ভোটের দামামা নেই। এলাকার রাস্তা-ঘাট, বিদ্যুৎ নিয়ে বেশি বরাদ্দের চাপ নেই এমপিদের কাছ থেকে। কিন্তু তাতে কি স্বস্তিতে রয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল?
অবশ্যই না। কারণ, বাজেটের সময় সব দেশের অর্থমন্ত্রীদের চাপে থাকতে হয়। আমাদের অর্থমন্ত্রী কেন ব্যতিক্রম হবেন?
পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন অনেক দূরে এখনও। তাই ভোটের জন্য হয়তো কারো মন জয়ের চেষ্টা করতে হবে না অর্থমন্ত্রীকে। কিন্তু করোনা অতিমারি মোকাবিলায় অধিক ব্যয়ের চাপ তার ওপর। কিন্তু আয় বাড়ে নি।
ফলে রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি করে বিপর্যস্ত অর্থনীতিতে প্রাণ ফিরিয়ে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করাই হবে তার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
এসব বিবেচনা মাথায় নিয়ে এক বছরেও বেশি সময় ধরে চলা নজিরবিহীন করোনা মহামারির বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে অনিশ্চিত আগামীর জন্য ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, যিনি আগের মেয়াদে পরিকল্পনামন্ত্রী ছিলেন।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর মাহেন্দ্রক্ষণে ৩ জুন বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের ৫০তম বাজেট ঘোষণা করবেন মুস্তফা কামাল।
এমন এক সময় বাজেট দিতে যাচ্ছেন তিনি, যখন একদিকে প্রাণঘাতী করোনার অভিঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করার কথা ভাবতে হচ্ছে, অন্যদিকে মাথায় রাখতে হচ্ছে মানুষের প্রাণ বাঁচানোর চিন্তা।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, অর্থনীতিকে চাঙা করার জন্য কী জাদু আছে তার হাতে? এমন কী দাওয়াই দেবেন তিনি, যার মাধ্যমে কালো মেঘ কেটে নতুন আলো উদ্ভাসিত হবে? করোনামুক্ত হবে জনগণ? বাড়বে কর্মসংস্থান, প্রাণ ফিরে পাবে দেশের অর্থনীতি?
এক বছর আগে দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর এর অভিঘাতে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সরকারঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের ফলে ঘুরে দাঁড়ায় অর্থনীতি।
কিন্তু করোনার দ্ধিতীয় ঢেউয়ের প্রভাবে পরিস্থিতি এখন আরও খারাপ হয়েছে। নতুন করে আড়াই কোটি লোক দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে এসেছে।
অনেকেই চাকরি হারিয়েছে। ছোট কলকারখানাগুলো বন্ধ প্রায়। আয় কমে যাওয়ায় নিম্ন ও মধ্যবিত্তসহ স্বল্প আয়ের অনেকেই কষ্টে আছেন। থমকে আছে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড।
এমন কঠিন সময়ে বৈরি পরিবেশের মধ্যে বৃহস্পতিবার (৩ জুন) বিকেল ৩টায় জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সঙ্গে নিয়ে নতুন বাজেট ঘোষণা করবেন মুস্তফা কামাল। বর্তমান সরকারের আমলে এটি তার তৃতীয় বাজেট।
এর আগে সংসদ ভবনে সরকার প্রধানের কাছ থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট অনুমোদেন করে নেবেন অর্থমন্ত্রী। বুধবার থেকে বাজেট অধিবেশন শুরু হয়েছে।
দেশের খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, জিডিপির প্রবৃদ্ধিকে রঙিন চশমা দিয়ে দেখলে হবে না। পঞ্চাশ বছরে দারিদ্র্য দূরীকরণে বাংলাদেশের যে সাফল্য ছিল, করোনায় সেটা অনেকটা ম্লান হয়ে গেছে। ফলে প্রবৃদ্ধির দিকে না থাকিয়ে বাজেটে জীবন-জীবিকায় গুরুত্ব দিতে হবে। এ জন্য বাজেটে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের বিষয়ে পরিকল্পনা থাকা জরুরি। করোনা মোকাবিলায় স্বাস্থ্য খাতে অগ্রাধিকার দিতে হবে। গরিবের সুরক্ষায় গুরুত দিতে হবে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে জনগণের উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘আগে মানুষের জীবন বাঁচাতে হবে। জীবন বাঁচলে পরে সবকিছু গুছিয়ে নেয়া যাবে।’
কী থাকছে বাজেটে
বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ অনুযায়ী প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছেন অর্থমন্ত্রী। স্বাস্থ্যে সর্বসাকল্যে প্রায় ৩৩ হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। এর বাইরে করোনার টিকা কিনতে ১০ হাজার কোটি টাকার আলাদা থোক বরাদ্দ থাকছে।
নতুন কোনো করারোপ করা হচ্ছে না। বরং আওতা বাড়িয়ে কর আহরণ প্রক্রিয়া আরও সহজ করার পদক্ষেপ নিচ্ছেন অর্থমন্ত্রী।
সামাজিক নিরাপত্তার আওতা সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। নতুন করে আরও ১২ লাখ বয়স্ক-বিধবা ভাতা পাচ্ছেন। তবে ভাতার পরিমাণ অপরিবর্তীত থাকছে।
কৃষকের সুরক্ষায় এ খাতে ভর্তুকি অব্যাহত রাখা হচ্ছে। ১০ টাকা দামে দুস্থ জনগণকে চাল খাওয়ানো ও সাশ্রয়ী দামে খোলা বাজারে চাল বিক্রি অব্যাহত রাখা হচ্ছে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি, খাদ্য, পাটসহ রপ্তানি খাত উজ্জীবিত রাখতে মোট ৪৯ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি বরাদ্দের প্রস্তাব করা হচ্ছে। প্রবাসীদের সুরক্ষায় প্রণোদনা আরও ১ শতাংশ বাড়ানো হতে পারে।
এ ছাড়া কর্মসংস্থান বাড়াতে ব্যবসায়ীদের খুশি করার জন্য কর প্রণোদনাসহ নানা পদক্ষেপের ঘোষণা আসছে।
নিজের তৃতীয় বাজেট প্রসঙ্গে নিউজবাংলাকে অর্থমন্ত্রী বলেন, বাস্তব অবস্থা বিবেচনায় নিয়েই এবারের বাজেটের নাম দেয়া হয়েছে ‘জীবন ও জীবিকার বাজেট’।
প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে দেশের অর্থনীতিকে যেমন আগের চেহারায় ফিরিয়ে আনা হবে, তেমনি দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষকে টিকা প্রদানসহ নানা কর্মসূচির মাধ্যমে জীবন বাঁচিয়ে জীবিকার সংস্থান করা হবে।
এ প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আয়ে বিশাল ঘাটতি থাকবে। সে জন্য নতুন বাজেটে অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণে বেশি জোর দিতে হবে। ঘাটতি নিয়ে বেশি চিন্তা না করে কর্মসংস্থান বাড়ানোর পরিকল্পনা থাকতে হবে।’
সাবেক অর্থসচিব ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান বলেন, বাজেটের লক্ষ্য শুধু সরকারের আয় ও ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করা নয়। এর লক্ষ্য হলো দেশের জনগণের জন্য গ্রহণযোগ্য একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা।
গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য বলেন, ‘করোনায় মন্দা অর্থনীতি চাঙা করতে সরকারি ব্যয় আরও বাড়াতে হবে। গরীব মানুষের মাঝে অধিকতর নগদ ও খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেয়া দরকার। আয়ের ক্ষেত্রে সরকার খুবই দুর্বল। ফলে আয় বাড়াতেই হবে। করোনা মোকাবিলায় একটি পূর্ণাঙ্গ পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা জরুরি।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রান্তিক উদ্যোক্তাদের জন্য কম সুদে ঋণ ও কর ছাড়ের ব্যবস্থা করতে হবে।
বাজেটের আকার
করোনা মোকাবিলায় অর্থনীতি চাঙা করতে অধিক ব্যয়ের জন্য একটি সম্প্রসারণমূলক বাজেট দেয়ার কথা বলেছেন দেশের বরেণ্য অর্থনীতিবিদরা।
যতদূর সম্ভব সেই পথেই হাঁটছেন অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল।
অর্থবিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নতুন বাজেটের আকার হতে পারে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের চেয়ে প্রায় ৬ শতাংশ এবং সংশোধিত বাজেটের চেয়ে প্রায় ১১ শতাংশ বেশি। প্রস্তাবিত বাজেট জিডিপির প্রায় সাড়ে ১৭ শতাংশ।
সম্পদের সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও বেশি খরচের লক্ষ্য নিয়ে বিশাল একটি ঘাটতি বাজট (আয়ের তুলনায় ব্যয় বেশি) দিতে যাচ্ছেন মুস্তফা কামাল। এবার ঘাটতি ধরা হচ্ছে জিডিপির ৬ দশমিক ২ শতাংশ, টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ ২ লাখ ১১ হাজার ১৯১ কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছরের (যে অর্থবছর শেষ হতে যাচ্ছে) মূল বাজেটের আকার ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। আর ঘাটতি ছিল জিডিপির ৬ শতাংশ। পরে তা সংশোধন করে নির্ধারণ করা ৫ লাখ ৩৯ হাজার কোটি টাকা।
কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, বাজেটের আকার বড় ঘোষণা করা হলেও খরচ তার চেয়ে অনেক কম হয়। কারণ, আমাদের বাস্তবায়নের সক্ষমতা প্রত্যাশা অনুযায়ী বাড়েনি।
এতদিন সাধারণত জিডিপির ৫ শতাংশ ঘাটতি ধরে বাজেট করা হয়েছিল। কিন্তু করোনাকালীণ অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি চাঙা করতে দুটি বাজেটেই ঘাটতি ৬ শতাংশের বেশি ধরা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য বলেন, মন্দা পরিস্থিতিতে ‘সম্প্রসারণমূলক’ বাজেট প্রণয়ন করাই হবে সরকারের জন্য উত্তম।
অর্থায়ন
বিশাল ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ এবং বিদেশ থেকে ঋণ নিয়ে বাজেটে অর্থায়ন করা হবে। অভ্যন্তরীণের মধ্যে আবার ব্যাংক ব্যবস্থা এবং সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে ঋণ নেয়া হবে।
অর্থমন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে মোট ঋণ আসবে ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা।
এর মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে নেয়া হবে ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা। ৩২ হাজার কোটি টাকা সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হচ্ছে। অবশিষ্ট ৫ হাজার ১ কোটি টাকা আসবে অন্যান্য খাত থেকে।
অপরদিকে, বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণ নেয়া হচ্ছে ৯৭ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা।
সবমিলিয়ে দেশি এবং বিদেশি উৎসে থেকে মোট ২ লাখ ১১ হাজার ১৯১ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে নতুন বাজেটে অর্থায়নের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের প্রস্তাব থাকছে। এসব ঋণের জন্য সরকারকে সুদ দিতে হবে মোট ৬৮ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা।
রাজস্ব প্রাপ্তি
নতুন বাজেটে মোট রাজস্ব প্রাপ্তি বা আয় প্রাক্কলন করা হচ্ছে মোট ৩ লাখ ৯২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। এর বড় অংশই যোগান আসবে এনবিআর থেকে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা।
অবশিষ্ট টাকা আসবে এনবিআর বহির্ভূত খাত এবং বৈদেশিক অনুদান থেকে। এর পরিমাণ ৬২ হাজার কোটি টাকা।
প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতি
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, নতুন বাজেটে প্রবৃদ্ধির হার নির্ধারণ করা হতে পারে ৭ দশমিক ২ শতাংশ এবং মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৩ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরে মূল বাজেটে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ধরা হয় ৮ দশমিক ২ শতাংশ। সরকার আশা করছে, চলতি অর্থবছরে এটি হতে পারে ৬ শতাংশের সামাণ্য বেশি, যদিও অর্থনীতিবিদ ও বিশ্বব্যাংক, আইএমএফসহ উন্নয়ন সহযোগীরা তা গ্রহণ করেন নি।
গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ইকোনোমিক মডেলিং (সানেম)-এর নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিস রায়হান মনে করেন, প্রবৃদ্ধির দিকে না থাকিয়ে বাজেটে জীবন-জীবিকাকে প্রাধান্য দিতে হবে।
কর বিষয়ক যে সব সুবিধা থাকতে পারে
এনবিআর কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে ,করোনাকালীন সংকট মোকাবিলায় অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে একটি ব্যবসা-বান্ধব বাজেট উপহার দেবে সরকার।
নতুন কোনো করারোপ না করে করের আওতা বাড়ানো হচ্ছে। সহজ করা হচ্ছে আইন-কানুন।
বর্তমানে ১৩টি বিষয়ে টিআইএন বাধ্যতামূলক রয়েছে। নতুন বাজেটে আরও তিনটি খাতে টিআইএন বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে ডাকঘর সঞ্চয় স্কিম, বাড়ি বানানোর নকশা অনুমোদন ও সমবায় সমিতির নিবন্ধন করা।
কর্মসংস্থান বাড়াতে করপোরেট কর আড়াই শতাংশ কমছে। ১০ শতাংশ কর দিয়ে বিভিন্ন খাতে ঢালাওভাবে কালো টাকা সাদা করার বিদ্যমান সুযোগ আগামী বাজেটেও অব্যাহত রাখার প্রস্তাব থাকতে পারে।
ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের আয় করে ছাড় দেয়া না হলেও ধনীদের ওপর সারচার্জ বাড়ছে। ৫০ কোটি টাকার বেশি সম্পদশালীদের সারচার্জ ৩০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩৫ শতাংশ করা হচ্ছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণে আইটি খাতে কর অব্যাহতি সুবিধা আরও সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তির ২২টি খাত কর অব্যাহতি পাচ্ছে। নতুন করে আরও পাঁচটি খাতে এ সুবিধা দেয়া হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে: মোবাইল অ্যাপস ডেভলপমেন্ট, ই-লার্নিং প্লাটফর্ম, ই-বুক পাবলিংকেশন, ক্লাউড সার্ভিস সিস্টেম ইন্টিগ্রেশন এবং ফ্রিল্যান্সিং।
দেশীয় শিল্প সুরক্ষায় আমদানি বিকল্প নির্ভর শিল্প টেলিভিশন, ফ্রিজের উৎপাদন পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর সুবিধা আগামী ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত অব্যাহত থাকছে।
এ ছাড়া কৃষি প্রক্রিয়াজাত ফল, দুগ্ধ উৎপাদন, গৃহস্থালি পণ্য যেমন রাইস কুকার, ওভেন, ব্লেন্ডার শিল্প স্থাপন করলে ১০ বছর কর অবকাশ সুবিধা পাওয়া যাবে। এ ছাড়া এসব পণ্যের উৎপাদন পর্যায়ে ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর অব্যাহতি পাচ্ছে।
ঢাকার বাইরে নতুন করে ২৫০ শয্যার হাসপাতাল-ক্লিনিক নির্মাণ করলে ১০ বছর কোনো কর দিতে হবে না।
শেয়ার বাজারের জন্য থাকছে সুখবর। এ খাতে কালো টাকা সাদা করার বর্তমান সুযোগ বহাল থাকতে পারে। শেয়ার বাজারে বর্তমানে তালিকাভূক্ত কোম্পানির করপোরেট কর হার ২৫ শতাংশ। এটি কমিয়ে সাড়ে ২২ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব থাকছে।
বর্তমানে ব্রোকারেজ হাউজের শেয়ার লেনদেনের বিপরীতে উৎসে কর দশমিক ০৫ শতাংশ। এটি কমিয়ে দশমিক ০১৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হতে পারে। কমতে পারে ট্রেজারি বন্ডের কর।
মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাটে পরিবর্তন আসছে। উৎপাদনমুখী শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামালের আগাম কর ৪ শতাংশের পরিবর্তে ১ শতাংশ কমছে। এ ছাড়া ভ্যাট ফাঁকির জরিমানা বর্তমানের দ্বি-গুণের পরিবর্তে এক-গুণ করা হচ্ছে এবং বিলম্বের জন্য জরিমানা ২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করা হচ্ছে।
ব্যক্তিমালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য লাভ-লোকসানের ভিত্তিতে ন্যূনতম কর শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব থাকছে।
নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ভালো খবর আসছে। তাদের উৎসাহিত করতে বার্ষিক লেনদেনের কর অব্যাহতি সীমা বর্তমানের ৫০ লাখ টাকার পরিবর্তে ৭০ লাখ টাকায় উন্নীত করা হচ্ছে।
পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী যেমন: প্রতিবন্ধী, আদিবাসি, তৃতীয় লিঙ্গ, রূপান্তরিত নারী-পুরুষদের কোনো প্রতিষ্ঠান চাকরি দিলে ওই প্রতিষ্ঠানের জন্য করপোরেট কর বর্তমানের চেয়ে ৫ শতাংশ ছাড়ের প্রস্তাব থাকছে নতুন বাজেটে।
আরও পড়ুন:দৃঢ় নেতৃত্বের মাধ্যমে বিগত বছরগুলোর প্রতিকূলতা কাটিয়ে রেকর্ড ও টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জন করে চলেছে পুঁজিবাজারে প্রকৌশল খাতের তালিকাভুক্ত কোম্পানি ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি। চলতি বছর ওয়ালটন পণ্যের বিক্রয় বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। যার পরিপ্রেক্ষিতে চলতি হিসাব বছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই’২০২৩-মার্চ’২০২৪) আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ওয়ালটন হাই-টেকের মুনাফা বেড়েছে ৫১২.৪২ কোটি টাকা বা ২০৫ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির মুনাফা ব্যাপক বৃদ্ধিসহ আর্থিক প্রায় সব সূচকেই উন্নতি হয়েছে।
ওয়ালটন হাই-টেকের চলতি হিসাব বছরের জুলাই-২০২৩ থেকে মার্চ-২০২৪ পর্যন্ত সময়ের প্রকাশিত আর্থিক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানা গেছে।
রোববার কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের ৩৮তম সভায় আলোচ্য সময়ের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা ও অনুমোদনের পর আর্থিক ফলাফল প্রকাশ করা হয়।
প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩-২০২৪ হিসাব বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত সময়ে অর্থাৎ প্রথম নয় মাসে কোম্পানিটির মুনাফার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৬২.৩৪ কোটি টাকা। যেখানে আগের হিসাব বছরের একই সময়ে প্রতিষ্ঠানটির মুনাফা হয়েছিল ২৪৯.৯১ কোটি টাকা। সেই হিসাবে আলোচ্য সময়ে প্রতিষ্ঠানটির মুনাফা বেড়েছে ৫১২.৪২ কোটি টাকা। শতকরা হিসেবে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ২০৫ শতাংশ।
এদিকে চলতি হিসাব বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ’২০২৪) ওয়ালটনের মুনাফা হয়েছে ৪২১.৯৮ কোটি টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে প্রতিষ্ঠানটির মুনাফা হয়েছিল ২৩৫.৫৫ কোটি টাকা।
বিক্রয় বৃদ্ধির পাশাপাশি কস্ট অব গুড্স সোল্ড উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পাওয়ায় কোম্পানিটির মোট মুনাফার শতকরা হার পূর্বের তুলনায় বৃদ্ধি হয়েছে। পাশাপাশি অন্যান্য আর্থিক সূচকেও ব্যাপক উন্নতি হয়েছে ওয়ালটন হাই-টেকের। তাছাড়া মার্কিন ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশি মুদ্রার মান কমে যাওয়ার ফলে সৃষ্ট আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ব্যাপক হারে হ্রাস পাওয়ায় কোম্পানিটির কর পরবর্তী নিট মুনাফার পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি মুনাফা (ইপিএস), শেয়ার প্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস)।
প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত সমাপ্ত সময়ে (জুলাই’২০২৩-মার্চ’২০২৪) প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার প্রতি মুনাফা (ইপিএস) বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫.১৭ টাকা; যা আগের অর্থ বছরের একই সময়ে ছিলো ৮.২৫ টাকা। আলোচ্য সময়ে কোম্পানির এনএভিপিএস পুনর্মূল্যায়ন ব্যতীত দাঁড়িয়েছে ২৫৮.২২ টাকা এবং পুনর্মূল্যায়নসহ ৩৫৯.৬৮ টাকা। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি নেট অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো দাঁড়িয়েছে ২২.৮৮ টাকা।
চলতি হিসাব বছরের তৃতীয় প্রান্তিক শেষে কোম্পানির আর্থিক ব্যয়ের পরিমাণ ও শতকরা হার আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে। প্রথম নয় মাসে বিক্রয়ের বিপরীতে আর্থিক ব্যয়ের শতকরা হার দাঁড়িয়েছে ৬.১৪ শতাংশ। যা আগের বছরের একই সময়ে ছিলো ১৪.৭৯ শতাংশ।
এ ছাড়াও মার্কিন ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশি মুদ্রার মান কমে যাওয়ায় গত অর্থ বছরের প্রথম নয় মাসে কোম্পানিটি ৩৯২.৭৩ কোটি টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিলো। সেই ক্ষতি চলতি বছরের আলোচ্য সময়ে উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়ে মাত্র ৪১.৬০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।
এদিকে জুলাই-২০২৩ থেকে মার্চ-২০২৪ পর্যন্ত সময়ে কোম্পানির মোট আর্থিক ব্যয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৬৩.০৭ কোটি টাকা, যা পূর্বের অর্থ বছরের একই সময়ে ছিল ৬০৪.৭৯ কোটি টাকা।
এছাড়া, শেষ প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন’২০২৪) কোম্পানির মুনাফা আরো দৃঢ় অবস্থানে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন ওয়ালটন ম্যানেজমেন্ট। প্রেস রিলিজ
শীর্ষস্থানীয় রাইড শেয়ারিং অ্যাপ উবারের লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড ইনডেক্স-এর অষ্টম সংস্করণ প্রকাশ হয়েছে রোববার।
উবার ব্যবহারকারীরা কোন জিনিসগুলো গাড়িতে সবচেয়ে বেশি ফেলে রেখে গেছেন এবং দিনের কোন সময়ে, সপ্তাহের কোন দিনে ও বছরের কোন সময়ে হারানো জিনিস রিপোর্ট করেছেন, এসব তথ্যের একটি স্ন্যাপশট হলো এ ইনডেক্স।
গত এক বছরের মে ও জুন মাসে বাংলাদেশের মানুষ সবচেয়ে বেশি জিনিসপত্র ভুলে ফেলে রেখে গেছেন। বেশির ভাগ জিনিসপত্র ফেলে রেখে আসার ঘটনাটি ঘটেছে সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে।
গত বছর বাংলাদেশজুড়ে যাত্রীদের ভুলে যাওয়া জিনিসের তালিকায় প্রথম দুটি স্থানে ছিল পোশাক ও ছাতা। তালিকায় এর পরেই ছিল ওয়ালেট, বালিশ ও হেডফোন।
বাংলাদেশিরা উবারে এ রকম সাধারণ জিনিসপত্র যেমন ভুলে ফেলে রেখে গেছেন, স্পিকারের মতো অপ্রত্যাশিত জিনিসও তেমনি ভুলে রেখে গেছেন।
উবার বাংলাদেশের কান্ট্রি হেড নাশিদ ফেরদৌস কামাল লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড ইনডেক্স সম্পর্কে বলেন, ‘যাত্রীদের নিরাপত্তা ও স্বাচ্ছন্দ্য উবারের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ট্রিপের সময় যাত্রীদের ফেলে যাওয়া জিনিস নিরাপদে তাদের কাছে ফিরিয়ে দেয়াও এর অন্তর্ভুক্ত। হারানো জিনিস খুঁজে পেতে উবারের কিছু ইন-অ্যাপ অপশন আছে।
‘এ ব্যাপারে যাত্রীদের জানানোর জন্য লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড ইনডেক্স একটি চমৎকার শিক্ষণীয় উপায়। যাত্রীদের আমরা জানাতে চাই যে, রাইডের সময় তারা কিছু ভুলে ফেলে গেলে তাদের সাহায্য করার জন্য আমরা প্রস্তুত।’
ফেলে যাওয়া জিনিস উদ্ধারের উপায়
গাড়িতে ফেলে যাওয়া কোনো জিনিস উদ্ধারের সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো চালককে কল করা। কীভাবে করবেন জেনে নিন।
১. ‘ইয়োর ট্রিপস’ অপশনে ট্যাপ করুন এবং যে ট্রিপে আপনার জিনিসটি হারিয়ে গেছে, তা সিলেক্ট করুন
২. নিচে স্ক্রল করে ‘ফাইন্ড লস্ট আইটেম’ অপশনে ট্যাপ করুন
৩. ‘কনটাক্ট ড্রাইভার অ্যাবাউট আ লস্ট আইটেম’ অপশনে ট্যাপ করুন
৪. স্ক্রল করে নিচে নামুন এবং আপনার সঙ্গে যোগযোগ করা যাবে এমন একটি ফোন নম্বর লিখুন। সাবমিট অপশনে ট্যাপ করুন
৫. যদি নিজের ফোন হারিয়ে যায়, তাহলে আপনার বন্ধুর ফোন নম্বর ব্যবহার করুন (এর জন্য আপনাকে কম্পিউটার বা বন্ধুর ফোন থেকে নিজের অ্যাকাউন্টে লগ ইন করতে হবে)
৬. আপনার ফোন বেজে উঠবে এবং আপনার চালকের মোবাইল নম্বরের সঙ্গে আপনাকে সরাসরি যুক্ত করে দেয়া হবে
৭. যদি চালক ফোন ধরেন এবং নিশ্চিত করেন যে আপনার জিনিসটি পাওয়া গেছে, সেটি ফিরিয়ে নিতে উভয়ের জন্য সুবিধাজনক একটি সময় ও স্থান নির্বাচন করুন
৮. যদি চালকের সাথে যোগাযোগ করতে না পারেন, আপনার হারানো জিনিসটির বিস্তারিত বর্ণনা এবং আপনার সঙ্গে যোগাযোগের উপায় জানিয়ে চালককে একটি ভয়ে সমেইল পাঠিয়ে রাখুন
উবারে কিছু হারিয়ে ফেললে সহজে কীভাবে তা ফিরে পেতে পারেন, এই ভিডিও থেকে তা দেখে নিন।
উবার যাত্রীরা যেসব জিনিস সবচেয়ে বেশি ভুলে ফেলে রেখে গেছেন, তার মধ্যে শীর্ষে রয়েছে পোশাক। এরপরই রয়েছে ছাতা, ওয়ালেট, নেক-পিলো, হেডফোন ও স্পিকার।
যে শহরগুলোতে যাত্রীরা সবচেয়ে বেশি জিনিস হারিয়েছেন, তার মধ্যে শীর্ষে রয়েছে ঢাকা। এরপরের স্থানগুলো যথাক্রমে চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী ও বরিশাল।
বছরের যে দিনগুলোতে যাত্রীরা সবচেয়ে বেশিসংখ্যক জিনিস ভুলে রেখে গেছেন তার মধ্যে রয়েছে ১৩ মে, ২০২৩। এ ছাড়া ৯ জুন এবং ১৬ জুন, ২০২৩ বেশি ভুল করেছেন যাত্রীরা।
সপ্তাহের শুক্র, শনি ও রোববার সবচেয়ে বেশি জিনিস হারিয়েছে।
দিনের যে সময়ে যাত্রীরা সবচেয়ে বেশি জিনিস ফেলে রেখে যান, তার সময় রাত আটটা। এরপরই সন্ধ্যা সাতটা ও রাত ৯টায় বেশি জিনিস ফেলে রেখে গেছেন।
আরও পড়ুন:কমানোর পরের দিনই বাড়ল স্বর্ণের দাম। ভালো মান বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণের দাম বেড়েছে ৬২৯ টাকা। এতে ভালো মানের এক ভরি স্বর্ণের দাম হয়েছে ১ লাখ ১৯ হাজার ৪২৭ টাকা।
রোববার বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণ স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমানের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, রোববার বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে নতুন দাম কার্যকর করা হবে।
নতুন মূল্য অনুযায়ী, ২১ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম টাকা বাড়িয়ে ১ লাখ ১৪ হাজার ৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ১৮ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ৫১৩ টাকা বাড়িয়ে ৯৭ হাজার ৭০৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া সনাতন পদ্ধতির এক ভরি স্বর্ণের দাম ৪২০ টাকা বাড়িয়ে ৭৮ হাজার ৬৬২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এর আগে গত ১৮ এপ্রিল দেশের বাজারে রেকর্ড স্বর্ণের দাম বাড়ায় বাজুস। ওই সময় ভরিতে ২ হাজার ৬৫ টাকা বাড়ানো হয়। তাতে ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম বেড়ে দাঁড়ায় ১ লাখ ১৯ হাজার ৬৩৮ টাকা। এটিই সোনার সর্বোচ্চ দাম ছিল। পরে শনিবার ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম কমে ৮৪০ টাকা। এতে ভালো মানের এক ভরি স্বর্ণের দাম দাঁড়িয়েছিল ১ লাখ ১৮ হাজার ৭৯৮ টাকা।
চলতি বছরের এপ্রিল মাসের প্রথম ১৯ দিনে বৈধপথে ব্যাংকিং চ্যানেলে ১২৮ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স দেশে এসেছে। দেশীয় মুদ্রায় প্রতি ডলার ১১০ টাকা ধরে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ১৪ হাজার ৯৬ কোটি টাকা।
রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
তথ্যমতে, এপ্রিল মাসের প্রথম ১৯ দিনে বৈধপথে ১২৮ কোটি ১৫ লাখ ডলারের সমপরিমাণ অর্থ দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এই সময়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ১১ কোটি ডলার, বিশেষায়িত একটি ব্যাংকের মাধ্যমে ৭ কোটি ৯০ লাখ ডলার, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ১০৮ কোটি ৮১ লাখ ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৩৯ লাখ ৩০ হাজার ডলার এসেছে।
এর আগে মার্চ মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৯৯ কোটি ৬৮ লাখ ডলার। বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে দেশে এসেছে ২১০ কোটি ডলার এবং ফেব্রুয়ারিতে আসে ২১৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার।
দেশের স্বর্ণের বাজারে চলতি এপ্রিল মাসেই ২২ ক্যারেটের ভরিতে তিন দফায় ৪ হাজার ৫৬০ টাকা দাম বাড়ানো হয়েছে। এবার প্রতি ভরিতে দাম কমানো হয়েছে ৮৪০ টাকা। নামমাত্র এই কমানোর পর ভালো মানের (২২ ক্যারেট) এক ভরি স্বর্ণের দাম দাড়িয়েছে ১ লাখ ১৮ হাজার ৭৯৮ টাকা।
বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) শনিবার এই দাম কমানোর ঘোষণা দিয়েছে। সংগঠনটির মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণ স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমানের সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, স্থানীয় বাজারে তেজাবী স্বর্ণের দাম কিছুটা কমেছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় স্বর্ণের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। শনিবার বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে নতুন দাম কার্যকর হবে।
বাজুস এর চলতি মাসে তিন দফা স্বর্ণের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। এর মধ্যে ৬ এপ্রিল ১৭৫০ টাকা, ৮ এপ্রিল ১৭৫০ টাকা ও ১৮ এপ্রিল ২ হাজার ৬৫ টাকা বাড়ানো হয়।
নতুন দাম অনুযায়ী, সবচেয়ে ভালো মানের স্বর্ণ ১ লাখ ১৮ হাজার ৭৯৮ টাকা, ২১ ক্যারেট ১ লাখ ১৩ হাজার ৩৯৭ টাকা, ১৮ ক্যারেট ৯৭ হাজার ১৯৭ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির স্বর্ণ ৭৮ হাজার ২৪২ টাকা ভরি বিক্রি হবে।
এদিকে স্বর্ণের দাম বাড়নো হলেও অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে রুপার দাম। বর্তমানে ২২ ক্যারেট প্রতি ভরি রুপা ২ হাজার ১০০ টাকা, ২১ ক্যারেট ২ হাজার ৬ টাকা, ১৮ ক্যারেট ১৭১৫ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির রুপা ১ হাজার ২৮৩ টাকা ভরি বিক্রি হচ্ছে।
রমজানের মধ্যে শসার বাজার চড়া দাম থাকলেও বর্তমানে শসাচাষিরা দাম পাওয়া নিয়ে বেশ বিপাকে পড়েছেন।
এমন দুঃসময়ে শসাচাষিদের পাশে দাঁড়িয়েছে দেশের অন্যতম রিটেইল চেইন সুপারশপ ‘স্বপ্ন’।
সম্প্রতি এক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হয়, ন্যায্য দাম না পাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার শসাচাষিরা। পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি শসা বিক্রি হচ্ছে দুই থেকে চার টাকায়। ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না চাষিরা।
এমন সময় সেই শসাচাষিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ন্যায্যমূল্যে কৃষিপণ্যটি কেনে ‘স্বপ্ন’ কর্তৃপক্ষ। সেই শসা এখন খোলাবাজারের চেয়ে কম দামে স্বপ্ন আউটলেটে পাওয়া যাচ্ছে।
খোলা বাজারে বৃহস্পতিবার ৪০ টাকা কেজিতে শসা বিক্রি করতে দেখা গেলেও স্বপ্ন আউটলেটে তা ১২ টাকা কেজিতে গ্রাহকরা কিনতে পেরেছেন। এরই মধ্যে দিনাজপুরের খানসামার ওই এলাকা থেকে দুই টন এবং ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট এলাকা থেকে ছয় টন শসা কিনেছে স্বপ্ন প্রতিনিধি।
বর্তমানে তাদের উৎপাদিত শসা পৌঁছে গেছে স্বপ্নর আউটলেটে। স্টক থাকা অবধি এ অফার গ্রাহকরা পাবেন।
স্বপ্নর নির্বাহী পরিচালক সাব্বির হাসান নাসির বলেন, ‘আমরা শসাচাষিদের দুর্ভোগের কথা জানতে পেরেছি নিউজের মাধ্যমে। আমরা দিনাজপুর, ময়মনসিংহসহ বেশ কিছু এলাকার কৃষকের দুর্ভোগের কথা জানার পর তাদের কাছ থেকে শসা কিনেছি ন্যায্য মূল্যে।
‘অন্যান্য ব্যবসায়ীদেরও কৃষকদের জন্য এগিয়ে আসার আহ্বান থাকবে। মধ্যস্বত্বভোগীদের লাভবান না করে কৃষকদের সঙ্গে সরাসরি সেতুবন্ধের চেষ্টা করে আসছে স্বপ্ন। এ চেষ্টা সবসময় অব্যাহত থাকবে।’
এ প্রসঙ্গে স্বপ্নর হেড অফ পার্চেজ সাজ্জাদুল হক বলেন, “বিভিন্ন গণমাধ্যমে শসাচাষিদের সংকটের খবর দেখার পর আমরা সিদ্ধান্ত নিই যে, কৃষকদের পাশে আমরা দাঁড়াব। দিনাজপুর, ময়মনসিংহসহ বেশ কয়েকটি এলাকা থেকে এরই মধ্যে ৮ টন শসা আমরা কিনেছি।
“দুঃসময়ে কষ্টে থাকা অনেক কৃষকদের পাশে ‘স্বপ্ন’ এর আগেও দাঁড়িয়েছে। সামনেও পাশে থাকবে।”
দিনাজপুরের খানসামা এলাকার কৃষক সাকিব হোসেন বলেন, ‘প্রায় এক বিঘা জমিতে শসা চাষ করেছিলাম এবার। শসার বীজ, সারসহ নানা কাজে লাখ টাকা খরচ হয় আমার, কিন্তু ১০ রমজান অবধি কিছু শসা বিক্রি করার পর বাজারে শসার দাম কমে যায়। প্রতি কেজি ১০ টাকা, এরপর পাঁচ টাকা এবং সবশেষে আরও কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হয়। অনেক শসা নষ্ট হয়ে যায়। অনেক লোকসান হচ্ছিল।’
তিনি আরও বলেন, “আমার এলাকার এক সাংবাদিক নিউজ করার পর এসিআই কোম্পানির ‘স্বপ্ন’ থেকে যোগাযোগ করে আমার অনেকগুলো শসা কিনে নিয়েছেন উনারা। এতে করে লোকসানের অনেক ঘাটতি পূরণ হয়েছে আমার। তাদের অশেষ ধন্যবাদ।”
আরও পড়ুন:দেশের বাজারে ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ২ হাজার ৬৫ টাকা বাড়িয়ে রেকর্ড ১ লাখ ১৯ হাজার ৬৩৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছরের সাড়ে তিন মাসে অষ্টমবারের মতো স্বর্ণের দাম সমন্বয় করা হলো।
বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রাইসিং অ্যান্ড প্রাইস মনিটরিং কমিটি বৃহস্পতিবার বৈঠক করে দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। পরবর্তীতে কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, স্থানীয় বাজারে তেজাবী স্বর্ণের (পাকা স্বর্ণ) দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে এই দাম বাড়ানো হয়েছে। নতুন নির্ধারিত এই দাম বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকেই কার্যকর হবে।
বিজ্ঞপ্তির তথ্য অনুযায়ী- ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ২ হাজার ৬৫ টাকা বেড়ে ১ লাখ ১৯ হাজার ৬৩৮ টাকা, ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণ ১ হাজার ৯৯৪ টাকা বেড়ে ১ লাখ ১৪ হাজার ২০২ টাকা, ১৮ ক্যারেট প্রতি ভরি স্বর্ণ ১ হাজার ৬৫৬ টাকা বেড়ে ৯৭ হাজার ৮৮৪ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণ ১ হাজার ৩৮৮ টাকা কমে ৭৮ হাজার ৮০২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, সবশেষ দশ দিন আগে ৮ এপ্রিল বাজুস ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ১ হাজার ৭৪৯ টাকা বাড়িয়ে ১ লাখ ১৭ হাজার ৫৭৩ টাকা নির্ধারণ করে। এতে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে স্বর্ণের সর্বোচ্চ দামের নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়। ১০ দিনের ব্যবধানে আবারও দাম বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে দেশের স্বর্ণের বাজারে উচ্চ দামের নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হলো।
অবশ্য স্বর্ণের গহনা কিনতে ক্রেতাদের আরও বেশি অর্থ গুনতে হবে। কারণ বাজুস নির্ধারণ করা দামের ওপর ৫ শতাংশ ভ্যাট যোগ করে স্বর্ণের গহনা বিক্রি করা হয়। সেসঙ্গে ভরি প্রতি মজুরি ধরা হয় ন্যূনতম ৩ হাজার ৪৯৯ টাকা। ফলে ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের গহনা কিনতে ক্রেতাদের গুনতে হবে ১ লাখ ২৯ হাজার ১১৯ টাকা।
এদিকে স্বর্ণের দাম বাড়ানো হলেও অপরিবর্তিত রয়েছে রুপার দাম। ২২ ক্যারেটের এক ভরি রুপার দাম ২ হাজার ১০০ টাকা, ২১ ক্যারেট ২ হাজার ৬ টাকা, ১৮ ক্যারেট ১ হাজার ৭১৫ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির এক ভরি রুপার দাম ১ হাজার ২৮৩ টাকা নির্ধারণ করা আছে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য