ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতাল এলাকায় বৃহস্পতিবার ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়েছে। এ সময় দালাল চক্রের ছয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করে সাত দিনের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কিশোর কুমার দাশের নেতৃত্বে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুরে ১২টা পর্যন্ত সদর হাসপাতাল এলাকায় অভিযান চলে। পুলিশের পাশাপাশি এ সময় উপস্থিত ছিলেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রে প্রশান্ত বৈদ্য।
আটক ব্যক্তিরা হলেন পৌরসভার কান্দিপাড়া এলাকার রাসেল, পশ্চিম মেড্ডা শরিফপুর এলাকার শিপন, হালদার পড়া এলাকার মামুন, সদর উপজেলা সুহিলপুর গ্রামের আব্দুল্লাহ বকশি, কসবা উপজেলার মূলগ্রাম এলাকার ছোটন মিয়া ও নবীনগর উপজেলার মহেশপুর গ্রামের শাহ পরান।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রশান্ত বৈদ্য জানান, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত জেলার জেনারেল হাসপাতাল এলাকায় অভিযান চালিয়ে দালাল চক্রের ছয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তারা দোষ স্বীকার করায় প্রত্যেককে সাতদিন করে কারাদণ্ড দেয়া হয়।
তিনি আরও জানান, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা ওই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের প্ররোচনা ও প্রলোভন দেখিয়ে অন্য হাসপাতাল কিংবা আশেপাশের ক্লিনিকে নিয়ে যায়। প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নেয়। দালালচক্ররে সদস্যরা অন্য হাসপাতাল ও ক্লিনিক থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ কমিশনও পেয়ে থাকে।
এ ধরনের প্রতারনামূলক কার্যক্রম যেন আর না হয় সেজন্য অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।
পাবনায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় দুই প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। প্রাথমিক তদন্ত করে হাসপাতালটি সিলগালা করে দিয়েছেন সিভিল সার্জন। একইসঙ্গে অভিযোগ তদন্তে ডেপুটি সিভিল সার্জনকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এদিকে ঘটনার পর থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গা-ঢাকা দিয়েছে।
সোমবার ঘটনাটি জানাজানি হলে জেলা সিভিল সার্জন সরেজমিনে গিয়ে বিষয়টির প্রাথমিক তদন্ত করে হাসপাতালটি সিলগালা করে দেন।
পাবনা সদর পৌর এলাকার শালগাড়িয়া হাসপাতাল সড়কে অবস্থিত বেসরকারি আইডিয়াল হাসপাতালে রোববার (১৪ এপ্রিল) রাত ৩টার দিকে পৃথক চিকিৎসক দ্বারা সিজারিয়ান অপারেশনের সময় এই মৃত্যুর ঘটনা ঘটে বলে জানা যায়। এর আগে দুপুরে রোগীদের সিজারিয়ান অপারেশনের জন্য হাসপাতালটিতে ভর্তি করা হয়।
অভিযোগে জানা যায়, কুষ্টিয়ার শিলাইদহ এলাকার মাহবুব বিশ্বাসের স্ত্রী ইনসানা খাতুনের প্রসব বেদনা উঠলে রোববার দুপুরে তাকে পাবনা আইডিয়াল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ সময় জাহিদা জহুরা লীজা নামক এক চিকিৎসক অপারেশন করতে গেলে ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু হয়।
অপর ঘটনায় একই সময়ে পাবনার আটঘরিয়ার স্বপ্না খাতুন নামক এক রোগী কাজী নাহিদা আক্তার লিপির কাছে সিজারিয়ান অপারেশন করতে আসেন। ভুল চিকিৎসায় তারও মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে।
ঘটনা ধামাচাপা দিতে কর্তৃপক্ষ রাতেই রোগীসহ স্বজনদের হাসপাতাল থেকে বের করে দিয়ে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলে। পরে রোগী মারা যাওয়ার ঘটনা প্রকাশ হয়ে পড়লে তা ধামাচাপা দিতে টাকার প্রলোভন দেখিয়ে মরদেহসহ স্বজনদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেন।
এ ঘটনায় সঠিক তদন্ত শেষে হাসপাতাল-সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছেন সিভিল সার্জন। সরেজমিন ঘটনাস্থলে গিয়ে সিজারিয়ান অপারেশন করার সময়ে যেসব উপকরণ ও মেডিসিন ব্যবহার হয়েছে সেগুলোর নমুনা সংগ্রহ করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
সিভিল সার্জন ডা. শহীদুল্লা দেওয়ান বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে মেয়াদোত্তীর্ণ স্যালাইন বা ওষুধ সেবনের ফলে তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় চিকিৎসকসহ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যারা জড়িত রয়েছে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বেসরকারি ক্লিনিকটি যেহেতু স্বাস্থ্য বিভাগের রেজিস্ট্রেশনভুক্ত, তাই নিয়ম মেনে সব কার্যক্রম চলছে কিনা সেটিও খতিয়ে দেখা হবে। প্রয়োজনে তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হবে।’
পাবনা সদর থানার ওসি রওশন আলী বলেন, ‘ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনায় এখনও কোনো পরিবার থানা পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়নি।’
আরও পড়ুন:দেশে প্রথমবারের মতো ক্যাডাভেরিক কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট (ব্রেন ডেথ রোগীর অঙ্গ প্রতিস্থাপন) করা হয়। গত বছরের জানুয়ারি মাসে সারাহ ইসলাম নামে একজনের অঙ্গদানের মাধ্যমে দেশের স্বাস্থ্য সেবা খাতে এমন রেকর্ড সৃষ্টি হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) শামীমা আক্তার ও হাসিনা নামে দুই রোগীর শরীরে ওই কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়। বিষয়টি নিয়ে সে সময় নিউজবাংলায় প্রতিবেদনও প্রকাশ হয়।
সারাহ ইসলামের কিডনি প্রতিস্থাপন করা রোগীদের একজন শামীমা আক্তার মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে বিএসএমএমইউ’র আইসিইউতে মারা গেছেন। কিডনি গ্রহীতা অপরজন হাসিনা হাসিনা এর আগে গত বছরের অক্টোবরে মারা যান। এর ফলে সারাহর কিডনি পাওয়া দুই নারীরই মৃত্যু হলো।
বিএসএমএমইউ’র ইউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান দুলাল মঙ্গলবার রাতে শামীমা আক্তারের মৃত্যুর খবর গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, ‘কিডনি গ্রহীতা প্রথম জন (হাসিনা) ফুসফুসের সংক্রমণে মারা গিয়েছিলেন। অপরজন শামীমাও চলে গেলেন। এটি খুবই কষ্টের। শামীমা শেষ ছয় মাস আমাদের আওতার বাইরে ছিলেন।’
তিনি বলেন, সম্প্রতি শামীমার ভাই জানায় যে শামীমার ক্রিয়েটিনিন বেড়ে গেছে, একেবারে শুকিয়ে গেছে। তিন সপ্তাহ আগে আবারও তাকে বিএসএমএমইউতে ভর্তি করা হয়। শুরুর দিকে কিছুটা উন্নতি হলেও শামীমার শুকিয়ে যাওয়ার কারণটা ধরতে পারছিলেন না চিকিৎসকরা।
‘ক্রিয়েটিনিন পুনরায় বাড়ায় ওয়ার্ড থেকে তাকে কেবিনে আনা হয়। তারপরও অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় চার দিন আগে আইসিইউতে নেয়া হয়।’
ডা. হাবিবুর রহমান জানান, শামীমার শরীরে হেপাটাইটিস-সি ধরা পড়ে। কারও হেপাটাইটিস-সি পজিটিভ হলে রক্ত কাজ করে না। এজন্য বিশেষ রক্ত লাগে। সেটি দেয়ার পরও কিন্তু শেষ মুহূর্তে রেসপন্স করেনি। আর বাড়িতে থাকার সময় অবস্থা খারাপ হলেও সময়মতো আমাদের জানানো হয়নি।’
আরও পড়ুন:জাতিসংঘের শিশু তহবিল থেকে দেশের শিশুদের শতভাগ ভ্যাকসিন নিশ্চিত করা ও নিরাপদ মাতৃত্বসহ স্বাস্থ্যখাতের অন্যান্য দিক নিয়ে ইউনিসেফ দেশে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন।
সচিবালয়ে রোববার সকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দপ্তরে ইউনিসেফের জাতিসংঘ শিশু তহবিলের প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট এবং জাতিসংঘ শিশু তহবিলের হেলথ সেকশনের চিফ মায়া ভ্যানডেন্টের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে এ কথা জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘ইউনিসেফ করোনার সময় গোটা বিশ্বের পাশাপাশি বাংলাদেশেও নানাভাবে সহযোগিতা করেছে। এখন জাতিসংঘের শিশু তহবিল থেকে দেশের শিশুদের শতভাগ ভ্যাকসিন পাওয়া নিশ্চিত করা, নিরাপদ মাতৃত্বসহ স্বাস্থ্যখাতের অন্যান্য দিক নিয়েও জাতিসংঘের এই বিশেষ সংস্থাটি দেশে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘নিরাপদ মাতৃত্ব, ভ্যাকসিন কার্যক্রমকে ফলপ্রসূ করা, দেশে ভ্যাকসিন উৎপাদনে সহায়তা করা, তৃণমূল পর্যায়ে শিশুদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত অবকাঠামো নির্মাণ করাসহ অন্যান্য উন্নয়নমূলক কাজেও ইউনিসেফ ভূমিকা রাখার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
‘এগুলোর সঙ্গে, শিশুদের জন্য তৃণপর্যায়ে স্বাস্থ্য অবকাঠামো নির্মাণের জন্য ইউনিসেফ প্রতিনিধিদের এগিয়ে আসার অনুরোধ জানালে তারা সেটিতে আগ্রহ দেখিয়েছেন।’
বৈঠকে জাতিসংঘের শিশু তহবিলের প্রতিনিধি দল করোনাকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নানারকম ফলপ্রসূ উদ্যোগের প্রশংসা করেন। দেশের স্বাস্থ্যখাত আগের থেকে আরও উন্নত হচ্ছে বলেও জানান তারা। টিকাদানে বাংলাদেশকে বিশ্বের একটি উদাহরণ হিসেবেও উল্লেখ করেন প্রতিনিধিরা।
আরও পড়ুন:দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থাকে মানুষের জন্য সহজলভ্য করতে যা যা করার দরকার তাই করবেন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা সামন্ত লাল সেন।
শনিবার রাজধানীর বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কনভেনশন হলে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় আয়োজিত ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর ঐতিহাসিক নেতৃত্ব এবং দেশের উন্নয়ন’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান।
মন্ত্রী বলেন, ‘ইদের পর থেকে তৃণমূল স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নে আমি আবারও মাঠে নেমে পড়ব। প্রয়োজনে প্রত্যন্ত গ্রামে গঞ্জে চলে যাব। দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থাকে মানুষের জন্য সহজলভ্য করতে যা যা করার দরকার আমি তাই করব।’
সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘কথা কম বলে অসুস্থ মানুষের সেবায় কাজ করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণ করতে হবে আমাদের। বঙ্গবন্ধু এই দেশকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখতেন। তিনি ২৩ বছর লড়াই সংগ্রাম করেছেন বাংলাদেশ একদিন স্বাধীন হবে সেই জন্য। তার দীর্ঘদিনের স্বপ্নের দেশ স্বাধীন হয়েছে। তিনি কিন্তু দেশকে তার স্বপ্নের মতো করে সাজানোর সুযোগ পাননি।
‘তিনি (বঙ্গবন্ধু) মাত্র তিন বছরের মত সময় ক্ষমতায় ছিলেন। দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধের পর দেশ স্বাধীন হলেও দেশে তেমন কোনো সম্পদ বা অর্থ ছিল না। সেই দুর্ভিক্ষ পীড়িত দেশের দায়িত্ব নিয়েই তিনি এমন কোনো সেক্টর নেই যেখানে তিনি কাজ শুরু করেননি।’
মন্ত্রী বলেন, ‘স্বাস্থ্যখাতের সব ভালো উদ্যোগ জাতির পিতাই শুরু করে দিয়েছিলেন। তিনি যেভাবে শুরু করেছিলেন দেশের বিভিন্ন কুচক্রী মহলের কারণে সেগুলো সেভাবে বাস্তবায়ন হয়নি। এখন তারই সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা পিতার কাজগুলো এক এক করে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন। আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে, জনগণের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগগুলো বাস্তবায়ন করা। সেই কাজ করতে মুখে আমাদেরকে বড় বড় কথা বললেই হবে না, আমাদেরকে কাজ করে দেখাতে হবে। এজন্য আমরা যেন মুখে কথা কম বলে কাজ করেই আমাদের সক্ষমতা বুঝিয়ে দিতে পারি সে লক্ষ্যেই মাঠে নেমে পড়তে হবে।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা।
স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব আজিজুর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডা. জামাল উদ্দিন চৌধুরী, বিএসএমএমইউ এর ভিসি ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবিএম খুরশীদ আলম, স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের মহাপরিচালক অধ্যাপক টিটো মিয়া, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাহান আরা বানু, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মাকসুরা নূর, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব মুহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান (অতিরিক্ত সচিব)-সহ অন্যান্যরা।
দেশে আরও ৪২ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার এই হিসাব দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনাবিষয়ক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি।
এতে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২৪ ঘণ্টায় কারও মৃত্যু হয়নি। এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ৪৯ হাজার ৩২৯ জনে। এ পর্যন্ত ভাইরাসটিতে মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৪৯৩ জনের।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৬৮৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ সময়ে শনাক্তের হার ৬ দশমিক ১১ শতাংশ। মোট পরীক্ষায় এ পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ০৭ শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় মোট মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন ৩৭ জন। এ নিয়ে দেশে মোট সুস্থ ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ১৬ হাজার ৫৫৫ জনে।
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (চমেক) রোগী ও তাদের স্বজনরা সিন্ডিকেট ও দালাল চক্রের কাছে জিম্মি হয়ে আছে। দালাল ছাড়া এখানে কোনো কাজ হয় না। কেউ এই চক্রের বিরুদ্ধে কথা বললে বা তাদের কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করলে মারধরসহ নানামুখী হেনস্তার শিকার হতে হয়।
দোর্দণ্ড প্রতাপে রাজত্ব করে বেড়ানো এই দালাল চক্রের বিরুদ্ধে অবশেষে মাঠে নেমেছে র্যাব। এই এলিট ফোর্সের একটি টিম বুধবার চমেক হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে ৩৯ দালালকে আটক করেছে। এ সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আটক দালালদের জেল-জরিমানা দেন।
র্যাব জানায়, গ্রেপ্তারকৃত দালালরা জানিয়েছে যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে একাধিক সিন্ডিকেট ও দালাল চক্র রয়েছে। তারা সারাদিন এই হাসপাতালে ঘুরে বেড়ায়।
পেশাদার দালাল চক্র
চমেক হাসপাতাল এলাকায় স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও ইজিবাইক চালকদের নিয়ে দালাল চক্র সার্বক্ষণিক তৈরি করে থাকে। দালালরা প্রথমেই সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যবস্থা ভালো নয় উল্লেখ করে আগত রোগী ও স্বজনদের দোটানায় ফেলে দেয়। এভাবে তাদের মধ্যে সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসার প্রতি রোগীদের আস্থার সংকট তৈরি করে বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালে নিয়ে যায়।
এছাড়াও চিকিৎসকরা রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা দিলে সেগুলো দ্রুত করিয়ে দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে এবং কমিশন পাওয়ার আশায় বিভিন্ন কৌশলে বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যায়।
শয্যা ও ওয়ার্ড সিন্ডিকেট
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এই অঞ্চলের রোগীদের অন্যতম ভরসার চিকিৎসা কেন্দ্র। এখানে বিভাগের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে রোগী আসে। কিন্তু হাসপাতালে পা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে পদে পদে বাধার সম্মুখীন হয় রোগী ও সঙ্গে আসা স্বজনরা।
হাসপাতালের ভেতরে তো বটেই, বাইরেও ওঁৎ পেতে থাকা দালাল চক্র তাদেরকে ঘিরে ধরে। প্রথমেই জরুরি মুহূর্তে রোগী বহনের ট্রলি থেকে শুরু করে শয্যা বা ওয়ার্ড পাইয়ে দেয়ার কথা বলে দালালরা একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেয়। এরপর শুরু হয় চিকিৎসা সেবা নিয়ে ভয় দেখানো। সরকারি হাসপাতালে বেড পাওয়া যাবে না, আইসিইউ মিলবে, চিকিৎসকের সার্বক্ষণিক তদারকির অভাব, নার্সের দেখা পাওয়া যায় না- এমন নানা কথার ফাঁদে ফেলে চেষ্টা চলে রোগীদের বেসরকারি হাসপাতালে নেয়ার।
দুরারোগ্য রোগের ভীতি সঞ্চার
চিকিৎসাসেবা নিতে হাসপাতালে রোগী আসামাত্রই নানা দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হওয়ার নমুনা রয়েছে এমনটা উল্লেখ করে ভয় দেখানো শুরু করে সিন্ডিকেট ও দালাল চক্রের সদস্যরা। ক্যান্সার বা টিউমার বা অন্য কোনো বড় ধরনের রোগে আক্রান্ত হওয়ার কথা বলে তারা রোগীকে বেসরকারি কোনো ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যায় এবং সেখানে ভর্তি করায়।
এর ফলে রোগীরা সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা ও স্বল্প মূল্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়। একইসঙ্গে অধিক অর্থ ব্যয় করে রোগী ও তার স্বজনরা সর্বস্বান্ত হয়ে বাড়ি ফেরে। দালালদের ফাঁদে পড়ে মানহীন হাসপাতালে যাওয়ায় অনেক সময় সুচিকিৎসার অভাবে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হয়ে থাকে।
অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেট
চমেক হাসপাতালে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও তা খুবই অপ্রতুলত- এমন গুজব ছড়িয়ে সিন্ডিকেট দ্রুত অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিয়ে ব্যক্তিমালিকানাধীন অ্যাম্বুলেন্স অধিক টাকায় ভাড়া দেয়। চিকিৎসাধীন কোনো রোগী এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য স্থানান্তর করার ক্ষেত্রেও এই অ্যাম্বলেন্সি সিন্ডিকেটের খপ্পর থেকে রেহাই পায় না। এমনকি কোনো রোগী মারা গেলে হাসপাতাল থেকে মরদেহ বহনেও সিন্ডিকেট করে অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে এই দালাল চক্রের বিরুদ্ধে।
পরীক্ষা-নিরীক্ষা সিন্ডিকেট
হাসপাতালের চিকিৎসক রোগীর রোগ নির্ণয়ের জন্য বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা দিলে সেগুলো দ্রুত করিয়ে দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে এবং কমিশন পাওয়ার আশায় বিভিন্ন কৌশলে দালালরা তাদের চুক্তিভিত্তিক বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যায়।
কমিশন বাণিজ্য
রোগী হাসপাতালে আসার পর ভর্তি থেকে শুরু করে রোগী বহনের জন্য ট্রলি, শয্যা বা ওয়ার্ড পাইয়ে দেয়া, বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখাতে সিরিয়ালে পেছন থেকে সামনে নেয়া, স্বল্প মূল্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেয়া, তাৎক্ষণিক অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা, স্বল্প মূল্যে উন্নতমানের ওষুধ কেনাসহ সব ক্ষেত্রে রোগীদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে কমিশন বাণিজ্য করে আসছে চমেক হাসপাতালে সক্রিয় সিন্ডিকেট।
পথ্যবাণিজ্য সিন্ডিকেট
সরকারি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা শেষে রোগীদের বিনামূল্যে সরকার থেকে সরবরাহ করা ওষুধ নেয়া থেকে ভুল বুঝিয়ে স্বল্প মূল্যে উন্নতমানের ওষুধ কেনার প্রলোভন দেখিয়ে তাদের কমিশনপ্রাপ্ত নির্দিষ্ট ফার্মেসিতে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে ফার্মেসির দোকানি ওষুধের কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে স্বাভাবিকের চেয়ে অধিক দামে ওষুধ গছিয়ে দেয়।
৩৯ দালাল আটক, সাজা
এদিকে চমেক হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে বুধবার অভিযান চালিয়ে ৩৯ দালালকে আটক করে র্যাব।
র্যাব-৭ এর সিও লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাহবুব আলম বলেন, ‘জেলা প্রশাসনের একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে সাদা পোশাকে র্যাবের টিম হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে অভিযান চালায়। অভিযানে সন্দেহভাজন ৩৯ জনকে আটক করা হয়। তাদের মধ্যে ১৪ জনকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে ১ মাসের কারাদণ্ড এবং ২৪ জনকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে ১ মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।’
মাহবুব আলম বলেন, ‘চমেক হাসপাতালে বেড ও ওয়ার্ড সিন্ডিকেট, মেডিসিন সিন্ডিকেট এবং অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেট সক্রিয়। তারা রোগীদের বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে প্রলুব্ধ করে। মূলত কমিশন বাণিজ্যের লক্ষ্যে রোগীদের প্রলুব্ধ করে তারা।
‘অভিযানের বিষয়টি নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট কাউকে পাওয়া যায়নি।’
আরও পড়ুন:স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল বলেছেন ‘সমন্বয় সভার পরিসংখ্যানগত তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে বিগত ২৩ বছরে যত ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিয়েছে গত ২০২৩ সালে এক বছরেই তার থেকে বেশি রোগী আক্রান্ত হয়েছে। অর্থাৎ গত ২৩ বছরে দেশে মোট ডেঙ্গু রোগী ছিল প্রায় আড়াই লক্ষ। কিন্তু গত ২০২৩ সালে মাত্র এক বছরেই রোগী আক্রান্ত হয় প্রায় ৩ লাখ। এই সংখ্যা শুধু হাসপাতালে ভর্তিকৃতদের।’
মঙ্গলবার দুপুরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘এর বাইরে তো আরও রোগী ছিলই। এতেই বোঝা যায়, ডেঙ্গু রোগী নিয়ে আমাদের এবার আগে থেকেই সতর্ক না হয়ে কোন উপায় নেই। ডেঙ্গু প্রতিরোধ করতে হলে আমাদেরকে এক দিকে যেমন মশা মারতে হবে, আবার অন্যদিকে প্রাদুর্ভাব কমাতে আমাদেরকে আগে থেকেই সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে। সবার আগে আমাদের নিজ নিজ এলাকার কমিউনিটি সম্পৃক্ততা ও সচেতনতা বাড়াতে হবে। মশা মারার জন্য ওষুধ যেমন মান সম্পন্ন কিনতে হবে তেমনি আমাদেরকে ভালো ট্রিটমেন্ট ব্যাবস্থাও রাখতে হবে। তবে, ডেঙ্গু প্রতিরোধে আজ থেকে যেভাবে উদ্যোগ নেওয়া শুরু হলো, এটিকে চলমান রেখে সব সেক্টরকে এক হয়ে কাজ করতে হবে।’
মন্ত্রীর সভাপতিত্বে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব হ্রাসকরণ ও চিকিৎসাসেবা সুসমন্বিত করণ বিষয়ক একটি বিশেষ সভা করা হয়। সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব জনাব মো. জাহাঙ্গীর আলম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবিএম খুরশীদ আলম, বিএমএ সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক প্রফেসর আবদুল্লাহ, স্বাচিপ সভাপতি অধ্যাপক জামাল উদ্দিন চৌধুরী, বিএসএমএমইউ ভিসি শারফুদ্দিন আহমেদসহ মন্ত্রণালয়ের ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া রোগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সদস্যবৃন্দ।
সভার শুরুতে বাংলাদেশে ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব ও নানাবিধ সমস্যা তুলে ধরে মূল প্রবন্ধ তুলে ধরেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা) অধ্যাপক মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধ করতে আমাদেরকে এক হয়ে মাঠে নেমে কাজ করতে হবে। কোন ভেদাভেদ যেন আমাদের মধ্যে না হয়। করোনা যেভাবে আমরা সম্মিলিতভাবে মোকাবিলা করেছি, ডেঙ্গুও আমরা এক হয়ে সমন্বিতভাবে প্রতিরোধ করবো। একই সঙ্গে এ বছর ওষুধ কিনতে আরো বেশি সতর্কতা অবলম্বন করে পরীক্ষা ও যাচাই-বাছাই করে আমাদেরকে ওষুধ কেনার উদ্যোগ নিতে হবে।’
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘করোনার মত ডেঙ্গু প্রতিরোধে এবছর আমরা আগেভাগেই এই সমন্বয় সভার আয়োজন করেছি। আশা করছি, এ বছর সকলের সঙ্গে সমন্বয় করে আমরা ডেঙ্গু প্রতিরোধে এক যোগে কাজ করে ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুহার অনেক কমিয়ে আনতে সক্ষম হব।’
সভা শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী উপস্থিত মিডিয়া কর্মীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন এবং ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসায় তাঁর মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য