দেশের উপকূলে আঘাত হানেনি ইয়াস। আছড়ে পড়েছে পাশের দেশের ওড়িশায়। তবে এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার সারা দেশে চার শিশুসহ সাতজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
জোয়ারে পানিতে প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চল। ভেসে গেছে চিংড়ির ঘের। নষ্ট হয়েছে ফসলের জমি। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন প্রশাসনের লোকজন। বিভিন্ন স্থানে দেয়া হয়েছে সহায়তা। তবে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি।
কোন উপজেলায় কতজন পানিবন্দি
জোয়ারের পানিতে বাগেরহাটের চার উপজেলার প্রায় ৩ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ভেসে গেছে ২ হাজার ৯১টি চিংড়ি ঘের। তলিয়ে গেছে কাঁচা-পাকা রাস্তা।
মোরেলগঞ্জ উপজেলার পৌর সদর, বারইখালী, খাউলিয়া, বহরবুনিয়া, পুটিখালী ও বলইবুনিয়া ইউনিয়নে পানিবন্দি প্রায় ১ হাজার পরিবার।
প্রায় ১১শ পরিবার পানিবন্দি শরণখোলা উপজেলার খোন্তাকাটা, সাউথখালি ও রায়েন্দা ইউনিয়নের বগি, চালতাখালী, আশারকোল, গাবতলা, কদমতলা ও খুড়িয়াখালী গ্রামে।
উপজেলার সাউথখালি ইউনিয়নের বগি গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রাজ্জাক আকন বলেন, ‘দুপুরের পর থেকে জোয়ারের পানি নামতে শুরু করেছে। পানি নামতে শুরু করলেও এখনও আমরা জলমগ্ন অবস্থায় আছি। বাড়ির আশপাশে ডোবা নালা ও খালে পানি আটকে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।’
মোংলা উপজেলা চিলা, চাঁদপাই ও বুড়িরডাঙ্গা ইউনিয়নের প্রায় ৮শ পরিববার পানিবন্দি। শতাধিক পরিবার পানিবন্দি রামপাল উপজেলার হুকরা, বাঁসতলি ও পেড়িখালী ইউনিয়নের তালবুনিয়া, লাজনগর ও শ্রফলতলা গ্রামে।
বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বিশ্বজিৎ বৈদ্য বলেন, জোয়ারের পানি নেমে যাচ্ছে। জেলার নিম্নাঞ্চলের কিছু গ্রামের মানুষ এখনও পানিবন্দি রয়েছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিম্নাঞ্চলগুলোর পানিও দ্রুত নেমে যাবে।
শরণখোলা উপজেলা চেয়ারম্যান রায়হান উদ্দিন শান্ত বলেন, ‘পানি নামতে শুরু করেছে। বলেশ্বর নদী তীরের এলাকাগুলোতে এখনও পানি রয়েছে। তবে সমস্যা হচ্ছে পানিতে ডোবা, নালা, খাল ও পুকুর পানি আটকে থেকে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।’
বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস. এম রাসেল বলেন, জোয়ারের পানির প্রভাবে জেলার দুই হাজার ৯১টি চিংড়ি ঘের ভেসে গেছে। এর মধ্যে রামপালে নয়শ ১৭টি, মোংলায় ছয়শ ৮৫টি, মোরেলগঞ্জে তিনশ ৪৫টি ও শরণখোলায় একশ ৪৪টি ঘের ভেসে গেছে।
মোরেলগঞ্জর নিশারবাড়ীয়া গ্রামের চাষি রুবেল শরিফ বলেন, ‘মোর ছোট বড় মিল্লাহ ৬ বিঘার দুইডা ঘের আছে। ধার দেনা কইরা দুই লাখ টাহার মাছ ছারছালাম, সব ভাসাইয়া লইয়া গেছে। মোর এহন আর কিছু নাই।’
রামপালের হুকরা গ্রামের বাসিন্দা চাষি মনোরঞ্জর ঢালি বলেন, ‘সব মিলে আমার ১২ বিঘার তিনটি ঘের রয়েছে। যার মধ্যে দুটি পুরোপুরি ভেসে গেছে। তিন লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে আমার। আমার মতো গ্রামের অন্য চাষিদেরও একই অবস্থা। আমাদের পুরো উপজেলার মাছ চাষিদের সবাই কম বেশি ক্ষতিগ্রস্ত।’
ভোলার উপকূলীয় এলাকার ৩০টি চর প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অন্তত ৫০ হাজার মানুষ। তলিয়ে গেছে কমপক্ষে ১০ হাজার হেক্টর জমির আউশ ধান ও সবজি।
দিনভর মেঘনার পানি বিপৎসীমার ৬৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
প্রবল জোয়ারের চাপে জেলার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৪০ মিটার অংশ ভেঙে গেছে। এ ছাড়া আরও ১৫টি পয়েন্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে বুধবার দুপুরের পর মেঘনায় জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায় বিস্তীর্ণ জনপদ। ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ার পাশাপাশি ভেসে গেছে পুকুর ও মাছের ঘের। তলিয়ে গেছে কমপক্ষে ১০ হাজার হেক্টর জমির আউশ ধান ও সবজি।
উপকূলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকেই আশ্রয় নিয়েছে সাইক্লোন সেন্টারে।
অতি জোয়ারে ঢালচর, কুকরি-মুকরি, চরপাতিলা, চরজ্ঞান, সোনার চর, কুলাগাজীর তালুক, চর যতিন, চর শাহজালাল ও কলাতলীর চরে ৩ থেকে ৫ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হয়েছে।
সাগর মোহনায় ডালচরের ইউনিয়নের মরজিনা বেগম বলেন, ‘আমাগো খোঁজখবর কেউ রাহেনা। গত তিনডা দিন ধইরা পানির লগে যুদ্ধ কইরা টিক্কা আছি। পানি উঠলে আমাগো দুরভোগের শেষ নাই। রান্না করতো পারি না, খাইতো পারি না। পোলাই ছাউন লইয়া অনেক কষ্টের মইদ্ধে আছি। ভানের পানিতো আমাগো ঘর পইরা গেছে।
‘এহন ঘর কেমনে ঠিক করমু পোলাইন ছাউন লইয়া কোন জায়গা থাকমু সেই চিন্তায় ও বাচি না। শুধু আমি না। আমাগো মতো অনেক মাইনষের ঘর দুয়ার পানিতে ভাসাইয়া লয়া গেছে মাথা গোছানের মতো জায়গা নায়। এহন সরকার যদি আমাগো দিকে চায় তাহইলে আমাগো কিছুডা রক্ষা হইব।’
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী বাবুল আক্তার জানান, বাঁধের বাইরে যেসব নিচু এলাকা রয়েছে, সবগুলো তলিয়ে গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, জেলায় ৩২৫ কিলোমিটার বাঁধের মধ্যে ৭৫ কিলোমিটার বাঁধ সিসি ও জিও ব্যাগে মোড়ানো থাকলেও ২৫০ কিলোমিটার বাঁধ মাটির তৈরি। যার মধ্যে প্রায় ২ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
চরফ্যাশনে বাঁধের ৫টি পয়েন্ট, মনপুরায় ৩টি পয়েন্ট, বোরহানউদ্দিনে ২টি, লালমোহনে ২টি, তজুমদ্দিন, দৌলতখান ও সদরে ১টি করে পয়েন্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামতের কাজ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী বাবুল আক্তার।
ইয়াসের প্রভাবে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় কক্সবাজার জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। উপকূলীয় এলাকাগুলোতে উপড়ে পড়েছে গাছপালা। বিধ্বস্ত হয়েছে পাঁচ শতাধিক ঘরবাড়ি। জোয়ারের পানির তোড়ে ভেঙে গেছে সেন্টমার্টিনের প্রধান জেটিঘাট। টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপে বেড়িবাঁধের ব্লকে ধস নেমেছে।
সদর, মহেশখালী, পেকুয়া, চকরিয়া ও টেকনাফের ১৬ ইউনিয়নে দুই হাজার ৯৬ টন লবণের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
শহরের সমিতিপাড়া, নুনিয়ারছড়া পানিরকুপপাড়া, গোদারপাড়াসহ অন্তত ৮টি এলাকায় ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়ে হাজারও মানুষ।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার হাবিব খান বলেন, দ্বীপে অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা না হলে যে কোনো সময় সেন্টমার্টিন তলিয়ে যাবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
মাতারবাড়ির ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাস্টার মাহমদুল্লাহ্ জানিয়েছেন, জোয়ারের পানিতে মাতারবাড়ির ইউনিয়নের ৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের বিভিন্ন অংশ ভেঙে গেছে। এরইমধ্যে ৫০ থেকে ৮০টি ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে। স্থানীয় প্রশাসনের তরফ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনকে খাদ্য সহায়তা দেয়া হচ্ছে।
কুতুবদিয়ার বাসিন্দা মো. সিকদার জানান, কুতুবদিয়ার উত্তর ধুরুং, আলী আকবরডেইল ও কৈয়ারবিল ইউনিয়নে অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে বেড়িবাঁধ ভেঙে ২০টির বেশি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
এতে করে প্রায় শতাধিক ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ।
একইভাবে মহেশখালীর ধলঘাটাসহ বিভিন্ন এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে প্রায় অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সংবাদকর্মী রকিয়ত উল্লাহ।
চট্টগ্রামের চারটি উপজেলায় বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা সজীব কুমার চক্রবর্তী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘উপকূলীয় চার উপজেলায় জোয়ারের পানিতে বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরমধ্যে বাঁশখালী উপজেলার গণ্ডামারা, ছনুয়া ও খানখানাবাদে বেড়িবাঁধ ভাঙনের মধ্যে পড়েছে।
‘সেখানে পানি বেড়িবাঁধের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। সন্দ্বীপ উপজেলার সারিকাইত ইউনিয়নে বেড়িবাঁধের একটি অংশে প্রায় পাঁচ মিটার ভেঙে পানি ঢুকে পড়েছে।’
তিনি আরও বলেন, উপকূলীয় আনোয়ারা উপজেলায় সাঙ্গু নদীর তীরে রায়পুর ইউনিয়নে একটি বেড়িবাঁধ ভাঙনের ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। জোয়ারের পানি নদী তীরের কয়েকটি বসতঘরেও ঢুকেছে। এ ছাড়া সীতাকুণ্ড উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের আখিলপুর এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি ঢুকেছে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এস এম জাকারিয়া জানান, উপকূলীয় চার উপজেলায় বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি ঢুকেছে। তবে ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। যেসব বেড়িবাঁধ ভেঙেছে সেগুলো মেরামতের জন্য তাৎক্ষণিক নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
খুলনার পাইকগাছা, দাকোপ ও কয়রা উপজেলায় ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে ক্ষতিগ্রস্ত ১১টি ইউনিয়নের ১৪টি স্থান পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন।
এ সময় তিনি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে শিশু খাদ্য, গো-খাদ্যসহ পাঁচশত সাধারণ মানুষের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেন। সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরের মধ্যে সমন্বয় করে পরিস্থিতি মোকাবেলার পরামর্শও দেন তিনি।
পরিদর্শনকালে খুলনার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহাবুব হাসান, সিভিল সার্জন নিয়াজ মোহাম্মদ, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক ইকবাল হোসেন, পাইকগাছা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার ইকবাল, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যানগণ উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:
ঝালকাঠিতে সিমেন্টবাহী একটি ট্রাক কয়েকটি গাড়িকে ধাক্কা দিয়েছে, এতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ জনে।
সদর উপজেলার গাবখান সেতুর টোল প্লাজায় বরিশাল-পিরোজপুর আঞ্চলিক মহাসড়কে বুধবার দুপুরে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
ঝালকাঠির পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আফরুজুল হক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ জানিয়েছে, দুর্ঘটনায় অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। আহতদের ১০ জনকে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বাকিদের রাখা হয়েছে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে।
এদিকে নিহতদের মধ্যে তিনজনের পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঝালকাঠির সিভিল সার্জন ডা. এইচ এম জহিরুল ইসলাম।
শেখেরহাট হাট ইউনিয়ন পরিষদে কর্মরত গ্রাম পুলিশ মো. কামাল হোসেন বলেন, আমরা চারটি ইজিবাইক এবং একটি মাইক্রো গাড়িতে শেখেরহাট গ্রামে বিয়ের অনুষ্ঠানে যাচ্ছিলাম। গাবখান সেতুর টোলে আসার পর বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাক আমাদেরকে সামনো থেকে চাপা দেয়। এতে আমার ছোট ভাই দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া আতিকুর রহমান সাদি নিহত হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী মাইনুল হোসেন বলেন, বেপরোয়া গতিতে আসা ট্রাকটি ব্রেক ফেল করে চারটি ইজিবাইক এবং একটি মাইক্রোবাসকে সামনে থেকে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই ১১ জন বিয়ের যাত্রী মারা যান।
কক্সবাজারের চকরিয়ায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সেলিম ও শফিউল আলম নামে দুই যুবককে কুপিয়ে হত্যা করেছে একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী। এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে গত ইউপি নির্বাচনের সৃষ্ট বিরোধের জের রয়েছে বলে জানা গেছে।
মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে উপজেলার সুরাজপুর মানিকপুর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তরপাড়ায় এই জোড়া হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। নিহত সেলিম ওই এলাকার নূর মোহাম্মদের ছেলে। অপরজন শফিউল আলম একই এলাকার আবু সালামের ছেলে।
নিহত সেলিমের পিতা নুর মোহাম্মদ জানান, স্থানীয় ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জাহেদুল ইসলাম ও সেলিমের মধ্যে গত ইউপি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা নিয়ে দ্বন্দ্ব চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। এর জের ধরে মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে মানিকপুর উত্তরপাড়া বাজার এলাকার নবীন ক্লাবের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় জাহেদুল ইসলামের নেতৃত্বে একদল ভাড়াটে সন্ত্রাসী অতর্কিত হামলা চালায় নিহতদের ওপর।
ধারালো অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর আহত সেলিমকে স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লক্সে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। অপরজন শফিউল আলমের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। সেখানে নেয়ার পথে রাত সাড়ে ১২টার দিকে শফিউল আলমের মৃত্যু হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেনে সুরাজপুর মানিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিমুল হক।
প্রসঙ্গত, বিগত ইউপি নির্বাচনে বর্তমান মেম্বার জাহেদুল ইসলামের সঙ্গে সেলিম ও শফিউল আলমের বড় ভাই শামসুল আলম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচনের দিন দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ওই ঘটনার জের ধরে এই জোড়া হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে ধারণা স্থানীয়দের।
চকরিয়া থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘নিহত দুজনই একটি হত্যা মামলার আসামি। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্বের জের ধরে এই হত্যার ঘটনা ঘটেছে। হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের ধরতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।’
আরও পড়ুন:কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলায় পুকুরে মাছ ধরতে গিয়ে পুকুরের পানিতে ডুবে আহাদ ও আফরোজা নামের যথাক্রমে ৫ ও ৭ বছরের দুই শিশু নিহত হয়েছে।
বুধবার দুপুরে উপজেলার নেওয়াশি ইউনিয়নের পশ্চিম সুখাতি গ্রামের বোর্ডঘর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত শিশুদুটি সম্পর্কে খালাতো ভাইবোন।
নিহত আহাদ নাগেশ্বরীর আমতলা এলাকার মমিনুল ইসলামের ছেলে এবং বাবা-মায়ের বিচ্ছেদের পর আফরোজা ওই এলাকায় মায়ের সঙ্গে নানা বাড়িতে থাকত।
স্থানীয়রা জানান, দুপুরে বাড়ির পাশের পুকুরে মাছ ধরতে যায় আহাদ ও আফরোজাসহ তিন শিশু। নানা বাড়ির পাশের পুকুরে মাছ ধরার জন্য ফাঁসি জাল ফেলে রাখে আহাদ ও আফরোজা। সেখানে ওই তিন শিশু জাল থেকে মাছ ধরতে যায়। এ সময় বাড়ির লোকজন সবাই কাজে ব্যস্ত থাকায় তাদের খবর রাখতে পারেননি। কিছুক্ষণ পর এক শিশু বাড়িতে ফিরে আসলেও বাকি দুজনের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে ওই শিশুকে জিজ্ঞাসা করলে বাকি দুজন পুকুরের পানিতে পড়েছে বলে জানতে পারে পরিবারের লোকজন।
পরে পুকুরে নেমে খোঁজার এক পর্যায়ে দুজনকে পানিতে ডুবন্ত অবস্থায় উদ্ধার করে পরিবারের সদস্যসহ স্থানীয়রা। এরপর তাদের নাগেশ্বরী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে দ্বায়িত্বরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
নাগেশ্বরী থানার ওসি রুপ কুমার সরকার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘ঘটনাস্থলে রয়েছি। বিষয়টির খোঁজখবর নিয়ে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
ভারতে লোকসভা নির্বাচনের কারণে ১৭, ১৮ ও ১৯ এপ্রিল পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা-ফুলবাড়ি স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে পাথরসহ সকল প্রকার আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বন্ধ ঘোষণা করেছে ভারত। পাশাপাশি ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে পাসপোর্টধারী যাত্রী পারাপারও বন্ধ থাকবে।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শামা পারভীন স্বাক্ষরিত চিঠিতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয় ।
এদিকে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর লিমিটেডের ইনচার্জ আবুল কালাম আজাদ বুধবার দুপুরে ৩ দিন বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘ভারতের লোকসভা নির্বাচন কারনে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে আজ (বুধবার) থেকে শুক্রবার বন্দর দিয়ে দুই দেশের মাঝে সব ধরনের বাণিজ্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে এ সময় অফিস যথারীতি খোলা থাকবে।’
শনিবার (২০ এপ্রিল) সকালে স্থলবন্দর দিয়ে পুনরায় আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম শুরু হবে বলেও জানান এ কর্মকর্তা।
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট কর্মকর্তা অমৃত অধিকারী জানান, দুই দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বন্ধের সঙ্গে পাসপোর্টধারী যাত্রী যাওয়া-আসাও বন্ধ থাকবে।
হঠাৎ করে এমন সিদ্ধান্তের কারণে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এই বন্দর দিয়ে পার হতে আসা যাত্রীরা পড়েছেন বিপাকে। বিশেষ করে, জরুরি চিকিৎসার জন্য যাতায়াতকারী মানুষের দূর্ভোগ বেড়েছে।
আরও পড়ুন:কুমিল্লার হোমনায় এক নারীকে তার ছেলে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
উপজেলার নিলখী ইউনিয়নের লালবাগ এলাকায় বুধবার বেলা ১১টার দিকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
প্রাণ হারানো রায়জুলের নেসা (৬৫) হোমনা থানার নিলখী ইউনিয়নের লালবাগ এলাকার প্রয়াত চাঁদ মিয়ার স্ত্রী। এ ঘটনায় ছেলে আবুল হোসেনকে (৪৫) আটক করেছে পুলিশ।
হোমনা থানার ওসি জয়নাল আবেদীন বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, আবুল হোসেন তার মাকে নিয়ে একই ঘরে থাকতেন। মঙ্গলবার রাতে তিনি তার মায়ের সঙ্গে ছিলেন।
তিনি জানান, রায়জুলের নেসার মাথায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। মরদেহ উদ্ধারের সময় ছেলে আবুল হোসেন ঘরে ছিলেন না। পরে সকালে পুলিশ তাকে আটক করে।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে হোমনা থানার ওসি জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘ওই ছেলে তার মায়ের সঙ্গে একাই থাকত। তাই আমরা তদন্তের স্বার্থে তাকে আটক করেছি। মরদেহ কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত চলমান।’
নওগাঁয় দুই মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে স্বামী-স্ত্রী নিহত হয়েছেন। নিহতদের পাঁচ বছর বয়সী সন্তানসহ দুজন গুরুতর আহত হয়েছে।
সদর উপজেলার নওগাঁ-বগুড়া মহাসড়কের শাহাপুর এলাকায় বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর উপজেলার রায়কালী গ্রামের এনামুল হক (৪০) এবং তার স্ত্রী বৃষ্টি আক্তার (৩২)। নিহত এনামুল পেশায় আনসার সদস্য ছিলেন।
স্থানীয় একজনের ভাষ্য, সন্তানসহ স্বামী-স্ত্রী মোটরসাইকেলে নওগাঁ থেকে বগুড়ার সান্তাহারের দিকে যাচ্ছিলেন। এ সময় মোটরসাইকেলটি শাহাপুর এলাকায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা দ্রুত গতির আরেকটি মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তাদেরকে ধাক্কা দেয়। এতে তারা সড়কের ওপর ছিটকে পড়ে গেলে পেছন দিক থেকে আসা একটি পিকআপ তাদেরকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই স্বামী-স্ত্রী মারা যান।
পরে তাদের আহত পাঁচ বছরের শিশু জুনাইদ ইসলাম ও অন্য মোটরসাইকেলের এক আরোহীকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য নওগাঁ সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন।
নওগাঁ সদর মডেল থানার ওসি জাহিদুল হক বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। পরে দুর্ঘটনা কবলিত মোটরসাইকেল দুটি উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় নওগাঁ সদর থানায় একটি মামলা হবে।’
গাজীপুরের কাপাসিয়ায় একটি সিএনজি চালিত অটোরিকশায় বাসের ধাক্কায় একজন নিহত হয়েছেন।
কাপাসিয়া-টোক সড়কের বাইপাসে টোক বাজার সংলগ্ন এলাকায় বুধবার সকাল ৬টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
প্রাণ হারানো মো. ফজলুর রহমান (৩৬) কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার কৃষ্টপুর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি অটোরিকশাটির চালক ছিলেন।
টোক নয়ন বাজার পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ এসআই সুজন রঞ্জন তালুকদার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, সংঘর্ষে অটোরিকশাটির সামনের অংশ দুমড়েমুচড়ে যায় এবং ঘটনাস্থলেই চালকের মৃত্যু হয়। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা গিয়ে অটোরিকশাটির গ্রিল কেটে চালকের মরদেহ উদ্ধার করেন।
গাজীপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল আরেফিন বলেন, “বুধবার সকালে টোক বাজার এলাকায় গাজীপুরগামী ‘পথের সাথী রাজদূত’ পরিবহনের যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে কিশোরগঞ্জগামী সিএনজি চালিত অটোরিকশার সংঘর্ষ হয়। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে কাপাসিয়া ফায়ার সার্ভিসের ওয়্যারহাউজ ইন্সপেক্টর মাহফুজুর রহমানের নেতৃত্বে ফায়ার কর্মীরা গিয়ে অটোরিকশাটির গ্রিল কেটে চালকের মরদেহ উদ্ধার করে।”
এসআই সুজন রঞ্জন তালুকদার সাংবাদিকদের জানান, বাস ও অটোরিকশাটি জব্দ করা হয়েছে। নিহতের মরদেহ পুলিশের হেফাজতে রয়েছে এবং তার স্বজনদের জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য