‘ওই ব্যাটা, যাত্রী তুলিস কেন?’
‘কাছে আয়, এক টাকাও বেশি ভাড়া পাবি না।’
সদরঘাট থেকে উত্তরার পথে ছেড়ে আসা ভিক্টর ক্লাসিক পরিবহনে গুলিস্তান গোলাপ শাহ বাজার এলাকায় দুই যাত্রী চিৎকার করে চালকের সহকারীকে হুমকি দিচ্ছিলেন।
কিন্তু তিনি গা করছিলেন না, আর একপর্যায়ে আরও অনেক যাত্রী যখন ভাড়া বাড়ানোর আগের হারে টাকা দেয়ার হুমকি দিতে থাকেন, তখন সেই সহকারী দরজা বন্ধ করেন।
ততক্ষণে বাসের বেশ কিছু আসনে দুজন করে বসেছেন। আর দাঁড়িয়েও ছিলেন অন্তত আটজন।
এটি কোনো এক দিন বা কোনো একটি সময়ের চিত্র নয়। করোনাকালে বিধিনিষেধের আওতায় বাসে যাত্রী অর্ধেক নিয়ে চলাচল করতে নির্দেশ দিয়েছে সরকার। পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের যেন লোকসান না হয় সে জন্য ভাড়া ৬০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।
কিন্তু যখন রাস্তায় বেশি মানুষ থাকে, তখন বাসে বেশি যাত্রী তোলা হচ্ছে নিয়মিত, আর ভাড়া আদায়ের ক্ষেত্রে ঠিকই নতুন হারে নেয়া হচ্ছে। এ নিয়ে ঝগড়াঝাঁটি এক নিয়মিত চিত্র। কিন্তু যাত্রীরা পেরে ওঠেন না কিছুতেই।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বাসে ওঠার জন্য ডাকতে থাকা পরিবহন শ্রমিকদের জিজ্ঞেস করলেই তারা জানান, ভেতরে আসন ফাঁকা। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিশেষ করে যে যাত্রীরা কোনো রুটের মাঝপথ থেকে কোথাও যান, তারা জেনেবুঝেই বাড়তি যাত্রী হয়ে উঠতে চান। কারণ, তাদের হাতে এ ছাড়া উপায় অটোরিকশা ভাড়া করা। তাই কোথাও কোথাও জোর করে বাসে উঠতেও দেখা যায়।
এ ক্ষেত্রে পরিবহন শ্রমিকরা বাধা দেয়ার ভান করলেও আসলে ঠেকাতে চান না। এই ভানটা তারা আসলে করেন ভেতরে থাকা যাত্রীদের প্রবোধ দিতে।
গত মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সময়ে বাস ভ্রমণে এমন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছে।
যা যা ঘটে বাসে
তিন দিনের অভিজ্ঞতা সংক্ষেপ করলে যেটা হয়, তা হলো, ভোর ছয়টা থেকে যেসব গণপরিবহন চলাচল করে তা সকাল ৮টা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললেও ৮টার পর আর সেভাবে চলে না। তখন অফিসগামী যাত্রীর ভিড় বেড়ে গেলে যাত্রী তোলা হয় দাঁড় করিয়ে। আর দাঁড়ানো যাত্রীকে দেখে সহানুভূতিশীল হয়ে কেউ কেউ পাশের আসনে বসতে দেন।
এরপর যখন ভাড়া তুলতে আসেন তখন তখন বাসে শুরু হয় ঝগড়াঝাঁটি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই যাত্রীরা যখন চেপে বসেন, তখন হেলপার বলেন, ‘অফিস টাইম দুই-চাইরজন তো উঠবই’। আবার বলেন, ‘কী করুম কন, জোর কইরা তো উঠল’।
রাইদা পরিবহনের একটি বাসে পাশাপাশি আসনে বসেছিলেন স্বামী-স্ত্রী। উত্তরা থেকে যাবেন চিটাগাং রুটের একটি গন্তব্যে। তারা বলছিলেন, পাশাপাশি আসনে বসেছেন, তাই ভাড়া দেবেন আগের হারে। কিন্তু মানলেন না, ৬০ শতাংশ বেশি হারেই তাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করা হলো।
অফিস সময় শেষে বিকেল ৫টার পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত যখন যাত্রী চাপ বেশি থাকে, তখন দুই আসনে একজন যাত্রীর এই নীতিমালা পালন করতেই দেখা যায় না।
মঙ্গলবার সকাল ১০টায় রাজধানীর মৌচাক থেকে বলাকা পরিবহনের একটি বাসে উঠে দেখা যায় পেছনের সারিতে ছয়টা সিট ফাঁকা। সায়েদাবাদ থেকে ছেড়ে উত্তরামুখী বাসটি মগবাজার আসার পর পাল্টে যায় চিত্র।
বাসে আসনসংখ্যার বিপরীতে বেশি যাত্রী উঠে পড়েন। চালকের সহকারী বাধা দিলেও অনেক যাত্রী রাগান্বিত হয়ে তাকে ধাক্কা দিয়ে বাসে ঢুকে পড়েন। তবে অনেকেই তাদের পাশের ফাঁকা আসন ছাড়তে রাজি না হওয়ায় দাঁড়িয়ে যেতে হয় তাদের। এই চিত্র চলে মহাখালী পর্যন্ত।
বাসে দাঁড়িয়ে থাকা এক যাত্রী বলেন, ‘আপনি মেবি সিট ফাঁকা থাকতে উঠতে পেরেছেন। আমি ২৫ মিনিট ধরে ওয়্যারলেস গেটে দাঁড়িয়ে ছিলাম। বাসে উঠতে না পেরে হেঁটে মগবাজার আসি। বৃষ্টি ছিল। মহাখালী যাব। এভাবে কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকব আমাকে আপনিই বলেন। আপনি হলে কী করতেন?’
অন্য কোনো বাহনে যেতে পারতেন এমন প্রশ্নে বলেন, ‘সিএনজিতে ভাড়া দেড় শ টাকা। একই অবস্থা বাইকে। আর আমি ১৫ টাকা দিয়ে যেতে পারব। এভাবে এত জনসংখ্যার শহরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাসে যাতায়াত করা যায় না।’
বাসের হেলপার সুমন মিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই সময়টাতে যাত্রীগো চাপ বেশি থাকে। বাস কম থাকায় আমরা নিরুপায় থাকি। অনেকেই ভাড়া নিয়া সমস্যা করেন। তবে আমি কিন্তু কাউকেই ভাই উঠতে বলি নাই।’
যাত্রী বেশি উঠলেও কারও কাছ থেকেই ভাড়া কম নিতে দেখা গেল না। দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীরা নিজেরাই উঠেছেন বলে আপত্তি করেননি। আর বসে থাকা যাত্রীরা হেলপারকে কিছুক্ষণ গালাগাল করে ঠিকই ৬০ শতাংশ বেশি হারে ভাড়া মিটিয়ে রাগে গজগজ করতে থাকেন।
ডেমরা থেকে বাইপাইলগামী লাব্বাইক পরিবহনেও একই চিত্র দেখা যায়। বিচ্ছিন্ন ঢাকা কার্যকর করার কারণে বাসটি এখন গাবতলী পর্যন্ত যেতে পারে। তবে নগরীর কয়েকটি স্থানে এই বাসে স্থান সংকুলন করা যায় না সময়ভেদে। আবার একই পরিবহন বাকি সময় স্বাস্থ্যবিধি মেনেই চলাচল করে।
ঝগড়া যাত্রীর সঙ্গে যাত্রীরও
যেসব যাত্রী মাঝপথে ওঠেন, তখন বাসে আসন ফাঁকা না থাকলে তাদের বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দাঁড়িয়ে যেতে হয়। কারণ, বেশি ভাড়া পরিশোধ করে খুব কমসংখ্যক যাত্রীই আসন ভাগাভাগি করতে রাজি থাকেন।
লাব্বাইক পরিবহনের ওই বাসে ডেমরা থেকে বাসে ওঠেন শাখাওয়াত হোসেন। যাবেন গাবতলী। সেখান থেকে কোনো রকমে সেতু পার হয়ে যাবেন সাভারে।
কারওয়ানবাজার আসার পর এক যাত্রী জোর করে বাসে উঠে পড়েন। শাখাওয়াতের সিটে বসতে চাইলে বাধে বিপত্তি। শুরু হয় ঝগড়া।
শাখাওয়াত বলেন, ‘উনি জোর করে বাসে উঠেছেন। এটা আমি জানালা দিয়ে দেখি। বাসের সিট কিন্তু সব ভর্তি। বাসের সবাই জানালার বিপরীতে বসেছেন বিধায় উনি অন্য কাউকে জিজ্ঞাসা করেননি। আমিই একমাত্র জানালার পাশে বসে ছিলাম। আমার এখানে বসতে চাইলেন। আমি বললাম যে, এখন তো এক সিটে একজনকেই বসতে হবে। আপনি পেছনের সিটে গিয়ে বসুন। উনি আমার সাথে তর্ক জুড়ে দিলেন। এখন সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।’
টেকনিক্যাল মোড়ে ঘুরে দেখা গেছে, মোহাম্মদপুর ও নিউমার্কেটগামী প্রজাপতি পরিবহন, পরিস্থান পরিবহন, সাভার পরিবহন, বৈশাখী পরিবহন, ডি লিংক ছাড়াও অনেকগুলো বাসে সব সিটে লোক বসানোর পর দাঁড় করিয়েও যাত্রী নেয়া হচ্ছে। তবে সকালের চিত্রে এমন দেখা গেলেও দুপুরের পর তা পালটে যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অনেকে প্রশ্ন এড়িয়ে যান। সাভার পরিবহনের চালক মানিক মিয়া বলেন, ‘সব সময় তো মানবার পারি না। যারা নিজেরা পরিচিত তারা দুই সিট মিলায়া বসে।’
তবে যাত্রীরা কেউ কারও পরিচিত নন। কোনো তদারকি হয় না বিধায় তারা একসঙ্গেই বসে যাতায়াত করছেন।
হাতিরঝিলের চক্রাকার বাসে ভিড় আরও বেশি
বুধবার বিকাল সাড়ে ৪টা। গন্তব্য রাজধানীর হাতিরঝিলের মগবাজার অংশ থেকে মেরুল বাড্ডা। এই রুটের জন্য নির্ধারিত রয়েছে হাতিরঝিল চক্রাকার বাস সার্ভিস। বাসে উঠেই প্রচণ্ড ভিড় দেখা যায়।
চালক জব্বার মিয়া বলেন, ‘অরজিনালি স্বাস্থ্যবিধি যাত্রীরা মানতে চায় না। যাত্রীগো না করলে তারা ধাক্কা দিয়ে উঠতে চায়। আমি যদি যাত্রী থাকি আমিও ধাক্কাইয়া উঠি। ওই যে দেখেন একটা লোক দৌড়াইয়া আসতাছে। গাড়ির মধ্যে জায়গা আছে কি না নাই সে কিন্তু এটা বুঝে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘গাড়ি হইল ৪৫ সিটের। অফিস টাইমে স্বাস্থ্যবিধি মানা হয় না। কারণ যাত্রীদের সংখ্যা বেশি আর গাড়ির সংখ্যা কম।’
এই রুটে নিয়মিত একজন যাত্রী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের উচিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। তবে অফিস শুরু ও শেষের সময়ে অনেকক্ষণ বাসের অপেক্ষা করতে হয়। ক্লান্ত থাকার কারণে বাসে উঠতে হয় এভাবেই। কিছু করার নাই ভাই।’
দুই আসনে এক যাত্রী নীতি তুলে নেয়ার দাবি
চালক, শ্রমিকরা মানছেন না, যাত্রীরাও অনন্যোপায় হয়ে চাপছেন বাসে। এই অবস্থায় সামাজিক দূরত্ব বা স্বাস্থ্যবিধি যখন প্রতিপালন করা হচ্ছে না, তখন আর ৬০ শতাংশ বেশি ভাড়া কেন নেবে- এমন প্রশ্ন করলেন একাধিক যাত্রী।
সাখাওয়াত নামে এক যাত্রী বলেন, ‘দাঁড়িয়ে না নিয়ে বাসে সিট ফুল থাকুক। আর আগের ভাড়া ফিরে আসুক। তাহলে যাত্রীদের টাকাও বাঁচল আর ঝগড়াঝাঁটিও হলো না।’
তবে যখন সিটিং সার্ভিসে চলত, তখনও বাসে দাঁড়িয়ে যাত্রী তোলা ছিল এক স্বাভাবিক প্রবণতা। আর এ নিয়েই তখন পরিবহন শ্রমিকদের সঙ্গে যাত্রীর ঝগড়াঝাঁটি-গালাগাল চলত।
আরও পড়ুন:চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার ভাটিয়ারি এলাকায় পৃথক ঘটনায় ট্রেনে কাটা পড়ে দুজন নিহত হয়েছেন।
শুক্রবার ভোর ৫টা ও বিকেল সাড়ে চারটার দিকে ভাটিয়ারী রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনাগুলো ঘটে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে রেলওয়ে পুলিশ জানিয়েছে, মরদেহদুটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
স্থানীয়দের বরাতে রেলওয়ে পুলিশ জানায়, এদিন ভোরে ভাটিয়ারি এলাকায় চট্টগ্রাম অভিমুখী তুর্ণা নিশিতা এক্সপ্রেসের নিচে কাটা পড়ে মারা যান ভাটিয়ারী ইউনিয়নের জাহানাবাদ গ্রামের বিপ্লব দাশ নামের ২৩ বছর বয়সী এক যুবক।
পরে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ঢাকাগামী কক্সবাজার এক্সপ্রেসের নিচে কাটা পড়েন স্থানীয় ভাটিয়ারী বাংলাদেশ মিলিটারি অ্যাকাডেমির সিভিল স্টাফ ২৪ বছর বয়সী মো. আসিফ উদ্দিন।
দুটি ঘটনার পরই মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে ফৌজদারহাট রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মো. ফারুক হোসেন বলেন, ‘শুক্রবার সকালে ট্রেনে কাটা পড়ে নিহত হওয়া বিপ্লব মানসিক সমস্যাগ্রস্ত ছিলেন বলে জানিয়েছেন তার পরিবারের সদস্যরা।’
বিএনপির নেতাদের বক্তব্য সার্কাসের মতো মনে হয় বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।
শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ-পিআইবির মহাপরিচালক একুশে পদকে ভূষিত সাংবাদিক জাফর ওয়াজেদ গ্রন্থিত ‘ভুবনজোড়া শেখ হাসিনার আসনখানি’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
বিএনপি আবার বিদেশি দূতাবাসে ধরনা দিচ্ছে-সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে হাছান মাহমুদ বলেন, যে কোনো কিছুতেই বিদেশিদের কাছে ধরনা দেয়া বিএনপির সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দুর্বলতা। বাংলাদেশে ক্ষমতার উৎস জনগণের কাছে না গিয়ে বিদেশিদের কাছে গেলে বিদেশিরা তো বিএনপিকে কোলে করে ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে না।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের ক্ষমতায় বিশ্বাসী। জনগণই ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে নির্বাচিত করে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছে। ফলে বিএনপি নেতাদের বক্তব্য সার্কাসের মতো মনে হয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মৃত্যুঞ্জয়ী শেখ হাসিনা সব প্রতিবন্ধকতা উপড়ে ফেলে দেশ ও জাতিকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। বারবার মৃত্যু উপত্যকা থেকে ফিরে বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা বিচলিত হননি, বরং আরো দৃপ্ত পদভারে জনগণের সংগ্রামের কাফেলাকে এগিয়ে নিয়েছেন, দেশকে বিশ্বের বুকে মর্যাদা ও সম্মানের আসনে আসীন করেছেন।
তিনি বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার মতো নেতৃত্ব বর্তমান বিশ্বে বিরল। তিনি শুধু দেশেরই নন, তিনি আজ বিশ্বনেতা। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বলেছেন, শেখ হাসিনা শুধু তারই নন, তার সন্তানদেরও প্রেরণা। ভারতের প্রিয়াঙ্কা গান্ধী শেখ হাসিনাকে জড়িয়ে ধরে তাকে নিজের প্রেরণা বলে উল্লেখ করেছেন। ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত বলেছেন, আরব বিশ্বে একজন শেখ হাসিনা থাকলে হয়তো গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করা যেতো।
হাছান বলেন, শুধু তাই নয়, যে কোনো বিশ্বসভায় বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা যোগ দিলে তিনিই মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হন।
মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশি
এ সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ ও সেনাবাহিনীর ২৮৫ জন সদস্যকে মিয়ানমারের জাহাজে নৌপথে ফেরত যাওয়ার ক্লিয়ারেন্স দেয়া হয়েছে।
তিনি জানান, ২২ এপ্রিল জাহাজে তাদের ফেরত নিতে সম্মত মিয়ানমার। এ ছাড়া মিয়ানমারে আটকে পড়া ১৫০ জন বাংলাদেশিও একই জাহাজে ফেরত আসবে। তবে জাহাজের যাত্রা সমুদ্র ও মিয়ানমারের পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পিআইবির কর্মকর্তা ও গণমাধ্যম প্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
গাইবান্ধা জেলা কারাগারে নারী হাজতিকে হাত-পা বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগের পর প্রধান অভিযুক্ত কারাগারের প্রধান কারারক্ষী আশরাফুল ইসলামসহ দুই কারারক্ষীকে বদলি করা হয়েছে।
শুক্রবার দুপুরে তাদের বদলির বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন গাইবান্ধা জেলা কারাগারের জেল সুপার জাভেদ মেহেদী। বৃহস্পতিবার রাতে তাদের বদলি করা হয় বলে জানান তিনি।
বদলি হওয়া অপর কারারক্ষীর নাম সাবানা খাতুন। তাদের মধ্যে প্রধান কারারক্ষী আশরাফুল ইসলামকে দিনাজপুর কারাগার এবং সাবানা খাতুনকে ঠাঁকুরগাও কারাগারে বদলি করা হয়েছে।
এর আগে গাইবান্ধা জেলা কারাগারের ভেতর আশরাফুল ইসলাম ও মহিলা কয়েদি (রাইটার) মেঘলা খাতুনের মধ্যে চলমান অবৈধ কার্যকলাপ দেখে ফেলায় বিষয়টি জানাজানির ভয়ে নারী হাজতি সীমাকে অমানুষিক নির্যাতনের অভিযোগ আনেন ভুক্তভোগীর মা করিমন নেছা।
লোমহর্ষক নির্যাতনের বর্ণনা তুলে ধরে হাজতি সীমার উন্নত চিকিৎসা ও নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগও দেন করিমন নেছা।
ওই অভিযোগপত্রে গাইবান্ধা জেলা কারাগারের প্রধান কারারক্ষী (সুবেদার) আশরাফুল ইসলাম, নারী কারারক্ষী সাবানা খাতুন ও তহমিনা, কয়েদি মেঘলা খাতুন, রেহেনা ও আলেফা, সিআইডি আনিছ ও হাবিলদার মোস্তফাকে অভিযুক্ত করা হয়।
মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) জেলা প্রশাসককে দেয়া অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, হাজতি মোর্শেদা খাতুন সীমা একটি মামলায় (হাজতি নম্বর-৫০৮) প্রায় ৫ বছর ধরে গাইবান্ধা জেলা কারাগারে বন্দি। কিছুদিন আগে কারাগারে কর্মরত সুবেদার আশরাফুল ইসলাম ও মহিলা কয়েদি (রাইটার) মেঘলা খাতুনের মধ্যে চলমান অবৈধ কার্যকলাপ দেখে ফেলেন সীমা।
বিষয়টি জানতে পেরে সুবেদার আশরাফুল ও মহিলা কয়েদি মেঘলা খাতুন সীমার ওপর ক্ষিপ্ত হন। ঘটনা জানাজানির ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে তারা কারাগারের ভেতরে সীমাকে বিভিন্নভাবে মানসিক নির্যাতন করতে থাকেন।
একপর্যায়ে সুবেদার আশরাফুল ও তার সহযোগীরা হাজতি সীমার স্বামী খোকন মিয়াকে গাইবান্ধা কারাগারে ডেকে আনেন। তারা অভিযুক্তরা সীমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা ও আপত্তিকর তথ্য দিয়ে সীমার সংসার ভেঙে দেন।
এতসবের পর হাজতি সীমা এসব ঘটনা জানিয়ে জেল সুপারের কাছে বিচার দেবেন জানালে সুবেদার আশরাফুল তাকে ভয়-ভীতি ও হুমকি দেন। এক পর্যায়ে ২০ মার্চ দুপুরে সুবেদার আশরাফুলের নেতৃত্বে মহিলা কয়েদি মেঘলা খাতুন, রেহেনা ও আলেফা এবং কারারক্ষী তহমিনা ও সাবানা কারাগারের মহিলা ইউনিটের ভেতরের বারান্দায় লাঠি দিয়ে পেটাতে থাকেন। পরে সেলের ভেতরে নিয়ে সীমাকে হাতকড়া পরিয়ে রশি দিয়ে দুই পা বেঁধে আবারও মারধর করেন। উপরন্তু নির্যাতনের এসব ঘটনা বাইরে প্রকাশ করলে সীমাকে মেরে ফেলার হুমকিও দেয়া হয়।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, করিমন নেছা একাধিকবার তার মেয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চাইলেও সে সুযোগ দেয়া হয়নি। অবশেষে হাজিরার তারিখে আদালতে মেয়ের সাক্ষাৎ পান মা করিমন নেছা। সেদিন সীমা মায়ের কাছে নির্যাতনের ঘটনার লোমহর্ষক বর্ণনা দেন এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখমের চিহ্ন দেখান।
অভিযোগ পেয়ে গত ১৬ এপ্রিল ঘটনার তদন্তে জেলা কারাগারে যান গাইবান্ধা জেলা প্রশাসাকের কার্যালয়ের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিসি) মো. মশিউর রহমান।
সেদিন নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘খুব দ্রুত জেলা প্রশাসকের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেব। এরপরই জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে জেলা প্রশাসন।’
শুক্রবার অভিযুক্তদের বদলির বিষয়ে জানতে চাইলে নিউজবাংলাকে তা নিশ্চিত করেন গাইবান্ধা জেলা কারাগারের জেল সুপার জাভেদ মেহেদী।
এ সময় এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অভিযোগের বিষয়টি জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তীতে ব্যবস্থা হবে।’
আরও পড়ুন:কদিন ধরেই তীব্র গরম। দেশের কোথাও মাঝেমধ্যে বৃষ্টি হচ্ছে, তবে গরম অবশ্য কমছে না। আবহাওয়া আপাতত এমনই থাকবে।
শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে এ তথ্য দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কুমিল্লা ও কিশোরগঞ্জ অঞ্চলসহ ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
এতে বলা হয়, একই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
অধিদপ্তর বলছে, রাজশাহী, পাবনা ও টাঙ্গাইল জেলাসহ খুলনা বিভাগের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং চাঁদপুর ও মৌলভীবাজার জেলাসহ ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগের অবশিষ্টাংশ ও বরিশাল বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বৃদ্ধি পেতে পারে।
আবহাওয়ার সার্বিক পর্যবেক্ষণে বলা হয়, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।
আগামী পাঁচ দিনের পূর্বভাসে বলা হয়েছে, তাপপ্রবাহ প্রায় একই রকম থাকতে পারে। আবহাওয়ায় তেমন পরিবতর্তন আসবে না।
মিয়ানমারে চলমান সংঘাতের প্রেক্ষাপটে সে দেশ থেকে বাংলাদেশে ঢুকে আশ্রয় নিয়েছেন দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) আরও ১৩ সদস্য।
বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিব) সদর দপ্তরের জনসংযোগ বিভাগ থেকে এক বার্তায় শুক্রবার এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, শুক্রবার নতুন করে আরও ১১ জন (জীম্বংখালী -৩ জন এবং হাতিমারাঝিরি-৮ জন) বিজিপি সদস্য আশ্রয় গ্রহণ করেছে। এখন পর্যন্ত সর্বমোট ২৮৫ জন বাংলাদেশে অবস্থান করছে।
বিজিবি জানিয়েছে, বাংলাদেশে ঢোকা বিজিপি সদস্যদের তাদের দেশে ফেরত পাঠানো প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, দলের অনেক নেতাকর্মীকে সরকার কারাগারে নিক্ষেপ করে আলো-বাতাস থেকে বঞ্চিত করছে।
শুক্রবার বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ কারাবন্দি নেতাদের মুক্তির দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে জিয়া প্রজন্ম দল আয়োজিত অবস্থান কর্মসূচিতে রিজভী এ কথা বলেন। খবর ইউএনবির
তিনি আরও বলেন, বিনা কারণে মাসের পর মাস কারাগারে বন্দি থাকতে থাকতে কারাগারগুলো বিএনপির অনেক নেতা-কর্মীর স্থায়ী আবাসস্থলে পরিণত হয়েছে।
রিজভী বলেন, মহাসচিব, স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান, যুগ্ম মহাসচিবের মতো শীর্ষ নেতারা তিন-চার মাস ধরে কারাভোগ করে মুক্তি পেয়েছেন।
শেখ হাসিনার বিএনপি নেতাকর্মীদের কারাগারে পাঠানোর নীতি এখনো শেষ হয়নি বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বিএনপিকে ভয় পান এবং জানেন যে তার পক্ষে কোনো জনসমর্থন নেই।
জনগণের সমর্থনহীন সরকার স্বৈরাচারী হয়ে যায় উল্লেখ করে রিজভী বলেন, জনগণ যখন অধিকারের জন্য আওয়াজ তোলে তখন তারা দমন করে।
এই বিএনপি নেতা বলেন, তারা দমন-পীড়নের সব উপায় অবলম্বন করে, যেমন- আটকে রাখা, নির্যাতনের জন্য আয়না ঘর তৈরি করা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যবহার করে প্রতিপক্ষকে হত্যা করা এবং বিরোধী দলকে ঘায়েল করতে দলীয় ক্যাডারদের ব্যবহার করা।
তিনি দাবি করেন, ৭ জানুয়ারির ডামি নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ সরকার বিএনপির ২৫ থেকে ২৬ হাজার নেতা-কর্মীকে কারাগারে পাঠিয়েছে।
রিজভী আরও বলেন, বিএনপির বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী এখনো কারাগারে রয়েছেন। আর কয়েকজন ৩ থেকে ৪ মাস কারাভোগের পর বের হতে পেরেছেন।
বিএনপির এত সদস্য কেন কারাগারে, তার কোনো সদুত্তর সরকারের কাছে আছে কি না জানতে চান রিজভী।
অবৈধভাবে অর্জিত রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্যই প্রধানমন্ত্রী এসব করছেন বলে অভিযোগ করেন বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা।
শেরপুরের নকলায় বসতবাড়ির সীমানা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে এক নারীর লাঠির আঘাতে প্রতিবেশি মোরাদ হোসেন নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার পর ওই নারী ও তার মেয়েকে আটক করেছে পুলিশ।
শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে উপজেলার টালকী ইউনিয়নের পূর্বটালকী গ্রামে ঘটনাটি ঘটে।
নিহত ৫৫ বছর বয়সী মোরাদ হোসেন নকলার পূর্বটালকী গ্রামের মৃত রহিম মাস্টারের ছেলে। চাকরির সুবাদে রাজধানী ঢাকায় বসবাস করতেন তিনি।
নকলা থানার ওসি মো. আব্দুল কাদের মিয়া ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
স্থানীয়দের বরাতে পুলিশ জানায়, নকলার মোরাদ হোসেন দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীর কল্যাণপুরে নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে চাকরি করতেন। অনেকদিন থেকে তার প্রতিবেশি চাচাতো ভাই জালাল উদ্দিনের সঙ্গে বসতবাড়ির সীমানা নির্ধার্ণ নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছিল। শুক্রবার সকালে ছুটিতে ঢাকা থেকে বাড়িতে আসেন মোরাদ। বাড়িতে প্রবেশ করার পর তার প্রতিবেশি চাচাত ভাইয়ের বউয়ের সঙ্গে ঝগড়া শুরু হয়। এক পর্যায়ে উত্তেজিত ওই নারী লাঠি দিয়ে মোরাদের মাথার পেছনে আঘাত করেন। এতে আহত হয়ে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে স্থানীয়রা মোরাদকে নকলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষনা করেন।
ঘটনার পর জালাল উদ্দিনের স্ত্রী ও মেয়েকে আটক করে পুলিশ।
নকলা থানার ওসি মো. আব্দুল কাদের মিয়া বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই নারীকে আটক করা হয়েছে। মরদেহের ময়নাতদন্তের জন্য শেরপুর জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পরবর্তী আইনি কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।’
মন্তব্য