তৃণমূলে ব্যাপক ভোটারের উপস্থিতিতে দ্বিতীয় ধাপের পৌরসভা নির্বাচনের প্রথম ধাপের মতোই বিশাল ব্যবধানে জয় পেয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ৬০টি পৌরসভার মধ্যে ৪৫টিতে জয় পেয়েছে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী।
বিএনপি জিতেছে চারটি পৌরসভায়।
দলের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র হিসেবে লড়াই করে জিতেছেন আট জন প্রার্থী। এদের ছয় জন আওয়ামী লীগ নেতা। দুই জন বিএনপির মনোনয়নবঞ্চিত।
একটি পৌরসভাতে করে জিতেছে জাতীয় পার্টি ও জাসদ। আর একটিতে ফলাফল স্থগিত হয়ে আছে।
শনিবার সকাল আটকা থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত একটানা ভোট চলে ৬০টি পৌরসভায়। এর মধ্যে ৫৬টিতে ভোট হয় মেয়র পদে। সিরাজগঞ্জের কাজীপুর, পাবনার ভাঙ্গুরা, নারায়ণগঞ্জের তারাব ও পিরোজপুর পৌরসভায় একজন করে প্রার্থী থাকায় সেখানে আওয়ামী লীগের চার নেতা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
শনিবারের ভোটে ৩৭ টি এলাকায় জিতেছেন নৌকার প্রার্থীরা।
৬০টি পৌরসভার মধ্যে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন ইভিএমে ২৮টি আর ব্যালটে ভোট হয়েছে ৩২টিতে। বিতর্ক এড়াতে ৩২টির প্রতিটিতে ব্যালট পাঠানো হয়েছে ভোটের সকালে।
বিএনপির প্রার্থীরা ছয়টি পৌরসভায় কারচুপির অভিযোগে ভোট বর্জন করেছেন। পৌরসভাগুলো হলো রাজশাহীর ভবানীগঞ্জ, বাগেরহাটের মোংলা, কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর, পাবনার ঈশ্বরদী, চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ ও মেহেরপুরের গাংনী।
এই ছয়টির বাইরে সিরাজগঞ্জের তিনটি পৌরসভায় ভোটে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এই নয়টির বাইরে তেমন কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি।
দুটি পৌরসভাতে আবার ভোটের ফলাফলে প্রশংসা করেছেন বিএনপির প্রার্থীরা। সেই দুটিতে অবশ্য তারা গো হারা হেরেছেন।
আবার বিএনপি যে চারটি পৌরসভায় জিতেছে, তার দুটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত।
ভোট শুরুর আগে থেকেই শীত উপেক্ষা করে ভোটকেন্দ্রে আসতে থাকেন ভোটাররা। কেন্দ্রে নারী ভোটারদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। বিকাল চারটায় ভোট শেষ হওয়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত ভোট কেন্দ্রগুলোর চিত্র ছিল মোটামুটি একই রকম।
কিশোরগঞ্জ সদরের ওয়ালী নেওয়াজ কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের জেরে এই কেন্দ্রে ভোট স্থগিত করেছেন নির্বাচন কর্মকর্তা।
কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ ও প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়েছে কুমিল্লার চান্দিনা, ফেনীর দাগনভূঞা, পাবনার ঈশ্বরদী, কুষ্টিয়া সদর ও ঝিনাইদহের শৈলকুপায়।
নির্বাচন কমিশন বলেছে উৎসাহের ভোট হয়েছে। তাদের ধারণা, প্রথম ধাপের মতোই এবারও ৬০ শতাংশের বেশি ভোট পড়বে।
নির্বাচন কমিশনের উপসচিব আতিয়ার রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত কিশোরগঞ্জের একটি কেন্দ্র ছাড়া আর কোথাও ভোট বন্ধের খবর আসেনি। ভোটার উপস্থিতি আশাব্যঞ্জক। মোটামোটি তৃণমূলের এ ভোটকে উৎসবই বলা যায়।’
অবশ্য বিএনপির কেন্দ্র থেকে ভোটকে কারচুপি বলা হয়েছে আগের মতোই। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, ‘আমরা যতটুকু খবর পেয়েছি, ক্ষমতাসীনরা আমাদের এজেন্টদের সেন্টারে যেতে দেয়নি, অনেক জায়গায় বের করে দিয়েছে। এমনকি বিএনপি সমর্থকদের কেন্দ্রের কাছেও যেতে দিচ্ছে না।
অবশ্য স্থানীয় পর্যায় থেকে বিএনপির ভিন্ন মূল্যায়নও পাওয়া গেছে।
তুমুল আলোচিত বসুরহাটের নির্বাচনের প্রশংসা করেছেন বিএনপির প্রার্থী কামাল উদ্দিন চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘আমি যেই দুই চারটা কেন্দ্রে গেসি সেখানে সুন্দর পরিবেশে নির্বাচন হচ্ছে। কোনো সমস্যা নাই। জয়-বিজয় আল্লাহর হাতে।… ‘অবশ্যই আমি ফলাফল মেনে নেব। এই সুন্দর নির্বাচনের ফলাফল না মানলে আমি কেন রাজনীতি করি?’
একই রকম মূল্যায়ন করেছেন কুষ্টিয়া পৌরসভায় বিএনপির প্রার্থী বশিরুল আলম চাঁদ। তিনি বলেন, ‘অনেক দিন পর সুষ্ঠু পরিবেশে নিজের ভোট দিতে পারলাম।… ব্যালট সকালে কেন্দ্রে আসায় ভোটারদের মধ্যে আস্থা ফিরে এসেছে।’
আওয়ামী লীগ জিতেছে যেসব পৌরসভায়
ঢাকা বিভাগে কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর, ঢাকার সাভার, গাজীপুরের শ্রীপুর, নরসিংদীর মনোহরদী, ফরিদপুরের বোয়ালমারী, শরীয়তপুরে জয় পেয়েছেন নৌকা মার্কার প্রার্থীরা। নারায়ণগঞ্জের তারাবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় এসেছিল আগেই।
চট্টগ্রাম বিভাগে কুমিল্লার চান্দিনা, চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ, খাগড়াছড়ি, বান্দরবানের লামা, ফেনীর দাগনভুঞা ও নোয়াখালীর বসুরহাটে জয় পেয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা।
সিলেট বিভাগে সুনামগঞ্জ সদর, একই জেলার ছাত, মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ ও কুলাউড়াতেও জয় পেয়েছে নৌকা।
রাজশাহী বিভাগে বগুড়ার সারিয়াকান্দি, নওগাঁর নজিপুর, রাজশাহীর কাঁকনহাট ও ভবানীগঞ্জ নাটোরের নলডাঙ্গা, গোপালপডুর ও গুরুদাসপুর, সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া, রায়গঞ্জ ও সিরাজগঞ্জ, পাবনার ঈশ্বরদী, ফরিদপুর ও সাঁথিয়ায় জয় পেয়েছে নৌকা।
সিরাজগঞ্জের কাজীপুর ও পাবনার ভাঙ্গুরায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আগেই জয় পেয়েছিল আওয়ামী লীগ।
রংপুর বিভাগে কেবল দিনাজপুরের বিরামপুরে জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ।
ময়মনসিংহ বিভাগে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা ও ফুলবাড়িয়া, নেত্রকোণার মোহনগঞ্জ ও কেন্দ্রয়ায় জয় পেয়েছে নৌকা।
বরিশাল বিভাগের পিরোজপুর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আগেই জয় পায় নৌকা।
খুলনা বিভাগে বাগেরহাটের গাংনী, কুষ্টিয়া, একই জেলার কুমারখালী ও মিরপুর, ঝিনাইদহের শৈলকুপা, বাগেরহাটের মোংলা ও মাগুরায় জয় পেয়েছে নৌকা।
বিএনপির প্রার্থীরা জিতেছেন দিনাজপুর, বগুড়ার সান্তাহার এবং হবিগঞ্জের মাধবপুর ও নবীগঞ্জে।
দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে লড়া ছয় জন আওয়ামী লীগ নেতা যেসব এলাকায় জিতেছেন, সেগুলো হলো: দিনাজপুরের বীরগঞ্জ, রাজশাহীর আড়ানী, কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জের বেলকুচি এবং টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী।
মনোনয়ন না পেয়ে বিএনপির যে দুই নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে জিতেছেন বগুড়ার শেরপুর ও সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর।
জাতীয় পার্টি জিতেছে কেবল গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে।
জাসদ জিতেছে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায়।
কিশোরগঞ্জ সদর পৌরসভায় ফলাফল স্থগিত আছে। সেখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী যত ভোটে এগিয়ে, স্থগিত একটি কেন্দ্রে ভোট তার চেয়ে বেশি। এ কারণে আবার সেখানে ভোট নিতে হবে।
হাতে জাতীয় পরিচয়পত্র ও ভোটার ক্রমিক নম্বর নিয়ে বুথ-৪ এ প্রবেশ করে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ব্যালট সংগ্রহ করলেন ভোটার। গোপন কক্ষে গিয়ে নিজের ভোট প্রদানও করলেন। ভোট দেয়া শেষে কক্ষের বাইরে গণমাধ্যমকর্মীরা ওই ভোটারের কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি জানালেন, ‘ভোটার কীভাবে হলাম নিজেও বলতে পারি না।’
মঙ্গলবার দুপুরে ঠাকুরগাঁও চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রির নির্বাচনে ভোট দিয়ে এক তরুণ ভোটার নিজের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
ঠাকুরগাঁও চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রির ভোটার কীভাবে হওয়া যায়- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি নিজেও জানি না কীভাবে ভোটার হলাম। আমাকে ফোনে নিশ্চিত করা হয়েছে যে আমি চেম্বারের একজন ভোটার, তাই ভোট দিতে এসেছি।’
তার কাছে আরও জানতে চাওয়া হয়, তার নিজস্ব কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে কি না? জবাবে তিনি জানান, তিনি একজন বাইক (মোটরসাইকেল) মেকানিক। তার নিজস্ব একটি প্রতিষ্ঠান আছে, কিন্তু প্রতিষ্ঠানের এখনও নামকরণও করা হয়নি।
প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করা না হলে ট্রেড লাইসেন্স কীভাবে হলো বা আদৌ ট্রেড লাইসেন্স হয়েছে কি না- জানতে চাইলে তিনি আর কোনো জবাব না দিয়ে সরে পড়েন।
ভোট দিয়ে বের হচ্ছিলেন লিমন নামের আরেক ভোটার। তিনি জানান, সদর উপজেলার নারগুণ থেকে তিনি এসেছেন ভোট দিতে। তার ছোটখাটো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
ট্রেড লাইসেন্স আছে কি না এবং কী প্রক্রিয়ায় ভোটার হলেন- জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর দিতে পারেননি৷ এ সময় তাকে ক্যামরার সামনে কথা বলতে না করেন নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্যানেলের এক প্রার্থী।
ভোট দিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন দুলালি ইসলাম। তিনি জানান, তার মামা একটি হিমাগারের ম্যানেজার। তিনিই তাকে ভোটার হতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। ‘দুলালি ফার্মেসী’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানও রয়েছে তার।
চেম্বারের ভোটার হতে প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্সসহ অন্যান্য কাগজপত্র জমা দিয়েছেন কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখন মনে নেই।’
এদিকে ভোটের একদিন আগে সোমবার রাতে সংবাদ সম্মেলনে ৭ কারণ উল্লেখ করে ঠাকুরগাঁও চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী দুটি প্যানেলের মধ্যে আলমগীর-মুরাদ ও সুদাম প্যানেল ভোট বর্জন করে। এ সময় প্রার্থীরা নির্বাচনের অনিয়ম, ভোটার তালিকা নিয়ে অসঙ্গতিসহ নানা কারণ উল্লেখ করেন।
এর আগে, গত ১৩ এপ্রিল সংবাদ সম্মেলন করে ভোটার তালিকা সংশোধন ও নির্বাচনের তারিখ পেছানোর জন্য নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের কাছে আবেদন জানিয়েছিল প্যানেলটি। সে সময় ভোটের মাঠে থাকার কথা জানালেও অবশেষে ভোটের আগের রাতে তারা ভোট বর্জন করেন। ফলে এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী ছাড়াই অংশ নিয়েছে দুলাল-বাবলু ও আরমান প্যানেল।
চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রির নির্বাচন নিয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের সচেতন মহলে মিশ্র প্রতিত্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে।
জাতীয় তেল গ্যাস, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি ঠাকুরগাঁও সদস্য সচিব মো. মাহবুব আলম রুবেল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দীর্ঘ ১২ বছর যাবৎ ঠাকুরগাঁও চেম্বারের ভোট অনুষ্ঠিত হচ্ছে, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক, আমরা দেখছি এখানে সাধারণ শ্রমিকসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ ভোটার হয়েছেন। অনেকেই আছেন যারা কোনো ব্যবসার সঙ্গেই জড়িত না।
‘তাহলে অন্য যে প্যানেলটি অভিযোগ করেছে- নিরপেক্ষ ভোটার তালিকা হয়নি। সেটার প্রমাণ আমরা পাচ্ছি। এই নির্বাচনে ব্যবসায়ীরা তাদের সঠিক প্রতিনিধি নির্বাচনে ব্যর্থ হয়েছেন।’
ভোটারদের প্রসঙ্গে ঠাকুরগাঁও চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি নির্বাচনি বোর্ডের আহ্বায়ক ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘ভোটার তালিকা নিয়ে বেশ কিছু প্রার্থী অভিযোগ করছেন। খসড়া তালিকা প্রকাশের পর অভিযোগ আপিল কর্তৃপক্ষের নিকট জানানোর সুযোগ ছিল। নির্ধারিত সময়র মধ্যে করা আপিলগুলো নিষ্পত্তি করা হয়েছে। আপিল নিষ্পত্তির পর চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের পর অভিযোগ করায় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘যেহেতু দীর্ঘ বছর যাবৎ ঠাকুরগাঁও চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রির কমিটি ছিল না, তাই বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে চেম্বারের প্রশাসনের দায়িত্ব দিয়েছিল। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা আছে, একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে।’
আরও পড়ুন:নাটোরের সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী দেলোয়ার হোসেন ও তার ভাইকে অপহরণ ও নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় সম্ভাব্য প্রার্থী লুৎফুল হাবিব রুবেলের দিকে উঠেছে অভিযোগের আঙুল।
সোমবার বিকেলে নাটোর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
লুৎফুল হাবিব রুবেল উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শেরকোল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান। তিনি তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের শ্যালক।
দেলোয়ার হোসেনের পরিবারের সদস্যরা জানান, ইউপি চেয়ারম্যানের পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন লুৎফুল হাবিব রুবেল। রোববার পর্যন্ত তার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আর কেউ মনোনয়নপত্র দাখিল করেননি।
সোমবার সকালে অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিল ও ব্যাংকে জামানতের টাকা জমা দেয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হন দেলোয়ার হোসেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন তার ভাই কলম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন মুন্সি।
এ সময় জরুরি প্রয়োজনে তারা জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের সামনে গেলে সেখান থেকে একটি কালো রঙের মাইক্রোবাসে চড়ে কয়েকজন যুবক আলাউদ্দিন মুন্সিকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরে দেলোয়ার হোসেন নির্বাচন অফিস থেকে বের হেলে তাকেও একটি মাইক্রোবাসে করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।
গাড়ির ভেতর মারধর অপহরণকারীরা তাকে মারধর করে বলে অভিযোগ দেলোয়ার হোসেনের পরিবারের সদস্যদের।
তারা আরও জানান, এক পর্যায়ে তারা দেলোয়ারকে বাড়ির সামনে ফেলে দিয়ে চলে যায়। পরে তিনি জাতীয় জরুরি সেবার নম্বরে (৯৯৯) ফোন করে পুলিশকে ঘটনাটি জানান। এ সময় স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে প্রেরণ করেন।
দেলোয়ার হোসেনকে ছেড়ে দিলেও তার ভাই আলাউদ্দিন মুন্সিকে এখনও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে লুৎফুল হাবিবের মোবাইল ফোন নম্বরে একাধিকার ফোন করে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি তা ধরেননি।
নাটোর পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জাতীয় জরুরি সেবা নম্বরের মাধ্যমে অভিযোগ পাওয়ার থেকে পুলিশ দুর্বৃত্তদের অবস্থান শনাক্তে কাজ শুরু করেছে। আলাউদ্দিন মুন্সিকে উদ্ধারে পুলিশের কয়েকটি টিম কাজ করছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে তাকে উদ্ধার ও ঘটনার রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হবে।’
আরও পড়ুন:লালমনিরহাট জেলা পরিষদ উপনির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন মো. আবু বক্কর সিদ্দিক, যিনি আগে ছিলেন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান।
জেলা নির্বাচন অফিসার ও রিটার্নিং অফিসার মো. লুৎফুল কবীর সরকার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বুধবার দুপুরে এ ফল ঘোষণা করেন।
লালমনিরহাট জেলা পরিষদ উপনির্বাচনের ছয়টি কেন্দ্রের মধ্যে চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. আবু বক্কর সিদ্দিক মোবাইল ফোন প্রতীকে পান ২৮২টি ভোট। তার প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট সফুরা বেগম কাপ-পিরিচ প্রতীকে ২৭৩টি ভোট পান।
চেয়ারম্যান প্রার্থী আবু বক্কর সিদ্দিক মোবাইল ফোন প্রতীকে ৯ ভোট বেশি পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হন।
এ নির্বাচনে মোটরসাইকেল প্রতীকের মমতাজ আলী ৫৮টি, চশমা প্রতীকের আশরাফ হোসেন বাদল সাতটি, আনারস প্রতীকের নজরুল হক পাটোয়ারী ভোলা শূন্য ভোট পেয়েছেন।
এর আগে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমান গত ২৭ নভেম্বর পদত্যাগ করায় পদটি শূন্য হয়।
আরও পড়ুন:উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী যত প্রভাবশালীই হোক না কেন, তাকে নির্বাচনি আইন-কানুন শতভাগ মেনে চলতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান। তিনি বলেছেন, ‘নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে প্রয়োজনে প্রার্থিতা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেবে কমিশন। সকল প্রার্থীর জন্য সমান সুযোগ তৈরি করতে কমিশন সব ধরনের পদক্ষেপ নেবে।’
বুধবার দুপুরে খুলনা জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে খুলনাসহ পাঁচ জেলার নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন কমিশনার আহসান হাবিব।
এই নির্বাচনের বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি হতে পারে, আবার একই মতাদর্শের একাধিক প্রার্থী হতে পারে। সুতরাং তাদের মধ্যে কিছুটা রাগ-বিরাগ ও সহিংসতা সৃষ্টি হতে পারে। সেটাকেও কীভাবে আমরা রক্ষা করতে পারি, বিশ্লেষণ করেছি এবং আমরা নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি- সুন্দর ব্যবহার ও বিনয়ের সঙ্গে সবাইকে আমরা একইভাবে পরিচালিত করব।’
অনলাইনে মনোনয়ন দাখিলের সুবিধা তুলে ধরে এ নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘এবারই প্রথম সব প্রার্থীর জন্য অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এতে কেউ কাউকে প্রার্থী হতে বাধা দিতে পারবেন না এবং জোরপূর্বক প্রার্থিতা প্রত্যাহার করানোর সম্ভাবনাও কমে যাবে।
‘অনলাইন ব্যতীত কোনোভাবেই মনোনয়নপত্র দাখিল করা যাবে না। এ কারণে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার কারিগরি ও পদ্ধতিগত সুবিধার্থে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিনের অপেক্ষা না করে আগেই অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিল করতে পারবেন সংশ্লিষ্ট প্রার্থীরা।’
এর আগে খুলনা জেলা শিল্পকলা একাডেমি অডিটোরিয়ামে খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মো. হেলাল মাহমুদ শরীফের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় বাংলাদেশ পুলিশের খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি মো. মঈনুল হক, মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার সরদার রকিবুল ইসলাম এবং খুলনা, যশোর, নড়াইল, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক), অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, জেলা-উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
খুলনা বিভাগীয় প্রশাসন এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।
উল্লেখ্য, এ বছর চারটি ধাপে দেশের উপজেলা পরিষদসমূহের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন কমিশনের পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রথম ধাপের নির্বাচন আগামী ৮ মে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া দ্বিতীয় ধাপে ২৩ মে, তৃতীয় ধাপে ২৯ মে ও এবং চতুর্থ ধাপে ৫ জুন নির্বাচন হবে।
আরও পড়ুন:ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), যুক্তরাষ্ট্রের এনডিআই-আইআরআইসহ বিদেশি পর্যবেক্ষকদের দেয়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রতিবেদন দেখে পরবর্তী কমিশনের জন্য বাস্তবায়নের সুপারিশ রেখে যাবে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত নির্বাচন ভবনের নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে এমন মন্তব্য করেন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের রিপোর্ট দেখেছি, তবে ফরমালি বসতে পারিনি। আমাদের সময়ে তো জাতীয় নির্বাচন আর হবে না। কাজেই অনেক সময় আছে।
‘প্রাথমিক রিপোর্ট আমরা দেখেছি। এ নিয়ে আমাদের মধ্যে আলোচনাও হয়েছে। এখন সারাংশ করার জন্য বলা হয়েছে যে, তারা আমাদের ভালো দিক এবং দুর্বল দিক কী দেখেছে। ইসি সচিবালয় খসড়া করেছিল, আমরা বিস্তারিতভাবে আবার করতে বলেছি। এক্ষেত্রে পর্যালোচনা করে আমরা পরবর্তী কমিশনের জন্য সাজেশন (পরামর্শ) রেখে যাব। আমাদের ত্রুটি দেখে ভবিষ্যতের কমিশন সেটি দেখবে।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে ইসি আলমগীর বলেন, ‘তারা টোটাল নির্বাচন নিয়ে মতামত দিয়েছে। প্রার্থী, দল, সরকার, ভোটকেন্দ্রসহ নানা বিষয়ে কথা বলেছে। আমরা কেবল আমাদের দিকটা দেখব। তারা যে সুপারিশ করেছে, সেটা করা যায় কি না- সেটা আমরা দেখব। যেগুলো আমাদের জন্য করা সম্ভব, সেগুলো পরবর্তী কমিশনের জন্য সুপারিশ রেখে যাব।’
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে এ নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘তারা একটা (প্রতিবেদনে) জায়গায় বলেছে ভোটে কারচুপি হয়েছে বেশ কয়েকটা কেন্দ্রে, যেখানে কমিশন ব্যবস্থাও নিয়েছে। যদি বলত- কমিশন অবহেলা করেছে…এমন তো বলেনি। তারা কমিশনের বিরুদ্ধে নেতিবাচক কিছু বলেনি যে, কমিশনের এমন সক্ষমতা ছিল অথচ ব্যবস্থা নেয়নি। অথবা ভোটের এই সমস্ত কেন্দ্রগুলোতে জাল ভোট হয়েছে, কিন্তু কমিশন বন্ধ করেনি। এমন কোনো রিপোর্ট নাই।
‘বরং কমিশন ব্যবস্থা নিয়েছে বলে তাদের রিপোর্টে আছে। প্রশাসনে রদবদল করেছে- এগুলোও আছে। এখন টোটাল গণতান্ত্রিক বিষয় তো আর নির্বাচন কমিশন দেখে না। তারা নির্বাচন কমিশন নিয়ে যা বলেছে, আমাদের দৃষ্টিতে দেখিনি যে খারাপ কিছু বলেছে। আমরা সুষ্ঠু শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন করেছি। কতটা গ্রহণযোগ্য হয়েছে সেটা দলগুলোর ওপর ছেড়ে দিয়েছি।’
এরপর উপজেলা নির্বাচন নিয়ে ইসি মো. আলমগীর বলেন, ‘নির্বাচন মানে ছেলেখেলা নয়, রাষ্ট্র পরিচালনার বিষয়; স্থানীয় সরকার পরিচালনার বিষয়। সেখানে নিয়ম করেছিল যেন যে কেউ চাইলেই প্রার্থী হতে না পারে। এজন্য প্রার্থী সমর্থনে সই নেয়ার বিধান করা হয়েছিল। এটা গণতন্ত্রের পরিপন্থি। এছাড়া যারা সমর্থন দেন তারা অনেক সময় নির্যাতনের শিকার হন। এ ধরনের অভিযোগ আছে। তাই আমরা সেটা তুলে দিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘ওই বিধান প্রতিপালন করতে গিয়ে সমর্থন দেখানোর জন্য প্রার্থীরা ছলচাতুরি বা মিথ্যার আশ্রয়ও নিতেন। প্রার্থী নিজেই ডানহাত, বাম হাত মিলিয়ে সই করতেন। তাই এ ধরনের আইন কেন থাকবে যা ন্যায়ের পক্ষে না? তাই তুলে দিয়েছি। এটা অন্যায় করার জন্য মানুষকে উৎসাহিত করে।’
এক প্রশ্নের জবাবে সাবেক এ ইসি সচিব বলেন, ‘কোনো দল থেকে প্রার্থী না দিলে স্বতন্ত্র থেকে দাঁড়াবে। এক্ষেত্রে কারোরই সমর্থনসূচক সই লাগবে না। জেনে-বুঝেশুনে গণতন্ত্র ও রাজনীতির জন্য যেটা সহায়ক, সেটা তো করতে হবে। কোনো রাজনৈতিক দলকে সুবিধা দেয়ার জন্য নয়। তাহলে তো সংসদেও (দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন) করতাম!’
স্থানীয় নির্বাচন দলীয়ভাবে করার বিষয়ে এ কমিশনার বলেন, ‘পৃথিবীর অনেক দেশেই তৃণমূলে রাজনৈতিক নির্বাচন হয়। আমাদের এখানে সেটা আগে ছিল না। পরে এখানেও করা হয়েছিল। হয়তো ভালো দিক চিন্তা করেই করেছিল। এখন হয়ত তারা মনে করছে, অপপ্রয়োগ বেশি হচ্ছে।’
লালমনিরহাট জেলা পরিষদ উপনির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মো. আবু বক্কর সিদ্দিক শ্যামল বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।
বুধবার দুপুরে লালমনিরহাট জেলা নির্বাচন অফিসার ও রিটার্নিং অফিসার মো. লুৎফুল কবীর সরকার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এ ফলাফল ঘোষণা করেন।
উপনির্বাচনে ৬টি কেন্দ্রে চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. আবু বক্কর সিদ্দিক মোবাইল ফোন প্রতীকে ২৮২ ভোট পান। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট সফুরা বেগম কাপ-পিরিচ প্রতীকে পর ২৭৩ ভোট। ফলে ৯ ভোট বেশি পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন আবু বক্কর সিদ্দিক।
এছাড়া মোটরসাইকেল প্রতীকে মো. মমতাজ আলী ৫৮টি, চশমা প্রতীকে মো. আশরাফ হোসেন বাদল ৭টি ভোট পেয়েছেন। তবে আনারস প্রতীকের প্রার্থী মো. নজরুল হক পাটোয়ারী ভোলা একটি ভোটও পাননি।
বিজয়ী হয়ে আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ‘আমার সঙ্গে জেলার নেতারা বিরোধিতা করলেও হাইকোর্টের রায় নিয়ে মাত্র ৪ দিন ভোটের মাঠে থেকে নির্বাচন করে বিজয়ী হয়েছি। জেলা পরিষদকে এতদিন কুক্ষিগত করে রাখা হয়েছিল। এখন আমি নতুনভাবে ঢেলে সাজাতে চাই।’
এ সময় তাকে বিজয়ী করায় জেলার সকল ভোটারদের তিনি অভিনন্দন জানান।
আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এমপি-মন্ত্রীরা প্রভাব খাটালে তাদেরই মানক্ষুণ্ণ হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) অবসরপ্রাপ্ত বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. আহসান হাবিব খান।
মঙ্গলবার দুপুরে ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে ঝিনাইদহসহ পাঁচ জেলার নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
এ কমিশনার বলেন, ‘আমরা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি, আমাদের সম্মানিত রাজনৈতিক নেতাবৃন্দ এই ভোট কার্যক্রমকে আন্তরিকভাবে সহায়তা করবেন, কোনো পক্ষপাতিত্ব বা প্রভাব বিস্তার করবেন না। যদি এর বিচ্যুতি হয়, তাহলে তাদের সম্মান ক্ষুণ্ণ হবে। এ ব্যাপারে আমরা খুব সজাগ ও সচেতন।’
তিনি বলেন, ‘এবার যেহেতু প্রার্থীর সংখ্যা বেশি হবে, তারপরও সহিংসতা হবে না বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী, প্রশাসকসহ-সংশ্লিষ্টরা আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন।’
গত নির্বাচনের মতোই আগামী দিনগুলোতে সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করে আহসান হাবিব খান বলেন, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আপনারা আমাদের যেভাবে সহায়তা করেছেন, ঠিক একইভাবে শুধু এই উপজেলা নির্বাচনেই নয়, ভবিষ্যতের সকল নির্বাচনে আমাদের সহযোগিতা করবেন। আপনাদের কাছে বস্তুনিষ্ট সংবাদ পরিবেশন কামনা করছি।’
এর আগে, জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে সভায় ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, মাগুরা, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর জেলার নির্বাচন কর্মকর্তাসহ নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকর্তাদের নির্বাচন নিয়ে নানা বিষয়ে আলোচনা করেন তিনি।
সভায় ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক এসএম রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে পাঁচ জেলার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ নির্বাচন কর্মকর্তারাও বক্তব্য রাখেন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য