মজার চেহারা নিয়ে হয়ত অতিক্ষুদ্র প্রাণী এরা, কিন্তু টারডিগ্র্যাডরা প্রাণী জগতে টিকে থাকার লড়াইয়ে টিকে যাওয়াদের মধ্যে অন্যতম। বিজ্ঞানীরা দাবি করছেন, তারা এদের মধ্যে একটি নতুন প্রজাতির সন্ধান পেয়েছেন যাদের রয়েছে অপ্রত্যাশিত একটি অস্ত্র - একটি ফ্লুরেসেন্ট বা প্রতিপ্রভা সুরক্ষা বর্ম।
প্রচলিত ভাষায় পানি ভাল্লুক বা মস মিগলেট নামে পরিচিত এই টারডিগ্যাডরা আকারে ‘মাইক্রোস্কোপিক’, অর্থাৎ মাইক্রোস্কোপ ছাড়া খালি চোখে এদের দেখা মুশকিল। এরা পানিতে বসবাস করে, আকারে শূন্য দশমিক পাঁচ মাইক্রোমিটার থেকে এক মাইক্রোমিটার দীর্ঘ, দেখতে জুবুথুবু হুভার ব্যাগের মতো, যা আট পায়ে চলে।
এই প্রাণীর অবয়ব যতোই মজার হোক না কেনো, জীবনীশক্তি দারুণ। এই প্রাণীরা বায়ুশূন্য স্থান, পরমাণু বিকিরণ, অতি চরম তাপ ও চাপ এবং তীব্র আয়ন ও অতিবেগুনি বিকিরণেও টিকে থাকতে পারে।
এই পানি ভাল্লুকদের টিকে থাকার অন্যতম কৌশল হচ্ছে সুপ্ত অবস্থায় গুটিয়ে গিয়ে দশকের পর দশক বেঁচে থাকা, তখন নিজের কোষের জন্য তারা প্রোটিন উৎপাদন করে।
বিজ্ঞানীরা এদের টিকে থাকার আরেকটি কৌশলও আবিষ্কার করেছেন, যা টারডিগ্র্যাডদের প্রাণঘাতি অতিবেগুনি আলো থেকে সুরক্ষা দিয়ে থাকে- একটি ফ্লুরেসেন্ট বা প্রতিপ্রভা জাতীয় বস্তু যা ক্ষতিকর অতিবেগুনি বিকিরণ শোষণ করে এবং একইসঙ্গে শক্তি উৎপাদন করে যা নীল আলো হিসেবে বিচ্ছুরিত হয়।
ইনডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স-এর গবেষক দলের সদস্য ও এই গবেষণাপত্রের সহলেখক ড. সন্দ্বীপ ইশ্বরাপ্পা বলেন, ‘আমাদের গবেষণা বলছে [এই প্রাণীরা] পৃথিবীর সবচেয়ে শুষ্ক ও রৌদ্রজ্জ্বল স্থানে টিকে থাকতে পারে।’
বিজ্ঞান বিষয়ক বায়োলজি লেটার সাময়িকীতে প্রকাশিত এই গবেষণাপত্রে, ইশ্বরাপ্পা ও তার সহকর্মীরা বর্ণনা করেছেন, ইনস্টিটিউটের ক্যাম্পাসে একটি কূপের দেয়ালে জন্মানো শেওলার নমুনায় কীভাবে তারা টারডিগ্র্যাডদের একটি নতুন প্রজাতির সন্ধান পেয়েছেন- যাদের নাম দিয়েছেন প্যারামাইক্রোবায়োটাস বিএলআর।
যখন তারা টারডিগ্র্যাডদের এই নতুন প্রজাতি এবং আরেকটি প্রজাতির নমুনাকে অতিবেগুনি আলোতে ১৫ মিনিট রাখেন, দেখতে পান শুধু নতুন প্রজাতির নমুনাই বেঁচে আছে। আশ্চর্যজনকভাবে, অতিবেগুনি আলোতে নতুন প্রজাতির নমুনা নীল আলো ছড়াচ্ছিল।
আরও গবেষণার জন্য, গবেষক দল টারডিগ্র্যাডদের নতুন প্রজাতির দেহ থেকে ফ্লুরেসেন্ট জাতীয় পদার্থযুক্ত একটি অংশ আলাদা করে এবং সেটা দিয়ে অতিবেগুনি আলো সংবেদনশীল প্রজাতির নমুনার দেহ আবৃত করে। এরপর তাদের অতিবেগুনি আলোতে রাখে। ফলাফলে দেখা যায় ফ্লুরেসেন্ট জাতীয় পদার্থ যুক্ত অংশটি অতিবেগুনি আলো সংবেদনশীল প্রজাতির নমুনাগুলোকে কিছু মাত্রায় সুরক্ষা দিয়েছে, যার কারণে অর্ধেক নমুনা বেঁচে গেছে।
ঈশ্বরাপ্পা জানান এই ফলাফল তাদের অবাক করেছে। তিনি বলেন, ‘প্রাণী জগতে অন্য প্রজাতির মধ্যেও অতিবেগুনি আলো সহ্য করার ক্ষমতা আছে, তবে [নতুন এই প্রজাতিটি] একমাত্র উদাহরণ যারা ফ্লুরেসেন্ট বা প্রতিপ্রভাকে প্রাণঘাতি অতিবেগুনি বিকিরণের বিরুদ্ধে সুরক্ষা ব্যবস্থা হিসেবে ব্যবহার করে থাকে।’
ভারতীয় গবেষক দলের এই গবেষণার বিষয়ে টারডিগ্র্যাডদের বিষয়ে একজন বিশেষজ্ঞ, পোল্যান্ডের অ্যাডাম মিকিভিচ ইউনিভারসিটি-র অধ্যাপক ড. লুকাস কাচমারেক বলেন, গবেষণাটি আগের গবেষণাগুলোরই ধারাবাহিকতা। এসব গবেষণা প্রমাণ করেছে যে টারডিগ্র্যাডদের উৎপাদিত বস্তুগুলো ক্ষতিকর পরিবেশে অন্যান্য অণুজীবদের সম্ভাব্য সুরক্ষা কবচ হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
তবে ড. কাচমারেক এটাও মন্তব্য করেছেন যে গবেষক দলটি এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট বস্তুটি চিহ্নিত করতে পারেনি যা আসলে অতিবেগুনি বিকিরণের বিরুদ্ধে সুরক্ষার কাজটি করছে। মনে রাখতে হবে শুধু ফ্লুরেসেন্ট বা প্রতিপ্রভা থেকে এ ধরনের সুরক্ষা নাও মিলতে পারে- বরং সম্ভাব্য সুরক্ষা প্রোটিন হয়তো এর পেছনে কাজ করতে পারে- বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
(ভাষান্তর গার্ডিয়ান-এর প্রতিবেদন)
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় অবিলম্বে স্থায়ী যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে তোলা একটি প্রস্তাব বুধবার সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে পাস হয়েছে।
নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সদরদপ্তর থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
খবরে বলা হয়, অবিলম্বে জিম্মিদের নিঃশর্ত মুক্তি ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতির দাবিতে তোলা প্রস্তাবে ১৫৮টি ভোট পড়ে দাবির পক্ষে। বিপক্ষে পড়েছে ৯টি ভোট। ভোটে অনুপস্থিত ছিল ১৩টি দেশ।
ওয়াশিংটন তার মিত্র ইসরায়েলকে রক্ষা করার জন্য কাউন্সিলে আগে ভেটো ক্ষমতা ব্যবহার করেছিল। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলার পর থেকে গাজা উপত্যকায় হামাসের সঙ্গে দেশটির যুদ্ধ চলছে।
যুদ্ধবিরতি ও জিম্মিদের মুক্তি দেয়া নিয়ে এ ভোটাভুটিতে ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থার (ইউএনআরডব্লিউএ) কাজের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করা হয়েছে।
ভোটের আগে যুক্তরাষ্ট্রের ডেপুটি অ্যাম্বাসেডর রবার্ট উড বুধবার পূর্বের অবস্থানের পুনরাবৃত্তি করে বলেছেন, প্রস্তাবটি গ্রহণ করা ‘লজ্জাজনক’ ও ‘ভুল’ হবে।
জাতিসংঘে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত ড্যানি ড্যানন বলেন, ‘আজকের সাধারণ পরিষদে সামনে প্রস্তাবগুলো যুক্তির ঊর্ধ্বে। আজকের ভোটটি সমবেদনার ভোট নয়। এটি জটিলতার জন্য ভোট।’
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে একই ধরনের উদ্যোগে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটোয় বাতিল হওয়ার কয়েক সপ্তাহ পরই এ বৈঠকের বিষয়টি আলোচনায় আসে। সাধারণ পরিষদে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাস হলেও নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্তের মতো এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নেরও কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।
ভোটের আগে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর কয়েক ডজন প্রতিনিধি ফিলিস্তিনিদের প্রতি তাদের সমর্থনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন।
এর আগে গত বছরের ডিসেম্বরেও জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় মানবিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে একটি প্রস্তাব সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে পাস হয়েছিল। প্রস্তাবটির পক্ষে ১৫৩টি দেশ ভোট দেয় তখন। অন্যদিকে প্রস্তাবটির বিপক্ষে ভোট দেয় ১০টি দেশ, যার মধ্যে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র অন্যতম।
হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলের হামলায় কমপক্ষে ৪৪ হাজার ৮০৫ জন নিহত হয়েছে, যাদের বেশির ভাগই বেসামরিক নাগরিক।
আরও পড়ুন:সিরিয়ার ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের বাবা হাফিজ আল-আসাদের কবর জ্বালিয়ে দিয়েছে সে দেশের বিদ্রোহীরা।
হাফিজ আল-আসাদও স্বৈরশাসক ছিলেন। হাফিজ ২০০০ সালে মারা যাওয়ার পর বাশার আল-আসাদ ক্ষমতায় বসেন।
বিদ্রোহীরা আগুন দেয়ার ঘটনার বেশ কয়েকটি ছবি প্রকাশ করেছেন।
ছবিতে দেখা যায়, পশ্চিম লাতাকিয়া প্রদেশে হাফিজ আল-আসাদের জ্বলন্ত কবরের পাশে দাঁড়িয়ে আছেন বেশ কয়েকজন বিদ্রোহী যোদ্ধা।
সেই সময় হাফিজের কবরের একাংশ দাউ দাউ করে জ্বলছিল। এ সময় আগুন দিয়ে একটি কফিনও পুড়িয়ে দেয়া হয়।
ধারণা করা হচ্ছে, কফিনটি ওই কবর থেকে তুলে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।
বাশারের বাবা হাফিজ ২০০০ সালে মারা যাওয়ার পর তাকে পৈত্রিক ভিটা কারদাহাতে কবর দেয়া হয়। তিনি ১৯৭১ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত সিরিয়া শাসন করেন।
গত ৮ ডিসেম্বর সিরিয়ার বিদ্রোহীরা রাজধানী দামেস্ক দখল করে নেন। এর আগে ধারাবাহিক অভিযানে বিদ্রোহীরা সিরিয়ার বড় বড় শহরগুলো একের পর এক দখল করেন।
বিদ্রোহীরা চারদিক থেকে রাজধানী দামেস্ক ঘিরে ফেললে বাশার আল-আসাদ তার পরিবারসহ ব্যক্তিগত বিমানে করে রাশিয়ায় আশ্রয় নেন।
আরও পড়ুন:আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে একটি বিস্ফোরণের ঘটনায় দেশটির শরণার্থীবিষয়ক ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী খলিল উর-রহমান হাক্কানি নিহত হয়েছেন।
স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, বুধবার শরণার্থী বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে ওই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে মন্ত্রী হাক্কানি ছাড়া আরও পাঁচজন নিহত হয়েছেন।
তালেবানের একজন মুখপাত্র বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে মন্ত্রী নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছেন।
দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা সংবাদমাধ্যম এপিকে জানিয়েছেন, আত্মঘাতী হামলায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
তবে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী তাৎক্ষণিকভাবে এই হামলার দায় স্বীকার করেনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সরকারি একটি সূত্র জানিয়েছে, কাবুলের শরণার্থী মন্ত্রণালয়ে এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।
আফগানিস্তানে ২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতা দখলের পর হাক্কানি শরণার্থী বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। তিনি হাক্কানি নেওয়ার্কেরও একজন জ্যেষ্ঠ নেতা ছিলেন।
আরও পড়ুন:সিরিয়ায় স্থিতিশীলতা ফেরানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন আবু মোহাম্মদ আল জোলানি। হায়াত তাহরির আল শাম (এইচটিএস) প্রধান বলেছেন, ক্ষমতাচ্যুত শাসক বাশার আল আসাদের অনুগতদের নির্মূলের মাধ্যমে নির্মূলের মাধ্যমে সিরিয়ায় স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা হবে।
সূত্রের উল্লেখ করে রয়টার্স জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসন সিরিয়ায় একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার গঠনে এইচটিএস নেতার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। তবে জোলানির সঙ্গে হোয়াইট হাউসের সরাসরি যোগাযোগ হয়েছিলো কিনা তা জানাতে পারেনি বার্তা সংস্থাটি।
এইচটিএস, সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সেসসহ সিরিয়ায় সশস্ত্র ইসলামী গোষ্ঠীগুলোর এক ও অভিন্ন শত্রু ছিলেন বাশার আল আসাদ। আসাদ পরিবারের শেষ প্রেসিডেন্টের পতনের পর এখন তাদের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ জাতি ও গোত্রগত বিভেদ ভুলে সিরিয়াকে ঐক্যবদ্ধভাবে গড়ে তোলা।
রাজধানী দামেস্কে থেমে থেমে বিজয় উল্লাস চলছে। এর মাঝেই উদ্বেগ-উৎকন্ঠাও কাজ করছে। কিভাবে ভিন্ন ভিন্ন গোষ্ঠী ও সংখ্যালঘুদের মাঝে একটি সমন্বয় গড়ে তোলা যায় সেটিই সবচেয়ে বড় ভাবনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে সাধারণ মানুষের।
তাছাড়া বিদ্রোহীদের মাঝে ঐক্য ধরে রাখাও কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সেস দেরাজোর প্রদেশের কিছুটা অংশ দখল করে তুর্কিয়ে সমর্থিত মিলিশিয়াদের সঙ্গে লড়াইয়ে জড়িয়েছে। এর মাঝেই পিবিএস নিউজ বলছে, পেন্টাগনের শীর্ষ এক জেনারেল যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত কুর্দি যোদ্ধাদের সঙ্গে দেখা করেছেন।
এসব ঘটনা থেকে এমনটা আশঙ্কা করা অমূলক নয় যে ক্ষমতাকেন্দ্রিক লড়াই বড় আকার নিতে পারে।
ইদলিব-ভিত্তিক ‘সিরিয়ান স্যালভেশন’ সরকারের প্রধান মোহাম্মদ আল-বশিরকে সিরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে বিরোধী গোষ্ঠীগুলো। এ অবস্থায় ইরান-সমর্থিত মিলিশিয়া, হিজবুল্লাহ ও বাশার আল আসাদের অনুগতদের নির্মূলের মাধ্যমে সিরিয়ায় স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিলেন আবু মোহাম্মদ আল জোলানি।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সিরিয়ায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা অর্জনে কুর্দিদের সঙ্গে সংঘাতে জড়াতে চায় না তাহরির আল শাম। তারা সহিংসতা এড়িয়ে দেশটিকে গড়ে তোলার ব্যাপারে আশাবাদী।
ওদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আয়মান সাফাদির সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন। ব্লিংকেন তাকে জানিয়েছেন- দামেস্কে জবাবদিহিমূলক প্রশাসন দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র।
তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, পশ্চিমারা ভবিষ্যতে এইচটিএস প্রধান আবু মোহাম্মদ আল জোলানির সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী হবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্টই সংশয় রয়েছে।
আরও পড়ুন:প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতনের পর সিরিয়ার বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।
গত দুই দিনে সিরিয়ায় ৪৮০টি হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী।
বিদ্রোহীদের মাত্র ১২ দিনের তীব্র হামলায় পতন ঘটেছে ২৪ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের। এর মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটল আসাদ পরিবারের ৫৩ বছরের শাসনের।
স্বৈরাচার পতনের তিন দিন পেরিয়ে গেলেও উচ্ছ্বসিত সিরিয়ার বাসিন্দারা, তবে বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের মাঝে স্বস্তির বদলে দানা বেধেছে উদ্বেগের।
গত দুই দিনে ৪৮০ বার দেশটির কৌশলগত বিভিন্ন সামরিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এরমধ্যে ১৫টি নৌযান, বিমান-বিধ্বংসী ব্যাটারি এবং বেশ কয়েকটি শহরে অস্ত্র উৎপাদনকারী কেন্দ্রও আছে।
আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়।
এদিকে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানায়, অস্ত্রের গুদাম, গোলাবারুদের গুদাম, বিমানবন্দর, নৌঘাঁটি ও গবেষণা কেন্দ্রসহ সিরিয়ার সেনাবাহিনীর সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে ইসরায়েলি বাহিনী হামলা চালিয়েছে।
ইসরায়েল বলছে, আসাদ সরকারের পতনের পর অস্ত্র যাতে ‘চরমপন্থিদের হাতে’ না যায়, সে জন্যই এ পদক্ষেপ নিয়েছে তারা।
সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে একটি প্রতিরক্ষা অঞ্চল গড়ে তুলতে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ।
এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, অধিকৃত গোলান মালভূমিতে উপস্থিতি আরও জানান দিতেই এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন:সামরিক আইন পরিচালনায় ভূমিকার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রেপ্তার হওয়ার কিছুক্ষণ আগে জেলহাজতে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন দক্ষিণ কোরিয়ার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী কিম ইয়ং হিউন।
বার্তা সংস্থা ইয়োনহাপের উদ্ধৃতি দিয়ে বুধবার এএফপি এ খবর জানায় ।
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল ৩ ডিসেম্বর সামরিক আইন জারি করেন এবং সংসদে সেনা ও হেলিকপ্টার পাঠান, কিন্তু পরে সামরিক আইন প্রত্যাহার করতে বাধ্য হন।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী কিম ইয়ং হিউন বৃহস্পতিবার পদত্যাগ করেন।
বিদ্রোহীদের আক্রমণের মুখে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ সরকারের পতনের পর সিরিয়ায় উপর্যুপরি বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। এর অংশ হিসেবে মঙ্গলবার দেশটির একাধিক সেনা ঘাঁটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর সামরিক ট্যাংক দামেস্কের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে বলেও একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
ইসরায়েলের এই আগ্রাসনকে ‘বিপজ্জনক’ আখ্যা দিয়ে এর তীব্র নিন্দা ও কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের চার দেশ। সৌদি আরব, ইরান, ইরাক ও কাতার পৃথক বিবৃতিতে বলেছে, ইসরায়েল সিরিয়ার সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করে আন্তর্জাতিক আইন উপেক্ষা করছে।
সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, গোলান মালভূমি একটি আরব ভূখণ্ড এবং ইসরায়েলের এই কর্মকাণ্ড সিরিয়ার নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে এটিকে জাতিসংঘ সনদের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হিসেবে উল্লেখ করেছে। মুখপাত্র এসমাইল বাঘায়ি সতর্ক করে বলেছেন, এই আগ্রাসন মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করবে।
ইরাকের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ইসরায়েলের এই পদক্ষেপ গুরুতর আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে।
কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ইসরায়েলের এই আগ্রাসী কর্মকাণ্ড সিরিয়ার সার্বভৌমত্ব ও ঐক্যের প্রতি স্পষ্ট আঘাত। এটি আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। ইসরায়েলের দখলদারত্বের নীতি মধ্যপ্রাচ্যে আরও সহিংসতা ও উত্তেজনা সৃষ্টি করবে।
এদিকে ইসরায়েল দাবি করছে, বাশার আল-আসাদ সরকারের পতনের পর সিরিয়ার সেনাবাহিনীর অস্ত্র যাতে অন্য কোনো শত্রুর হাতে না যায় সে লক্ষ্যে ঘাঁটিতে হামলা চালানো হয়েছে। তবে সীমান্ত এলাকার নির্ধারিত বাফার জোনের বাইরে সিরীয় ভূখণ্ডে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর প্রবেশ করেনি।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) এক কর্মকর্তা বলেছেন, দামেস্ক অভিমুখে ইসরায়েলি ট্যাংকের এগিয়ে যাওয়ার বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সব প্রতিবেদন মিথ্যা। আইডিএফের সৈন্যরা বাফার জোনে অবস্থান করছে।
ইসরায়েল বলেছে, তারা সিরিয়ার নতুন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সংঘাত চায় না। তবে সিরিয়ার সামরিক অস্ত্র যাতে শত্রুর হাতে চলে না যায়, তা নিশ্চিত করতে গত তিনদিন ধরে সিরিয়াজুড়ে সামরিক অবস্থান লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালাচ্ছে তারা।
সোমবার রাতে সিরিয়ায় সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে দু’শতাধিক বিমান হামলা চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েল।
তবে মঙ্গলবার অন্তত তিনটি নিরাপত্তা সূত্র বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছে, ইসরায়েলি সৈন্যরা বাফার জোন অতিক্রম করেছে।
সিরীয় একটি সূত্র বলেছে, ইসরায়েলি সৈন্যরা ইতোমধ্যে কাতানা শহরে পৌঁছে গেছে। এই শহরটি বাফার জোন থেকে কয়েক কিলোমিটার পূর্বে ও দামেস্ক বিমানবন্দর থেকে সামান্য দূরে অবস্থিত।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য