সুনামগঞ্জ জেলা সদর থেকে শাল্লায় যাওয়ার জন্য রয়েছে ১৯ কিলোমিটারের একটি সড়ক। এই পথ পাড়ি দিতে ভোগান্তির কোনো শেষ নেই এলাকাবাসীর।
জেলা সদর থেকে শাল্লা যাওয়ার এই একমাত্র রাস্তার বেশির ভাগ জায়গাতেই নেই পিচ, জায়গায় জায়গায় দুই ধার ভেঙে গেছে, ব্রিজ ও কালভার্টগুলো সংযুক্ত করা হয়নি সড়কের সঙ্গে।
কোনো গাড়ি নিয়ে এই সড়ক পার হওয়ার উপায় নেই। বর্ষাকালে এটি হয়ে ওঠে আরও বিপজ্জনক।
২০১০ সালে ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্প শুরু হয়। সুনামগঞ্জ-২ আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এই সড়কের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন। কিন্তু ২০১৭ সালে ‘অসমাপ্ত প্রকল্প’ হিসেবে এর কাজ শেষ হয়ে যায়।
প্রকল্পের ৬০ ভাগ রাস্তার কাজ শেষ হয়েছে। ১১টি ব্রিজ ও কালভার্ট তৈরি শেষ হলেও এগুলোর সঙ্গে নেই কোনো সংযোগ সড়ক। তার ওপর টানা তিনবারের বন্যায় সড়কটির অবস্থা আরও বেহাল হয়েছে।
১১০ কোটি টাকা বরাদ্দের পর এমন সড়ক পেয়ে হতাশ এলাকাবাসী। যোগাযোগব্যবস্থা নিয়ে ভোগান্তিতে দিন পার করছেন প্রায় তিন লাখ মানুষ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বন্যা থেকে সড়কটিকে রক্ষা করতে ইচ্ছামতো ব্লক ফেলা হয়। কোনো কোনো জায়গায় শুধু মাটি ভরাট করা হয়েছে, দেয়া হয়নি কোনো পিচ। ২০২০ সালের বন্যার পর এই সড়ক একেবারে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
শাল্লার আনন্দপুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা জগদীশ দাস নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ডিজিটাল হইছে, সুনামগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলা উন্নত হইছে। তো আমরার উপজেলা কিতা দোষ করছে? সুরঞ্জিত দাদার স্বপ্নের সড়ক আছিল এটা, কিন্তু এইটা তারা যেমন মন চায় তেমনে বানাইয়া দিয়া গেছে।
‘আমরার স্বপ্ন আছিল এই রাস্তা অইবো, আমরা দিরাই যাইমু গাড়ি দিয়া। এরা আমরারে মোটরসাইকেল চালানির রাস্তা কইরা দিয়া গেছে কিন্তু ইটাও ভাঙা। সরকারের সব টাকা ইলান নষ্ট যারা করছে, এরারে শাস্তির আওতায় লইয়া আওয়া হউক।’
ধামপুর গ্রামের রফিক আহমেদ জানান, ভোট এলেই তাদের আশ্বাস দেয়া হয় রাস্তাঘাট করা হবে। কিন্তু ভোট চলে গেলে এগুলো মনে থাকে না। ২০১৭ সালে উপনির্বাচনের সময় এমপি জয়া সেন শাহীদ আলী পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ঘোষণা দিয়েছিলেন দিরাই-শাল্লার উন্নয়নে স্বামীর অসমাপ্ত কাজ তিনি সমাপ্ত করবেন।
তিনি বলেন, ‘উপনির্বাচনের পর পুনরায় তিনি এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত শাল্লায় কোনো উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। তাহলে আমরা কেন উনাকে ভোট দিলাম?’
শাল্লা বাজার এলাকার রুমন দাস বলেন, ‘হরিলুট হইছে আর এই হরিলুটের টাকা প্রশাসনের কর্মকর্তা থাকি শুরু করি সবার পকেটে ডুকসে। নাইলে ১০০ কোটি টাকার উপরের কাম কিন্তু রাস্তা কই?’
উপজেলা চেয়ারম্যান চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জানান, এই সড়কের কাজ বাস্তবায়নের জন্য তিনি এমপির সঙ্গে আলোচনা করবেন। তার আশা, অচিরেই একনেকে দিরাই-শাল্লা সড়কের প্রকল্প অনুমোদন পাবে।
সুনামগঞ্জ-২ আসনের এমপি জয়া সেনগুপ্ত নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দিরাই-শাল্লা সড়ক নির্মাণ প্রকল্প পুনরায় অনুমোদনের জন্য একনেকের সভায় প্রস্তাব পাঠানো হবে। আশা করি তা দ্রুতই অনুমোদন পাবে। এ সড়ক তৈরি করা ছিল আমার স্বামীর স্বপ্ন। আমি ওনার এই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করব।’
সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মাহমুদুল হাসান জানান, ২০১৮ সালের বন্যায় দিরাই-শাল্লা সংশ্লিষ্ট সড়ক বাঁধের বেশ কিছু অংশ ভেঙে যায়। প্রকল্পটি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। একনেকে অনুমোদন পেলেই কাজ শুরু হবে।
তবে কারা এই কাজের ঠিকাদারি পেয়েছিল ও কেন প্রকল্প শেষ হলো না সে বিষয়ে কিছুই জানেন না তিনি। তখন তিনি এই জেলায় কর্মরত ছিলেন না।
আরও পড়ুন:নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার উত্তর পাকুরীয়া গ্রামের এক নাবালিকা ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা মামলায় এক মাদ্রাসা শিক্ষককে দশ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও পঞ্চাশ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও এক মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড হয়েছে।
নওগাঁর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মো. মেহেদী হাসান তালুকদার বুধবার এ রায় দেন। জরিমানার অর্থ ভুক্তভোগী ছাত্রীকে প্রদানের নির্দেশ দেন বিচারক।
দণ্ডাদেশ পাওয়া ওই শিক্ষকের নাম আবুল হাসান। ২৫ বছর বয়সী আবুল হাসান বদলগাছী উপজেলার উত্তর পাকুরীয়া গ্রামের বাসিন্দা ও একটি মাদ্রাসার আরবি বিষয়ের শিক্ষক।
আদালত সূত্র জানায়, ২০২১ সালের ২৯ মে সকাল ছয়টার সময় নয় বছর বয়সী ওই মেয়েটি একই গ্রামের আরবি শিক্ষক আবুল হাসানের বাড়িতে আরবি পড়তে যায়। সে সময় অন্যান্য ছাত্র-ছাত্রীরা না আসায় তাকে একা পেয়ে ভয় দেখিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করেন তিনি। পরবর্তীতে ভুক্তভোগীর মা বদলগাছী থানায় অভিযোগ করলে তদন্ত শেষে ঘটনার সত্যতা মেলায় আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। আদালত আট জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে বুধবার রায়ের জন্য দিন ধার্য করেন।
এদিন আসামির উপস্থিতিতে তাকে দেয়া সাজার রায় পড়ে শোনানো হয় এবং শেষে তাকে জেলা কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন বিচারক।
রাষ্ট্রপক্ষে বিশেষ কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট আজিজুল হক ও আসামিপক্ষে অ্যাডভোকেট মামুনুর রশিদ মামলা পরিচালনা করেন। রায়ে রাষ্ট্রপক্ষ সন্তোষ প্রকাশ করে এবং আসামিপক্ষ উচ্চ আদালতে আপিল করার কথা জানায়।
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক জয় চৌধুরীর নেতৃত্বে গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন সাংবাদিকরা।
টেলিভিশন ক্যামেরাম্যান জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের (টিসিএ) উদ্যোগে বুধবার দুপুরে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) সামনে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন বিএফইউজে সভাপতি ওমর ফারুক, মহাসচিব দীপ আজাদ, ডিইউজে সভাপতি সাজ্জাদ আলম তপু ও সোহেল হায়দার চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম মুজতবা ধ্রুব, বাচসাস সভাপতি রাজু আলীম, সাধারণ সম্পাদক রিমন মাহফুজ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান বাবু প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, সাংবাদিকরা নানা ক্ষেত্রে আজ নির্যাতিত। তারা পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নানাভাবে বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন। চলচ্চিত্রে যারা অভিনয় করেন তাদেরকে আমরা মননশীল মনে করি। কিন্তু তারা যখন মাস্তানের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন, তখন তারা সমাজে কী বার্তা দেন?
নারকীয় এই হামলায় নেতৃত্ব দেয়া জয় চৌধুরী, শিবা শানু ও আলেকজান্ডার বোসহ হামলায় জড়িত সবাইকে শিল্পী সমিতির সদস্যপদ বাতিলসহ আইনের আওতায় আনার দাবি জানান বক্তারা।
মানববন্ধনে আরও অংশ নেন বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত বিনোদন বিটের সাংবাদিকরা।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার বিকেলে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নবনির্বাচিত কমিটির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান শেষে শিবা শানু, জয় চৌধুরী ও আলেকজান্ডার বোর নেতৃত্বে সাংবাদিকদের ওপর হামলা করা হয়। এতে প্রায় ২০ জন সাংবাদিক আহত হন। হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন চারজন।
তদন্ত কমিটি
এদিকে হামলার ঘটনা তদন্তে ১১ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি ও সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে পাঁচ জন করে রাখা হয়েছে। আর উপদেষ্টা হিসেবে আছেন প্রযোজক আরশাদ আদনান।
দশজনের তদন্ত কমিটিতে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে লিমন আহমেদ, রাহাত সাইফুল, আহমেদ তৌকির, বুলবুল আহমেদ জয় ও আবুল কালাম এবং শিল্পী সমিতির পক্ষ থেকে মিশা সওদাগর, ডি এ তায়েব, নানাশাহ, রুবেল ও রত্না রয়েছেন।
আরও পড়ুন:গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের ফেটালিয়া ও নাশেরা গ্রামের দুইশ’ কৃষকের প্রায় ৪ শ’ বিঘা জমির বোরো ধান ইটভাটার আগুনের তাপে নষ্ট হয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ভাটার আগুনের তেজস্ক্রিয়তায় পার্শ্ববর্তী দড়িনাশেরা গ্রামের কৃষকদেরও ক্ষতি হয়েছে। এর ফলে পরিবার পরিজন নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পথে বসার উপক্রম হয়েছে।
অভিযোগ পেয়ে উপজেলা কৃষি অফিস জমির ফসল পরিদর্শন করেছেন। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষয়ক্ষতি পরিমাণ নির্ণয় করে তাদের ক্ষতিপূরণ আদায়ের ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ইটভাটার চারপাশের বিপুল পরিমাণ জমির ফসল পুড়ে যাওয়ার মতো লালচে রঙ ধারণ করেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিভিন্ন ফলজ গাছপালা ও সবজির বাগান।
স্থানীয়রা জানান, ২০১২ সাল থেকে কাপাসিয়ার তারাগঞ্জের ফেটালিয়া গ্রামে এসকেএস ইটভাটা স্থাপিত হয়। হাত বদল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নামেরও পরিবর্তন হয়। তবে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন নামে কর্তৃপক্ষ ইটভাটার কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। কখনও ফেটালিয়া ব্রিক ফিল্ড, ভাই ভাই ব্রিক ফিল্ড নামে ইটভাটা পরিচালনা করলেও বর্তমানে এসআরএফ নামে ইটভাটার কার্যক্রম পরিচালনা করছেন বর্তমান মালিক।
তারা জানান, এ ইটভাটার ২০০ ফিট দূরত্বের মধ্যে স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদ ও ঘনবসতি রয়েছে। ভাটার কালো ধোঁয়ায় আশপাশের গ্রামের বিভিন্ন ফলজ ও বনজ গাছে ফুল-ফল থাকে না; সব কিছু অকালেই ঝরে যায়। প্রতি বছর যে সমস্যাটি প্রকট আকার ধারণ করে, তা হলো কালো ধোঁয়া ও তাপে পুড়ে যায় ফসলের মাঠ। এ বছরও বিস্তীর্ণ ধানের মাঠ ভাটার আগুনের তাপে পুড়ে গেছে।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, অনুমোদন না থাকায় ঈদের আগে পরিবেশ অধিদপ্তরের লোকজন ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে ইটের ভাটাটি ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়ে যায়। এই ভাটাটি জনবসতিপূর্ণ এলাকায় থাকায় দীর্ঘদিন ধরেই বন্ধের দাবি করে আসছিল এলাকাবাসী। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না থাকলেও ইট পোড়ানো হয় এ ভাটায়। কয়েকদিন পরপর ইটভাটায় কয়েক দফা অভিযান পরিচালনা করে প্রশাসন, কিন্তু পরবর্তীতে ফের শুরু হয় ভাটার কার্যক্রম। তবে সেসব সময় অদৃশ্য কারণে নীরবতা পালন করে সংশ্লিষ্ট বিভাগ।
উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের ফেটালিয়া ও নাশেরা গ্রামটি ধান উৎপাদনে ব্যাপক প্রসিদ্ধ। এই এলাকার অধিকাংশ মানুষের আয়ের মূল চালিকা শক্তি ফল উৎপাদন ও কৃষির বিভিন্ন ফসল। কৃষকদের দাবি, অথচ এক ইটভাটার কারণে দুর্ভোগ বেড়েছে পুরো এলাকার মানুষের।
মো. বুরুজ আলী নামের এক কৃষক বলেন, ‘আমি এ বছর পাঁচ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছি। ধানে দুধ আসার পরপরই ভাটার আগুনের তাপে তা পুড়ে গেছে। টাকা ধার করে জমি চাষ করেছিলাম। সেই ধারের টাকা এখন কীভাবে পরিশোধ করব, তা নিয়ে ভেবে কূল পাচ্ছি না।’
কৃষক মো. রফিকুল বলেন, ‘এ বছর ১৫ শতাংশ জমিতে ধানের চাষ করেছি। তার এক মুঠো ধানও ঘরে তুলতে পারব না। ইটভাটার আগুনের তাপে সব ফসল নষ্ট হয়ে গেছে।
‘গরুকে খাওয়ানোর যে কুটা (খড়) লাগবে তাও পাই কিনা সন্দেহ। আগুনের তাপে ঝলসে যাওয়া কুটা গরুও খেতে চায় না। এখন গরু কী খাবে, আর আমরাই বা কী খাব?’
আবাদি জমির পাশে ইটভাটা নির্মাণ হওয়ায় প্রতি বছরই ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় বলে জানান কৃষক আব্দুল হাই।
কিছুটা ক্ষোভের সুরে তিনি বলেন, ‘ভাটার আগুনের তাপ ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করে, যা কোনোভাবেই পুষিয়ে নেয়া সম্ভব হয় না। ওই জমির ফসল দিয়েই আমাদের সারা বছরের খাওয়ার যোগান হয়। কীভাবে কী করবো বুঝতে পারছি না।’
কৃষি জমিতে কাজ করতে গিয়ে ভাটার ধোঁয়ায় জনস্বাস্থ্যেও পড়ছে বিরূপ প্রভাব। এ বিষয়ে কৃষক আব্দুল বাতেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘খেতে কাজ করতে গেলেই আমার বাবার তীব্র শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। তাকে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে চিকিৎসা করিয়েছি।’
এই এলাকায় যেন কোনো ইটের ভাটা না থাকে, প্রশাসনের কাছে এমন দাবি রাখেন তিনি।
দুর্গাপুর ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য ফেটালিয়া গ্রামের বাসিন্দা মঞ্জুর হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দুই শতাধিক কৃষকের ধান পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। ক্ষতিপূরণ পেতে কৃষকরা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করছে। তারা ক্ষতিপূরণ পাবে কি না এখনই বলা যাচ্ছে না।’
এ বিষয়ে ইটভাটার মালিক রমিজ উদ্দিন রমি বলেন, ‘আগুনের তাপে ধানের ফুল আসার সময় কয়েকজন কৃষকের ফসল নষ্ট হইছে। পরে তারা ইটভাটার গেইটে তালা মেরে রাখেন।’
কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে আমার ভাটাটি বন্ধ রয়েছে। আমি এখনও ভাটার লাইসেন্স করতে পারিনি।’
কৃষি বিভাগের ব্লক সুপারভাইজার মঞ্জুরুল আমিন সম্প্রতি কৃষকদের ক্ষতিগ্রস্ত ফলজ গাছ ও ধানের ফসল পরিদর্শন করেছেন। সরেজমিনে তিনি কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে ও তথ্যানুসন্ধান করে জেনেছেন, স্থানীয় ইটভাটার কারণেই কৃষকদের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
নিউজবাংলাকে এসব তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, ‘ধান পরিপুষ্ট হওয়ার আগেই নির্গত ক্ষতিকর ধোঁয়ায় সব ঝলসে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তাদের তালিকা তৈরি করে উপজেলা কৃষি অফিসে জমা দেয়া হবে।’
কাপাসিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমন কুমার বসাক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণ পাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
কক্সবাজারের চকরিয়ায় বেতুয়া বাজার ব্রিজ সংলগ্ন মাতামুহুরী নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ দুই জেলের মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। তারা হলেন- চকরিয়ার পূর্ব বড় ভেওলা এলাকার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইদ্রিস মিয়ার ছেলে মনছুর আলম ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডের আব্দুস সালামের ছেলে মুবিন।
বুধবার সকালে নদীতে মাছ ধরতে নেমে নিখোঁজ হন ওই দুই জেলে। ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দলের সহায়তায় নিখোঁজ হওয়ার ৬ ঘণ্টা পর বিকেলে তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
পূর্ব বড় ভেওলা ইউপি চেয়ারম্যান ফারহানা আফরিন মুন্না বলেন, ‘সকাল সাড়ে ১০টার দিকে দুই জেলে নিখোঁজ হন। স্থানীয়রা নদীতে অনেক খোঁজাখুঁজির পরও না পাওয়ায় ফায়ার সার্ভিসকে জানানো হয়। ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিরা এসে নদীর গভীরে তল্লাশি চালিয়ে ওই দুই জেলের মরদেহ উদ্ধার করেন।
দেশজুড়ে বয়ে চলেছে তাপপ্রবাহ। প্রচণ্ড গরমে অস্থির জনজীবন। বিদ্যুতের লোডশেডিং সেই অস্বস্তি-অস্থিরতা আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
বিদ্যুৎ উৎপাদনে নতুন রেকর্ড গড়লেও সারাদেশে লোডশেডিং কমার কোনো লক্ষণ নেই। বরং আগের তুলনায় লোডশেডিংয়ের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ।
পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অফ বাংলাদেশের (পিজিসিবি) ন্যাশনাল লোড ডিসপ্যাচ সেন্টারের (এনএলডিসি) তথ্যের উল্লেখ করে বার্তা সংস্থা ইউএনবি জানায়, বুধবার (দেশে প্রায় দেড় হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়েছে। আগের দিন মঙ্গলবার তা ছিল ১ হাজার ৪৯ মেগাওয়াট।
এনএলডিসির তথ্যে আরও দেখা যায়, মঙ্গলবার রাত ১টায় লোডশেডিং ছিল ১ হাজার ৪৬৮ মেগাওয়াট। তবে বুধবার দিনের বেলায় বিদ্যুৎ ঘাটতির মাত্রা কমে সকাল ৭টায় ৫৪২ মেগাওয়াটে নেমে আসে। আবার বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তা বাড়তে থাকে। বিকেল ৩টায় লোডশেডিং বেড়ে দাঁড়ায় ৮২১ মেগাওয়াট।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) ও পিজিসিবির তথ্য বলছে, ১৫ হাজার ২০০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে বুধবার বিকেল ৫টায় দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে ১৪ হাজার ৪৭৩ মেগাওয়াট। সে হিসাবে সন্ধ্যার এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে উৎপাদন ঘাটতি ছিল ৭২৭ মেগাওয়াট।
ওদিকে বুধবার সন্ধ্যায় চাহিদার পূর্বাভাস ছিল ১৬ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট এবং সরবরাহের পূর্বাভাস ছিল ১৬ হাজার ৫৩০ মেগাওয়াট।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, রাজধানী ঢাকা ও অন্যান্য বড় শহরে লোডশেডিং এড়াতে গিয়ে গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ বেড়েছে।
বিভিন্ন এলাকা থেকে পাওয়া সংবাদে জানা যায়, এই গ্রীষ্মে প্রচণ্ড গরমের মধ্যে লোডশেডিংয়ের মাত্রা গ্রামীণ মানুষের দুর্দশা আরও বাড়িয়ে তুলছে।
এদিকে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পেট্রোবাংলার সরকারি তথ্যে দেখা যায়, ৩ হাজার ৭৬০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে দেশে গ্যাস উৎপাদন হয়েছে দৈনিক ৩ হাজার ৫৬ মিলিয়ন ঘনফুট।
বেশ কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র, বিশেষ করে যেগুলো প্রাথমিক জ্বালানি হিসেবে গ্যাস ব্যবহার করে, সেগুলোতে গ্যাস সংকটের কারণে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।
বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো ২ হাজার ৩১৬ দশমিক ৯ মিলিয়ন ঘনফুট চাহিদার বিপরীতে ১ হাজার ৩৪৯ দশমিক ৯ মিলিয়ন ঘটফুট গ্যাস সরবরাহ পেয়েছে।
আরও পড়ুন:পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটির সাজেকে সড়ক দুর্ঘটনায় ছয়জনের প্রাণহানি ঘটেছে। সাজেকের উদয়পুর সীমান্ত সড়কের ৯০ ডিগ্রি এলাকায় বুধবার বিকেলে শ্রমিকবাহী ডাম্প ট্রাক খাদে পড়ে এই প্রাণহানি ঘটেছে। এই দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ৮ জন।
পাহাড়ি সড়ক ধরে ছুটে চলার পথে ট্রাকটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাশের খাদে পড়ে যায়। এতে গাড়িটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। আর এর যাত্রী শ্রমিক সড়কের পাশের ঢালে ছিটকে পড়েন। কেউ কেউ ট্রাকের নিচে চাপা পড়েন। এতে ঘটনাস্থলেই ৬ শ্রমিক নিহত হন। আহত হন আরও আটজন। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হতাহত শ্রমিকদের বাড়ি রংপুর অঞ্চলে। তারা উদয়পুর-বাঘাইছড়ি সীমান্ত সড়কের ১৭ কিলোমিটার নামক স্থানে হারিজাপাড়া সেতু নির্মাণ কাজে নিয়োজিত ছিলেন। নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ায় বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে কর্মস্থল থেকে ফিরছিলেন তারা।
সাজেক ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান অতুলাল চাকমা বলেন, ‘স্থানীয়ভাবে খবর নিয়ে জানতে পেরেছি যে গাড়িটিতে থাকা সবাই সীমান্ত সড়কের কাজে নিয়োজিত শ্রমিক ছিলেন। এই সড়কে অনেক স্থানে উঁচু নিচু পাহাড় আছে। উদয়পুর সড়কের ৯০ ডিগ্রি নামক স্থানে গাড়ি নামার সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়।’
বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিরিন আক্তার জানান, আনুমানিক বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে সাজেকের উদয়পুর সীমান্ত সড়কের কাজ শেষে খাগড়াছড়ির দিকে ফেরার পথে একটি ডাম্প ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়। গাড়িটিতে মোট ১৭ জন শ্রমিক ছিলেন। তাদের মধ্যে ৬ মারা গেছেন। আহত হয়েছেন আরও ৮ জন। যেখানে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে সেটি খুবই দুর্গম এলাকা। পুলিশ ও সেনাবাহিনী আহতদের উদ্ধার করে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে পাঠিয়েছে।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনুছ। আগামী তিন বছরের জন্য এই পদে তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
বুধবার চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন, ২০১৮ এর ধারা-৭ অনুযায়ী জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের চুক্তি ও বৈদেশিক নিয়োগ শাখার উপ-সচিব ভাস্কর দেবনাথ বাপ্পি স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে এই আদেশ দেয়া হয়। বিকেলে তিনি গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে গিয়ে এই পদে যোগদান করেন।
মোহাম্মদ ইউনুছ আওয়ামী লীগ জাতীয় পরিষদের সদস্য এবং চট্টগ্রামে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার সদস্য সচিব।
সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষের তিন বছরের মেয়াদ শেষ হয়েছে বুধবার (২৪ এপ্রিল)। ২০১৯ সাল থেকে দুই মেয়াদে টানা পাঁচ বছর এই পদে ছিলেন তিনি।
২০০৯ সাল থেকে সরকারের যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার এই পদে চুক্তিভিত্তিক রাজনৈতিক নিয়োগ দিয়ে আসছে সরকার। মহানগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ও বোয়ালখালী-চান্দগাঁও আসনের সংসদ সদস্য আবদুচ ছালাম টানা ১০ বছর এই দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ২০১৯ সালের ১৮ এপ্রিল নিয়োগ দেয়া হয় মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি জহিরুল আলম দোভাষকে।
চিটাগাং ডেভেলপমেন্ট অথরিটি অর্ডিন্যান্স ১৯৫৯ কে যুগোপযোগী করে ২৯ জুলাই ২০১৮ সালে নতুন আইন প্রণয়ন করা হয়। সেই আইনের ৭ নম্বর ধারায় উল্লেখ রয়েছে- চেয়ারম্যান বা বোর্ড সদস্য হিসেবে কোনো ব্যক্তি দুই মেয়াদের বেশি সময়ের জন্য নিয়োগলাভের জন্য বলে বিবেচিত হবেন না। জহিরুল আলম দোভাষ ২০১৯ সালের ১৮ এপ্রিল প্রথম মেয়াদে দুই বছরের জন্য ও ২০২১ সালের ২৪ এপ্রিল দ্বিতীয় মেয়াদে তিন বছরের জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত হন।
সিডিএ’র উপ-সচিব অমল কান্তি গুহ বলেন, ‘দুপুরে প্রজ্ঞাপন হয়েছে। আমরা পেয়েছি। নিয়ম অনুযায়ী, নতুন চেয়ারম্যান মহোদয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে যোগদান করে এরপর সিডিএ কার্যালয়ে আসবেন।’
মোহাম্মদ ইউনুছ প্রয়াত রাজনীতিক এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ভাবশিষ্য হিসেবে পরিচিত। সত্তরের দশকে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করা ইউনুছ বর্তমানে আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য।
মন্তব্য