বাংলাদেশের সাম্প্রতিককালের রাজনৈতিক ইতিহাসে ৭ মে তারিখটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে আছে। অনেকেই হয়ত ভাবতে পারেন ৭ মে এমন কী ঘটেছিল, যার জন্য তারিখটি লাল অক্ষরে লেখার মতো? ২০০৭ সালের ৭ মে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা চিকিৎসা শেষে লন্ডন থেকে দেশে ফিরে এসেছিলেন। তিনি উন্নত চিকিৎসা নিতে লন্ডন গিয়েছিলেন, চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে আসবেন– এটাই তো স্বাভাবিক। এতে বিশেষ তাৎপর্য কী আছে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আমাদের ২০০৬-০৭ সালের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট একটু বিবেচনায় নিতে হবে।
২০০৬ সালে দেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা ছিল। কিন্তু তৎকালীন ক্ষমতাসীন বিএনপি-জামায়াত জোটের নানা অপতৎপরতায় সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক মহলে সংশয় দেখা দেয়। যেকোনো উপায়ে ক্ষমতায় থাকার ইচ্ছা থেকে নির্বাচনকে প্রভাবিত করার নানা অপকৌশলের দিকে হাঁটতে থাকে বিএনপি এবং তার মিত্র জামায়াতসহ অন্যরা। তবে সবকিছুর স্টিয়ারিং ছিল বিএনপির হাতে। অনুগত নির্বাচন কমিশন গঠন, ভুয়া ভোটার তালিকা তৈরি এবং পছন্দের ব্যক্তিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান করার জন্য বিচারপতিদের চাকরির বয়সসীমা বাড়িয়ে আওয়ামী লীগসহ বিরোধী গণতান্ত্রিক মহলে সন্দেহ তৈরি করে প্রকৃতপক্ষে পরিস্থিতি ঘোলাটে করে তোলা হয়। বিএনপি-জামায়াতের অভিসন্ধির বিরুদ্ধে শুরু হয় প্রতিবাদ-আন্দোলন। ক্ষমতার মোহে আচ্ছন্ন বিএনপি কোনো কিছু তোয়াক্কা না করে তাদের বদমতলব বাস্তবায়নে এগিয়ে যেতে থাকে।
তারা এক সময়ের বিএনপি নেতা এবং তখন প্রধান বিচারপতি কে এম হাসানকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান করতে চাইলে আওয়ামী লীগসহ অন্য দলগুলো আপত্তি জানায়।
কে এম হাসান তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান হলে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ না নেয়ার ঘোষণা দিয়ে আন্দোলন শুরু করে। দেশে একটি অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতার পরিবেশ তৈরি হয়। জনমত উপেক্ষা করে বিএনপি তাদের লক্ষ্য পূরণে অগ্রসর হতে থাকে।
তাদের দুষ্টবুদ্ধির পৃষ্ঠপোষক হন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ইয়াজউদ্দিন আহমেদ। প্রবল আন্দোলনের মুখে মাহমুদ হাসান তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধানের দায়িত্ব নিতে অনাগ্রহ প্রকাশ করলে সবাইকে অবাক করে রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন বিএনপির মদদে নিজেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে ঘোষণা দেন। বিএনপির এসব একতরফা কর্মকাণ্ড দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে তোলে।
২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেয়া হয়। আওয়ামী লীগ ওই নির্বাচনে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে মাঠের আন্দোলনের ওপর জোর দেয়। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার শক্তি প্রয়োগের নীতি নিয়ে দেশকে এক চরম সংকটের মুখে ঠেলে দেয়। রাজপথে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ঘ শুরু হয়।
এই অবস্থায় ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি তৎকালীন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল মঈন ইউ আহমেদের নেতৃত্বে কজন সেনাকর্মকর্তা বঙ্গভবনে গিয়ে রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিনকে চাপ দিয়ে দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে বাধ্য করেন। নানা নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে ড. ফখরুদ্দিন আহমেদকে প্রধান করে নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়। দেশে এক নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতা তৈরি হয়।
ক্ষমতার মঞ্চ থেকে খালেদা জিয়ার বিএনপি অপসারিত হওয়ায় সাধারণভাবে মানুষের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি তৈরি হয়। সেনাবাহিনী সমর্থিত ফখরুদ্দীনের সরকার দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করবে ধরে নিয়ে শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ এই প্রক্রিয়ার পক্ষেই অবস্থান নেয়।
এরমধ্যেই কানসহ অন্য স্বাস্থ্য সমস্যার চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান শেখ হাসিনা। কিন্তু ধীরে ধীরে জরুরি সরকার এমন সব পদক্ষেপ নিতে শুরু করে, যা দেশে নতুন সন্দেহ ও বিতর্ক সৃষ্টি করে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করলে প্রাথমিকভাবে অনেকে সমর্থন করলেও কিছুদিনের মধ্যে এটা মনে হতে থাকে যে, ওই সরকারও বাড়াবাড়ি করতে শুরু করেছে।
রাজনীতিকদের ‘শিক্ষা’ দেয়ার একটি মনোভাব ফখরুদ্দিন-মঈনউদ্দিন গংয়ের মধ্যে স্পষ্ট হয়ে উঠতে দেখা যায়। তারা শেখ হাসিনা এবং খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে মাইনাস করার লক্ষ্য নিয়ে এগোতে থাকে। সুশীল সমাজের একাংশ এবং দুএকজন সম্পাদক এ কাজে তাদের উৎসাহ জুগিয়ে সরাসরি অবস্থান নেন। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির ভেতর থেকেও দুই নেত্রীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার মতো কিছু নেতা পেতে জরুরি সরকারের অসুবিধা হয়নি।
নিজেদের নিয়ন্ত্রণ শক্ত করার নানামুখী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে শেখ হাসিনার দেশে ফেরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। ষড়যন্ত্রের বিষয়টি আঁচ করতে শেখ হাসিনার অসুবিধা হয়নি। দেশের মানুষকে সংগঠিত করে দ্রুত একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আদায়ের গুরুত্ব বুঝেই শেখ হাসিনা সরকারের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ২০০৭ সালের ৭ মে দেশে ফিরে আসেন। বিমানবন্দরে উপস্থিত হয়ে বিপুলসংখ্যক জনতা শেখ হাসিনার প্রতি তাদের সমর্থনের কথা জানান দেন।
শেখ হাসিনা যদি সাহস এবং দৃঢ় মনোভাবের পরিচয় দিয়ে দেশে না ফিরতেন তাহলে একদিকে মানুষ তার নেতৃত্বগুণের সমালোচনা করত, অপরদিকে জরুরি সরকারও তাদের অন্যায্য কাজ চালিয়ে যাওয়ার উৎসাহ পেত। শেখ হাসিনাকে ভয় দেখানোর ক্ষমতা তাদের আছে– এটা বুঝলে তাদের আস্থা বাড়ত। ভয় দেখিয়ে শেখ হাসিনাকে যে কাবু করা যাবে না– এই বুঝ ৭ মে হয়েছিল জরুরি সরকারের নীতিনির্ধারকদের।
শেখ হাসিনা দেশে ফিরে দলের নেতাকর্মীদের সংগঠিত করে দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে জনমত গঠনে আত্মনিয়োগ করেন। কিন্তু ফখরুদ্দিন-মঈনউদ্দিনের মাথায় হয়ত অন্য মতলব ছিল। তারা আওয়ামী লীগ-বিএনপির বাইরে তাদের অনুকূলে একটি রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তুলতে চেষ্টা করছিল।
ড. ইউনূস, ফেরদৌস আহমেদ কোরেশীর মতো কিছু মানুষকে তারা পেয়েওছিল। কিন্তু শেখ হাসিনাকে মুক্ত রেখে, আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ বা অটুট রেখে তাদের পরিকল্পনা সফল করা যে সম্ভব নয়, সেটা বুঝেই ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করা হয়। আওয়ামী লীগ ভাঙার অপচেষ্টাও চলে ভেতরে ভেতরে। কিন্তু তাদের উদ্দেশ্যের সততা নিয়ে মানুষের মনে ততদিনে সন্দেহ তৈরি হয়ে গেছে। তুচ্ছ কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গোলযোগ পাকাতে গিয়ে সেনাসদস্যদের বাড়াবাড়ির প্রতিবাদে আন্দোলন গড়ে ওঠার ঘটনাটিও উল্লেখযোগ্য।
শেখ হাসিনাকে ১১ মাস আটক রেখে ২০০৮ সালের ১১ জুন মুক্তি দিতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ। চিকিৎসার জন্য তিনি আবার বাইরে যান এবং ৮ নভেম্বর দেশে ফিরে নির্বাচনি প্রচারে নেমে পড়েন।
২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ বিপুল বিজয় অর্জন করে। আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি ২০০৬ সালে ক্ষমতায় থাকার জেদে যেসব অপকৌশল অবলম্বন করেছিল তা দলটির জন্য বুমেরাং হয়েছে। ভুল থেকে শিক্ষা না নিয়ে পরবর্তী সময়েও ভুল রাজনৈতিক কর্মসূচি, কৌশল এবং সহিংসতার পথ ধরে বিএনপি যে বড় খাদে পড়েছে তা থেকে আর উঠতে পারছে না।
আপসহীন, দৃঢ় মনোভাব এবং নিয়মতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে মানুষের সঙ্গে থাকলে তার ফল খারাপ হয় না। কঠোরতা এবং নমনীয়তা– দুটোই রাজনীতির কৌশল। কখন কোনটা ব্যবহার করা হবে, সেটা নির্ভর করে ব্যক্তির বিচক্ষণতার ওপর। শেখ হাসিনা রাজনীতিতে কোন ধারার অনুসারী তা এতদিনে সবার কাছে স্পষ্ট হওয়ারই কথা। তার সাহস আছে, দৃঢ়তা আছে আর আছে মানুষের প্রতি গভীর দরদ।
রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ রাজনীতির সাধারণ নিয়মনীতি অনুসরণ না করে বার বার জটিলতা ও সংকট তৈরি করে কিন্তু শেখ হাসিনা ধৈর্যের সঙ্গে ঠাণ্ডা মাথায় তা মোকাবিলা করেন। তাই তিনি সবচেয়ে বেশি সময় ধরে সরকারপ্রধান হিসেবে নেতৃত্ব দিয়ে রেকর্ড তৈরি করেছেন। কেউ ইতিহাস দখল করতে চায়, কেউ চায় সৃষ্টি করতে। শেখ হাসিনার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যেমন ইতিহাসের স্রষ্টা, তেমনি শেখ হাসিনাও জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ইতিহাস তৈরি করেছেন, করছেন।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
আরও পড়ুন:ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুকের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিএনপি নেতারা। ৭ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনারের সঙ্গে এটাই বিএনপির নেতাদের প্রথম বৈঠক।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে হাইকমিশনারের বারিধারার বাসায় যান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলসহ দলের তিন নেতা। এ সময় হাইকমিশনের রাজনৈতিক শাখার দুজন কর্মকর্তাও উপস্থিত ছিলেন।
হাইকমিশনারের সঙ্গে প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে চলা বৈঠকের আলোচ্য বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) বৈঠকের কারণ উল্লেখ করে ব্রিটিশ হাইকমিশন লিখেছে, হাইকমিশনার সারাহ কুক আজ (বৃহস্পতিবার) বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) রাজনৈতিক কৌশল বুঝতে দলটির নেতাদের সঙ্গে দেখা করেছেন।
ওই লেখায় বিএনপি মহাসচিব ছাড়াও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদের সঙ্গে হাইকমিশনার সারাহ কুকের একটি ছবিও সংযুক্ত করা হয়েছে।
নওগাঁর ধামইরহাটে রেজওয়ানুল আহমেদ পিয়াল নামে সিআইডি কর্মকর্তা পরিচয় দেয়া এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তা পরিচয় দিলেও তিনি আসলে তা নন, প্রতারণার স্বার্থে ভুয়া পরিচয় ধারণ করেছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলার রুপনারায়নপুর গ্রাম থেকে তিনি গ্রেপ্তার হন।
২৫ বছর বয়সী রেজওয়ানুল আহমেদ পিয়াল বগুড়ার আদমদিঘী উপজেলার ছাতিয়ান গ্রামের বাসিন্দা।
ভুক্তভোগী ম্যানুয়েল তপন জানান, ভয়ভীতি দেখিয়ে বিকাশ ও নগদের মাধ্যমে তিনি (পিয়াল) তার কাছ থেকে ২৯ হাজার ৫৩৮ টাকা গ্রহণ করেন এবং আরও টাকা দাবি করলে স্থানীয় জনতা তাকে চ্যালেঞ্জ করে। এরপর সংশ্লিষ্ট থানায় খবর দেয়া হয়। পরে থানা পুলিশ গিয়ে প্রতারক পিয়ালকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে আসে।
তপন বলেন, ‘বেশকিছু দিন ধরে আমার মতো এলাকার অন্য লোকজনের কাছেও বিভিন্ন ফন্দি এঁটে প্রতারণা করে আসছে এই প্রতারক।’
বিষয়টি নিশ্চিত করে ধামইরহাট থানার ওসি মো. বাহাউদ্দিন ফারুকী বলেন, ‘প্রতারক রেজওয়ানুল আহমেদ পিয়াল বিভিন্ন সময় বিভিন্ন এলাকায় নিজেকে সিআইডি কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করতেন। ইতোমধ্যে একজনের কাছে থেকে ২৯ হাজার টাকা নিয়েছে। এছাড়া ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদাও নিতেন তিনি।
‘এদিনও প্রতারণা করতে গেলে জনগণ তাকে আটক করে রাখে। এরপর পুলিশ গিয়ে তাকে থানায় নিয়ে আসে। তার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ মামলা হয়েছে। আইনগত প্রক্রিয়া শেষে তাকে আদালতে পাঠানো হবে।’
আরও পড়ুন:নোয়াখালীর হাতিয়ায় ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মো. সুলতান নামে এক রোহিঙ্গা নাগরিকের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তাৎক্ষণিক এই হত্যাকাণ্ডের কারণ জানাতে পারেনি পুলিশ।
বৃহস্পতিবার বিকেলে ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ১১৬ নম্বর ক্লাস্টার থেকে পুলিশ সুলতানের মরদেহ উদ্ধার করে। তিনি ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ৭৮ নম্বর ক্লাস্টারের বাসিন্দা ছিলেন।
ভাসানচর থানার ওসি কাওসার আহমেদ এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
স্থানীয়দের বরাতে ওসি বলেন, সুলতান ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ৭৮ নম্বর ক্লাস্টারে বসবাস করতেন। ১১৬ নম্বর ক্লাস্টারের খালি জায়গায় তিনি সবজি চাষ করতেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ছেলে তার জন্য দুপুরের খাবার নিয়ে যান। সেখানে গিয়ে বাবাকে দেখতে না পেয়ে তার ছেলে ওই ক্লাস্টারে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুজি শুরু করেন। একপর্যায়ে তার বাবার গলা কাটা মরতেজ পড়ে থাকতে দেখে চিৎকার দেন। এ সময় অন্য ক্লাস্টারের লোকজন এগিয়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে।
ওসি কাওসার আহমেদ জানান, পেছনের দিক থেকে গলা কেটে এই রোহিঙ্গা নাগরিককে হত্যা করা হয়। শুক্রবার সকালে মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হবে। পুলিশ হত্যার রহস্য উদঘাটনে জোর চেষ্টা চালাচ্ছে।
আরও পড়ুন:আওয়ামী লীগ তাদের নৌকা নিজেরাই ডুবিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান।
বিএনপির সহ-স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক হৃদরোগে আক্তান্ত ডা. পারভেজ রেজা কাকনের শারীরিক খোঁজ-খবর নিতে বৃহস্পতিবার রাজধানীর মগবাজারে গিয়ে সাংবাদিকদের কাছে এ মন্তব্য করেন তিনি। এ সময় তিনি অসুস্থ কাকনের শারীরিক ও পারিবারিক অবস্থার খোঁজখবর নেন।
উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গে বিএনপির এই বর্ষীয়াণ নেতা বলেন, বাংলাদেশে অতীতে কখনোই স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হয়নি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তা দলীয় প্রতীকে শুরু করেছে।
‘৭ জানুয়ারির নির্বাচনে জনগণ আওয়ামী লীগকে বর্জনের পর তারা বুঝতে পেরেছে যে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করা হলে দেশের সামাজিক কাঠামোটা ভেঙে যাবে। তারা নিজেদের নৌকা নিজেরাই ডুবিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ ছাড়া এবং এই সরকার ও তাদের সাজানো নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনে আমরা যাবো না। তবে গ্রাম-গঞ্জে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে কে যাবে কে যাবে না সেটা তো বিএনপি দলীয়ভাবে দেখতে পারে না।’
মঈন খান বলেন, বিরোধী দলকে দমনের জন্য সরকার হামলা-মামলাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। তবে এসব করে ৭ জানুয়ারি প্রহসনের নির্বাচনেও তারা দেশের মানুষকে ভোট কেন্দ্রে নিতে পারেনি।
‘ভয় দেখিয়ে মানুষকে দমিয়ে রাখতে চায়। দেশের জনগণ সরকারের বিরুদ্ধে নীরব প্রতিবাদ করেছে। তারা ভোট কেন্দ্রে যায়নি। কারণ এই ভোটের ওপর তাদের আস্থা নেই।’
মঈন খান বলেন, ‘দল গোছানো ও সংগঠন পুনর্গঠন করা চলমান প্রক্রিয়া। রাজনীতি কোনো কাপড় নয় যে, সাজিয়ে গুছিয়ে আলনা বা আলমারিতে রাখা যায়। সরকারকে বলবো- প্রতিহিংসার রাজনীতি পরিহার করে আদর্শের রাজনীতিতে ফিরে আসুন। আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও জনগণের ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবো, ইনশাআল্লাহ।’
আরও পড়ুন:আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়-স্বজনদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করতে কড়া নির্দেশনা দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
বৃহস্পতিবার দলটির এক অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এরপর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের মাধ্যমে তা বিভিন্ন জেলা-উপজেলা পর্যায়ে জানিয়ে দেয়া হয়।
বৈঠকে উপস্থিত থাকা নেতাদের একজন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তরিকভাবে চান উপজেলা নির্বাচন প্রভাবমুক্ত হোক। সে কারণে দল চায় যে মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের নিজ পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়-স্বজনরা যেন এই নির্বাচনে অংশ না নেন।’
‘আজ (বৃহস্পতিবার) দলের একটি বৈঠকে সাধারণ সম্পাদক আমাদেরকে বিষয়টি জানান। আমরা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এবং জেলা-উপজেলায় তা জানাতে শুরু করেছি।’
এবার স্বতন্ত্র মডেলে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এতে নিজ নিজ এলাকায় রাজনৈতিক বলয় নিজেদের কব্জায় রাখতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন আওয়ামী লীগের কিছু মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য। দলের হাইকমান্ড এই নির্বাচনে কাউকে সমর্থন না দেয়ার নির্দেশনা দিলেও এসবে কান দিচ্ছেন না তারা।
কোনো কোনো সরকার দলীয় সংসদ সদস্যরা তাদের স্ত্রী, সন্তান ও আত্মীয়-স্বজনদের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার নেপথ্যে কলকাঠি নাড়ছেন। নিজ দলের প্রভাবশালীদের এমন হস্তক্ষেপে ইতোমধ্যে তৃণমূলে নানামুখী বিশৃঙ্খলা দেখা দিচ্ছে।
দীর্ঘদিন ধরে জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো নিজেদের পরিবারের দখলে রাখার চেষ্টার পাশাপাশি উপজেলায় একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন তারা। ভোটের মাঠে স্বজনদের জিতিয়ে আনতে নানামুখী কৌশল অবলম্বন শুরু হয়েছে। এতে তৃণমূলের সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়তে শুরু করেছে। এ নিয়ে তৃণমূল আওয়ামী লীগে বিরাজ করছে চরম ক্ষোভ।
দলীয় সূত্র জানায়, দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক নেতারা ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর দুই সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী এবং একজন প্রভাবশালী সংসদ সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের সন্তান বা নিকটাত্মীয়দের প্রার্থিতা থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার থেকে দলটির দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকেরা নিজ নিজ বিভাগের মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের দলের এই নির্দেশ জানাতে শুরু করেছেন।
ইতোমধ্যে অর্ধশতাধিক দলীয় ও দলীয় স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ দলের হাইকমান্ডের কাছে জমা পড়েছে। অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখা শুরু হয়েছে। কেউ কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অমান্য করলে তাদেরকে শো-কজ, সতর্কতা, তলবসহ বর্তমান দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করার চিন্তা-ভাবনা রয়েছে দলের হাইকমান্ডের।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘উপজেলা নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও উৎসবমুখর করার স্বার্থে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদেরকে নিজ পরিবারের সদস্যদের প্রার্থী না করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।’
বিএনপি ৭ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচন বর্জন করায় ওই নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক দেখাতে দলের নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে উৎসাহ দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। তখন সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া নিয়ে আওয়ামী লীগের তৃণমূলে বিরোধ তৈরি হয়।
জাতীয় নির্বাচনের মাস তিনেকের মাথায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীদের পছন্দের ব্যক্তিদের প্রার্থী করা নিয়ে দলীয় বিরোধ আরও বেড়ে যাচ্ছে। এর রেশ ইতোমধ্যে বিভিন্ন উপজেলায় পড়তে শুরু করেছে।
নোয়াখালীর সুবর্ণচরে নিজের ছেলেকে ভোট না দিলে উন্নয়ন কাজ না করার হুমকি দিয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী। নাটোরে প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলকের শ্যালক লুৎফুল হাবিবের বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষ প্রার্থীকে অপহরণের অভিযোগ উঠেছে।
এসবের পরিপ্রেক্ষিতে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বৃহস্পতিবার দুপুরে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেন। বৈঠকে ওবায়দুল কাদের সাংগঠনিক সম্পাদক ও দপ্তরকে সারা দেশে মন্ত্রী–সংসদ সদস্যদের মধ্যে যাদের স্বজন ও পরিবারের সদস্য নির্বাচন করছেন, সেই তালিকা তৈরির নির্দেশ দেন।
প্রসঙ্গত, এবার চার পর্বে দেশের ৪৮১টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচন হতে যাচ্ছে। প্রথম ধাপের ভোটগ্রহণ হবে ৮ মে। ইতোমধ্যে প্রথম ধাপে ১৫২টি ও দ্বিতীয় ধাপে দেশের ১৬১টি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এরপর ২১ মে হবে দ্বিতীয় ধাপের ভোটগ্রহণ।
আরও পড়ুন:প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে মোট বৈধ প্রার্থী দাঁড়িয়েছে এক হাজর ৭৮৬ জন। মাঠ পর্যায় থেকে পাঠনো তথ্য একীভূত করার পর এ তথ্য জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ।
তিনি জানান, প্রথম ধাপে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন এক হাজার ৮৯০ জন। এদের মধ্যে বাছাইয়ে ১০৪ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল, আর বৈধতা পেয়েছে এক হাজার ৭৮৬ প্রার্থীর।
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ১৮ থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত আপিল করা যাবে। আপিল নিষ্পত্তি ২১ এপ্রিল, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২২ এপ্রিল। এরপর প্রতীক বরাদ্দ ২৩ এপ্রিল এবং ১৫০ উপজেলায় ভোটগ্রহণ হবে আগামী ৮ মে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে টিউবওয়েল বসানোর জন্য স্থাপন করা পাইপে পানির পরিবর্তে উঠে আসছে এক ধরনের তরল। অনেকটা ডিজেলের মতো গন্ধযুক্ত এই তরল নিয়ে জনমনে সৃষ্টি হয়েছে কৌতূহল।
উপজেলার ভোলামোড় এলাকায় এক বাড়িতে ঘটেছে এই ঘটনা। বাড়ির মালিক আব্দুল আওয়াল বলেন, ‘পানীয় জলের জন্য তিন বছর আগে এখানে মোটর বসানো হয়। এটি উপজেলা পরিষদ থেকেই বসানো হয়েছিল। কয়েক মাস থেকে মোটরটি দিয়ে পানি উঠছে না। কারণ জানার জন্য বুধবার সকালে মিস্ত্রি ডেকে আনা হয়।
‘মিস্ত্রি কাজ করার সময় মোটরের সঙ্গে যুক্ত পাইপ দিয়ে মাটির নিচ থেকে পানির পরিবর্তে তেলের মতো এক ধরনের তরল উঠে আসে। তা দেখে মনে হয়েছে ডিজেলের মতো। বিষয়টি আমরা উপজেলা চেয়ারম্যানকে জানিয়েছি, যাতে তারা এটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা করেন।’
স্থানীয় সংবাদকর্মী মনিরুল ইসলাম জানান, ফেসবুকে ঘটনাটি দেখার পর তিনি সেখানে গিয়েছিলেন। এ সময় পাইপ দিয়ে উঠে আসা তরলে তিনি কাগজ চুবিয়ে আগুন ধরানোর চেষ্টা করলে তাতে আগুন ধরে যায়। তার প্রশ্ন- পানি হলে তো ভেজা কাগজে আগুন ধরতো না। তাহলে এই তরল কি খনিজ তেল?
এ বিষয়ে নাচোল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিলুফা সরকার জানান, তিনিও বিষয়টি ফেসবুকে দেখেছেন। এ বিষয়ে খোঁজ-খবর করবেন বলে জানান তিনি।
মন্তব্য