রাজধানীর একটি ট্রাফিক সিগন্যালে সম্প্রতি সবুজ, হলুদ ও লাল বাতি একসঙ্গে জ্বলে ওঠায় বিভ্রান্তিতে পড়েন এক গাড়িচালক। সেই দৃশ্যের ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট দেন তিনি। লেখেন, ‘আমি এই সবগুলো সিগন্যাল লাইট একসঙ্গে দেখলে কী করব? ট্রাফিক বিভাগের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, এই সমস্যাগুলোর দ্রুত সমাধান চাই।’
বিষয়টি নজরে এলে এই বিভ্রান্তির কারণ খুঁজতে নামে নিউজবাংলা। শুরুতেই তেজগাঁও বিভাগ ট্রাফিক পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার শামীম আহমেদের কাছে তিন ধরনের বাতি একসঙ্গে জ্বলে ওঠার কারণ জানতে চাওয়া হয়।
তিনি বলেন, ‘ঢাকার ট্রাফিক বাতি ম্যানুয়ালি চলে। ট্রাফিক সিগন্যালগুলো সিটি করপোরেশন থেকে ইনস্টল করা হয়।’
এরপর নিউজবাংলার এই প্রতিবেদক ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (নগর ভবন) বিদ্যুৎ বিভাগে গেলে সেখানকার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জাফর আহমেদ বলেন, ‘এটি আমাদের দেখার বিষয় না। এটি দেখে সিটি করপোরেশনের ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং সার্কেল।’
এই সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কাজী মো. বোরহান উদ্দিনের কাছে গেলে বিরক্তি প্রকাশ করে নিউজবাংলার কাছে পাল্টা প্রশ্ন রাখেন তিনি। বলেন, ‘আমার কাছে কে আসতে বলেছে? আমার রুম কে দেখিয়ে দিয়েছে?’
নিজেই জানতে এসেছি বলার পর কাজী বোরহান উদ্দিন বলেন, ‘এটি দেখভালের দায়িত্ব বিদ্যুৎ বিভাগই নিয়েছে। আগে আমাদের দায়িত্বে থাকলেও এখন বিদ্যুৎ বিভাগই ট্রাফিক সিগন্যাল বাতির নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ। আপনি সেখানকার প্রধান প্রকৌশলীর কাছে গেলে প্রকৃত তথ্য পাবেন।’
তার এমন তথ্যে এই প্রতিবেদক ফের সিটি করপোরেশনের বিদ্যুৎ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী (তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী) জাফর আহমেদের কাছে যান।
আপনার কাছেই নাকি প্রকৃত তথ্য- নিউজবাংলার এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে ভালো বলতে পারব না। আপনি আমার বিভাগের এক্স ইঞ্জিনিয়ার (এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার) মাহতাবের কাছে যান।’
এ বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহতাব আহমেদের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘এটি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পুলিশকে দিয়ে দেয়ার অর্ডার হয়েছে। এটি এখন পুলিশ দেখছে। আমাদের কাছে নেই।’
পুলিশকে দায়িত্ব দেয়ার অর্ডারের কপি আপনাদের কাছে আছে কি না, জানতে চাইলে মাহতাব বলেন, ‘এ বিষয় আমি বলার কেউ না। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে চাই না। ইতিমধ্যে আপনাদের কারণে দুই দফায় দুদকে (দুর্নীতি দমন কমিশন) হাজিরা দিয়েছি।
‘আমার নাকি কানাডায় বাড়ি আছে, জেলায় জেলায় সম্পদ গড়েছি। আমি ভাই আপনাদের সঙ্গে কথা বলব না। আপনি জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাছেরের কাছে যান।’
দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাছেরের কাছে ট্রাফিক বাতির নিয়ন্ত্রণকারী কে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি সিটি করপোরেশনই দেখে।’
তাহলে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের এই ঠ্যালাঠেলির কারণ কী? জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের একাধিক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে জানান, সিটি করপোরেশনের বিদ্যুৎ ও ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং- এই দুই বিভাগের কর্মকর্তাদের ঠ্যালাঠেলিতেই রাস্তার ট্রাফিক সিগন্যালের বাতি কখনো জ্বলে, কখনো নেভে। রাস্তার গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণের জন্য এটি ব্যবহার হয় না।
তারা আরও জানান, এই ট্রাফিক বাতির কেনাকাটা, নিয়ন্ত্রণ ও রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় এটি ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) নিয়ন্ত্রণে যাওয়ার কথাবার্তা চলছে। ইতিমধ্যে মন্ত্রণালয় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। এ জন্যই ট্রাফিক সিগন্যালের নিয়ন্ত্রণ, রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব কোনো বিভাগই নিতে চাইছে না। ফলে রাজধানীর বিভিন্ন ইন্টারসেকশনের ট্রাফিক সিগন্যাল বাতিগুলো বিনা কারণে জ্বলে উঠছে। কোথাও একেবারেই অকার্যকর অবস্থায় রয়েছে।
নিউজবাংলার অনুসন্ধানে জানা যায়, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে নির্মল বায়ু ও টেকসই পরিবেশ (কেইস) প্রকল্পের অধীনে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করা হয়। ২০০৯ সালে শুরু হওয়া এ প্রকল্প শেষ হয় ২০১৯ সালের জুন মাসে।
এ প্রকল্পের আওতায় অত্যাধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ, নিরাপদে পথচারী চলাচল, জলাবন্ধতা নিরসন ও যানজট হ্রাস করার জন্য রাস্তা, ড্রেন, ফুটপাতের উন্নয়ন, বিদ্যমান ট্রাফিক সিগন্যালের উন্নয়ন ও নতুন ট্রাফিক সিগন্যাল স্থাপন করা।
এর আগে ২০০১-০২ অর্থবছরে ঢাকা মহানগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের জন্য বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ঢাকা আরবান ট্রান্সপোর্ট প্রকল্পের মাধ্যমে বিদ্যমান ৭০টি ইন্টারসেকশনে স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সিগন্যাল স্থাপন করা হয়। প্রকল্পটির আওতায় আরও ২৯টি ইন্টারসেকশনে নতুন ট্রাফিক সিগন্যাল স্থাপন করা হয়।
নির্মল বায়ু ও টেকসই পরিবেশ প্রকল্পের অতিরিক্ত বরাদ্দের (অ্যাডিশনাল ফিন্যান্সিয়ালের) আওতায় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ঢাকা মহানগরের ৪৩টি ইন্টারসেকশনে পুনরায় ট্রাফিক সিগন্যাল সচল করা হয়।
২০১৯ সালের জুনে কেইস প্রকল্প সমাপ্তির পর থেকেই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের এলাকাভুক্ত ৫৩টি ইন্টারসেকশনে স্থাপিত ট্রাফিক সিগন্যালের স্থাপনাসমূহ রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়নের জন্য করপোরেশনের বিদ্যুৎ বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সে হিসেবে এখন বিদ্যুৎ বিভাগের আওতায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন অংশে বিদ্যমান ট্রাফিক সিগন্যালগুলো রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করার কথা।
তবে অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রকল্প চলাকালীন ট্রাফিক সিগন্যালগুলো সচল অবস্থায় থাকলেও প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পরই নানা ত্রুটি ধরা পড়তে থাকে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, প্রকল্পের আওতায় ঢাকা মহানগরের ইন্টারসেকশনে ট্রাফিক সিগন্যাল উন্নয়নকাজ চলার সময় ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের ঊর্ধ্বতন ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা ট্রাফিক সিগন্যালের কাজসমূহ বাস্তবায়নে সহযোগিতা এবং উন্নয়নকাজ বাস্তবায়নের পর সিগন্যালসমূহ সচল অবস্থায় কার্যকরের বিষয়ে মাঠপর্যায়ে তদারকি করেছেন।
তাদের ভাষ্য, কেইস প্রকল্প বাস্তবায়নকালে প্রকল্পের আওতায় কেনা রিমোট কন্ট্রোলগুলো মাঠপর্যায়ে পরিচালনার জন্য ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের মাঠপর্যায়ে কর্মরত কর্মকর্তাদের হাতেকলমে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। প্রশিক্ষণ শেষে রিমোট কন্ট্রোলগুলো ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
ট্রাফিক পুলিশের ভাষ্য
ট্রাফিক পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে জানান, ট্রাফিক সিগন্যাল বাতির নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ সিটি করপোরেশন। তাদের কাছে বুঝিয়ে দেয়ার কথাবার্তা চললেও ডিএমপির ট্রাফিক কারিগরি ইউনিট গঠিত না হওয়ায় এবং মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ না পাওয়ায় রাস্তার ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের কাজ ম্যানুয়ালি করা হচ্ছে।
কেইস প্রকল্পের আওতায় পুলিশের তদারকিতে কিংবা পুলিশকে বুঝিয়ে দেয়ার যেসব কথাবার্তা বলা হচ্ছে, তা মোটেও ঠিক নয়। কারণ, প্রকল্পের অধীনে মাঠপর্যায়ের পুলিশের কাছে যেসব রিমোট কন্ট্রোল দেয়া হয়েছিল, তার সবই নষ্ট ছিল। এ কারণেই প্রকল্পটি ব্যর্থ হয়েছে।
কর্মকর্তারা আরও জানান, ট্রাফিক বাতিতে না চলে ম্যানুয়ালি নিয়ন্ত্রণের ঘটনায় হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন হয়। সেই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত পুলিশের কাছে জানতে চেয়েছিল, কেন ম্যানুয়ালি নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে?
সে বিষয়েও তারা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে জবাব দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। এখন বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত সিদ্ধান্তেই সড়কের অটোমেটিক ট্রাফিক সিগন্যাল নিয়ন্ত্রণের ভার পুলিশের কাছে আসার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মুনিবুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ট্রাফিক সিগন্যাল বাতির নিয়ন্ত্রণ সিটি করপোরেশনের হাতে। ২০১৯ সালের মাঝামাঝিতে তাদের কেইস প্রজেক্টের আওতায় কিছু রিমোট কন্ট্রোল পরীক্ষামূলকভাবে আমাদের হাতে দিয়েছিল। দেয়ার দু-এক দিন পর থেকেই সুইচ অপারেট করতে গেলে আর চলেনি। কোথাও দুই দিন, কোথাও তিন দিন, কোথাও সর্বোচ্চ সাত দিন চলেছে। তারপর আর সেগুলো কাজ করেনি। রিমোটগুলো আমাদের হাতে দিলেও রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়টি তো তাদের হাতে ছিল।’
সে জন্য সেগুলো ফেরত দিতে হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এর মধ্যে আবার কোভিড শুরু হয়ে গেল। পরে একটা গ্যাপ হয়ে গেল। প্রজেক্টের মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু বিষয়টি আর আমাদের কাছে পুরোপুরি বুঝিয়ে দেয়া হয়নি। আমরাও বুঝে পাইনি।
‘কোভিড আসায় গ্যাপ হয়ে যাওয়ায় আগের ম্যানুয়াল সিস্টেমেই ফিরে যেতে হয়েছে। বাই দিস টাইম কিছু কিছু সিগন্যাল চালু করা হয়েছিল। কিছু কিছু সিগন্যাল একেবারেই অকার্যকর ছিল। কিছু কিছু জায়গায় সব বাতিই জ্বলে। অনিয়ন্ত্রিত সিস্টেমের জন্যই এমন হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘রিমোট কন্ট্রোল ফেল করাতে সিগন্যাল বাতি ওন মেকানিজমে (একাই জ্বলে ওঠে, আবার একাই নিভে যায়) কাজ করছে। মেশিনের ত্রুটির কারণেই কোথাও তিনটি, কোথাও একটি বা দুটি বাতি জ্বলে থাকে। এ রকম বিবিধ সমস্যা আছে।
‘যেহেতু সমস্যা বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন রকম, সে জন্য বৃহত্তর স্বার্থে আমরা ম্যানুয়াল সিস্টেম চালু করেছি।’
এখন সিটি করপোরেশন ও মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথাবার্তা শুরু হয়েছে জানিয়ে ট্রাফিক বিভাগের শীর্ষ এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের একটা কারিগরি টিম তৈরির প্রক্রিয়া চলছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমাদের কাজ এগিয়েও গেছে। আমাদের কারিগরি টিম পূর্ণাঙ্গভাবে প্রস্তুত হওয়ার পর মন্ত্রণালয়ের অনুমতি সাপেক্ষে সিটি করপোরেশনের কারিগরি টিম আমাদের পূর্ণাঙ্গভাবে বুঝিয়ে দেয়ার পর অটোমেটিক সিস্টেমে যেতে পারব। এ জন্য সময় লাগবে।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ওরা ঠিক করে, আবার নষ্ট হয়। ওরা যেসব জিনিসপত্র আনে, আমার ধারণা সেগুলো বেটার কোয়ালিটির আনলে এই সমস্যা হতো না। মানুষ আরও বেশি উপকার পেতেন।
‘আমি আসলে জানি না। ওরা যেসব জিনিস আনে, সেগুলো সাসটেইন করতে পারে না, এগুলো পার্টসের সমস্যা, নাকি তাদের সিস্টেমের সমস্যা, কোনো না কোনো একটা সমস্যা আছেই।’
আরও পড়ুন:রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের পঞ্চম তলায় শিশু হৃদরোগ (কার্ডিয়াক) বিভাগের আইসিইউতে (নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র) লাগা আগুন পুরোপুরি নিভিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
শুক্রবার দুপুর দেড়টার কিছু সময় পর ওই আগুন লাগে। পরে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট প্রায় এক এক ঘণ্টার চেষ্টার পর ২টা ৪০ মিনিটে আগুন নেভাতে সক্ষম হয়। এ ঘটনায় ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, আগুন থেকে বাঁচতে ছোটাছুটি করে যে যেভাবে পেরেছেন সেভাবেই তাদের সন্তানদের নিয়ে হাসপাতালের বাইরের ফ্লোরে অবস্থান নিয়েছেন। প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের কারণে এমনিতেই বাইরে অসহনীয় গরম। গরম সহ্য করতে না পেরে শিশুরা কান্নাকাটি করছে।
ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের গণমাধ্যম কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম জানান, আগুন লাগার সংবাদ পেয়ে মোহাম্মদপুর ফায়ার স্টেশনের তিনটি ইউনিট, সিদ্দিক বাজার থেকে একটি ইউনিট, তেজগাঁও থেকে একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। ২টা ৪০ মিনিটে আগুন পুরো নিভিয়ে ফেলা হয়।
তবে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে লাগা এই আগুনে রোগীদের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে জানিয়েছেন হাসপাতালটির পরিচালক অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম।
তিনি বলেন, রোগীদের সবাইকে নিচে নামিয়ে আনা হয়েচে। ইউসিইউতে ১৭ জন রোগী ছিলেন আমরা নামিয়ে এনেছি। কারো কোনো ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
তিনি বলেন, হাসপাতালের বি ব্লকের ৫ তলার কার্ডিয়াক বিভাগের আইসিইউতে আগুন লেগেছে। আগুনের চেয়ে ধোঁয়া একটু বেশি ছড়িয়েছে। ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে আগুন নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে।
আগুনের সূত্রপাত কীভাবে করা হলো এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এখনও বিস্তারিত কিছু বলতে পারছি না। তবে আশঙ্কা করছি এসি থেকে আগুন লেগে থাকতে পারে।
পরে এক সংবাদ সম্মেলনে শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম জানান, কার্ডিয়াক বিভাগের আইসিইউতে লাগা আগুনের ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির পাঁচ সদস্যের মধ্যে কার্ডিয়াক আইসিইউ বিভাগের প্রধানকে আহ্বায়ক করা হয়েছে।
এ ছাড়া কমিটিতে একজন মেইনটেইন্যান্স ইঞ্জিনিয়ার, ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, ওয়ার্ড মাস্টার, একজন নার্স ও ফায়ার সার্ভিসের প্রতিনিধি রয়েছেন। তারা তিন দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবেন।
এদিকে বিকেলে দেখা যায়, আগুন লাগার পর হাসপাপতালের ৫ তলা ও ৪ তলার পুরো ধোঁয়ায় ভরে গেছে। এ সময় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগী ও তাদের স্বজনদের মধ্যে। আগুন থেকে বাঁচতে ছোটাছুটি করে যে যেভাবে পেরেছেন সেভাবেই তাদের সন্তানদের নিয়ে হাসপাতালের বাইরের ফ্লোরে অবস্থান নেন।
প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের কারণে এমনিতেই বাইরে অসহনীয় গরম। গরম সহ্য করতে না পেরে শিশুরা কান্নাকাটি করছে। ওপরে সবকিছু কখন ঠিক হবে তা জানেন না এ রোগী ও স্বজনরা। রোগীর অভিভাবক ও স্বজনরা আশঙ্কা করছেন, এমন অবস্থা চলতে থাকলে তাদের বাচ্চারা আরও অসুস্থ হয়ে পড়বে।
প্রচণ্ড জ্বর, সর্দি ও ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে ৭ দিন আগে শিশু হাসপাতাল আইসিইউতে ভর্তি হয় পাঁচ মাসের শিশু রাইয়ান। আগুন লাগার পর শিশুটির মা আতঙ্কে হুড়োহুড়ি করে শিশুটিকে নিয়ে নিচে নামে আসেন। বাচ্চাকে নিয়ে এই অসহনীয় গরমে অবস্থান নিয়েছেন হাসপাতালের বাইরে।
কয়েকজন শিশুর অভিভাবক জানান, পাঁচতলার আইসিইউতে যেসব বাচ্চা ছিল তাদের সমস্যা হচ্ছে। অনেক বাচ্চাকে অক্সিজেন দেয়া হচ্ছিল। তাদের অক্সিজেন ছাড়া নিচে নামানো হয়। তাদের প্রত্যেকের অবস্থা খুবই নাজুক ছিল।
মধ্যসত্ত্বভোগীরা যেন সুবিধা নিতে না পারে, সিন্ডিকেট করে কৃষকদের যেন বিপদে ফেলতে না পারে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুস শহীদ।
শুক্রবার সকালে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার দেখার হাওরে বোরো ধান কাটা উৎসবে মন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, মধ্যস্বত্বভোগীরা যেন সুবিধা নিতে না পারে, সিন্ডিকেট করে কৃষকদের যেন বিপদে ফেলতে না পারে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা সজাগ থাকলে কৃষকরা বঞ্চিত হবেন না।
মন্ত্রী বলেন, কৃষকের উৎপাদিত ফসলের সঠিক মূল্য দিতে চায় সরকার। সরকারের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সুনামগঞ্জ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। এখানে বন্যা দুর্যোগ বেশি হয়। খড়াও হয়। জেলা প্রশাসনকে বলেছি, কৃষকদের ফসলের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা নিতে।
তিনি বলেন, কৃষিকে সরকার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ। কৃষকের ধানের মূল্য নির্ধারণ করতে আগামী পরশু মিটিং করব। দাম নির্ধারণ করে সরকারের কাছে প্রস্তাবনা পাঠাব।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান, সুনামগঞ্জ ৪ আসনের সংসদ সদস্য ড. মোহাম্মদ সাদিক, ১ আসনের সংসদ সদস্য রনজিত চন্দ্র সরকার, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে ধরা আগুন প্রায় এক ঘণ্টা পর নিভিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
বাহিনীর মিডিয়া সেল জানায়, শুক্রবার বেলা দুইটা ৩৯ মিনিটে আগুন নেভানো হয়।
এর আগে ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণকক্ষের কর্মকর্তা লিমা খানম নিউজবাংলাকে জানান, বেলা একটা ৪৭ মিনিটে হাসপাতালের শিশু হৃদরোগ কেন্দ্রে আগুন ধরার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাহিনীর পাঁচটি ইউনিট আগুন নেভানোর কাজ করে।
আগুনে হতাহতের কোনো কোনো খবর পাওয়া যায়নি বলে জানান এ কর্মকর্তা।
তিনি আরও জানান, আগুন ধরার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির বিষয় তদন্তের পর বলা যাবে।
এদিকে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক বার্তায় জানায়, আগুন নিয়ন্ত্রণে যোগ দেয় নৌবাহিনী।
আরও পড়ুন:রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের কার্ডিওলজি বিভাগে শুক্রবার আগুন ধরেছে।
ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণকক্ষের ডিউটি অফিসার লিমা খানম দুপুরে নিউজবাংলাকে জানান, বেলা একটা ৪৭ মিনিটে আগুন ধরার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাহিনীর পাঁচটি ইউনিট আগুন নেভানোর কাজ করছে।
আগুনে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন এ কর্মকর্তা।
তিনি আরও জানান, আগুন ধরার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির বিষয় তদন্তের পর বলা যাবে।
আসন্ন জুলাইয়ের আগেই পান্থকুঞ্জকে নান্দনিক উদ্যানে পরিণত করা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।
বুধবার সকালে নগরীতে পান্থকুঞ্জ পার্কের অভ্যন্তরে পান্থপথ বক্স কালভার্টের পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে মেয়র এ কথা জানান।
মেয়র তাপস বলেন, পান্থকুঞ্জ উদ্যান এই এলাকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি উদ্যান। এটা উন্নয়নের জন্য ২০১৭ সালে মেগা প্রকল্পের আওতায় উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক কারণে ঢাকা লিমিটেড এক্সপ্রেসওয়ে এদিক দিয়ে নওয়ার একটি উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। ফলে এই পার্কের উন্নয়ন কাজটা বন্ধ হয়ে যায়।
তিনি বলেন, আমি দায়িত্ব নেওয়ার পরে তাদের সঙ্গে বিভিন্নভাবে আলোচনা করেছি, দেন-দরবার করেছি। এর ফলশ্রুতিতে তারা সুনির্দিষ্ট জায়গায় কাজ করবে। বাকি জায়গা আমাদেরকে ছেড়ে দিয়েছে। সেই জায়গায় আমরাই কাজ শুরু করেছি। বর্তমানে এটার অবকাঠামো উন্নয়ন চলছে।
মেয়র আরও বলেন, আমরা ঢাকাবাসীকে একটি নান্দনিক উদ্যান উপহার দিতে চাই। যদিও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজের কারণে উদ্যানের বড় একটা অংশ তাদের কাছে চলে যাবে। তারপরও যতটুকু রক্ষা করতে পেরেছি তা ঢাকাবাসীর জন্য অচিরেই উন্মুক্ত করে দিতে পারব। পার্কের উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। জুলাইয়ের আগে পান্থকুঞ্জকে একটি নান্দনিক উদ্যানে পরিণত করা হবে।
নিউমার্কেট এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে নতুন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে জানিয়ে মেয়র তাপস বলেন, গত বছর কয়েকটি জায়গায় জলাবদ্ধতা হয়েছে বিশেষ করে নিউমার্কেটের সামনে ও শান্তিনগরে। যেসব কারণে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল আমরা সেগুলো পরিষ্কার করেছি। আশা করি এবার আর জলাবদ্ধ থাকবে না। নিউমার্কেট এলাকার জন্য নতুন প্রকল্প নিয়েছি।
তিনি বলেন, এর মূল কারণ হচ্ছে পিলখানা ভেতর দিয়ে আগে যে পানি প্রবাহ প্রবাহের নর্দমা ছিল সেগুলো ২০০৯ সালে বন্ধ হয়ে যায়। এজন্য গত বছর সেখানে বড় ধরনের জলবদ্ধতা হয়েছে। আমরা তাদের সঙ্গে আলাপ করেছি এবং সম্মতি পেয়েছি। আমরা পিলখানার ভেতর দিয়ে পানি প্রবাহের বড় নর্দমা করছি। এটা করতে পারলে ওই এলাকায় আর জলাবদ্ধতা থাকবে না। এভাবে প্রত্যেকটা এলাকায় বিচার-বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
ঢাকায় বিচ্ছিন্ন কয়েকটি জায়গা ছাড়া তেমন কোন জায়গায় এখন দীর্ঘ সময় জলবদ্ধতা থাকে না উল্লেখ করে মেয়র বলেন, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমের আগে সূচি অনুযায়ী বক্স কালভার্ট, খাল ও নর্দমাগুলো পরিষ্কার করে থাকি। কারণ যাতে করে বর্ষার সময় পানি প্রবাহ স্বাভাবিক থাকে। এছাড়া ঢাকা শহরে আমরা ব্যাপকভাবে নর্দমা অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ চলমান রেখেছি।
পরে মেয়র সায়েদাবাদ টার্মিনাল সংলগ্ন সায়েদাবাদ সুপার মার্কেট, গেন্ডারিয়ার জহির রায়হান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান কেন্দ্র পাঠাগার ও ওয়ারীর তাজউদ্দীন স্মৃতি পাঠাগার পরিদর্শন করেন।
রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় যমুনা এক্সপ্রেস ট্রেনের একটি বগি লাইনচ্যুত হয়েছে।
বুধবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে জামালপুর থেকে ঢাকায় আসার পথে এ দুর্ঘটনায় পড়ে ট্রেনটি।
কমলাপুর রেলওয়ে থানার পরিদর্শক ফেরদৌস আহমেদ বিশ্বাস এসব বিষয় নিশ্চিত করেছেন।
দুর্ঘটনার পর ঢাকাগামী ট্রেন আটকে যায়। এ ছাড়া কারওয়ান বাজার রেলক্রসিং এবং মগবাজারে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
ফেরদৌস আহমেদ জানান, দ্রুতই উদ্ধারকাজ শুরু হয়। সকাল ১০টার দিকে লাইনচ্যুত বগি ছাড়াই ট্রেনটি গন্তব্যের উদ্দেশে যাত্রা করে।
ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার সকালে তিনি রাজধানীর ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। খবর ইউএনবির
পুষ্পস্তবক অর্পণের পর প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে আরেকটি পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
১৯৭১ সালের এই দিনে তৎকালীন কুষ্টিয়া জেলার অন্তর্গত মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠিত হয়।
বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পরবর্তীতে স্থানটির নাম পরিবর্তন করে মুজিবনগর রাখা হয়। প্রথম সরকারের রাষ্ট্রপতি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
তাজউদ্দীন আহমদকে প্রথম প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত করা হয়, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ও এএইচএম কামারুজ্জামানকে মন্ত্রিসভার সদস্য করা হয়। মূল মন্ত্রিসভার সফল নেতৃত্ব সেই বছরের ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে নিয়ে যায়।
মন্তব্য