করোনা মহামারি, অসাধু ব্যবসায়ীদের আগ্রাসন আর মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য- এই তিনে মিলে বড় কষ্টে দিন কাটছে সাতক্ষীরার কলারোয়ার পালপাড়ার টালি কারিগরদের। বিলুপ্তির ঝুঁকিতে সম্ভাবনাময় টালিশিল্প।
একসময় এই শিল্প সাতক্ষীরার অর্থনীতির খাতে এক নম্বরে থাকলেও আজ তা ধ্বংসের দ্বারে। পেশা হারিয়ে বিপাকে পড়েছেন এই শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মালিক ও শ্রমিকরা।
দেশের প্রায় সব ক্ষেত্রেই লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। কিন্তু টালি কারখানা আধুনিক না হওয়া, উৎপাদন খরচ বাড়লেও টালির দাম না বাড়া, সরকারের সুদৃষ্টির অভাব ও সহজ শর্তে ঋণ না পাওয়া এই শিল্প ধ্বংসের অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন এই শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
তবে এখনো হাতে গোনা কয়েকজন কারখানামালিক এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
তাদেরই একজন মুরারীকাটি গ্রামের পালপাড়ার প্রয়াত রামকৃষ্ণ পালের ছেলে গোস্ট চন্দ্র পাল। বর্তমানে কলরোয়া টালি কারখানা মালিক সমিতির সভাপতি জানান, ১৯৪৭ সাল থেকে তার পূর্বপূরুষরা এই শিল্পের সঙ্গে ছিলেন।
প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার সর্বোচ্চ ডিগ্রি লাভ করলেও পেশা হিসেবে জাতপেশাকেই আঁকড়ে ধরে থাকা গোস্ট চন্দ্র জানান, ২০১৯ সালে বিদেশে টালি রপ্তানি করে কারখানামালিকরা আয় করেছেন প্রায় ১২-১৩ কোটি টাকা।
‘এখানে প্রায় ৪০টা টালি কারখানা রয়েছে। এসব কারখানায় না হলেও চার হাজারের মতো মানুষ কাজ করে। বছরে ৬ থেকে ৭ মাস টালি বানানো ও বিক্রি হয়। অক্টোবর মাস থেকে শুরু হয় টালি বানানোর মৌসুম। চলে মে-জুন পর্যন্ত। বাকি সময় বর্ষা থাকায় টালি তৈরি হয় না।’
তিন ধরনের টালি বেশি তৈরি করেন পালপাড়ার কারিগরেরা- ছাদের টালি, দেয়াল টালি ও মেঝের টালি। নকশা ও সাইজের ওপর ভিত্তি করে এসব টালি আবার ২০-৪০ প্রকার হয়ে থাকে। সব মিলিয়ে ১২০ প্রকার টালি তৈরি হয় এই পল্লিতে।
একেকটি টালির একেক রকম নাম। তাদের মধ্যে স্কয়ার, রেকট্যাংগুলার, স্টেপ টাইলস, হেক্সা গোনার, স্কাটিং প্রভেনসালেহ প্রভৃতি। প্রতি পিস টালির দাম ৫ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত।
স্কয়ার টালি সাধারণত দেয়ালের শোভাবর্ধনে, ঘরের চালের ছাউনিতে ব্যবহার করা হয়। ঘরের মেঝে সাজানোর জন্য রয়েছে ফুলের আকারে প্রভেনসালেহ টালি। প্রতি পিস প্রভেনসালের দাম ২৫-৩০ টাকা। এভাবে একেকটি টালির নকশা, গঠন ও আকার অনুযায়ী দামের হেরফের রয়েছে। দাম সস্তা হলেও এগুলোর সৌন্দর্য, গুণমান ও স্থায়িত্ব অতুলনীয়।
ঘর সাজানোর জন্য শিল্পীরা তৈরি করেছেন সার্কেল টাইলস। চারটি সার্কেল টাইলস নিয়ে একটি সেট। এক সেট সার্কেল টাইলসের দাম ৪০-৫০ টাকা।
গোস্ট চন্দ্র পাল আরও বলেন, ‘সাতক্ষীরার বানানো এসব টালি মোংলা বন্দর দিয়ে দুবাই ও ইউরোপ যায়। দুবাই থেকে আবার কিছু টালি প্রসেসিং হয়ে আমেরিকা যায়। বর্তমানে ফ্রান্সের বাজার ধরার চেষ্টা চলছে।’
তিনি বলেন, ‘কোনো মেশিন বা যন্ত্র ছাড়াই কারিগররা তাদের হাতের স্পর্শে মাটি দিয়ে এসব টালি বানায়। টালি রোদে শুকানোর পর চুল্লিতে বা পনে পোড়ানো হয়।
‘১৬ ঘণ্টা বিশেষ নিয়মে পনে জ্বাল দিতে হয়। জ্বাল দেয়ায় হেরফের হলে টালির আকার-আকৃতি ও পোড়ের কম-বেশি হয়। এতে টালির মান ভালো হয় না। মাসে একবার একটি পনে টালি পোড়ানো হয়।’
গোস্ট চন্দ্র জানান, সরকার চাইলে এই শিল্প থেকে তারা অনেক টাকা আয় করতে পারে। দারিদ্র্য বিমোচনে এই শিল্প মেলা ভূমিকা রাখতে পারে।
টালিশিল্পের বিকাশে কিছু প্রতিবন্ধকতা ও সমস্যার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এলাকার কারখানামালিকরা ঐক্যবদ্ধ না। ফলে টালির দাম একেক জায়গায় একেক রকম। মহাজনরা বাকিতে টালি কিনে সময়মতো বিল দেয় না।’
সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার মুরারীকাটি ও শ্রীপতিপুর এলাকায় প্রথমে টালি উৎপাদন শুরু হয়। পরে আশপাশের আরও কয়েকটি গ্রামে পর্যায়ক্রমে ৪০টি কারখানা গড়ে উঠলেও তা এখন কমে মাত্র ১০-১৫টিতে দাঁড়িয়েছে।
জানা গেছে, ২০০০ সালের দিকে কলারোয়ায় মেঝে ও দেয়ালের জন্য টালি নির্মাণ শুরু হয়। সে সময় রাফাইলো আলদোঁ নামের এক ইতালির ব্যবসায়ী অসেন বাংলাদেশে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে তিনি নারায়ণগঞ্জে টালি তৈরির কাজ শুরু করেন। কিন্তু সেখানকার মাটি টালি তৈরির উপযুক্ত না হওয়ায় তিনি দেশে ফিরে যান।
রাফাইলো আলদোঁ ফিরে গেলেও তার বাংলাদেশি প্রতিনিধি রুহুল আমিন দেশের বিভিন্ন স্থানে টালি তৈরির জন্য মাটি খুঁজতে থাকেন। একপর্যায়ে তিনি সাতক্ষীরার কলারোয়ায় এসে পেয়ে যান টালি তৈরির উপযোগী মাটি।
তখন কলারোয়ায় শুধু ছাউনির কাজে ব্যবহৃত টালি (স্থানীয় নাম ‘খোলা’) তৈরি করা হতো। মূলত তিনি এই টালি দেখেই বুঝতে পারেন এখানকার মাটি দিয়েই রপ্তানিযোগ্য টালি তৈরি সম্ভব।
তাই ‘কারার এক্সপোর্ট ইমপোর্ট প্রাইভেট লিমিটেড’-এর মালিক রুহুল আমিন কলারোয়ার পালদের পোড়া মাটি দিয়ে তৈরি রপ্তানিযোগ্য টালির সম্ভাবনার গল্প শোনান। সেই সূচনা। এরপর থেকে শুরু হয় বিভিন্ন নকশার টালি তৈরি। প্রথম দিকে এখানকার টালি ইতালিতে রপ্তানি হতো। এ কারণে কলারোয়ার এই এলাকা ধীরে ধীরে ‘ইতালিনগর’ এবং পোড়া মাটির টালি ‘ই-টালি’ নামে পরিচিত হতে থাকে।
প্রথম দিকে বাংলাদেশে এই টালি শুধু ঘরের ছাউনিতে ব্যবহার করা হলেও ইতালিতে এই টালি ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য ছাদের ওপর ছাড়াও ঘরের মেঝে ও দেয়ালে ব্যবহার করা হতো।
বাড়ির সৌন্দর্যবর্ধনে ব্যবহৃত এই ‘ই-টালি’ অল্প দিনেই নজর কাড়ে জার্মান, দুবাই, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইংল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে। মোংলা সমুদ্রবন্দর দিয়ে কলারোয়ার মাটির তৈরি টালি রপ্তানি হতে থাকে ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন দেশে।
তবে টালি রপ্তানির সেই যুগ এখন শুধুই কালের সাক্ষী। আগে যেখানে বছরে চারশ কনটেইনার টালি বিদেশে রপ্তানি করা হতো, এখন তা হয় একশ। কমে এসেছে টালির দামও।
মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে ছোট টালি প্রতি পিস পাঁচ থেকে আট টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যার উৎপাদন খরচও প্রতি পিস সাড়ে পাঁচ টাকা। অন্যদিকে বড় টালি প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে ৫০-১০০ টাকা দরে, যা প্রতি পিস উৎপাদন খরচ প্রায় ৪৫-৯০ টাকা। অসাধু ব্যবসায়ীদের শক্তিশালী সিন্ডিকেটের কারণে ক্ষদ্র ক্ষুদ্র কারখানামালিকরা এই টালি ব্যবসা থেকে সরে পড়ছেন।
টালি কারখারশ্রমিক ফতেমা খাতুন বলেন, ‘এই শিল্প আমাদের রুটি রুজি। টালি ছাঁটাই, ব্রাশ করা, তোলা, রং করার কাজ করি। দিনে মজুরি পাই মাত্র ২০০ টাকা। এর ওপরেই কোনো রকমে বেঁচে আছি আমরা। টালির কারখানা বন্ধ হয়ে গেলে আমরাও শেষ হয়ে যাব।’
রুহুল আমিন নামের এক শ্রমিক বলেন, ‘সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত টালির কারখানায় কাজ করে পাই ৪০০ টাকা। খুব কষ্টে সংসার চলে। টালির কারখানা না থাকলে আমরা কীভাবে বেঁচে থাকব জানি না।’
সাতক্ষীরা পল্লি চেতনা সংস্থার নির্বাহী পরিচালক আনিসুর রহমান বলেন, ‘কলারোয়ার টালিশিল্প সাতক্ষীরা জেলার ঐতিহ্য। টাইলসের চেয়ে টালির গুণগত মান অনেক ভালো। টালি একশ বছর পর্যন্ত অক্ষত থাকে। এতে সহজে নোনা ধরে না। দামও কম। টিকে বেশি দিন। দেখতেও চমৎকার। কিন্তু এটি এখন বিলুপ্তির পথে। এই শিল্পকে রক্ষা করা দরকার। এই শিল্প রক্ষায় আমি সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করি।’
কুমিল্লার বুড়িচং সীমান্তে ভারতের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) গুলিতে এক বাংলাদেশি যুবক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের চড়ানল তেঁতুলতলা সীমান্তে সোমবার রাত ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
আহত বিল্লাল হোসেন (২৮) রাজাপুর ইউনিয়নের লড়িবাগ এলাকার বাসিন্দা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিল্লাল হোসেন ভারত থেকে অবৈধ পথে চিনি ও অন্য পণ্য ওঠা-নামার শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। সোমবার রাত ৮টার দিকে তেঁতুলতলা সীমান্ত দিয়ে আসা চিনি নামানোর সময় বিএসএফের সদস্যরা গুলি করে তাকে। তার শরীরে ৩০টির মতো ছররা (ছোট গুলি) গুলি লাগে।
পরে বিল্লালকে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয়া হয়। গুলিতে তার চোখ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানান চিকিৎসক।
কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) কামরান হোসেন জানান, গুলিতে আহত ব্যক্তির বিরুদ্ধে থানায় কোনো মামলা নেই। সীমান্তের ঘটনা সম্পর্কে বিজিবি বলতে পারবে।
বিজিবির সংকুচাইল বিওপির কামান্ডার ফারুক কামাল জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া তারা এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য দিতে পারবেন না।
আরও পড়ুন:মাদারীপুরের ডাসারে তীব্র গরমের মধ্যে জমিতে কাজ করতে গিয়ে এক বৃদ্ধ কৃষক হিট স্ট্রোকে মারা গেছেন।
মঙ্গলবার সকালে এ ঘটনা ঘটে বলে নিশ্চিত করেছে তার পরিবার।
মারা যাওয়া আজগর আলী বেপারী (৭৫) উপজেলার গোপালপুর এলাকার পশ্চিম বনগ্রাম গ্রামের মৃত বরম আলীর ছেলে।
প্রচণ্ড গরমে শরীর উত্তপ্ত হয়ে অজ্ঞান হওয়াসহ নানা লক্ষণ দেখা দিলে তাকে বলা হয় হিট স্ট্রোক।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কৃষক আজগর আলী বেপারী প্রচণ্ড রোদের মধ্যে তার বাড়ির পাশের একটি জমিতে কাজ করতে যান। এ সময় তিনি প্রচণ্ড গরমের ফলে হিট স্ট্রোকে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে বাড়িতে নওয়ার পথেই তিনি মারা যান।
ইউপি সদস্য হালিম জানান, গরমের ভেতর জমিতে কাজ করতে গিয়ে আজগর আলণী হিট স্ট্রোকে মারা গেছেন।
এ ব্যাপারে ডাসার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম শফিকুল ইসলাম জানান, বৃদ্ধ বয়সে আজগর আলী জমিতে প্রচণ্ড গরমের মধ্যে কাজ করতে গিয়ে তাপমাত্রা সইতে না পেরে হিট স্ট্রোকে মারা গেছেন। ঘটনাটি দুঃখজনক। পারিবারিকভাবে তাকে দাফন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে পাঁচটি চুক্তি এবং পাঁচটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে।
সফররত কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মঙ্গলবার এসব চুক্তি ও সমঝোতা স্বাক্ষর হয়।
পাঁচ চুক্তির মধ্যে রয়েছে- উভয় দেশের পারস্পরিক বিনিয়োগ উন্নয়ন ও সুরক্ষা সংক্রান্ত চুক্তি, দ্বৈতকর পরিহার ও কর ফাঁকি সংক্রান্ত চুক্তি, আইনগত বিষয়ে সহযোগিতা সংক্রান্ত চুক্তি, সাগরপথে পরিবহন সংক্রান্ত চুক্তি এবং দু দেশের ব্যবসা সংগঠনের মধ্যে যৌথ ব্যবসা পরিষদ গঠন সংক্রান্ত চুক্তি।
পাঁচ সমঝোতা স্মারকের মধ্যে রয়েছে- কূটনৈতিক প্রশিক্ষণে সহযোগিতা সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক, উচ্চশিক্ষা ও বৈজ্ঞানিক গবেষণা সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক, যুব ও ক্রীড়া ক্ষেত্রে সহযোগিতা সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক, শ্রমশক্তির বিষয়ে সমঝোতা স্মারক এবং বন্দর ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক।
চুক্তিগুলোর মধ্যে প্রথমটিতে কাতারের পক্ষে বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন হামাদ আল থানি ও বাংলাদেশের পক্ষে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, দ্বিতীয়টিতে কাতারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সুলতান বিন সাদ আল মুরাইখি ও বাংলাদেশের অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান, তৃতীয়টিতে কাতারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সুলতান বিন সাদ আল মুরাইখি ও বাংলাদেশের আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, চতুর্থটিতে কাতারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সুলতান বিন সাদ আল মুরাইখি ও বাংলাদেশের নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এবং পঞ্চমটিতে কাতার চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির চেয়ারম্যান শেখ খলিফা বিন জসিম আল থানি ও বাংলাদেশের ফেডারেশন অব চেম্বার্স অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম সই করেন।
সমঝোতা স্মারকগুলোর মধ্যে সব কটিতে কাতারের পক্ষে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সুলতান বিন সাদ আল মুরাইখি এবং বাংলাদেশের পক্ষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, যুব ও ক্রীড়া, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা সই করেন।
এর আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শিমুল হলে একান্ত বৈঠক হয় শেখ হাসিনা ও শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির।
প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে পৌঁছালে মঙ্গলবার সকালে কাতারের আমিরকে ফুল দিয়ে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় গাইবান্ধার সাঘাটায় ও মুন্সীগঞ্জ সদরে নির্বাচনের আগেই চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন চারজন।
গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটের আগেই এমনকি প্রতীক বরাদ্দের আগেই চেয়ারম্যান নিশ্চিত হয়েছেন আইনজীবী এস এম সামশীল আরেফিন টিটু।
নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদের তিনজন প্রার্থীর মধ্যে অপর দুজন প্রার্থী নিজেদের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করায় তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
বিষয়টি মঙ্গলবার সকালে নিশ্চিত করেছেন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও গাইবান্ধার জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আব্দুল মোত্তালিব।
তিনি জানান, এর আগে সোমবার বিকেলে প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষ দিন রিটানিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকতার কাছে লিখিতভাবে স্বেচ্ছায় নিজেদের প্রার্থীতা প্রত্যাহারপত্র দেন ওই দুই চেয়ারম্যান প্রার্থী। প্রার্থীতা প্রত্যাহার করা দুই প্রার্থী হলেন, হাসান মেহেদী বিদ্যুৎ এবং অপরজন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সামসুল আজাদ শীতল।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও গাইবান্ধা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল মোত্তালিব বলেন, ‘আজ প্রতীক বরাদ্দ শেষে দুপুরের পর তার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টি ঘোষণা করা হবে।’
নির্বাচনে সাঘাটা উপজেলায় চেয়ারম্যান পদ ছাড়াও সংরক্ষিত নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে দুইজন প্রার্থী এবং সাধারণ ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৯ জনসহ ১১ জন প্রার্থীর চূড়ান্ত হয়েছে।
সাঘাটা উপজেলায় পুরুষ ভোটার এক লাখ ২০ হাজার ৬৫৩ জন এবং নারী এক লাখ ২১ হাজার ৫৮ জনসহ মোট ভোটার সংখ্যা দুই লাখ ৪১ হাজার ১২ জন। এ ছাড়া ১০৩ টি ভোট কেন্দ্র এবং বুথ রয়েছে ৬৬১টি। উপজেলায় অতি ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের সংখ্যা ৩৮। এ উপজেলায় ব্যালটে ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করবেন।
মুন্সীগঞ্জে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত তিনজন
প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আনিস উজ্জামান, ভাইস চেয়ারম্যান পদে নাজমুল হাসান সোহেল এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে হাসিনা গাজী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
বিষয়টি সোমবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে নিশ্চিত করেছেন মুন্সীগঞ্জ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বশির আহমেদ।
তিনি বলেন, ‘চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থী ছিলেন আনিস উজ্জামান। এ ছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে দুই জন করে প্রার্থী থাকলেও ওই পদগুলোতে একজন করে প্রার্থী নিজেদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।’
তিনি জানান, এতে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে আর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা চেয়ারম্যান পদে আনিস উজ্জামান, ভাইস চেয়ারম্যান পদে নাজমুল হাসান সোহেল এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে হাসিনা গাজী নির্বাচিত হয়েছেন।
এ কারণে মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলায় ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে না এবং যথাসময়ে তাদের গেজেট প্রকাশিত হবে বলে জানান তিনি।
ষষ্ঠ ধাপের এ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে আগামী ৮ মে ১৫০ উপজেলায় ভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
আরও পড়ুন:প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে (পিএমও) গেছেন কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি।
মঙ্গলবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পৌঁছালে শেখ হাসিনা আমিরকে টাইগার গেটে ফুলের তোড়া দিয়ে স্বাগত জানান। খবর বাসসের
তারা সেখানে একান্ত বৈঠকেও মিলিত হবেন। পরে তারা দুই দেশের মধ্যে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর প্রত্যক্ষ করবেন।
পিএমও ত্যাগের আগে আমির টাইগার গেটে রক্ষিত ভিজিটরস বুকেও সই করবেন। এরপর তিনি বঙ্গভবনে যাবেন যেখানে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন কাতার আমিরের সম্মানে মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করেছেন।
সন্ধ্যায় আমির একটি বিশেষ বিমানে কাতারের উদ্দেশে যাত্রা করবেন।
রাষ্ট্রপতি মো.সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ আমন্ত্রণে কাতারের আমির সোমবার দু দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ঢাকা এসেছেন।
কদিন ধরেই দাবদাহে পুড়ছে জনজীবন। গরমে অতিষ্ঠ মানুষ। দিনভর তীব্র তাপপ্রবাহ, তবে রাতে কিছুটা স্বস্তি মিলছে। এই অবস্থা থেকে আপাতত মুক্তি মিলছে না।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে তাপপ্রবাহ যেভাবে বয়ে যাচ্ছে, আরও কটা দিন এভাবেই তা চলবে। কোথাও কোথাও সামান্য বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। তবে এতে গরম তেমন একটা কমবে না।
মঙ্গলবার সকাল থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রাজশাহী, পাবনা, খুলনা, বাগেরহাট, যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া জেলার ওপর দিয়ে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।
ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার ও রাঙ্গামাটি জেলাসহ ঢাকা, রংপুর ও বরিশাল বিভাগ এবং রাজশাহী ও খুলনা বিভাগে অবশিষ্টাংশের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
এতে বলা হয়, সিলেট বিভাগে দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলা বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
অধিদপ্তর বলছে, সারা দেশের দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বিরাজ করতে পারে।
আবহাওয়ার সার্বিক পর্যবেক্ষণে বলা হয়, লঘুচাপের বর্ধিতাংম পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে।
পরবর্তী পাঁচ দিনের আবহাওয়াও প্রায় একই থাকতে পারে জানিয়েছে অধিদপ্তর।
এর আগে সোমবার চলমান তাপপ্রবাহের পরিপ্রেক্ষিতে ৭২ ঘণ্টার জন্য দেশজুড়ের রেড অ্যালার্ট জারি করে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তার আগেও গত ১৯ এপ্রিল তিন দিনের হিট অ্যালার্ট দেয়া হয়। অ্যালার্ট থাকবে ২৫ এপ্রিল সকাল পর্যন্ত।
টানা কদিন দেশের বিভিন্ন এলাকায় তাপমাত্রা বেড়েছে। বিশেষ করে চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এ ছাড়া রাজশাহী, পাবনা, বরিশালেও প্রচণ্ড গরম। সোমবার খুলনা, যশোর ও চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাব অনুসারে, সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে মৃদু তাপপ্রবাহ, ৩৮ থেকে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে মাঝারি তাপপ্রবাহ, ৪০ থেকে ৪১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি হলে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ।
সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাত থেকে মুক্ত বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ দুবাইয়ের আল হামরিয়া বন্দরের জেটিতে ভিড়েছে।
জিম্মিদশা থেকে মুক্তি পাওয়ার ৯ দিন পর সোমবার আমিরাতের স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ৭টার দিকে জাহাজটি সমুদ্রবন্দরের জেটিতে নোঙর করে।
জাহাজের মালিকপক্ষ কেএসআরএম গ্রুপ সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
রাতে জাহাজ পরিদর্শনে যান মালিকপক্ষের লোকজন, আমিরাতে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত আবু জাফর ও বাংলাদেশ কনস্যুলেটের কনসাল জেনারেল বিএম জামালসহ কর্মকর্তারা।
এ সময় বাংলাদেশ মিশনের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে বরণ করা হয় তাদের। জাহাজের ২৩ নাবিক সুস্থ রয়েছেন।
এদিকে কেএসআরএম গ্রুপের ডিএমডি শাহরিয়ার জাহান রাহাতের নেতৃত্বে একটি টিম দুবাই গেছে। বাংলাদেশ থেকে যাওয়া কেএসআরএম গ্রুপের টিমটি নাবিকদের বরণ করে নেয়।
কেএসআরএম গ্রুপের গণমাধ্যম উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম জানান, জাহাজটি বন্দরের জেটিতে ভিড়েছে। নাবিকরা সবাই সুস্থ আছেন। নাবিকরা ফুরফুরে মেজাজে রয়েছে বলে তিনি জানান।
কেএসআরএম গ্রুপের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই মুহূর্তে নাবিকরা চাইলে বাইরে আসতে পারবেন না। কারণ, আরব আমিরাতে প্রবেশের জন্য এখনও তাদের ভিসা হয়নি। আইনি প্রক্রিয়া শেষে তাদের ভিসার জন্য আবেদন করা হবে।
জাহাজের মালিকপক্ষ জানায়, এখন জাহাজের কয়লা খালাসের প্রক্রিয়া শুরু হবে। এরপর নতুন করে কার্গো ভর্তি করার পর দেশে ফেরার প্রস্তুতি নেয়া হবে।
এদিকে প্রশাসনিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে দেশটির আজমান প্রদেশে বাংলাদেশ মিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন কেএসআরএম গ্রুপের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর শাহরিয়ার জাহান।
জাহাজটি ২১ এপ্রিল বিকেলে আল হামরিয়া বন্দরের বহির্নোঙরে নোঙর করে। ২২ এপ্রিল এটি নোঙর ফেলে জেটিতে।
আগে জাহাজটি ২২ এপ্রিল নোঙর করবে বলে জানিয়েছিল জাহাজটির মালিকপক্ষ। তারা আরও জানিয়েছেন, পণ্য খালাসের কার্যক্রম শেষ করার পর শুরু হবে নাবিকদের দেশে ফেরার প্রক্রিয়া।
১৩ এপ্রিল বাংলাদেশ সময় রাত ৩টার দিকে জলদস্যু মুক্ত হয় জাহাজটি। এরপর আরব আমিরাতের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে নাবিকরা।
গত ১২ মার্চ ভারত মহাসাগরে জলদস্যুর কবলে পড়ে ২৩ নাবিকসহ বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ। জলদস্যুরা জাহাজে উঠে নাবিকদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে জাহাজটিকে সোমালিয়ার উপকূলে দস্যুদের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় নিয়ে যেতে বাধ্য করে। একপর্যায়ে সুবিধাজনক স্থানে জাহাজটি নোঙর করায় দস্যুরা। এরপর মুক্তিপণের বিষয়ে দেনদরবার শুরু হয়।
মন্তব্য