× হোম জাতীয় রাজধানী সারা দেশ অনুসন্ধান বিশেষ রাজনীতি আইন-অপরাধ ফলোআপ কৃষি বিজ্ঞান চাকরি-ক্যারিয়ার প্রযুক্তি উদ্যোগ আয়োজন ফোরাম অন্যান্য ঐতিহ্য বিনোদন সাহিত্য ইভেন্ট শিল্প উৎসব ধর্ম ট্রেন্ড রূপচর্চা টিপস ফুড অ্যান্ড ট্রাভেল সোশ্যাল মিডিয়া বিচিত্র সিটিজেন জার্নালিজম ব্যাংক পুঁজিবাজার বিমা বাজার অন্যান্য ট্রান্সজেন্ডার নারী পুরুষ নির্বাচন রেস অন্যান্য স্বপ্ন বাজেট আরব বিশ্ব পরিবেশ কী-কেন ১৫ আগস্ট আফগানিস্তান বিশ্লেষণ ইন্টারভিউ মুজিব শতবর্ষ ভিডিও ক্রিকেট প্রবাসী দক্ষিণ এশিয়া আমেরিকা ইউরোপ সিনেমা নাটক মিউজিক শোবিজ অন্যান্য ক্যাম্পাস পরীক্ষা শিক্ষক গবেষণা অন্যান্য কোভিড ১৯ শারীরিক স্বাস্থ্য মানসিক স্বাস্থ্য যৌনতা-প্রজনন অন্যান্য উদ্ভাবন আফ্রিকা ফুটবল ভাষান্তর অন্যান্য ব্লকচেইন অন্যান্য পডকাস্ট বাংলা কনভার্টার নামাজের সময়সূচি আমাদের সম্পর্কে যোগাযোগ প্রাইভেসি পলিসি

বিশ্লেষণ
সেই প্রাণ ছুটিয়াছে বিশ্ব দিগ্বিজয়ে
google_news print-icon

সেই প্রাণ ছুটিয়াছে বিশ্ব-দিগ্বিজয়ে

সেই-প্রাণ-ছুটিয়াছে-বিশ্ব-দিগ্বিজয়ে
তথ্যের অবাধ প্রবাহে বিশ্বাসী গণমাধ্যম-বান্ধব ব্যক্তিত্ব শেখ হাসিনা সর্বদাই তথ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থাকে গতিশীল রাখার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কানাডার প্রখ্যাত যোগাযোগবিদ ও গণমাধ্যম-চিন্তক মার্শাল ম্যাকলুহানের ‘মাধ্যমই বার্তা’, চমকপ্রদ এই আপ্তবাক্যের প্রতিফলন দেখতে পাই শেখ হাসিনার যোগাযোগ প্রতিমান ও তাঁর সামগ্রিক রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম ব্যবস্থাপনায়। তিনি ১৬ কোটি মানুষকে প্রতিনিয়ত বচনে ও ভাষণে উন্নয়নের অগ্রবার্তা দিয়ে চলেছেন এবং প্রতি মুহূর্তে অনুসরণ ও অনুভব করছেন দেশবাসীর প্রতিবার্তা।

The medium is the message/ Herbert Marshall McLuhan

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন একজন অন্যতম বিশ্বনেতা। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাকাণ্ডে পরিবারের সবাই নিহত হলে বিদেশে থাকায় তিনি ও তার বোন শেখ রেহানা ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান। পরবর্তী দীর্ঘকাল তাকে নির্বাসিত জীবন যাপন করতে হয়। পঁচাত্তরের পর ১৯৮১ সালে স্বদেশে ফিরে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। তারই সুদৃঢ় নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ লাভ করে। মাঝে বিএনপি-জামায়াতের অপশাসনের পর ২০০৯ সাল থেকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ধারাবাহিকভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করছে।

প্রজাতন্ত্রের প্রধানমন্ত্রী ও দেশের প্রাচীনতম ও বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনার কর্মব্যস্ততা দেশবাসী প্রত্যক্ষ করছে। তার দৈনিক ২০ ঘণ্টা পরিশ্রম রবীন্দ্রনাথের ১২০ বৎসর পূর্বে রচিত পঙ্‌ক্তি ‘যে প্রাণ-তরঙ্গমালা রাত্রিদিন ধায়/সেই প্রাণ ছুটিয়াছে বিশ্ব-দিগ্বিজয়ে’ সর্বার্থে সমার্থক উচ্চারণ। বঙ্গবন্ধুর ‘সোনার বাংলা’ গড়ার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়ে জনগণের সেবা করাকেই শেখ হাসিনা তাঁর জীবনের লক্ষ্য হিসেবে নির্ধারণ করেছেন।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি একবিংশ শতাব্দীর অন্যতম চালিকাশক্তি, বলা যায় বর্তমান সময়ের অন্যতম মূল্যবান সম্পদ। এই সম্পদকে যথার্থভাবে কাজে লাগানোর ওপর নির্ভর করে দেশের উন্নয়ন ও ‍মানবিক সমৃদ্ধি। তথ্যের অবাধ প্রবাহে বিশ্বাসী গণমাধ্যম-বান্ধব ব্যক্তিত্ব শেখ হাসিনা সর্বদাই তথ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থাকে গতিশীল রাখার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কানাডার প্রখ্যাত যোগাযোগবিদ ও গণমাধ্যম-চিন্তক মার্শাল ম্যাকলুহানের ‘মাধ্যমই বার্তা’, চমকপ্রদ এই আপ্তবাক্যের প্রতিফলন দেখতে পাই শেখ হাসিনার যোগাযোগ প্রতিমান ও তাঁর সামগ্রিক রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম ব্যবস্থাপনায়। তিনি ১৬ কোটি মানুষকে প্রতিনিয়ত বচনে ও ভাষণে উন্নয়নের অগ্রবার্তা দিয়ে চলেছেন এবং প্রতি মুহূর্তে অনুসরণ ও অনুভব করছেন দেশবাসীর প্রতিবার্তা।

প্রথমবার ১৯৯৬ সালে সরকারপ্রধানের দায়িত্বভার গ্রহণ করে শেখ হাসিনা মোবাইল টেলিফোনের মনোপলি ভেঙে দিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে মোবাইল প্রযুক্তির সেবা পৌঁছে দেন। পরবর্তীতে ইন্টারনেট ব্যবস্থার উন্নতির মাধ্যমে জাতীয় তথ্য বাতায়ন প্রতিষ্ঠা করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনগণকে যেভাবে সারা পৃথিবীর সঙ্গে সংযুক্ত করেছেন তা বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় এক উজ্জ্বল মাইলফলক।

আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশগ্রহণ করে কিংবা দ্বিপক্ষীয় কোনো সফর থেকে ফিরে তিনি যে নিয়মিতভাবে সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশের অবস্থান বর্ণনা করেন, তাতে প্রমাণ হয় যে শেখ হাসিনা সর্বদাই সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে জনণগকে সব বিষয়ে অবহিত রাখতে চান। ২০০৯ সালের ২৯ মার্চ তথ্য অধিকার আইন অনুমোদনের পর জনগণের তথ্য অধিকার সুনিশ্চিত করার জন্য অতি দ্রুততার সাথে তিন মাসের মধ্যে অর্থাৎ ২০০৯ সালের ১ জুলাই স্বাধীন তথ্য কমিশন গঠন করে ‘প্রজাতন্ত্রের মালিক জনগণ’- এই সাংবিধানিক প্রতিশ্রুতি তিনি পূরণ করেন।

শেখ হাসিনা একজন সক্রিয় তথ্যনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী। যেকোনো ক্ষেত্রে বিশদ তথ্য সংগ্রহে তার যেমন সীমাহীন আগ্রহ, তেমনি রাষ্ট্র পরিচালনায় তিনি তার তথ্যভাণ্ডারকে অর্থপূর্ণভাবে ব্যবহার করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনে থাকাকালীন আমি বেশ কয়েকটি একনেক সভায় দেখেছি যে সভায় উপস্থাপিত প্রতিটি প্রস্তাব অনুমোদনের পূর্বে তিনি কত অনুপুঙ্খভাবে সবিস্তারে সেগুলো মূল্যায়ন করার পর সিদ্ধান্ত দেন।

আমার মনে পড়ে ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৫তম সমাবর্তনে সমাবর্তন বক্তৃতা দেয়ার জন্য এসেছিলেন তাইওয়ানের নোবেল বিজয়ী রসায়নবিদ অধ্যাপক ওয়াই টি লি। যেদিন অপরাহ্ণে তিনি ঢাকা ত্যাগ করবেন, সেদিন সকালে জানালেন যে যখন তিনি যে দেশে যান সে দেশের রাষ্ট্রপ্রধান কিংবা সরকারপ্রধানের সাথে দেখা করে শিক্ষা নিয়ে তাদের চিন্তাভাবনা জানার একটি কৌতূহল তার মাঝে কাজ করে।

আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করার সুপ্ত বাসনা তিনি প্রকাশ করলেন। এত সংক্ষিপ্ত সময়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের সম্ভাবনা কম জেনেও আমি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যোগাযোগ করি। কিছুক্ষণের মাঝেই প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে আমাকে জানানো হলো যে তখনই যেন অতিথিকে নিয়ে আমরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পৌঁছাই কারণ জলবায়ু সংক্রান্ত একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগদানের জন্য সেদিন সন্ধ্যায়ই প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা ছাড়ার কথা।

অধ্যাপক লি মূলত বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলছিলেন এবং প্রধানমন্ত্রী নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের নিয়ে তার চিন্তাভাবনার কথা উল্লেখ করছিলেন। শিক্ষা খাতের প্রতিটি বিষয়, বিশেষ করে প্রাথমিক পর্যায় থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত প্রতিটি স্তর নিয়ে যেভাবে তিনি তথ্য পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে তার চিন্তাভাবনার কথা বলছিলেন, তাতে অধ্যাপক লি অভিভূত ও বিস্মিত।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বেরিয়ে যখন আমরা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর অভিমুখে যাচ্ছি, তখন অধ্যাপক লি বললেন যে ‘তোমরা ভাগ্যবান এমন একজন প্রধানমন্ত্রী পেয়েছ। আমি বহু দেশের রাষ্ট্রনায়কদের সাথে সাক্ষাৎ করেছি কিন্তু নতুন প্রজন্মের শিক্ষা-ব্যবস্থা নিয়ে তোমাদের প্রধানমন্ত্রীর এত স্বচ্ছ, যৌক্তিক ও সংবেদনশীল চিন্তাভাবনা এবং এত বিশদভাবে প্রতিটি বিষয় সম্পর্কে অবহিত থাকার পারঙ্গমতা আমি কোথাও দেখিনি। তোমাদের প্রধানমন্ত্রী শিক্ষাকে যে গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন তাতে আমি মনে করি বাংলাদেশ অতি দ্রুত উন্নয়নের সোপান অতিক্রম করবে।

বাংলাদেশ যে আজ সারা পৃথিবীতে উন্নয়নের রোলমডেল হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করেছে তার পেছনে প্রণিধানযোগ্য বিষয় হচ্ছে শেখ হাসিনার রাজনীতি, অর্থনীতি ও সমাজনীতির সুষম সমন্বয় সক্ষমতা ও সংবেদনশীল মনমানসিকতা।

২০০৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনের প্রাক্কালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী মেনিফেস্টো ঘোষণাকালে শেখ হাসিনা ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার যে অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছিলেন তার ফলেই এই করোনা ভাইরাস মহাসংকটকালে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে শারীরিক দূরত্বের মাঝেও আমরা মানসিক নৈকট্য বজায় রেখে দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছি। তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমের বিশাল বিস্তারের কারণেই এই বিষণ্ন সময়ে বিপন্ন পৃথিবীতে আমরা জনগণের তথ্য অধিকার সমুন্নত রাখতে পারছি। শেখ হাসিনা ২০১৪ সালের ৪ জুন আশা প্রকাশ করেছিলেন যে ‘ডিজিটাল প্রযুক্তির জ্ঞানসম্পন্ন তরুণ প্রজন্মের হাত ধরেই এ দেশ হবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা।’

বঙ্গবন্ধুর সাথে কন্যা শেখ হাসিনার চিন্তাভাবনা ও পর্যবেক্ষণের অপূর্ব মিল আমরা লক্ষ্য করি। স্বাধীন বাংলাদেশে প্রাথমিক শিক্ষাকে জাতীয়করণের আওতায় এনে বঙ্গবন্ধু যে বৈপ্লবিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ও প্রাথমিক শিক্ষাকে প্রজাতন্ত্রের সকল শিশুর জন্য অবৈতনিক, একমুখী ও বাধ্যতামূলক করার যে সাংবিধানিক প্রত্যয় ঘোষণা করেছিলেন, তারই ধারাবাহিকতায় শেখ হাসিনা প্রশাসন দেশে শিক্ষানীতি কাঠামোভুক্ত করে পুরো শিক্ষাব্যবস্থাকে সময়োপযোগী করে চলেছেন।

বিদ্যাচর্চা ও শিশু শিক্ষা নিয়ে বঙ্গবন্ধু যে কত আগ্রহী ছিলেন তা আমরা উপলব্ধি করি তার রচিত ‘আমার দেখা নয়াচীন’ গ্রন্থটি পাঠ করে। আজ থেকে ৬৮ বৎসর পূর্বে ১৯৫২ সালে নয়াচীন সফরের বর্ণনা দিতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু লিখছেন, ‘একটি বিষয় দেখে সত্যিই আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম। এক এক দেশে এক এক প্রকারের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট শ্রেণি (প্রিভিলেজড ক্লাস) আছে—যেমন আমাদের দেশে অর্থশালী জমিদাররা “পিভিলেজড ক্লাস” অন্য দেশে শিল্পপতিরা “প্রিভিলেজড ক্লাস”, কিন্তু নতুন চীনে দেখলাম শিশুরাই “প্রিভিলেজড ক্লাস”। এই প্রিভিলেজড ক্লাসটা সরকারের নানা সুযোগসুবিধা পেয়ে থাকে। নয়াচীন সরকারের হুকুম, প্রত্যেক ছেলেমেয়েকে স্কুলে দিতে হবে। একটা পরিমাণ ঠিক করে দিয়েছে, সেই পরিমাণ খেতে দিতে হবে। পোশাক ঠিক করা আছে, সেইভাবে পোশাক দিতে হবে। যাদের দেবার ক্ষমতা নাই তাদের সরকারকে জানাতে হবে। সরকার তাদের সাহায্য করবে। নতুন মানুষের একটা জাত গড়ে তুলছে নয়াচীন। ১৫/২০ বৎসর পরে এরা যখন লেখাপড়া শিখে মানুষ হয়ে দেশের জন্য কাজ করবে তখন ভেবে দেখুন নয়াচীন কোথায় যেয়ে দাঁড়াবে?’ (পৃ: ৬০)। বঙ্গবন্ধুর অনুধাবন ও পর্যবেক্ষণ যে কত সঠিক ও যথার্থ ছিল তা আজকের চীনের দিকে তাকালেই আমরা বুঝতে পারি।

রাষ্ট্র পরিচালনায় এসে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালে গণমাধ্যম ও তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার গৃহীত উন্নয়ন কার্যক্রমসমূহ ২০০১-২০০৮ সালে উপেক্ষিত হতে থাকে। শেখ হাসিনা সরকারের যুগান্তকারী সিদ্ধান্তে অনুমোদনপ্রাপ্ত প্রথম বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ইটিভি বন্ধ করে দেয়া হয়। বিশ্ব তথ্য বাতায়নে সম্পৃক্ত হতে সাবমেরিন কেব্‌ল বিষয়ে সময়োপযোগী সিদ্বান্ত গৃহীত না হওয়ায় গণমাধ্যম ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশ আন্তর্মহাদেশীয় যোগাযোগে পিছিয়ে পড়ে। তথ্যপ্রযুক্তি টাস্কফোর্স বন্ধ করে দেয়া হয়।

জননেত্রী শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে পুনরায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এলে সর্বাত্মক উন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। ফলে গত এক দশকে দেশে যুগান্তকারী উন্নয়ন সাধিত হয়। গত এক যুগ বাংলাদেশের ইতিহাস দিনবদলের ইতিহাস। ক্ষুধা, দারিদ্র্য, বঞ্চনা ও অভাব থেকে দেশকে মুক্ত করার জন্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারকে দিনবদলের সনদ হিসেবে জনগণের সামনে উপস্থাপন করে। তারই ধারাবাহিকতায় দেশ আজ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নতি সাধন করেছে। দেশে দারিদ্র্যের হার কমেছে ও মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়েছে। পূর্ববর্তী সরকারের আমলের গড় মাথাপিছু আয় ৩৬০ ডলার এখন ২০৬৪ ডলারে উন্নীত হয়েছে। গণমাধ্যম ব্যবহার বৃদ্ধির জন্য বিদ্যুৎ, আর্থিক সঙ্গতি ও প্রযুক্তির অভিগম্যতা একান্ত জরুরি।

বঙ্গবন্ধুকন্যা ২০০৯ সালে যখন দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তখন দেশে সাতটি বেসরকারি টেলিভিশন চালু ছিল। এ ক্ষেত্রে তার সরকারের উদারনীতি গ্রহণের ফলে বর্তমানে দেশে ৪৪টি টেলিভিশন চ্যানেল অনুমোদন পেয়েছে এবং অপারেশনে থাকা ২৮টি টেলিভিশন চ্যানেলে ধারাবাহিকভাবে ২৪ ঘণ্টাই সংবাদ ও অনুষ্ঠানাদি সম্প্রচারিত হচ্ছে। ফলে অবাধ তথ্য ও বিনোদনপ্রবাহ গণমানুষের মন ও মানস তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বিটিভির জন্য সংসদ টেলিভিশন নামে পৃথক চ্যানেল চালু হয়েছে।

ফলে মহান জাতীয় সংসদের কার্যক্রম এখন সাধারণ মানুষ ঘরে বসেই দেখতে পারেন। বর্তমানে করোনা সংকটকালে স্কুল শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রাখতেও সংসদ টিভি ব্যবহৃত হচ্ছে। অন্যদিকে ২২টি এফএম রেডিও এবং ৩২টি কমিউনিটি রেডিওর অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ভৌগোলিকভাবে দূরবর্তী ও জলবায়ু ভঙ্গুর এলাকায় মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহে কমিউনিটি রেডিও অনন্য ভূমিকা রাখছে। দেশে কোনো সম্প্রচার নীতিমালা ছিল না। একটি সম্প্রচার কমিশন গঠনের লক্ষ্যে শেখ হাসিনা প্রশাসন কর্তৃক সম্প্রচার আইন ও নীতিমালা প্রণীত হয়েছে। প্রস্তাবিত এই কমিশন গঠিত হলে দেশের সম্প্রচার মাধ্যম জাতীয় স্বার্থে, উন্নয়ন অগ্রগতির লক্ষ্যে সমন্বিত ভূমিকা পালন করতে পারবে। অন্যদিকে সংবাদপত্রের ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার শাসনামলের গত এক যুগে অভূতপূর্ব সম্প্রসারণ সাধিত হয়েছে। ২০০৬ সালে যেখানে দেশে সংবাদপত্র ছিল ৪০০টি এবং সাপ্তাহিক পত্রিকা ছিল ১৫০টি, তা গত এক যুগে বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে দেশে পত্রিকার সংখ্যা ১২৫২টি ও সাপ্তাহিক পত্রিকার সংখ্যা ১১৯৬টি। অষ্টম ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়িত পত্রপত্রিকার সংখ্যা এখন ১৮৮টি। এক্ষেত্রে গণমাধ্যম মালিক ও কর্তৃপক্ষের বিশেষ দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। দেশের মিডিয়া তালিকাভুক্ত দৈনিক, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিক, ত্রৈ-মাসিক ও ষান্মাসিক সকল পত্রপত্রিকার (ঢাকা ও মফস্বল থেকে প্রকাশিত) সর্বমোট সংখ্যা এখন ৭০৭টি। (সূত্র : চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর)

সাংবাদিকতা এখন আর শহরকেন্দ্রিক নয়। মফস্বল শহরগুলোতে এখন নিয়মিত সংবাদপত্র প্রকাশিত হয় এবং প্রান্তিক গ্রামাঞ্চলও তাদের কাভারেজের আওতায় এসেছে। পাশাপাশি সাংবাদিকতার সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেশব্যাপী আঞ্চলিক প্রেসক্লাবসমূহ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। গত এক যুগে শেখ হাসিনার সরকার গণমাধ্যম ও সংবাদিকদের কল্যাণে অনেক কাজ করেছে। ২০১৪ সালে বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট আইন প্রণয়ন করা হয়। প্রেস ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালককে ব্যবস্থাপনা পরিচালক করে একটি ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করা হয়। ইতিমধ্যে এই ট্রাস্ট থেকে প্রায় ১০ কোটি টাকা সাংবাদিকদের প্রদান করা হয়েছে। সরকার প্রদত্ত ২০ কোটি টাকার তহবিল নিয়ে গঠিত এই ট্রাস্টের বর্তমান সঞ্চয় দাঁড়িয়েছে ৪১ কোটি টাকা।

সাংবাদিকদের সচ্ছল জীবনযাপন নিশ্চিতকল্পে ৯ম ওয়েজ বোর্ডের বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে এবং ‘গণমাধ্যম কর্মী আইনের’ খসড়া ২০১৮ সালে প্রণীত হয়েছে। এ বছর মার্চ থেকে দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ফলে অন্যান্য সবার মতো সংবাদকর্মীরাও ব্যাপক অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন। সরকার গণমাধ্যম মালিকদের কর্মী ছাঁটাই বন্ধ ও নিয়মিত বেতনভাতা প্রদানের জন্য আহবান জানায় এবং পাশাপাশি বিভিন্নভাবে সাংবাদিকদের পাশে দাঁড়ায়। অসচ্ছল সংবাদকর্মীদের জন্য এককালীন ভাতার ব্যবস্থা নেয়া হয়। ইতিমধ্যে ৩,৩৫০ জন সাংবাদিককে মহামারির এ সময়ে এককালীন অর্থ সাহায্য দেয়া হয়েছে।

সরকার অনলাইন নিউজ পোর্টাল নীতিমালা প্রণয়ন করে এ খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম শুরু করেছে। এসব কার্যক্রমের ফলে দেশের গণমাধ্যম ক্ষেত্রে নানামুখী উন্নয়ন সাধিত হয়েছে, যেমন: ক) আধেয়ের দিক থেকে গণমাধ্যমের উন্নয়ন ঘটেছে, খ) প্রয়োজনীয় নীতিকাঠামো তৈরি হয়েছে, এবং গ) কর্মীকল্যাণের রাষ্ট্রীয় অবকাঠামো ও কার্যকর পদ্ধতি প্রয়োগের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

শেখ হাসিনার শাসনামলে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ক্ষেত্রের উন্নয়ন এক স্বর্ণালি অধ্যায় হিসেবে লিখিত থাকবে। গত এক যুগের শাসনামলে তিনি শিক্ষা ও যোগাযোগপ্রযুক্তিতে পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তর করেছেন। দেশের ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে এখন ১৬ দশমিক ১ কোটি মোবাইল সিম নিবন্ধিত আছে। দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১০ কোটিরও বেশি। ইন্টারনেট সেবা এখন গ্রামীণ সমাজে পৌঁছে গেছে। সারা দেশে প্রায় ২০০ ধরনের ডিজিটাল সেবা প্রদান করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে ৫,৭০০টি ডিজিটাল সেন্টার ও ৮,২০০টি ই-পোস্ট অফিস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

অপটিক্যাল ফাইবার এখন ইউনিয়ন পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়েছে। ইতিমধ্যে দেশে পর্যায়ক্রমে ৩জি ও ৪জি প্রযুক্তির অবকাঠামো ও ব্যবহার নিশ্চিত করা হয়েছে। ৫জি সেবা প্রদানের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে সরকার অগ্রসর হচ্ছে।

প্রযুক্তিকেন্দ্রিক অপরাধ দমনে সরকার প্রয়োজনীয় নীতি প্রণয়ন করেছে। এক্ষেত্রে বায়োমেট্রিক মোবাইল সিম রেজিস্ট্রেশন ও ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট প্রণিধানযোগ্য। ডিজিটাল অপরাধ দমনে সরকার ডিজিটাল পুলিশ ব্যবস্থা গ্রহণ করে তদারকি জোরদার করেছে। ফলে প্রযুক্তিকেন্দ্রিক অপরাধ ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে।

প্রযুক্তিকেন্দ্রিক তথ্য-উপাত্ত উন্মুক্তকরণের জন্য সরকার ব্যবস্থা নিয়েছে। প্রায় ২৫ হাজার ওয়েব পোর্টালের সমন্বয়ে সরকার তথ্য বাতায়ন ব্যবস্থা চালু করেছে। এতে অনেক প্রয়োজনীয় তথ্য মানুষ ঘরে বসেই পাচ্ছে। সর্বোপরি বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা সরকার বাংলাদেশকে মহাকাশ বিজ্ঞানের যুগে নিয়ে এসেছেন। এতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে, তেমনই তথ্যপ্রযুক্তি সেবা, বিনোদন ও আবহাওয়া পূর্বাভাসের ক্ষেত্রে নিজেদের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার নেতৃত্ব এখন বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত। প্রযুক্তি খাতকে উন্মুক্ত করে তিনি প্রযুক্তির গণতন্ত্রায়ণ নিশ্চিত করেছেন। আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি হিসেবে শেখ হাসিনার সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশের অগ্রগতির জন্য ২০১৪ সালে ‘সাউথ-সাউথ কো-অপারেশন ভিশনারি অ্যাওয়ার্ড’ লাভ করে এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি উন্নয়নের ফলে ২০১৫ সালে অর্জন করে ‘আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন পুরস্কার’।

বর্তমান করোনা সংকটে দেশের মানুষ গত এক দশকে শেখ হাসিনার গৃহীত গণমাধ্যম ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়ন কার্যক্রমের সুফল ভোগ করছে। জীবনের প্রয়োজনীয় অনেক কিছুই মানুষ ঘরে বসে ইন্টারনেটে সম্পাদন করছে। দৈনিক চাল-ডালের বাজার থেকে স্টকের কেনাকাটা, অনলাইন প্লাটফর্ম ব্যবহার করে সরকারপ্রধান থেকে শুরু করে সর্বস্তরের জনগণের যোগাযোগ কার্যক্রম পরিচালনা, টেলিমেডিসিন, বিনোদনের জন্য সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ও অন্তরঙ্গ আড্ডা, একাডেমিক ওয়েবিনার ও লাইভ টকশো স্ট্রিমিং সবই সম্ভব হচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে। আমরা হয়তো এখনও সুস্থ ও স্বাভাবিক আছি বা থাকতে পারছি দেশে বিদ্যমান তথ্যপ্রযুক্তির কার্যকর কর্মজালের কারণে।

এ বাংলাদেশ অন্য এক বাংলাদেশ, এ বাংলাদেশ সত্যিকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ। ২০০৮ সালে গৃহীত আওয়ামী লীগের ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্প আজ বাস্তব রূপ লাভ করেছে। বাংলাদেশ যথার্থ অর্থেই বিশ্বে আজ ডিজিটাল বাংলাদেশ।

গণমাধ্যমের অভিগম্যতা বৃদ্ধির জন্য যোগাযোগপ্রযুক্তির বিকাশ ও সম্প্রসারণ অপরিহার্য। সে লক্ষ্যেই ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার প্রত্যয় যত অগ্রসর হচ্ছে, আমাদের গণমাধ্যমের ব্যাপ্তি ও পরিধির ততই প্রসার ঘটছে। বর্তমান যুগের ‘বিশ্বপল্লি’ বাস্তবতায় গণমাধ্যম ও যোগাযোগপ্রযুক্তি একীভূত হয়ে গেছে। মোবাইল ফোনে সংবাদপত্র পড়া, রেডিও শোনা, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র দেখা, বার্তা বিনিময় করা, অর্থ লেনদেন করা আজ অতি সাধারণ বিষয়। গ্রামের একজন সাধারণ মানুষের হাতে মোবাইল ফোন থাকার অর্থই হচ্ছে তিনি শুধু নিজ দেশে নয়, সারা পৃথিবীর সাথে সংযুক্ত আছেন। শেখ হাসিনার প্রতি আমাদের আন্তরিক কৃতজ্ঞতা যে তিনি একবিংশ শতাব্দীতে পদার্পণের প্রাক্কালেই যোগাযোগের এই অতি শক্তিশালী যন্ত্রটি আমজনতার হাতে তুলে দিয়ে গণমানুষকে তথ্যায়িত রাখার সন্ধান দিয়েছেন।

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের উচ্চারণেই আমরা বলি, ‘নিত্য যেথা/তুমি সর্ব কর্ম চিন্তা আনন্দের নেতা’। জয়তু শেখ হাসিনা।

লেখক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক

আরও পড়ুন:
শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের চার দশক
শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন: দুই দিনের তথ্যচিত্র প্রদর্শনী
৩৬ লাখ পরিবার পেল আড়াই হাজার করে টাকা
যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ স্বীকৃতি পাচ্ছেন শেখ হাসিনা
কোটালীপাড়ায় প্রধানমন্ত্রীকে হত্যাচেষ্টা: বিস্ফোরক মামলার রায় পড়া শুরু

মন্তব্য

আরও পড়ুন

বিশ্লেষণ
The Dogs of Khalishapur and Rakibs thesis is a fresh idea

‘খলিশাপুরের কুকুরগুলো ও রকিবের থিসিস’ একটি নতুন ভাবনা

‘খলিশাপুরের কুকুরগুলো ও রকিবের থিসিস’ একটি নতুন ভাবনা
লেখক চমৎকার বইটিতে নানা অণুগল্পের মধ্য দিয়ে ওই সব ভয়ঙ্কর কুকুর-মানবদের চরিত্র পাঠকদের সামনে উপস্থাপন করেছেন।

সাংবাদিক মুস্তফা মনওয়ার সুজনের ‘খলিশাপুরের কুকুরগুলো ও রকিবের থিসিস’ উপন্যাস নিয়ে কিছু কথা পাঠকদের সামনে তুলে ধরার খুব ইচ্ছা থেকেই লিখতে বসা। লেখকের সঙ্গে যোগাযোগে সুবাদে বইটি লেখার শুরুর আগেই আলোচনা এবং পরে পান্ডুলিপি থেকেই পড়ার সুযোগ হয়েছে। এতে আমাদের প্রত্যেকের জীবনের চিরন্তন সত্য কিছু ঘটনা উপস্থাপন করেছেন লেখক।

বইটি না পড়লে বা না ধরলে আসলে চমৎকার কিছু বিষয় জানা থেকে পাঠকরা বঞ্চিত হবেন। আমি মনে করি, বইটি সবারই পড়া উচিত।

আমরা যদি বইমেলা থেকে সবসময় শুধু বিখ্যাত লেখকদের বই কিনি আর পড়ি, তাহলে এতসব অসাধারণ লেখাগুলো অজানাই থেকে যাবে। নতুন লেখক বা আরেকজন হুমায়ুন আজাদ কিংবা হুমায়ূন আহমেদ অথবা তার চেয়ে বেশি কেউ সৃষ্টি হবে না।

তবে নিশ্চয়ই বলছি না, বিখ্যাত লেখকদের বই কেউ পড়বেন না। অবশ্যই কিনবেন এবং পড়বেন। পাশাপাশি নতুন লেখকদের ভালো ভালো বইগুলোও স্পর্শ করতে হবে, দেখতে হবে ভেতরে কী আছে। তবেই তারা লিখতে উৎসাহ পাবেন, নাহলে তো আর লেখক সৃষ্টি হবে না।

সাংবাদিক মুস্তফা মনওয়ার সুজনের খলিশাপুরের কুকুরগুলো ও রকিবের থিসিস বইটি পড়ে মনে হয়েছে, এটি পড়ে পাঠক মজা পাবেন এবং ভাববেন।

বইটিতে লেখক যা বলতে চেয়েছেন তা অনেকটা এরকম- আমরা প্রতিনিয়ত অসংখ্য মানুষ দ্বারা পরিবেষ্টিত। এরমধ্যে কিছু মানুষ থাকে মুখোশ পরা, মুখোশটা মুখের সেঙ্গ খুব কৌশলে নিখুঁতভাবে মেশানো, সহজে দেখা যায় না। চারপাশটা ঘিরে তাদের বিচরণ। আমরা খুব বেশি খেয়াল না করলে বুঝতে পারি না, এদের ভেতর হিংস্র এক কুকুরের বাস। তারা প্রতি মুহূর্তে বন্ধুবেশে মানুষের চরম ক্ষতি করার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকে; অনেকটা অজগর সাপের মতো।

এ প্রসঙ্গে আমার বন্ধু শারমিন মিলির একটি গল্প বলি। গল্পটি এরকম- এক লোক একটি অজগর সাপ পোষেন। তো এক পর্যায়ে দেখা গেল, অজগরটি খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। এতে সাপের মালিক বেশ চিন্তিত হয়ে পড়লেন এবং চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলেন। তিনি চিকিৎসককে জানালেন, সাপটি এরকম ছিল না, তাকে খুবই ভালোবাসত, সবসময় তাকে জড়িয়ে ধরে থাকত, কিন্তু এখন যেন কেমন হয়ে গেছে! তখন চিকিৎসক হেসে বলেন, সাপটি আসলে তাকে কখনোই ভালোবাসেনি। সারাক্ষণ যে জড়িয়ে থাকত, সেটি আসলে প্রতি মুহূর্তে সে দেখত- তিনি সাপটির খাওয়ার উপযোগী হয়েছেন কি না। বইটি অজগরের গল্প বার বার মনে করিয়ে দিয়েছে।

লেখক চমৎকার বইটিতে নানা অণুগল্পের মধ্য দিয়ে ওই সব ভয়ঙ্কর কুকুর-মানবদের চরিত্র পাঠকদের সামনে উপস্থাপন করেছেন। উপন্যাসটিতে রকিব, অংকন, কেয়া, ফাহমিদাসহ বেশ কিছু চরিত্র দাঁড়িয়েছে, সেসব বাংলা উপন্যাসে নতুন মাত্র। উপন্যাসটি পড়ে বারবার মনে হয়েছে- চরিত্র সৃষ্টির নয়া কারিগরের আবির্ভাব হলো।

আমি হলফ করে বলতে পারি, ‘খলিশাপুরের কুকুরগুলো ও রকিবের থিসিস’ পড়লে পাঠকের অবশ্যই অনেক ভালো লাগবে। বইটির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এক রকম আকর্ষণ বা মাদকতা আছে। অসাধারণ এক কাহিনী। আমি পাঠক হিসেবে, আহ্বান জানাই- পাঠকরা যেনো বইমেলায় গিয়ে মনোবৈজ্ঞানিক উপন্যাসটি সংগ্রহ করেন এবং সময় নিয়ে বইটি পড়েন।

‘খলিশাপুরের কুকুরগুলো ও রকিবের থিসিস’-এর প্রকাশক বেহুলা বাংলা। অমর একুশে বইমেলায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ২২৪ নম্বর স্টলে গেলেই মিলবে, এছাড়া রকমারি তো আছেই।

লেখক: সাংবাদিক

আরও পড়ুন:
ফটোগ্রাফি নিয়ে ভিন্নধর্মী বই ‘বিখ্যাত ছবির পেছনের গল্প’
বইমেলায় মীরাক্কেল খ্যাত রাশেদের ‘ফিলিং চিলিং’

মন্তব্য

বিশ্লেষণ
One of the ethos of Ekush is to protest injustice and end domination over the weak

একুশের অন্যতম চেতনা অন্যায়ের প্রতিবাদ ও দুর্বলের ওপর আধিপত্যের অবসান

একুশের অন্যতম চেতনা অন্যায়ের প্রতিবাদ ও দুর্বলের ওপর আধিপত্যের অবসান মো. শহীদ উল্লা খন্দকার
২১ শে ফেব্রুয়ারি রক্ত স্নাত ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবহ মহান শহীদ দিবস। একই সঙ্গে দিনটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবেও পালিত হবে বিশ্বজুড়ে। আমাদের জাতীয় জীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন এটি।

প্রায় দুই হাজার কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত দুটি ভূখণ্ডের দুটি ভিন্ন ভাষার জাতিসত্তাকে মিলিয়ে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম থেকেই মাতৃভাষাকে কেন্দ্র করে সূচনা হয়েছিল আন্দোলনের। আর এই ভাষা আন্দোলনকেই বাংলাদেশ রাষ্ট্র সৃষ্টির পথে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনাযোগ্য । ১৯৪৭ সালে যখন দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত ভাগ হয়েছিল তার আগ থেকেই আসলে শুরু হয়েছিল ভাষা নিয়ে বিতর্ক।পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠন নিশ্চিত হওয়ার পর উর্দু-বাংলা বিতর্ক আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে।

২১ শে ফেব্রুয়ারি রক্ত স্নাত ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবহ মহান শহীদ দিবস। একই সঙ্গে দিনটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবেও পালিত হবে বিশ্বজুড়ে। আমাদের জাতীয় জীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন এটি।

মহান আন্তজার্তিক মাতৃ ভাষা ২১ ফেব্রুয়ারীতে যারা বুকের তাজা রক্ত দিয়ে বাংলাকে মায়ের ভাষা ও রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে গেছেন তাদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা ও সশ্রদ্ধ সালাম জানাই।

১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের পর থেকেই পাকিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলের শাসকগোষ্ঠী পূর্বাঞ্চলের সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালিকে তাদের অধীন করে রাখার পরিকল্পনা করেছিল। আজ আমরা গর্বিত স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের বাসিন্দা।

১৯৫২ সালের এই দিনে মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা রাখতে গিয়ে বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছিল রফিক, সালাম, বরকত, সফিউর, জব্বাররা। তাদের রক্তে শৃঙ্খলমুক্ত হয়েছিল দুঃখিনী বর্ণমালা, মায়ের ভাষা। বাঙালি জাতিসত্তা বিকাশের যে সংগ্রামের সূচনা সেদিন ঘটেছিল, জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় পথ বেয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের মধ্য দিয়ে তা চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। একুশে ফেব্রুয়ারি তাই বাঙালির কাছে চির প্রেরণার প্রতীকে পরিণত হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ড মাতৃভাষার অধিকারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনকে দমিয়ে দেয়নি।

বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনে যোগ করে নতুন মাত্রা। শহীদদের রক্ত তাদের প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে প্রেরণা জোগায়। এর পরের ইতিহাস পর্যায়ক্রমিক আন্দোলনের।

স্বাধীনতাসংগ্রাম, সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধসহ ইতিহাসের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে আমাদের পথ দেখিয়েছে একুশে ফেব্রুয়ারি। তেমনি একুশ আজও পৃথিবীর বিভিন্ন জাতির ভাষার অধিকার অর্জনেরও পথিকৃৎ হয়ে আছে।

স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। বাংলা ভাষায় সংবিধান প্রণীত করেন বঙ্গবন্ধু। এটিই একমাত্র দলিল যা বাংলা ভাষায় প্রণীত হয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে প্রথম বাংলায় বক্তব্য দিয়ে বিশ্বসভায় বাংলাকে তুলে ধরেন। ’৫৪-র নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিজয়, আইয়ুব খানের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ’৬২-র শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৬-র স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই, ’৬৯-র গণঅভ্যুত্থান, ’৭০-এর জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয়লাভ এবং ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে শেষ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠা লাভ করে বাঙালির স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশ।

আর বাঙালি মুক্ত হয় ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণ থেকে। বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের প্রতিটি পর্যায়ে ’৫২-র ভাষা আন্দোলন অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে। তাই একুশ আমাদের জাতীয় জীবনে এক অন্তহীন প্রেরণার উৎস।

ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠিত হয়। একুশের অন্যতম চেতনা ছিল রাষ্ট্রীয় জীবনে অসাম্য বৈষম্য, দুর্বলের ওপর সবলের আধিপত্য ইত্যাদির অবসান। বাঙালির ঐতিহ্য, কৃষ্টি, আবহমানকালের সংস্কৃতি ইত্যাদি সমুন্নত রাখা।

অমর একুশের চেতনা এখন বিশ্বের বিভিন্ন ভাষার মানুষের নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় অনুপ্রেরণার উৎস। তবে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির সঠিক চর্চা ও সংরক্ষণে আমাদের আরও বেশি পরিশ্রমী হতে হবে। তথ্যপ্রযুক্তির আশীর্বাদে আমরা এখন একই বৈশ্বিক গ্রামের বাসিন্দা। তাই উন্নত বিশ্বের সঙ্গে অগ্রগতির ধারা বজায় রাখতে আমাদের বর্তমান প্রজন্মকে বিভিন্ন ভাষায় প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করতে হবে, যা আন্তর্জাতিক যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে স্বীকৃত।

আমি বিশ্বাস করি যে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন আমাদের নিজস্ব ভাষার উন্নয়ন ও সংরক্ষণের পাশাপাশি বহুভাষিক শিক্ষার মাধ্যমে একটি টেকসই ভবিষ্যৎ গড়তে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

অমর একুশের চেতনাকে ধারণ করে বিশ্বের বিভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতির মানুষের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ জাগ্রত হোক, বৈষম্যহীন বর্ণিল পৃথিবী গড়ে উঠুক- শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে এটাও আমাদের প্রত্যাশা।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে তার কন্যা শেখ হাসিনা সরকার প্রধান হিসেবে প্রতিবারই জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দিয়ে যাচ্ছেন। তার সরকার বাংলাভাষাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি আদায়ের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। বাংলাদেশে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীরও ভাষার চর্চার ব্যাবস্থা করেছেন। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট গড়ে তুলেছেন, যেখানে হারিয়ে যাওয়া মাতৃভাষা নিয়ে গবেষণা হচ্ছে।

অমর একুশে গ্রন্থমেলাসহ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ‘আমাদের শিল্প, কলা, সাহিত্য, সংস্কৃতিকে আরো উন্নতমানের করে শুধু আমাদের দেশে না, বিশ্বদরবারে পৌঁছে দিতে চান। ‘আমাদের সাহিত্য আরো অনুবাদ হোক। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষ আমাদের সাহিত্যকে জানুক, আমাদের সংস্কৃতিকে জানুক, সেটাই আমরা চাই।

বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের আদর্শ অনুসরণ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত করেছেন। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা’র অসাধারণ নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নত সমৃদ্ধশালী দেশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের জন্য ধারাবাহিক অগ্রগতি আর সম্মানের পথটি দিন দিন প্রশস্ত করে চলেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। তিনি দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে তিনি নিষ্ঠার সঙ্গে দেশ ও মানুষের উন্নয়নের কাজে নিজেকে পুরোপুরি সঁপে দিয়েছেন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কর্মজীবন প্রায় চার দশকের। তারই নেতৃত্বে বাংলাদেশে চলমান উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতে হবে। তাহলে প্রকৃত অর্থে বঙ্গবন্ধু’র স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে নেতৃত্ব দিবে। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ তথা জাতির জনকের স্বপ্নের সোনার বাংলা স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হবেই।

সব মাতৃ ও আঞ্চলিক ভাষাকেই সমান মর্যাদা দিয়ে সংরক্ষণের দায়িত্ব রয়েছে বিশ্ববাসীর। একুশের শহীদদের প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা। শহীদ স্মৃতি অমর হোক।

লেখক: সাবেক সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনি এলাকার মনোনীত প্রতিনিধি।

মন্তব্য

বিশ্লেষণ
Awami Leagues manifesto has a special commitment to protect the interests of minorities

আওয়ামী লীগের ইশতেহারে সংখ্যালঘুর স্বার্থ রক্ষায় বিশেষ অঙ্গীকার

আওয়ামী লীগের ইশতেহারে সংখ্যালঘুর স্বার্থ রক্ষায় বিশেষ অঙ্গীকার
আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহারে নিম্ন আয়ের প্রান্তিক-সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কথাই ঘুরে-ফিরে এসেছে। প্রবীণ, সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষ এমনকি সংখ্যালঘু জাতিসত্তার ক্ষমতায়নের প্রসঙ্গও এসেছে। বিশেষত সংখ্যালঘু জাতিসত্তার মানুষের জন্য আলাদা কমিশন গঠন করার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। দেশের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়নে এই প্রতিশ্রুতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগের ইশতেহারে সংখ্যালঘুদের স্বার্থ সুরক্ষায় বিশেষ অঙ্গীকারের কথা ঘোষণা করা হয়েছে। এবারের ইশতেহারের স্লোগান- ‘স্মার্ট বাংলাদেশ: উন্নয়ন দৃশ্যমান বাড়বে এবার কর্মসংস্থান’।

ইশতেহারে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার করে ১১টি বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়েছে আওয়ামী লীগ। কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দ্রব্যমূল্য ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা, আয়ের মধ্যে সঙ্গতি প্রতিষ্ঠা, দেশের রূপান্তর ও উন্নয়নে তরুণ এবং যুব সমাজকে সম্পৃক্ত রাখা, পুঁজি পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, ঘুষ-দুর্নীতি উচ্ছেদ, ঋণ-কর-বিলখেলাপি ও দুর্নীতিবাজদের বিচারের আওতায় এনে তাদের অবৈধ সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার প্রতিশ্রতি দিয়েছে দলটি। এছাড়া গুরুত্ব পেয়েছে কৃষি, সেবা, অর্থনৈতিক ও শিল্প উৎপাদন খাত এবং তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা।

আওয়ামী লীগের ২০০৮ সালের নির্বাচনি ইশতেহারের শিরোনাম ছিলো ‘দিন বদলের সনদ’, ২০১৪ সালের ‘এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’, ২০১৮ সালের ‘সমৃদ্ধি ও অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’। এটিতে ২১টি বিশেষ অঙ্গীকার ছিলো।

আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৭ ডিসেম্বর ইশতেহার ঘোষণা করেন। নির্বাচনি ইশতেহারের সারাংশ তুলে ধরেন তিনি।

ইশতেহারে ডিজিটাল থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে উত্তরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে বিশ্ব প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য প্রযুক্তি সক্ষমতা একান্ত প্রয়োজন। এজন্য ‘স্মার্ট নাগরিক’, ‘স্মার্ট সরকার’, ‘স্মার্ট অর্থনীতি’ ও ‘স্মার্ট সমাজ’- এই চারটি স্তম্ভের সমন্বয়ে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার ঘোষণা দেয়া হয়। স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নে প্রতিটি ক্ষেত্রে কাজের কথা উল্লেখ করা হয়।

জনগণের ভোটে নির্বাচিত হলে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত স্মার্ট সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তোলার অঙ্গীকার করা হয়েছে।

ইশতেহারে আওয়ামী লীগ যে ১১টি বিষয়কে বিশেষ অগ্রাধিকার দিয়েছে তা হলো- দ্রব্যমূল্য সবার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া; কর্মোপযোগী শিক্ষা ও যুবকদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা; আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা; লাভজনক কৃষির লক্ষ্যে সমন্বিত কৃষিব্যবস্থা, যান্ত্রিকীকরণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণে বিনিয়োগ বৃদ্ধি; দৃশ্যমান অবকাঠামোর সুবিধা নিয়ে এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে শিল্পের প্রসার ঘটানো; ব্যাংকসহ আর্থিক খাতে দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করা; নিম্ন আয়ের মানুষদের স্বাস্থ্যসেবা সুলভ করা; সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় সবাইকে যুক্ত করা; আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যকারিতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা; সাম্প্রদায়িকতা এবং সব ধরনের সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ রোধ করা, সর্বস্তরে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সুরক্ষা ও চর্চার প্রসার ঘটানো।

‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে টানা তিনবার ক্ষমতায় থাকা দল আওয়ামী লীগ তার নির্বাচনী ইশতেহারে ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিয়ে কী পরিবল্পনা আছে তা তুলে ধরেছে ইশতেহারে। নতুন করে সরকার গঠন করতে পারলে আওয়ামী লীগ কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে তা স্পষ্ট করে জানিয়েছে ইশতেহারে।

বর্তমানে বাংলাদেশে পাহাড় ও সমতল মিলে প্রায় ৪৫টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ৩০ লাখের বেশি মানুষ বসবাস করছে। বাংলাদেশের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত রয়েছে তাদের জীবন, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, ইতিহাস ও আশা-আকাঙ্ক্ষা।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের সংবিধানে ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী, ধর্মীয় সংখ্যালঘুসহ সব সম্প্রদায়ের মানুষের সম-অধিকার ও মর্যাদার স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। সেই আলোকে আওয়ামী লীগ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের অবসান ঘটানো; তাদের জীবন, সম্পদ, উপাসনালয় ও স্বাতন্ত্র্য রক্ষায় এবং জীবনমানের উন্নয়নে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিভিন্ন কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। সাম্প্রদায়িকতা যেন মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র বাংলাদেশ। প্রত্যেকে নিজ নিজ ধর্ম পালন করবে স্বাধীনভাবে। তাতে কেউ বাধা প্রদান করতে পারবে না।

বাংলাদেশ সারা বিশ্বের কাছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এই বাংলাদেশে ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা, ঈদে মিলাদুন্নবী, জন্মাষ্টমী, শারদীয় দুর্গোৎসব, বুদ্ধপূর্ণিমা, বড়দিন ইত্যাদি ধর্মীয় অনুষ্ঠান কোনো বিশেষ ধর্মের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ থাকে না। জাতি-ধর্ম-বর্ণ-গোষ্ঠী নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণ ও উপস্থিতিতে সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে এসব উদযাপিত হয়।

জাতীয় চেতনায় ও শান্তির প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’ স্লোগান সামনে রেখে সব ধর্ম-বর্ণ-গোষ্ঠীর মানুষ সাড়ম্বরে পালন করে প্রতিটি ধর্মীয় উৎসব। এ বছর ৩২ হাজার পূজামণ্ডপে অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পূজা উদযাপিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন আমাদের দেশের সব ধর্মের মানুষ একসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছেন, তাই সকলে সমান অধিকার নিয়ে এদেশে বাস করবেন।

ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের জমি, বসতভিটা, উপাসনালয়, বনাঞ্চল, জলাভূমি ও অন্যান্য সম্পদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জমি ও বন এলাকায় অধিকার সংরক্ষণের জন্য ভূমি কমিশনের কার্যক্রম অব্যাহত আছে এবং তা থাকবে। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জনগণকে সমাজের ও উন্নয়নের মূলস্রোতে আনার জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিসহ বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন হচ্ছে। অনগ্রসর ও অনুন্নত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও চা-বাগান শ্রমিকদের সন্তানদের শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে বিশেষ কোটা এবং সুযোগ-সুবিধা অব্যাহত আছে।

ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষের জন্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্য পরিষেবাগুলো প্রত্যন্ত অঞ্চলে সম্প্রসারণ করা হয়েছে। রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎসহ অন্যান্য অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়েছে। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়গুলোর বৈচিত্র্যময় রীতিনীতি ও ঐতিহ্যগুলোকে সংরক্ষণ এবং প্রদর্শন করার জন্য সরকারের তরফ থেকে উৎসাহিত করা হচ্ছে।

বৃহত্তর রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব ও সামাজিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় জাতিগত সংখ্যালঘুদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর জন্য ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তির বিভিন্ন ধারা অনুযায়ী বিভিন্ন বিষয় আঞ্চলিক পরিষদ এবং জেলা পরিষদের কাছে ন্যস্ত করা হয়েছে। ফলে স্থানীয়, ভৌগোলিক, আর্থ-সামাজিক পরিবেশ বিবেচনায় নিয়ে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

তিন পার্বত্য জেলায় পর্যটনশিল্প, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণসহ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, ঐতিহ্যবাহী কুটির শিল্পের বিকাশে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। উচ্চ মূল্যের মসলা চাষ, কফি-কাজু বাদাম চাষ, তুলা চাষ, সৌরবিদ্যুৎ ইত্যাদি জনমুখী পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। মন্দির, শ্মশান, প্যাগোডা, গির্জা, সিমেট্রির উন্নয়নে অনুদান প্রদান ও উন্নয়ন কার্যক্রম অব্যাহত আছে। হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রীষ্টান ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টসমূহের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের সার্বিক কল্যাণ সাধনে নিয়মিত কার্যক্রম অব্যাহত আছে।

সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৩(ক) তে বলা আছে, রাষ্ট্র বিভিন্ন উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের অনন্য বৈশিষ্ট্যপূর্ণ আঞ্চলিক সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও বিকাশের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। সংবিধানের এই ধারা সুরক্ষায় উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে জাতীয় সংসদে অর্পিত সম্পত্তি আইন সংশোধন করা হয়েছে এবং অর্পিত সম্পত্তি সংশ্লিষ্ট সমস্যা নিষ্পত্তির ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আইন প্রয়োগে বাধা দূর করা হবে।

সংখ্যালঘুদের স্বার্থ সুরক্ষার জন্য জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন এবং সংখ্যালঘু বিশেষ সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা হবে। আওয়ামী লীগ ধর্মীয় সংখ্যালঘু, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও অনগ্রসর সম্প্রদায়ের জীবন ও জীবিকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আবশ্যক পদক্ষেপ নেয়া অব্যাহত রাখবে।

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের ‘এথনিক ক্লিনজিং’ অপনীতির কবলে পড়ে দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী হিংস্র আক্রমণ ও বৈষম্যের শিকার হয়। ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর অসংখ্য নর-নারী নিহত হয়েছে; অসংখ্য নারী হয়েছে ধর্ষণের শিকার; তাদের ঘরবাড়ি, জমি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল ও লুণ্ঠিত হয়েছে। আওয়ামী লীগ এ অমানবিক ঘটনাগুলোর বিচারকার্য সম্পন্ন করবে এবং তার পুনরাবৃত্তি হতে দেবে না।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ধর্মীয় সংখ্যালঘু, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা ও চা-বাগানে কর্মরত শ্রমজীবী জনগোষ্ঠীর ওপর সন্ত্রাস, বৈষম্যমূলক আচরণ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের চির অবসান, তাদের জীবন, সম্পদ, সম্ভ্রম, মান-মর্যাদার সুরক্ষা এবং রাষ্ট্র ও সমাজ জীবনের সর্বক্ষেত্রে সমান অধিকার নিশ্চিত করার নীতি অব্যাহত রাখবে। বস্তি, চর, হাওর, বাওড়, উপকূলসহ দেশের সব অনগ্রসর অঞ্চলের সুষম উন্নয়ন এবং ওইসব অঞ্চলের জনগণের জীবনের মানোন্নয়ন অগ্রাধিকার পাবে।

বাংলাদেশের সুবিধাবঞ্চিত মোট জনসংখ্যার একটি অংশ দলিত, হরিজন ও বেদে সম্প্রদায়। সমাজে চরমভাবে অবহেলিত, বিচ্ছিন্ন, উপেক্ষিত এ জনগোষ্ঠী। তাদের জীবনমান উন্নয়ন এবং তাদের মূল স্রোতে নিয়ে আসার কর্মসূচি বাস্তবায়নে আওয়ামী লীগ অঙ্গীকারবদ্ধ।

দলিত, হরিজন সম্প্রদায়ের জন্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোররেশনে ফ্ল্যাট নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে। মুন্ডা, ট্রান্সজেন্ডার, কুষ্ট রোগীদের অর্থ সহায়তা দেয়া হচ্ছে। ২ কাঠা জমিতে তাদেরকে ঘর করে দেয়া হয়েছে।

২০১২-২০১৩ অর্থবছরে পাইলট কর্মসূচির মাধ্যমে ৭টি জেলায় বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু হয়। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এই কর্মসূচি সম্প্রসারণ করে মোট ৬৪ জেলায় এই কার্যক্রম চালু রাখা হয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে বেদে জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচি ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচি স্বতন্ত্র দুটি কর্মসূচিতে বিভক্ত করা হয়। দুটো কর্মসূচিই সম্প্রসারিত করা হয়েছে।

অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কার্যক্রমে উপকারভোগীর সংখ্যা ৮২ হাজার ৫০৩ জনে উন্নীত হয়েছে। বিশেষ ভাতাভোগীর সংখ্যা ৫৪ হাজার ৩০০ জনে উন্নীত হয়েছে। শিক্ষার্থীদের জন্য উপবৃত্তি দেয়া হয়েছে। বেদে ও সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি অব্যাহত রাখা হবে। বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বেদে ও সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর দক্ষতা বৃদ্ধি করা হবে, যাতে তারা আয়বর্ধনমূলক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হয়ে সমাজের মূল স্রোতোধারায় আসতে পারে। সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য নগদ অর্থ সাহায্য ও বাসস্থান প্রদান কর্মসূচি সারা দেশে সম্প্রসারিত করা হবে।

ট্রান্সজেন্ডার সম্প্রদায় বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার একটি ক্ষুদ্র অংশ। আবহমানকাল থেকেই এ জনগোষ্ঠী সমাজ ও রাষ্ট্রজীবন থেকে বিচ্ছিন্ন ও উপেক্ষিত, মানবেতর জীবনযাপন করছে। আওয়ামী লীগ সরকার এই সম্প্রদায়ের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ ও সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে তাদেরকে সমাজের মূল স্রোতধারায় সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে নানা কল্যাণমুখী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমের আওতায় ২০১২-১৩ অর্থবছরে ট্রান্সজেন্ডার জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন শুরু হয়। ট্রান্সজেন্ডার জনগোষ্ঠীর ভাতাভোগীর সংখ্যা ২০০৬ সালে ১ হাজার ১২ জন ছিল, যা ২০২২-২৩ সালে ৬ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ৬ হাজার ৮৮৪ জন হয়েছে। বিশেষ ভাতা পান ৫ হাজার ৬২০ জন। ২০১৪ সালে ট্রান্সজেন্ডার জনগোষ্ঠীকে ‘তৃতীয় লিঙ্গ’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। ২০১৯ সালে এই সম্প্রদায়ের লোকজন স্বতন্ত্র লৈঙ্গিক পরিচয়ে ভোটাধিকার লাভ করে।

আওয়ামী লীগ নির্বাচনি ইশতেহারে সমান অধিকার ও মর্যাদার বিষয়গুলোকে তুলে ধরেছে। সবার বিশ্বাস নতুন সরকার গঠনের পর সংখ্যালঘুদের স্বার্থরক্ষায় যেসব অঙ্গীকার করা হয়েছে সেগুলো বাস্তবায়ন করা হলে তা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সামগ্রিক স্বার্থ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

নিম্নবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি গুরুতর সমস্যা। তাদের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে নানা সময়োপযোগী পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়েও আভাস দেয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের ইশতেহারে।

মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত ও স্বল্প আয়ের মানুষদের সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করার বিষয়ে অনেক কথা বলা হয়েছে। নিত্যপণ্যের দাম ক্রমেই বাড়ছে। অভ্যন্তরীণ বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে শুধু দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণই যথেষ্ট নয়।

আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহারে নিম্ন আয়ের প্রান্তিক, সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কথাই বার বার ঘুরেফিরে এসেছে। সুবিধাবঞ্চিত মানুষের অধিকার, সুযোগ-সুবিধার কথা উঠে এসেছে। প্রবীণ, সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষ এমনকি সংখ্যালঘু জাতিসত্তার ক্ষমতায়নের প্রসঙ্গও এসেছে। বিশেষত সংখ্যালঘু জাতিসত্তার মানুষের জন্য আলাদা কমিশন গঠন করার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। দেশের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়নে এই প্রতিশ্রুতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

লেখক: প্রাবন্ধিক ও গবেষক

মন্তব্য

বিশ্লেষণ
How many lives were sacrificed?
বঙ্গবন্ধুর ‘বড়ভাই’ শহীদ ডা. জিকরুল হক স্মরণে

কত প্রাণ হলো বলিদান

কত প্রাণ হলো বলিদান সত্তরের নির্বাচনের আগে সৈয়দপুরে এক জনসভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পাশে শহীদ ডা. জিকরুল হক। তার পেছনে দাঁড়ানো তাজউদ্দীন আহমদ। ছবি: সংগৃহীত
অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষা ও এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয় বাঙালি জাতির মহান স্বাধীনতা। জাতি আজ গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছে মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী সেই সব বীর শহীদের। স্বাধীনতার ওই লাল সূর্য ছিনিয়ে আনার পেছনে রয়েছে সন্তান হারানো লাখো মায়ের আর্তনাদ, পিতা হারানো সন্তানের চিৎকার, সম্ভ্রম হারানো নারীর আহাজারি, অগণিত মানুষের স্বজন হারানোর বেদনা। যাদের ঋণ স্বাধীন বাংলাদেশ কোনো দিন শোধ করতে পারবে না।

‘পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে জলন্ত/ঘোষণার ধ্বনি-প্রতিধ্বনি তুলে/ নতুন নিশান উড়িয়ে, দামামা বাজিয়ে দিগ্বিদিক/ এই বাংলায়/ তোমাকেই আসতে হবে, হে স্বাধীনতা’।

বাংলাদেশের যুদ্ধকালীন সময়ে লেখা কবি শামসুর রাহমানের কবিতাটি একাত্তর সালের এই দিনে সত্যি হয়ে দেখা দিয়েছিল বাঙালি জাতির জীবনে। আজ থেকে ৫২ বছর আগে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে ১৯৭১ এর ১৬ ডিসেম্বরে এসেছিল কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা। যে রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একাত্তরের ৭ মার্চ ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ বলে পরোক্ষভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন, সেই রেসকোর্স ময়দানেই পরাজয় মেনে মাথা নত করে ৯৩ হাজার পাকিস্তানি সৈন্য আত্মসমর্পণ করেছিল। পৃথিবীর মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটল স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের।

অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষা ও এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয় বাঙালি জাতির মহান স্বাধীনতা। জাতি আজ গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছে মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী সেই সব বীর শহীদের। স্বাধীনতার ওই লাল সূর্য ছিনিয়ে আনার পেছনে রয়েছে সন্তান হারানো লাখো মায়ের আর্তনাদ, পিতা হারানো সন্তানের চিৎকার, সম্ভ্রম হারানো নারীর আহাজারি, অগণিত মানুষের স্বজন হারানোর বেদনা। যাদের ঋণ স্বাধীন বাংলাদেশ কোনো দিন শোধ করতে পারবে না।

বিজয়ের ৫২ বছর পেরিয়ে এসেছে জাতি। কিন্তু স্বাধীনতার দীর্ঘ সময় পেরিয়েও আজও অনেকের ত্যাগ ও বীরত্বগাথা অজানাই রয়ে গেছে। মুক্তিযুদ্ধে এমনই একজন ত্যাগী বীর ছিলেন শহীদ ডা. জিকরুল হক।

জিকরুল হক ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে এমপিএ (মেম্বার অব প্রভিনশিয়াল অ্যাসেম্বলি) নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার নির্বাচনী এলাকা ছিল অবাঙালি-অধ্যুষিত। তা সত্ত্বেও তিনি বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছিলেন। মূলত জনসেবা, শিক্ষা বিস্তার ইত্যাদি কাজে জড়িত থাকার কারণে। তিনি একজন চিকিৎসক, শিক্ষানুরাগী, সমাজসেবী ও রাজনীতিবিদ হিসেবে নীলফামারী জেলার সৈয়দপুরে খ্যাতিমান ছিলেন।

জিকরুল হকের ছেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সৈয়দপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো. মোনায়মুল হক দৈনিক বাংলাকে জানান, “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাবাকে ‘বড়ভাই’ বলে সম্বোধন করতেন। একাত্তরের ২৩ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে বিকেল ৩/৪টার দিকে ফোনে কথা হয় তার বাবার। বঙ্গবন্ধু সৈয়দপুর শহরের রাজনৈতিক পরিস্থিতি তার কাছ থেকে জানার পর আত্মগোপনে যেতে বলেছিলেন। বাবা তা করেননি।”

২৫ মার্চ রাতেই সৈয়দপুর সেনানিবাসে অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনাদের একটি দল জিকরুল হককে তার নতুন বাবুপাড়ার বাড়ি থেকে ধরে সেনানিবাসে নিয়ে যায়। এরপর ১২ এপ্রিল রংপুর ক্যান্টনমেন্টের নিসবেতগঞ্জে এক বধ্যভূমিতে জিকরুল হকসহ মোট ১৫০ বাঙালিকে হত্যা করা হয়। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক সহচরও ছিলেন।

মোনায়মুল হক আরও জানান, মুক্তিযুদ্ধের সময় জিকরুল হকের আপন দুই ভাই জহুরুল হক ও আমিনুল হক এবং ভাইপো কুদরত-ই-এলাহীসহ আট আত্মীয় শহীদ হন। তার দুই ভাইয়ের একজনকে জুন মাসের মাঝামাঝি এবং আরেকজনকে ১৪ ডিসেম্বর অবাঙালিরা হত্যা করে। ১৯৯৬ সালে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে ডাক বিভাগে তার নামে স্মারক ডাক টিকিট প্রকাশ করা হয়। ২০০১ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করেন।

পাকিস্তানি শাসনামলে এক অবাঙালি ম্যাজিস্ট্রেটের সহায়তায় স্থানীয় অবাঙালিরা সৈয়দপুর উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে খেলার মাঠে উর্দু স্কুল নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। অবাঙালি অধ্যুষিত একই এলাকায় পাশাপাশি দুটি স্কুল নির্মাণ হলে সহিংসতার শঙ্কা ছিল। জিকরুল হক স্থানীয় নেতা ও বাঙালিদের সহযোগিতায় উর্দু স্কুল নির্মাণ বন্ধ করে দিয়েছিলেন।

জিকরুল হকের জন্ম ১৯১৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর, সৈয়দপুরে। তার আদি পৈতৃক নিবাস দিনাজপুর জেলার চিরিরবন্দর উপজেলার পলাশবাড়ীতে। বাবা শেখ জিয়ারতউল্লাহ আহমদ, মা খমিউননেছা চৌধুরানী। চার ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। জিকরুল হক নয় ছেলে ও দুই মেয়ের জনক।

১৯৩৩ সালে সৈয়দপুর বাংলা উচ্চবিদ্যালয় থেকে দ্বিতীয় বিভাগে ম্যাট্রিক পাস করেন। ১৯৩৯ সালে কলকাতার ক্যাম্বেল মেডিকেল স্কুল থেকে এলএমএফ পাস করেন। মেডিকেল স্কুলে পড়ার সময় সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন।

কলকাতা ক্যাম্বেল মেডিকেল স্কুলে অধ্যয়নকালে তিনি এ কে ফজলুল হক এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সাহচর্যে আসেন এবং ভারত ভাগের পর তাদের অনুপ্রেরণায় রাজনীতিতে অংশ নেন। তিনি ১৯৩০ থেকে ১৯৪০ সাল পর্যন্ত মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এরপর তিনি মুসলিম লীগে যোগ দেন। জিকরুল হক থানা মুসলিম লীগের সেক্রেটারি ও পরে সভাপতি এবং পরবর্তীতে জেলা আওয়ামী লীগের আমরণ সভাপতি ছিলেন। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছিলেন।

মন্তব্য

বিশ্লেষণ
Awami League is not responsible for dialogue

সংলাপের দায় আওয়ামী লীগের নয়

সংলাপের দায় আওয়ামী লীগের নয় খায়ের মাহমুদ। ছবি: সংগৃহীত
বিগত দুটো নির্বাচনের মতো এই নির্বাচনের আগেও যে সহিংস পরিস্থিতি বিএনপি-জামায়াত তৈরি করেছে তাতে তাদের সঙ্গে সংলাপের দায় কোনোভাবেই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নয়। বরং তাদের উচিত সহিংসতা পরিহার করে সরকারের সঙ্গে সংলাপের জন্য সরাসরি প্রস্তাব দেয়া, কোনো বিদেশি প্রভুর মাধ্যমে নয়।

যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার ঠিক আগে আগে দুটি দলকে চিঠি দিয়ে যে শর্তহীন সংলাপের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তা কোনো ভাবেই কাকতালীয় বা সাধারণ কোনো ঘটনা নয়, বরং গভীর কোনো ষড়যন্ত্রের আভাস বলেই মনে হচ্ছে ।

নির্বাচন কমিশন ওয়েবসাইট অনুযায়ী দেশে মোট নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৪১, তার মধ্যে ফরমায়েশি চিঠি পেলো মাত্র দুটো দল, আওয়ামী লীগ এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি প্রাপ্তির কথা জানায়নি। আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং জাতীয় পার্টির মধ্যে যে নিঃস্বার্থ সংলাপ মোড়লরা চাচ্ছেন, তাহলে বাকি ৩৮টি নিবন্ধিত দল কী দোষ করল?

তারা দেশে প্রচলিত আইন মেনে নিবন্ধিত হয়েছে, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যেকোনো দল নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করতে পারে, তাহলে কি যুক্তরাষ্ট্র ধরে নিচ্ছে এই ৩ দলের বাইরে দেশে আর কোনো দল নেই বা তাদের হিসেবে তারা দল নয়? শর্তহীন সংলাপ চাইলেন ভালো কথা একটিবার চিঠিতে সহিংসতা বন্ধের কথা বললেন না কোনো? নাকি সহিংসতা, আগুন সন্ত্রাস, রাষ্ট্রীয় সম্পদের ধ্বংস আপনাদের আইনের শাসনের বাইরে?

ফায়ার সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৮ অক্টোবর থেকে গত ১৭ দিনে বিএনপির হরতাল-অবরোধে সারা দেশে অগ্নিসংযোগের ১৫৪টি ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ১৩৫টি ঘটনায় পোড়ানো হয়েছে যানবাহন। আগুনে ৯৪টি বাস, ৩টি মাইক্রোবাস, ২টি প্রাইভেটকার, ৮টি মোটরসাইকেল, ১৩টি ট্রাক, ৮টি কাভার্ড ভ্যান, ১টি অ্যাম্বুলেন্স, ২টি পিকআপ, ২টি সিএনজি, ১টি নছিমন, ১টি লেগুনা, ফায়ার সার্ভিসের ১টি পানিবাহী গাড়ি, ১টি পুলিশের গাড়ি, বিএনপির ৫টি অফিস, আওয়ামী লীগের ১টি অফিস, ১টি পুলিশ বক্স, ১টি কাউন্সিলর অফিস, ২টি বিদ্যুৎ অফিস, ১টি বাস কাউন্টার এবং ২টি শোরুম পুড়ে যায়।

গত ১৭ দিনে গড়ে প্রতিদিন ৫টি করে বাস পোড়ানো হয়েছে। বিএনপি কার্যত মাঠে নেই, আন্দোলনের নামে তারা চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়ে, গাড়িতে আগুন লাগিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে। এই চোরাগোপ্তা হামলা এবং আগুন সন্ত্রাসের মধ্যে কী করে সংলাপ হতে পারে? আপনি যদি রাজনৈতিক সচেতন হন, একটু খেয়াল করলেই দেখবেন গত এক কয়েক মাসে বিএনপির আল্টিমেটাম আর দফার শেষ নেই। একবার ২৭ দফা, একবার ৩১ দফা, সর্বশেষ ১ দফাসহ নানা কথা বলছে দলটি।

একবার বলছে সংসদ ভেঙ্গে দিতে হবে। একবার বলছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা। একবার বলছে শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন হবে না। এখন পিটার হাসের সংলাপের ওপর ভর করেছে তারা। বিএনপি আসলে কী চায়? বিএনপির সর্বশেষ ঘোষিত কমিটিতে চেয়ারপার্সনের ৭৩ জন উপদেষ্টা আছেন, আমার কৌতূহল হয় তারা আসলে কি উপদেশটা দেন ! যে দলটি একসময় রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিল তাদের দুর্নীতিগ্রস্ত অপরিপক্ব নেতৃত্ব দেখে একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আমার সত্যি কষ্ট হয়।

বিএনপির সঙ্গে সংলাপের ইতিহাস সুখের নয়, তাদের সঙ্গে যখনই সংলাপের কথা এসেছে, তখনই হয় সংলাপ বর্জন করেছে অথবা শর্ত জুড়ে দিয়ে তা বানচাল করে দিয়েছে। এরা ২০১৪-তে সংলাপে অংশ নেয়নি অন্যদিকে ২০০৭ ও ২০১৮ তে সংলাপে বসলেও শর্ত জুড়ে দিয়ে মিথ্যাচার করে সংলাপগুলোকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কিন্তু ১৫ অক্টোবরেই শর্তহীন সংলাপের কথা বলেছিলেন। কিন্তু বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল তা নাকচ করে দিয়ে বলেছিলেন, শর্তহীন সংলাপে রাজি নয় বিএনপি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও বলেছেন, সংবিধানের কাঠামোর মধ্যে ‘শর্তহীন সংলাপ’ হতে পারে। তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব সময় আলাপ-আলোচনা করার জন্য নির্দেশ দেন, বিএনপি তার প্রতিক্রিয়া জানায়নি। ইলেকশন কমিশন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করার পর ধারাবাহিক ভাবে সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার জন্যে বসেছে, বিএনপি নির্বাচন কমিশনের ডাকে একবারও সভায় যোগদান করেনি।

তারা সেখান গেলে নির্বাচন কমিশনকে পরামর্শ দিলে, কমিশন যদি না শুনতো বা না বাস্তবায়ন করতো তারা তখন সেটা নিয়ে প্রতিবাদ বা আন্দোলন করতে পারতো কিন্তু কোনো গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ না করে শুধু দোষারোপের রাজনীতি করলে তো আপনি জনগণের সমর্থন পাবেন না । মানুষকে বোকা বানানো এখন আর সহজ না, গ্রামের চায়ের দোকানে বসে তারা মেগাবাইট গিগাবাইটের হিসেবে করে, নির্বাচনে কারচুপির জন্যে ক্যাপিটল হিলের ভাঙচুরের বিষয়ে তারা তর্ক করে।

সুতরাং আপনার আন্দোলনের বিষয়বস্তুর খবর ডিজিটাল বাংলাদেশের কল্যাণে তারা একমুহূর্তেই পাচ্ছে , আপনি জনগণের মনে স্থান করে নিতে পারছেন না, কারণ জনগণের আস্থা অর্জন করার মতো কিছু আপনি করেনি, এখনও করতে পারছেন না। আপনাদের ২০১০ সালের ডিসেম্বর মাসের আরব বসন্তের কথা মনে আছে নিশ্চই, তখন বিবিসিতে একটা প্রোগ্রাম দেখাতো ‘হাউ ফেসবুক চেঞ্জ দা ওয়ার্ল্ড’ অর্থাৎ ফেসবুক তথা সোশ্যাল মিডিয়া কীভাবে পৃথিবীকে পরিবর্তন করে দিচ্ছে, আরব বসন্তের সময়ই প্রথম ফেসবুকে গ্রুপ খুলে মানুষকে একত্রিত করার মতো বিষয় ঘটেছিল।

আর তার একযুগ পর এখন পৃথিবীতে সোশ্যাল মিডিয়াতে যোগাযোগের অসংখ্য মাধ্যম বর্তমান আর তাতে বিএনপি জামাতের কর্মীরা খুব সক্রিয়, মানুষ যদি তাদের বিশ্বাস করতো বা আন্দোলনে সমর্থন দিতো তাহলে কোনো বাধাই আর বাধা হতো না তাদের জন্যে। মানুষ আরব বসন্তের মতো রাস্তায় নেমে আসতো। আসলে মিথ্যা বা ষড়যন্ত্রের উপরে হওয়া আন্দোলন খুব বেশিদূর যেতে পারে না। নেতৃত্বহীন-ভেঙে পড়া বিএনপির এখন একমাত্র ভরসা বিদেশি প্রভুরা, জনগণ নয়। ডোনাল্ড লু আপনি সংলাপ চাইলেন একবার বিএনপির দণ্ডিত নেতৃত্বের পরিবর্তন চাইলেন না কেন? সংলাপ কার সঙ্গে করা সম্ভব?

যে দলের চেয়ারপার্সন দুর্নীতির মামলায় ১৭ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত অপরাধী, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ৭৮ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত অপরাধী সে দলের সঙ্গে? ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ও হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন এবং দুর্নীতি ও অপরাধের অন্য চারটি মামলায় ২৮ বছরের কারাদণ্ড সহ মোট ৫৮ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। ২১ আগস্টে ২৭ জন মানুষ হত্যা তো আছেই, তা ছাড়া বার বার জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করেছে বিএনপি। এমন একটি দলের সঙ্গে কী করে সংলাপ হতে পারে?

নির্বাচনের ট্রেন এখন প্লাটফর্মে, বিএনপি দল হিসেবে উঠতে না পারলে, তরুণ-প্রবীণ নেতৃত্বের অনেকেই সেই ট্রেনে উঠার জন্যে প্রস্তুত। বিএনপিকে কোনো গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আসতে হলে অবশ্যই দণ্ডিত অপরাধীদের দল থেকে বের করে তারপর অন্য আরেকটি গণতান্ত্রিক দলের সঙ্গে সংলাপের কথা বলতে হবে।

বিগত দুটো নির্বাচনের মতো এই নির্বাচনের আগেও যে সহিংস পরিস্থিতি বিএনপি-জামায়াত তৈরি করেছে তাতে তাদের সঙ্গে সংলাপের দায় কোনোভাবেই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নয়। বরং তাদের উচিত সহিংসতা পরিহার করে সরকারের সঙ্গে সংলাপের জন্য সরাসরি প্রস্তাব দেয়া, কোনো বিদেশি প্রভুর মাধ্যমে নয়।

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, আইন বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

আরও পড়ুন:
মেয়র, চেয়ারম্যান, মেম্বার পদে থেকে সংসদ নির্বাচন করা যাবে না
সরকারি বদলি নিয়োগে লাগবে ইসির অনুমতি
নারায়ণগঞ্জে বাম গণতান্ত্রিক জোটের মিছিলে পুলিশের লাঠিচার্জ
নির্বাচনে আন্তর্জাতিক মহলের ‘হস্তক্ষেপে’ উদ্বেগ জাবির ৫ শতাধিক শিক্ষকের
জাতির উদ্দেশে ভাষণে যা বললেন সিইসি

মন্তব্য

বিশ্লেষণ
Sheikh Hasina is a leader and a warrior

শেখ হাসিনা- একজন নেতা, একজন যোদ্ধা

শেখ হাসিনা- একজন নেতা, একজন যোদ্ধা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে শুধু একটি বিরল মাত্রাই দেননি, দেশে বৈশ্বিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকেও জোরদার করেছেন তিনি। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ প্রায়ই তাকে শুধু জাতীয় দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে এবং সেই দৃষ্টিকোণ থেকে মূল্যায়ন করতে অভ্যস্ত, যা নিঃসন্দেহে প্রয়োজনীয়, কিন্তু যথেষ্ট নয়। বৈশ্বিক নেতৃত্ব তার অভ্যন্তরীণ নেতৃত্বের মতোই অতুলনীয় এবং তার অতুলনীয় নেতৃত্বের সম্পূর্ণ বিস্তৃতি তার প্রশংসা ছাড়া বোঝা যায় না।

বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশের জনগণের সার্বিক কল্যাণ, উন্নয়ন ও মুক্তির অগ্রদূত হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন। তিনি প্রমাণ করেছেন যে, বাংলাদেশে গণতন্ত্রের উন্নয়নে তার কোনো বিকল্প নেই। শেখ হাসিনার সততা, নিষ্ঠা, যৌক্তিক মানসিকতা, দৃঢ় মনোবল, প্রজ্ঞা ও অসাধারণ নেতৃত্ব বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে এক ভিন্ন উচ্চতায় প্রতিষ্ঠিত করেছে এবং তিনি এখন বিশ্বখ্যাত নেতা হিসেবে পরিচিত।

আওয়ামী লীগ সব ধরনের শোষণ, বঞ্চনা, অবিচার ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে রাজনৈতিকভাবে সোচ্চার, প্রতিরক্ষামূলক ভূমিকা পালন করেছে এবং অব্যাহত রেখেছে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই এটি জনগণের অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তির জন্য কাজ করে আসছে। এই দল যখন ক্ষমতায় থাকে, তখন মানুষের ভাগ্যের উন্নতি হয়। এই দলের প্রতিষ্ঠার পর থেকে ৭৪ বছরের ইতিহাস এই সত্যের সাক্ষ্য দেয়।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সাহসী কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় রয়েছে এবং তিনি জনগণের কল্যাণে নিবেদিতভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। শেখ হাসিনার অদম্য শক্তি, সাহস, মনোবল ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বিশ্ব বিস্মিত। বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের ২৯তম এবং ২০৪০ সালের মধ্যে ২০তম বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। এদিকে বাংলাদেশকে ২০২৬ সাল থেকে ‘মধ্যম আয়ের দেশ’ হিসেবে এবং ২০৪১ সালে ‘উন্নত দেশ’ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে।

বাংলাদেশ যে এগিয়ে যাচ্ছে তার বড় প্রমাণ হলো গত কয়েক বছরে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে। বর্তমানে মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৭৬৫ ডলার। অর্থনৈতিক অগ্রগতির দিক থেকে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ স্থানীয় দেশ।

শেখ হাসিনা ৪টি মাইলফলক দিয়েছেন। প্রথমটি হচ্ছে ডিজিটাল বাংলাদেশ, যা ইতোমধ্যে একটা ধাপ পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়েছে। দ্বিতীয়টি হচ্ছে ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি), তৃতীয়টি ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তোলা এবং চতুর্থটি হচ্ছে ২১০০ সালের মধ্যে ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়ন করা।

গত ১৫ বছরে দেশ পেয়েছে পদ্মা সেতু ও রেল সেতু। ঢাকা মেট্রোরেল, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আধুনিক তৃতীয় টার্মিনাল, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, কর্ণফুলী টানেল এবং এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ের প্রতিশ্রুতি তিনি অসম্পূর্ণ রাখেননি।

এরমধ্যে রাস্তাঘাটের ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। কোভিড-১৯ মহামারির কারণে সমগ্র বিশ্বের অর্থনীতি মন্থর হয়ে পড়লেও তিনি এর প্রভাব বাংলাদেশে পড়তে দেননি। নতুন সেতু ও সড়কের মাধ্যমে অবকাঠামোর ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। বাংলাদেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। কোভিড-১৯ মহামারিতে দলের অগণিত নেতা-কর্মী সবার পাশে দাঁড়িয়েছেন। নৌকা দ্রুত গতিতে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ অন্ধকার থেকে এখন আলোর পথে।

শেখ হাসিনা এমন একজন নেতা যিনি বিশ্বের কাছে আলোর আলোকবর্তিকা। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে শুধু একটি বিরল মাত্রাই দেননি, দেশে বৈশ্বিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকেও জোরদার করেছেন। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ প্রায়ই তাকে শুধু জাতীয় দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে এবং সেই দৃষ্টিকোণ থেকে মূল্যায়ন করতে অভ্যস্ত, যা নিঃসন্দেহে প্রয়োজনীয়, কিন্তু যথেষ্ট নয়। বৈশ্বিক নেতৃত্ব তার অভ্যন্তরীণ নেতৃত্বের মতোই অতুলনীয় এবং তার অতুলনীয় নেতৃত্বের সম্পূর্ণ বিস্তৃতি তার প্রশংসা ছাড়া বোঝা যায় না।

অনেকের হয়তো মনে নেই যে, ২০২০ সালে শেখ হাসিনাসহ ১৮৯ জন রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান মিলেনিয়াম ঘোষণাপত্রে বাংলাদেশের পক্ষে স্বাক্ষর করেন। তিনি কেবল সেই ঐতিহাসিক দলিলের স্বাক্ষরকারী হিসাবে ইতিহাসে নিজের জন্য একটি স্থান তৈরি করেননি। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশকে একটি বৈশ্বিক অঙ্গীকারের অংশীদার করে তুলেছেন। সেই অঙ্গীকারের ওপর ভিত্তি করে তিনি বাংলাদেশের দৃষ্টিকোণ থেকে ৮টি সহস্রাব্দ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের অঙ্গীকার গ্রহণ করেন। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ দারিদ্র্যের হার ১৯৯০ সালের ৫৮ শতাংশ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে ২০ শতাংশে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ৫৮ বছর থেকে বেড়ে ৭৩ বছর হয়েছে। প্রাপ্তবয়স্কদের সাক্ষরতার হার ৩৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। শিশু মৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ১০০ থেকে কমে প্রতি হাজারে ২১ হয়েছে।

১৯৯০ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের ৩৫ বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি ৩৩০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। মানুষের মাথাপিছু আয় প্রায় ৭ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর দক্ষ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশের বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন অর্জন প্রতিবেশী দেশগুলোকে ছাড়িয়ে গেছে। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশে গড় আয়ু ৭৩ বছর, ভারতে ৬৯ বছর এবং পাকিস্তানে ৬৭ বছর। বাংলাদেশে পাঁচ বছরের কম বয়সী দের মৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ৩১ জন, ভারতে ৩৮ জন, পাকিস্তানে ৬৭ জন।

২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের অঙ্গীকার ব্যক্ত করে এবং এই লক্ষ্যগুলি তার অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। বাংলাদেশের উন্নয়ন কর্মকান্ড এই লক্ষ্য অর্জনের দিকে পরিচালিত হয়। পাশাপাশি পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন, নারী অধিকার, শিশু সুরক্ষা, মানবাধিকার প্রভৃতি বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব ও অঙ্গীকার আন্তর্জাতিক অঙ্গনে স্বীকৃত ও অভিনন্দন। আমরা সবসময় তাকে উন্নয়নশীল বিশ্বের স্বার্থে কথা বলতে দেখেছি। বাংলাদেশের উন্নয়ন কর্মকান্ড এই লক্ষ্য অর্জনের দিকে পরিচালিত হয়। পাশাপাশি পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন, নারী অধিকার, শিশু সুরক্ষা, মানবাধিকার প্রভৃতি বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব ও অঙ্গীকার আন্তর্জাতিক অঙ্গনে স্বীকৃত ও অভিনন্দন। আমরা সবসময় তাকে উন্নয়নশীল বিশ্বের স্বার্থে কথা বলতে দেখেছি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে বাংলাদেশ নিম্ন আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে এবং স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বেরিয়ে আসার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। আজ আমরা ২০৪১ সালের দিকে তাকিয়ে আছি, যখন আমরা বিশ্ব দরবারে উন্নত বিশ্বের অংশ হতে চাই। ভবিষ্যতের দুনিয়া দ্রুত বদলে যাচ্ছে। আজ আমরা যে বিশ্বে বাস করছি, সেখানে বৈষম্য, অস্থিতিশীলতা এবং অপর্যাপ্ততা বাড়ছে। সুযোগ যেমন আছে, তেমনি দুর্বলতাও তৈরি হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে আমাদের এমন একজন নেতা দরকার, যিনি শুধু তার দেশের জন্য নয়, সমগ্র বিশ্বের জন্য অপরিহার্য। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমন একজন নেতা- বিশ্বের আলো।

শেখ হাসিনার সরকার শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বই দিচ্ছেন। দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীরা বৃত্তি পাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তরিকভাবে চান শিক্ষার্থীরা শুধু মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করুক, বাকিটা সরকারের দায়িত্ব। সুতরাং, শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার সময় অর্থ নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। প্রধানমন্ত্রী চান বাংলাদেশের শিশুরা শিক্ষা, জ্ঞান ও বিজ্ঞানের দিক দিয়ে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে সক্ষম হোক। উপযুক্ত শিক্ষা অবকাঠামো গড়ে তোলার মাধ্যমে তিনি সবাইকে সত্যিকারের শিক্ষিত শিশু হিসেবে গড়ে তোলার সুযোগ করে দিচ্ছেন। শেখ হাসিনার মূলমন্ত্র হলো, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। তিনি অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করে তিনি সংখ্যালঘুদের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন। প্রতিবেশীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব বজায় রেখে উন্নয়নের বিভিন্ন সূচকে ভারতকে টপকে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

শেখ হাসিনা দেশবাসীর সেই স্বপ্ন সঠিক পথে বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর। আওয়ামী লীগের নৌকাকে দৃঢ় করে দেশের মানুষ আজ সুখ-সমৃদ্ধির নতুন দিগন্তে প্রবেশ করেছে। আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। তাই বাংলাদেশে বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা, কর্মজীবী নারীদের বুকের দুধ সরবরাহকারী ভাতা ইত্যাদি চালু করা হয়েছে।

সবার কল্যাণই শেখ হাসিনা সরকারের ঘোষিত নীতি। ১৪ হাজার ৫০০ কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা হয়েছে। সেখান থেকে ৩০ ধরনের ওষুধ বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে। নৌকার কারণে স্বাস্থ্য অবকাঠামোর ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। চলতি বছরের মে মাসে জাতিসংঘে প্রথমবারের মতো কমিউনিটি ভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা সংক্রান্ত একটি রেজুলেশন সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। ওই রেজুলেশনের মাধ্যমে বাংলাদেশে কমিউনিটি ক্লিনিকভিত্তিক প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার মডেল প্রতিষ্ঠায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অসামান্য উদ্ভাবনী নেতৃত্ব আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হয়েছে বলে বাংলাদেশে জাতিসংঘের স্থায়ী মিশন জানিয়েছে। জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল তৈরি করায় জাতিসংঘের স্বীকৃতির পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিশেষ সম্মাননায় ভূষিত করেছে ব্রাউন ইউনিভার্সিটি।

শুধু স্বাস্থ্যখাত নয়, ভূমিহীনদেরও বিনামূল্যে ঘর দিচ্ছে সরকার। সরকার শুধু ঘর নির্মাণ ের মাধ্যমে তার দায়িত্ব পালন করছে না, সরকারি প্রকল্পগুলো তাদের জীবন ও জীবিকাও প্রদান করছে। এ পর্যন্ত ২১টি জেলাকে গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। ২০২১ সালের ২৩ জানুয়ারি মুজিববর্ষে প্রথম ধাপে ৬৩ হাজার ৯টি, দ্বিতীয় ধাপে ২০ জুন ৫৩ হাজার ৩৩০টি এবং তৃতীয় ধাপে ২ দফায় মোট ৫৯ হাজার ১৩৩টি ঘর বিতরণ করা হয়। আরও ২২ হাজার ১০১টি ঘর বিতরণের মাধ্যমে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় মোট সংখ্যা দাঁড়াল ৫ লাখ ৫৫ হাজার ৬১৭টি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে করোনাভাইরাস মহামারির সময় বাংলাদেশের জনগণ বিনামূল্যে কোভিড-১৯ টিকা পেয়েছে। বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দৃঢ় সম্পর্ক তৈরি করে দেশের মানুষের জন্য সঠিক সময়ে টিকা আনতে পারে। এই সাফল্যের মূল কারিগর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কোভিড-১৯ মোকাবেলার পাশাপাশি তিনি সে সময় অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের সাফল্যে বিস্ময় প্রকাশ করেছে বিশ্ব। সে সময় বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থায়ও বাংলাদেশের প্রশংসা করা হয়েছিল।ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামসহ বিশ্বের বিভিন্ন সংগঠন। করোনা মহামারি ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের পর বিশ্বের অধিকাংশ দেশই অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতেও বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। করোনার কারণে বাংলাদেশ একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হবে বলে মন্তব্য করা সমালোচকদের মুখে বাংলাদেশের উন্নয়ন ছিল একটি থাপ্পড়। শেখ হাসিনার হাত ধরেই ডিজিটাল বাংলাদেশ আজ বাস্তবে পরিণত হয়েছে। এখন আমরা স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। যেখানে সকল নাগরিক সেবা হাতের নাগালে পাওয়া যাবে। এই ডিজিটাল ও স্মার্ট বাংলাদেশে কেউ ক্ষুধার্ত থাকতে পারবে না। আওয়ামী লীগ সরকার সবার জন্য খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থানের পাশাপাশি সুশিক্ষার ব্যবস্থা করেছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিগত ১৫ বছরের সাফল্যই নৌকার বিজয়ের আসল হাতিয়ার।

যখন বাংলাদেশের সংকট তীব্র হয়, সবকিছু যখন অনিশ্চয়তাকে ঘিরে ঘোরে, বাংলার আকাশে কালো মেঘ জমে থাকে, তখন শেখ হাসিনা আমাদের শেষ ভরসা হয়ে দাঁড়ান। একজন মানুষ অদম্য সংকল্প ও নিষ্ঠার সাথে ভয়ের কালো মেঘ মুছে দেয় এবং দেশের মানুষ আশার আলো দেখতে পায়। যখনই মনে হয় যে সবকিছু শেষ হয়ে যাচ্ছে, আমরা একটি খারাপ সময়ের মুখোমুখি হই, একমাত্র ত্রাণকর্তা যিনি দক্ষতার সাথে খারাপ দুঃস্বপ্নদূর করেন তিনি হলেন আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। তার পরিচয় একজন প্রধানমন্ত্রী বা রাজনৈতিক নেতার চেয়েও বেশি, তিনি একজন অদম্য সাহসী মানুষ। তিনি একজন যোদ্ধা এবং একজন অভিভাবক। তিনি সাহসের সাথে কোভিড-১৯ মহামারী মোকাবেলা করেছেন, তবুও, এখন তিনি বিশ্বের সেরা উদাহরণ এবং বিশ্ব নেতারা বৈশ্বিক সংকট পরিচালনায় তার উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন।

লেখক একজন কলামিস্ট ও গবেষক

আরও পড়ুন:
জেদ্দা থেকে ঢাকায় প্রধানমন্ত্রী
গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
দ্বিতীয় জয়ের খোঁজে ২৮০ রানের লক্ষ্য পেল বাংলাদেশ
ওমরাহ করলেন প্রধানমন্ত্রী
সৌদি আরবে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী

মন্তব্য

বিশ্লেষণ
The four national leaders were not traitors

জাতীয় চার নেতা বিশ্বাসঘাতক ছিলেন না

জাতীয় চার নেতা বিশ্বাসঘাতক ছিলেন না অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদ। ছবি: সংগৃহীত
একটি বিষয় লক্ষণীয় যে ৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পরে অনেকেই অনেকভাবে, যেটা ভয়ে হোক কিংবা আতঙ্কে হোক আত্মগোপনে ছিল। অনেকেই প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেছিল। বঙ্গবন্ধু হত্যা পরবর্তী সময়ে জাতীয় চার নেতাসহ অনেককেই নানাভাবে প্রলোভন দেখানো হয়েছিলো খুনী মোশতাকের স্বৈরশাসিত সরকারের কেবিনেটে যোগদানের জন্য। কিন্তু তাঁরা ঘৃণাভাবে সেটা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তখন থেকেই তারা জিয়া এবং মোশতাকের কুনজরে পড়েন।

১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ‘জেল হত্যা দিবস’ জাতীয় জীবনে একটি বেদনাদায়ক দিন। সেদিন নির্মমভাবে হত্যা করা হয় জাতীয় চার নেতাকে-যার নজির পৃথিবীর কোনো সভ্য সমাজে আছে কিনা তা আমার জানা নেই। তবে আমার মনে হয় এ ধরনের দৃষ্টান্ত কোথাও নেই।

সেদিন জাতীয় চার নেতার মধ্যে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ যিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে যুদ্ধকালীন সময়ে দীর্ঘ নয় মাস গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। তাঁকেও নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এছাড়াও ক্যাপ্টেন মুনসুর আলী যিনি বঙ্গবন্ধুর আজীবন সৈনিক ছিলেন, স্বাধীনতার পরে স্বরাষ্টমন্ত্রীর দায়িত্বপালন করেন, কামরুজ্জামান বঙ্গবন্ধুর খুবই কাছের নেতা ছিলেন এবং সৈয়দ নজরুল ইসলাম বাংলাদেশের স্বাধীনতার সময় ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন যিনি মেহেরপুরের আম্রকাননে গার্ড অব অনার পরিদর্শন করেন, তাদেরকেও হত্যা করা হয়।

যারা বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী তাদের দীর্ঘদিনের পরিকল্পনা ছিল বঙ্গবন্ধুর সঙ্গের কারোরই চিহ্ণ রাখা যাবে না। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে স্বাধীনতা বিরোধী পাকিস্তানি গোষ্ঠী বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে ৭৫ এর ১৫ আগস্ট হত্যা করেছিল এবং আওয়ামী লীগ যাতে নেতৃত্বশূন্য হয়ে যায় সে কারণে জাতীয় চার নেতার হত্যাযজ্ঞ।

এখানে একটি বিষয় লক্ষণীয় যে ৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পরে অনেকেই অনেকভাবে, যেটা ভয়ে হোক কিংবা আতঙ্কে হোক আত্মগোপনে ছিল। অনেকেই প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেছিল। বঙ্গবন্ধু হত্যা পরবর্তী সময়ে জাতীয় চার নেতাসহ অনেককেই নানাভাবে প্রলোভন দেখানো হয়েছিলো খুনী মোশতাকের স্বৈরশাসিত সরকারের কেবিনেটে যোগদানের জন্য। কিন্তু তাঁরা ঘৃণাভাবে সেটা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তখন থেকেই তারা জিয়া এবং মোশতাকের কুনজরে পড়েন।

মোশতাক-জিয়া গংরা প্রতিশোধ নেয়ার জন্য তেসরা নভেম্বরে তাদের নির্মমভাবে হত্যাকাণ্ড ঘটায়। এখানে আরেকটা উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো- বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে অনেকেই তার ঘনিষ্ঠজন ছিলেন। তাদের মধ্যে অন্যতম খন্দকার মোশতাক যে ছিল বেইমান, খুনী মোশতাক।

সে যে কাজটি করেছে সে কাজটি সায় দেয়ার জন্য কিংবা উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা চালিয়েছিল। উপরন্তু জেলখানায়ও জাতীয় চার নেতার কাছে নানান সময়ে বিভিন্ন প্রস্তাব পাঠানো হয়। যেন মোশতাকের কেবিনেটেই তারা যোগদান করেন। কিন্তু তাঁরা তা ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করেন।

হত্যার ঘটনা জাতির জন্য চরম বিপর্যয়কর ছিল। যারা মুক্তিযুদ্ধকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে এবং বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন, তাদের ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার জন্য হত্যাকারীরা তেসরা নভেম্বর ঘটায়। সে কাজে তারা কতটুকু সফল হয়েছে আজকের প্রজন্ম তা বিচার করবে।

আমাদের মনে আছে তাজউদ্দীন আহমদ স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে কথা বলতেন। আমরা তখন তাঁর বক্তব্য শুনতাম। রণাঙ্গন থেকে তিনি বিভিন্ন সাক্ষাতকার দিতেন এবং এগুলো আমাদের কাছে অনুপ্রেরণামূলক ও যুদ্ধে যোগদানের জন্য উৎসাহের কারণ ছিল। আমাদের কাছে মনে হতো প্রবাসী সরকার যেন বাংলাদেশের মধ্য থেকেই দেশ পরিচালনা করছেন এবং মুক্তিযোদ্ধা ও গেরিলা সকলের জন্যও একটা সাহস সঞ্চারী আইকন।

তাজউদ্দীন আহমদ কোথায় যাননি? কলকাতা থেকে শুরু করে মেঘালয়, আসাম সব জায়গায় তিনি ঘুরে বেড়িয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত করার জন্য, বেগবান করার জন্য তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাথে যে যোগাযোগ সেটা তাজউদ্দীন আহমদের সংযোগেই হয়েছিল। তিনি অনেক সাহসী ও আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। বাংলাদেশের যোদ্ধা ছিলেন। সম্মুখসারির সমর বিশেষজ্ঞ ছিলেন। আর আমরা মাঝে মধ্যেই তৎকালীন বেতারে তাজউদ্দীনের ইংরেজি বক্তব্য শুনতাম। তাঁর যে উচ্চারণ ছিল তার দ্বারা আমরা অনেকেই অনুপ্রাণিত হতাম।

একটি বিষয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, সেটা হচ্ছে, বিপদ তো বলে কয়ে আসে না। যেমন আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার জন্য স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে থেকেই একটা ষড়যন্ত্র চলছিল এবং সেই গোষ্ঠীরা স্বাধীনতা যুদ্ধের পরে ৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদেরকে নির্মমভাবে হত্যা করে মোশতাকের নেতৃত্বে।

আমরা শুনেছিলাম এই মোশতাক গোপনীয়ভাবে চীনের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র করতো। সে কারণে তার ক্ষমতা অনেকটা খর্ব করে দিয়েছিলেন তাজউদ্দীন। আর এসব কারণেই ঈর্ষাপরায়ণ হয়ে ৩ নভেম্বর হত্যাকাণ্ড ঘটে। খন্দকার মোশতাক স্বাধীনতার পরেও তার মুখোশ উম্মোচন করেনি, দলের মধ্যে থেকেই তার ষড়যন্ত্র চালিয়ে গিয়েছিল।

সেনাবাহিনীর তৎকালীন উপ-প্রধান যাকে বঙ্গবন্ধুই সেনাবাহিনীদের ডেপুটি চিফ অফ স্টাফ করেছিলেন, এই পদতো আর সেনাবাহিনীতে ছিল না, বঙ্গবন্ধু জিয়াকে খুশি করার জন্যই এমনটা করেছিলেন। অথচ তারাই ষড়যন্ত্র করে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।

আমি বলতে চাই এরাই বিশ্বাসঘাতক; যেটা আমি মনে করি দল যারা করেন, বিশেষ করে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের যারা, তারা সকলে এই বিশ্বাসঘাতককতার নমুনা ১৯৭৫ সালেই দেখেছেন। আমরা পরবর্তীতেও আরও দেখেছি এই ধরনের বিশ্বাসঘাতকতা। তারা আবার জিয়া ও জেনারেল এরশাদ-এর সাথে হাত মিলিয়েছিল, বেগম জিয়ার সঙ্গে কেউ কেউ দল করেছিল।

বর্তমানে সময়েও বিশ্বাসঘাতকতা রয়েছে এবং এ বিষয়ে আমাদের সচেতন থাকতে হবে। এখনতো আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা দীর্ঘ ত্যাগ-তিতিক্ষার বিনিমিয়ে ক্ষমতায়। আজকে তিনি যদি ক্ষমতায় না থাকতেন আপনারা দেখতেন যেকোনো ক্রাইসিসে কত উৎকন্ঠা জন্মাত।

আজকে উন্নয়ন বলেন আর জয়বাংলা বলেন সবকিছুই এই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ অনুযায়ী এবং আদর্শকে বাস্তবে রূপায়ণ করার ক্ষেত্রে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার ফলেই সম্ভব হয়েছে।

আসলে বিশ্বাসঘাতকতা কোনো ‍কিছুর ক্রাইসিস হলেই বেশি দেখা যায়। যেমন ২০১৪ সালের নির্বাচনে, ২০১৮ সালের নির্বাচনে এবং ২০০১ সালে যে নির্বাচনটিতে সংবিধানকে শ্রদ্ধা করে শেখ হাসিনা অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং বিশ্বাসঘাতকরা বাংলাদেশ আওয়ামীলীগকে পরাজিত করে। তার ফলে কি ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটেছিল সকলে আমরা তা জানি। বাংলাদেশের উন্নয়ন স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। ২০১৪ কিংবা ২০১৮ এর কথা অনুযায়ী যখন কোনো ক্রাইসিস আসে তখনই একটি গোষ্ঠী নড়াচড়া শুরু করে। নানান ধরনের ষড়যন্ত্র শুরু করে। যেমন আমরা উত্তরা ষড়যন্ত্র দেখেছি।

গত ২৮ অক্টোবর (২০২৩)-এর যে ঘটনা সেটাও দেখুন। একটি দেশের সেনাবাহিনীর যিনি নাইন ডিভিশনের জিওসি ছিলেন, সেনাবাহিনীর দায়িত্বশীল ব্যক্তি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কল্যাণেই আস্থার সঙ্গে তাকে এই দায়িত্ব দিয়েছিলেন। কিন্তু দেখেন দেশের যখন ক্রাইসিস পিরিয়ড তখনই এই বিশ্বাসঘাতকতা। আর এই ধরনের বিশ্বাসঘাতকতা জাতীয় নেতারা করেননি। এ ধরনের বিশ্বাসঘাতকদের ‍বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে। সচেতন থাকতে হবে। সেটা আমাদের কর্মক্ষেত্র হোক আর অন্য যেখানেই হোক না কেন? এদের ‍বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।

বাংলাদেশ যার হাত ধরে স্বাধীন হয়েছিল তাকে কোনভাবেই অপমান করা, অশ্রদ্ধা করা- এ ধরনের ঘটনা বাংলাদেশে হতে দেয়া যাবে না। এই বিষয়ে আমাদের সবসময় সকল ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

আর আমরা যারা শিক্ষকতা করি এটাতো কোনো রাজনীতির পর্যায়ে পড়ে না। রাজনৈতিক মত তো সকলেরই আছে। কিন্তু দেশের যে মূল আদর্শ স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ এগুলোর বিরোধীদের সঙ্গে আপোস হওয়া উচিত নয়। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, এই বিশ্বাসঘাতকদের বিরুদ্ধে আমাদের সোচ্চার হতে হবে। এরা যেন বাংলাদেশের উন্নয়নে বাঁধা হয়ে না দাঁড়ায় এবং সে ধরনের সুযোগ যাতে না পায়, সচেতন থাকতে হবে। বিশ্বাসঘাতকদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে- আজকের বেদনাদায়ক ৩ নভেম্বর ‘জেল হত্যা দিবসে’র অঙ্গীকার এটা হলে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগ সফল হবে। জয় বাংলা।

লেখক: অধ্যাপক, কলামিস্ট এবং ট্রেজারার-জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

মন্তব্য

p
উপরে