ গ্রামে ৩০ টাকা ছাড় থাকছে।
এছাড়াও সুলতান ও স্বপ্ন ব্ল্যাকটিতে ৬০ টাকা পর্যন্ত ছাড়, আড়ং ও প্রাণ ঘি ৪০০ গ্রামে ৬০ টাকা পর্যন্ত ছাড়, ডাবর মধু ৫০০ গ্রামে ৭০ টাকা ছাড়সহ নানা পণ্যে চলতি সপ্তাহের ২৪ থেকে ২৬ মার্চ অবধি থাকছে বিশাল ছাড়।
রোজার প্রথম দিন শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অভিযান চালিয়েছিল জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এরই ধারাবাহিকতায় রমজানের দ্বিতীয় দিন শনিবার ঢাকা নিউ মার্কেটের কাঁচাবাজারে অভিযান শুরু করে রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি।
অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আবদুল জব্বার মন্ডল নিউজবাংলাকে জানান, অভিযানে রমজানে বেশি বিক্রি হয় এমন পণ্যগুলোর দাম ঠিক আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে। পাশাপাশি পণ্যগুলোর সরবরাহ ঠিক আছে কি না, তাও দেখা হবে।
তিনি জানান, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শুরু হওয়া এ অভিযানে নেতৃত্বে আছেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার।
এর আগে প্রথম রোজায় কারওয়ান বাজারে অভিযানেও নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি।
গতকাল কারওয়ান বাজারে অভিযান নিয়ে মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বেসরকারি চ্যানেল আরটিভিকে বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনা অনুসারে বাংলাদেশের ৬৪ জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসনসহ জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, বিএসটিআই, সিটি করপোরেশন, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ—আমরা সমন্বিতভাবে এবারে বাজার তদারকিতে নেমেছি। দেখার বিষয় হলো বাজারে মানুষ সেবা পাচ্ছে কি না, মূল্য কতটুকু বেড়েছে। আল্লাহর রহমতে মুদির দোকানদাররা বলেছে, পণ্যের মূল্য কিন্তু আগের চেয়ে কমতির দিকে।
‘মুরগি নিয়ে সবার একটা ক্ষোভ ছিল, আক্ষেপ ছিল। গতকাল (বৃহস্পতিবার) তারা যে দাম কমিয়েছে, সেটা বাজারে খুচরা পর্যায়ে আসতে তিন দিন লাগবে, তবে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো যেই বেগুন আমরা পাইকারি বাজারে পেয়েছি ৪০ টাকা, কারওয়ান বাজারে খুচরা দেখেছি আমরা সেটা ৭০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। তখন আমরা মার্কেট সমিতির সেক্রেটারি মহোদয়কে বলেছি, এটা আজকের মধ্যেই ঠিক করতে হবে। কারণ আমরা এবার যদি বাংলাদেশের সব ব্যবসায়ী সমিতি, তারা যদি দায়িত্ব না নেয়, তাহলে কিন্তু বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আমরা তাদের বিরুদ্ধে লিখব।’
ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভাউচার রাখা ও রসিদ দেয়ার কথা বলা হয়েছে জানিয়ে ভোক্তা অধিকারের এ কর্মকর্তা বলেন, ‘পাশাপাশি আমরা আরেকটা যে বিষয় বলেছি সবাইকে, ক্রয় ভাউচার রাখতে হবে; বিক্রয় রশিদ দিতে হবে। আর মূল্যতালিকা টানাতে হবে। সবকিছু মিলিয়ে আমাদের যে ঢাকা মহানগরীতে সাতটি টিম, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের চারটি, দেশব্যাপী ভোক্তা অধিকারের ৫৬টি টিম কাজ করবে এবং আমরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পাইকারি বাজারগুলোতে অবস্থান করছি।
‘আমাদের টিম রয়েছে কাপ্তানবাজারে, আমাদের টিম রয়েছে মিরপুর শাহ আলী মার্কেটে, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে। সব বাজারগুলোতে যাচ্ছি আমরা। বনানী থেকে উত্তরা, সব বাজার। আমরা চাইব ব্যবসায়ী সমিতি, যারা বাজারে থাকবেন। তারা থেকে এটা নিশ্চিত করবেন।’
রোজায় ক্রেতাদের ভিড়ে সরগরম দেশীয় কাপড়ের পাইকারি বাজার নরসিংদীর ঐতিহ্যবাহী শেখেরচর বাবুরহাট। এখান থেকে কাপড় কিনতে ভিড় জমাচ্ছেন দেশের নানা প্রান্তের খুচরা বিক্রেতারা।
কাপড়ের চাহিদা মিটানো এই হাটে প্রতি বছরের মতো নিত্য নতুন কাপড়ের পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। এ বছর প্রস্তুতকৃত কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি হওয়া কাপড়ের মূল্য হ্রাস পেয়েছে বলে নিউজবাংলাকে জানান ব্যবসায়ীরা।
রোজার প্রথমদিন শুক্রবার বিকেলে সদর উপজেলার শিলমান্দী ইউনয়নে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে বৃহত্তর এই হাট ঘুরে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে রয়েছে প্রায় ৫ হাজার ব্যবসায়ীর দোকান। প্রতি সপ্তাহে বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত তিন দিন জমে ওঠে দেশের অন্যতম পাইকারি কাপড়ের হাট বাবুরহাট।
এখানে শাড়ি, লুঙ্গি, গামছা, থ্রিপিস, শার্ট পিস, প্যান্ট পিস, পাঞ্জাবির কাপড়, থান কাপড়, বিছানার চাদরসহ প্রায় সব ধরনের কাপড় বিক্রি করেন ব্যবসায়ীরা। ঈদের বাজারে খুচরা কাপড় বিক্রির জন্য বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা পাইকারি কাপড় কিনতে ভিড় জমাচ্ছেন এই হাটে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সুতার দামে অস্থিরতার কারণে এবার দেশের সব বাজারেই কাপড়ের দাম বেশি। তবে বাবুরহাটে সর্বনিম্ন পাইকারি মূল্যে বিক্রি হয়ে থাকে সব ধরনের কাপড়। তাই এই হাটে রোজার শুরুতে থাকে কাপড় বিক্রির ধুম। এই হাট তিনদিন ক্রেতাদের ভিড়ে সরগরম থাকে। এ ছাড়া এ হাটের কাপড় রপ্তানি হচ্ছে দেশের বাহিরেও। সকল সংকট কাটিয়ে এবার ঈদে কাঙ্খিত বেচাকেনা হবে বলে আশাবাদী ব্যবসায়ীরা।’
কুষ্টিয়া থেকে কাপড় কিনতে এই হাটে প্রথম আসেন, আবুল হোসেন নামে খুচরা বিক্রেতা। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মানুষের মুখে শুনেছি বাবুরহাটের কথা। আজ রোজার প্রথম দিন আসলাম। তবে অন্যান্য শহরের বাজারগুলো থেকে এই হাট থেকে পাইকারি কাপড় ক্রয়ে সুলভ মূল্য পেয়েছি।’
ঢাকা বকশি বাজারের এক নারী উদ্যোক্তা তাবাসসুম আক্তার মিম নিউজবাংলাকে জানান, করোনাকালীন সময় এই হাট থেকে দেশীয় থ্রী, বুটিকস, ওড়না নিয়ে অনলাইনে বিক্রি শুরু করেন তিনি। এরপর থেকে ধারাবাহিকতা বজায় রেখে বাবুরহাট থেকে কাপড় কিনে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। পবিত্র ঈদুল ফিতরে অনেক অর্ডার পরেছে, তাই আগে থেকেই কাপড় কিনে মজুত করছেন। এসব কাপড় অনলাইনে পাইকারি ও খুচরা বিক্রি করছেন তিনি। আজ দুই লাখ টাকার পরিমাণ বিভিন্ন প্রকারের কাপড় কিনে ট্রান্সপোর্টে যশোর পাঠিয়েছেন তিনি।
এই বাবুরহাট বাজারের পাশে রয়েছে বিভিন্ন ট্রাসপোর্ট এসেন্সী। এসব এসেন্সীর মাধ্যমে নিরাপদে কাপড় পৌঁছে যায় বিভিন্ন জেলা শহরসহ বিদেশেও।
নিউ খাজা ট্রাসপোর্টের পরিচালক আল-আমিন ভূইয়া প্রধান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সব কিছুর মূল্যবৃদ্ধি পেলেও মালামাল ট্রাসপোর্টের জন্য পরিবহন ভাড়া তেমন বাড়েনি। কারণ আমরা ব্যবসায়ীদের কথা চিন্তা করে সুলভ সাশ্রয়ে ট্রাসপোর্ট সেবা দিয়ে থাকি।’
শেখেরচর-বাবুরহাট বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান ভুঁইয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাজার ঘুরে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে দেখেছি প্রতি বছরের মতো এবারও দোকানে দোকানে নিত্যনতুন কাপড়ের পসরা সাজিয়ে বসে আছেন বিক্রেতারা। প্রতি বছর রমজানে ২০০ কোটি টাকার উপরে কাপড় বিক্রি হয় এ হাটে। এবার তুলনামূলক ক্রেতা কম হলেও বিক্রির পরিমাণ ঠিক আছে।’
তবে সুতার বাজার অস্থিতিশীল ও কাপড় তৈরির কাচাঁমালের মূল্যবৃদ্ধি হওয়ার কারণে কাপড়ের মূল্য বেড়ে গেছে। এতে বাবুরহাটে পাইকারি ক্রেতার কম সমাগম হলেও সব সংকট কাটিয়ে এবার ঈদে কাঙ্খিত বেচাকেনা হবে বলে আশাবাদী ব্যবসায়ী এই নেতা।
আরও পড়ুন:দেশের পোল্ট্রি খাতে হরিলুটের অভিযোগ তুলেছে বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ)। সংগঠনটির দাবি, এই খাতের করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো গত ৫২ দিনে মুরগি ও বাচ্চার দাম বাড়িয়ে ৯৩৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
বিপিএর সভাপতি সুমন হাওলাদারের সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এমন দাবি করা হয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘দেশে প্রতিদিন ব্রয়লার মুরগির চাহিদা ৩ হাজার ৫০০ টন। প্রান্তিক খামারিদের ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ এখন কেজিপ্রতি ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকা। আর করপোরেট প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন ব্যয় ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা। তবে পাইকারি পর্যায়ে সর্বোচ্চ ২৩০ টাকা পর্যন্ত এসব মুরগি বিক্রি হয়েছে। তাতে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো কেজিপ্রতি অন্তত ৬০ টাকা বেশি মুনাফা করেছে।’
বিপিএর বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘করপোরেট প্রতিষ্ঠানের (তাদের চুক্তিভিত্তিক ফার্মসহ) মাধ্যমে প্রতিদিন দুই হাজার টন মুরগি বাজারে আসে। সেই হিসাবে প্রতিদিন তাদের অতিরিক্ত মুনাফা হয় ১২ কোটি টাকা। এভাবে গত ৩১ জানুয়ারি থেকে ২৩ মার্চ পর্যন্ত ৫২ দিনে ৬২৪ কোটি টাকা মুরগি বিক্রির মাধ্যমে লাভ করেছে কোম্পানিগুলো। আর এক দিনের মুরগির বাচ্চা বিক্রি করে তাদের মুনাফা ৩১২ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে মুরগি ও বাচ্চার দাম বাড়িয়ে ৯৩৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে।’
সংগঠনটির দাবি, ‘দেশে প্রতিদিন মুরগির বাচ্চা উৎপাদন হয় ২০ লাখ। এসব বাচ্চা কোম্পানিগুলো উৎপাদন করে। একেকটি মুরগির বাচ্চা উৎপাদনে খরচ হয় ২৮ থেকে ৩০ টাকা, যা চলতি বছরের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ছিল ১০ থেকে ১৫ টাকা। প্রতিটি এখন ৬২ থেকে ৬৮ টাকায় দেয়ার কথা হলেও বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকায়। প্রতিটি বাচ্চায় ৩০ টাকা অতিরিক্ত মুনাফা করছে কোম্পানিগুলো।’
বিপিএ বলেছে, ‘ব্রয়লার মুরগির অস্বাভাবিক দামের কারণ প্রান্তিক খামারিরা ক্ষতি পোষাতে না পেরে খামার বন্ধ করে উৎপাদন থেকে ছিটকে পড়েছেন। এ সুযোগে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো পোলট্রির ফিড বা খাবার ও মুরগির বাচ্চার দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রান্তিক খামারি উৎপাদনে গেলে তখন বাজারে দাম কমিয়ে দিয়ে ক্ষতিতে ফেলছে।’
সংগঠনটি আরও বলেছে, ‘পোলট্রি ফিড ও মুরগির বাচ্চা শতভাগ উৎপাদন করে করপোরেট প্রতিষ্ঠান। তারাই আবার আংশিক ডিম ও মুরগি উৎপাদন করে। চুক্তিভিত্তিক খামারও রয়েছে তাদের। এতে করে বাজার তাদের দখলে চলে যাচ্ছে। এটা বন্ধ করা না গেলে এই খাতের অস্থিরতা কমানো সম্ভব নয়।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য