ফরিদ কবিরের আমার গল্প প্রকাশের আগেই এর কিছু অংশের সঙ্গে আমাদের পরিচয় ঘটে গিয়েছিল ফেসবুকের কল্যাণে। কিছুদিন পর পর তিনি একেকটা চুম্বক অংশ পোস্ট করতেন; মন্তব্য-সমালোচনায়, তর্ক-বিতর্কে ভরে উঠত লেখাগুলো। বিশেষ করে, যেসব অংশে যৌনতার বিবরণ থাকত, সেগুলো নিয়ে বিতর্ক হতো সবচেয়ে বেশি।
কেউ কেউ ফরিদ ভাইয়ের বিরুদ্ধে পাল্টা পোস্ট দিয়ে বসতেন, 'চটি লেখক' বলে গালিও দিতেন, আর তিনি নির্বিকারভাবে সেসব অবলোকন করতেন, যেন তার বিরুদ্ধে আদৌ কিছু বলা হচ্ছে না, যাকে নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছে তাকে তিনি চেনেনই না। আমি কল্পনায় দেখতে পেতাম, ফরিদ ভাই তার ঠোঁটের সেই চিরচেনা মৃদু-রহস্যময় হাসিটি ঝুলিয়ে রেখে মন্তব্যগুলো পড়ছেন ঠিকই, তবে তীর্যক খোঁচা, তীব্র কটাক্ষ বা গভীর মুগ্ধতা নিয়ে করা মন্তব্যগুলো তার কোনো ভাবান্তরই ঘটাচ্ছে না। কিন্তু একদিন সব পাল্টে গেল। তিনি তার বাবার গল্প বললেন সেদিন। তার বাবা, পিতা-মাতাহীন অনাথ শিশুটি, নিজের পিতৃগৃহ থেকে বিতাড়িত হয়েছিলেন। তার আত্মীয়রাই সম্পত্তির লোভে তাকে এবং তার আরও দুটো ভাইবোনকে ভিন্ন ভিন্ন ট্রেনে তুলে দিয়েছিলেন সেই ছোটবেলায়। ট্রেন থেকে নেমে বাবা আবিষ্কার করলেন এক অচেনা-অনাত্মীয় শহরকে, এই ঢাকা শহরকে। ফিরে যাবার উপায় নেই, সঙ্গে টাকা-পয়সাও কিছু নেই। এমনকি ভাইবোন দুটো কোথায় গেছে, তাও জানেন না।
পুরোপুরি অচেনা-অনাত্মীয়-বান্ধবহীন শহরে শুরু হলো তার নতুন জীবন। সংগ্রামী জীবন, খেটে খাওয়া জীবন। আর কোনোদিন তার ফেরা হলো না নিজের ভিটেমাটিতে, দেখা হলো না ভাইবোনের সঙ্গে। এই লেখাটি ফেসবুকে পড়ে আমি সারা রাত ঘুমাতে পারিনি। অসহ্য যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে ভেবেছি, মানুষের জীবনও এমন হয়? এ কেবল নাটক-সিনেমার কাহিনী নয়, বাস্তব মানুষের জীবনেও এমন ঘটে!
এই লেখাটি প্রকাশের পর ফেসবুকবাসীদের তীক্ষ্ণ কণ্ঠগুলো নরম হয়ে আসে। দেখতে পাই, ভিন্ন এক চোখে তারা দেখতে শুরু করেছেন প্রকাশিতব্য বইটিকে এবং এর লেখককে। সত্যি কথা বলতে কি, প্রকাশের আগেই কোনো বই নিয়ে এত আগ্রহ-কৌতূহল, এত আলোচনা-সমালোচনা দেখিনি বহুকাল। অনলাইনের আলোচনা ভার্চুয়াল জগৎ ছেড়ে অফলাইনেও চলে এসেছিল, বাস্তব মানুষরাও কথা বলতে শুরু করেছিলেন বইটি নিয়ে।
কিন্তু ফরিদ কবিরকে চিনতে শুধু কি এই বইটি নিয়েই কথা বলব আমরা? না, আরও অনেক কথা বলার আছে। তবে হ্যাঁ, অস্বীকার করার উপায় নেই যে, আমার গল্প তাকে আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে। এমন অনেককে আমি চিনি, যারা এর আগে ফরিদ কবিরের নামও শোনেননি, অথচ নানাজনের কাছে শুনে এই বইটি পড়েছেন। বহু মানুষ বইটি নিয়ে কথা বলেছেন, অনেক পাঠক অকপটে তাদের পাঠমুগ্ধতা জানিয়েছেন। আমি যতগুলো পাঠ-প্রতিক্রিয়া পড়েছি, সবগুলোতেই লেখকের সাহসের প্রশংসা দেখেছি।
অনেকেই বলেছেন, বাঙালি লেখকদের মধ্যে এত খোলামেলা আত্মকথা আর কেউ লেখেননি। বিশেষ করে প্রেম ও যৌনতা নিয়ে। হ্যাঁ, এসব ব্যাপারে ফরিদ ভাই মোটামুটি স্পষ্টভাবেই স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। বাঙালির আত্মজীবনী তো প্রায় ধর্মগ্রন্থের মতো পবিত্র হয়, সেখানে প্রেম থাকে না, যৌনতা থাকে না, এমনকি ভালো লাগার কথাও থাকে না। পুরুষ লেখকের লেখা হলে মনে হয়, স্ত্রী ছাড়া আর কোনো নারীর সঙ্গে তার দেখাই হয়নি কোনোদিন। নারী লেখকরাও সব কিছু আড়াল করেন, যেন স্বামী ছাড়া তাদের জীবনে কোনো পুরুষ নেই। তসলিমা নাসরীন এর আগে তার আত্মজীবনীর বিভিন্ন পর্বে প্রেম ও যৌনতার খোলামেলা বিবরণ দিয়ে আলোড়ন তুলেছিলেন। ফরিদ কবিরও খোলামেলাভাবে বলেছেন। এমনকি পতিতালয়ে যাওয়ার ঘটনাও তার বিবরণ থেকে বাদ যায়নি। অবশ্য এসব নিয়ে এই দুই লেখকের দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন, সে আলোচনায় আর না গেলাম।
আমার প্রশ্নটি আসলে অন্য জায়গায়। 'সাহস' বলতে আমরা কেন কেবল প্রেম আর যৌনতার খোলামেলা স্বীকারোক্তিকে বুঝি? এর বাইরে কি সাহসের উদাহরণ নেই? ফরিদ কবির এই বইতে আরও অনেক বিষয়েই কথা বলেছেন যা আর কেউ বলেননি বা বলতেন না। এড়িয়ে যেতেন। যেমন তার সাংবাদিক জীবন নিয়ে তিনি এমন-সব স্মৃতিচারণ করেছেন যা অনেকের সঙ্গে তার সম্পর্কচ্যুতির কারণ হতে পারে। এদের প্রায় সবাই বেঁচে আছেন এবং উঠতে-বসতে তাদের সঙ্গে ফরিদ ভাইয়ের দেখা-সাক্ষাৎও হয়। সমাজের এসব প্রভাবশালী ক্ষমতাধর ব্যক্তি নিয়ে অকপটে লিখতে তিনি দ্বিধা করেননি।
একে কি আমরা সাহস বলব না? আবার নিজের পরিবার নিয়ে এমন অনেক কিছুই লিখেছেন তিনি যার ফলে পারিবারিক সংঘাতও তৈরি হতে পারে। এই ঝুঁকির কথা জেনেও তিনি সেগুলো আড়াল করেননি। একে আমরা কী বলব? সাহস না সরলতা?
আমি একে সরলতা হিসেবেই দেখতে চাই। তার কারণ এই যে, ফরিদ ভাইকে আমি ব্যক্তিগতভাবে যতটুকু চিনি, সেটুকুর মধ্যে তার অপূর্ব সরলতার গুণটি আমাকে আকর্ষণ করে সবচেয়ে বেশি। কোনো ভান-ভণিতা নেই তার, নেই কোনো আড়াল, সরাসরি কথা বলেন, কারও মন রক্ষা করে চলার দায় অনুভব করেন না। এই সরলতার কারণে তার অনেক কাজকেই স্রেফ জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা বলে মনে হতে পারে আমাদের, 'আমার গল্প' বইয়ে এরকম অনেক ঘটনার উল্লেখ আছে। অথচ আমরা জানি, কবিতার প্রতি কী গভীরভাবে নিবেদিত কবি তিনি, লেখার জন্য জীবনপণ করা মানুষ তিনি!
তার ঠোঁটে সারাক্ষণ লেগে থাকে একটা মৃদু-রহস্যময়-মায়াবী হাসি, যা দেখে মনে হয়, এই মানুষটি আমাদের আপনজন। দারুণ আড্ডাবাজ এই মানুষটি খুব সহজেই যে-কাউকে আপন করে নিতে পারেন, ফলে তার বন্ধুদের তালিকায় শুধু সমবয়সীদের নামই নেই, আছেন অগ্রজগণ, এমনকি অনুজরাও। বয়সে দশ বা পনের বা কুড়ি বছরের ছোটদের সঙ্গেও তিনি আড্ডা মারেন তরুণদের মতো সমান উচ্ছ্বাস ও আনন্দ নিয়ে। এই সদা হাস্যমুখর, আনন্দমুখর, জমজমাট আড্ডা দেয়া মানুষটিকে দেখে বোঝা যায় না, তার ভেতরে কী গভীর বেদনা
তিনি বয়ে চলেছেন! 'আমার গল্প' না পড়লে তার অনেক কিছুর সন্ধান আমি নিজেও পেতাম না। নিজের ব্যাপারে তিনি খুব সামান্যই বলেন আড্ডার সময়। আমার ধারণা, 'আমার গল্প'-তেও সব কথা বলেননি তিনি। এই বইটি শুরু হয়েছে বাবার 'গল্প' দিয়ে, শেষও হয়েছে বাবার মৃত্যু দিয়ে। এ যেন কেবল ফরিদ কবিরের গল্পই নয়, তার বাবারও গল্প। সেই গল্প বলতে গিয়ে তিনি হয়তো নিজের আদিগন্ত বিষাদ ও বিপন্নতা, বিষণ্ণতা ও গ্লানির অনেক কিছু ইচ্ছে করেই আড়াল করেছেন। হয়তো পাঠককে বিষণ্ণ করে দিতে চাননি তিনি। হয়তো ভিটগেনস্টাইনের মতোই তার মনে হয়েছে- 'হোয়াট উই ক্যান নট স্পিক অ্যাবাউট, উই মাস্ট কনসাইন টু সাইলেন্স।'
তবে যতটুকু বলেছেন তা থেকেই তার বিষাদের সঙ্গেও পরিচয় ঘটে আমাদের। ফরিদ ভাইয়ের বাবাকে যেমন উচ্ছেদ করা হয়েছিল তার নিজ পিতৃগৃহ থেকে, আর কখনোই তিনি ফিরে যাননি বা যেতে পারেননি সেখানে, একটা জীবন কাটিয়ে দিয়েছেন ঠিকানাবিহীন; তেমনই ফরিদ ভাইও চিরকাল একটা স্থায়ী-ঠিকানাবিহীন জীবন কাটিয়ে গেলেন এই শহরে। যেন এক ভাসমান মানুষ, গৃহহীন, ঠিকানাহীন, হয়তো গন্তব্যহীনও। কিন্তু যে উচ্ছ্বাস ও উত্তেজনা নিয়ে, আনন্দ ও উদ্দামতা নিয়ে তিনি জীবনকে যাপন ও উপভোগ করেন, আমার মনে হয়, যাওয়ার সময় ভিটগেনস্টাইনের মতোই একটা দারুণ কথা বলে যেতে পারবেন তিনি।
গত শতকের মহাপ্রভাবশালী দার্শনিক ভিটগেনস্টাইন তার অতি জটিল 'ট্র্যকটাটাস লজিকো ফিলোসফিকাস' নামক পিএইচডি থিসিসের শেষ পঙ্তিতে লিখেছিলেন এক আশ্চর্য বাক্য- 'what we cannot speak about, we must consign to the silence’ (আমরা যে বিষয়ে কিছু বলতে অক্ষম সেখানে নীরবতার কাছে সমর্পিত হওয়াই উত্তম)।
দর্শনের ইতিহাসে ভীষণ মজার আর মধুর এক চরিত্র তিনি। পিএইচডির জন্য থিসিসটি হাজির করার পর মৌখিক পরীক্ষার দিন তিনি তার পরীক্ষকদ্বয় বার্টান্ড রাসেল এবং জি ই মুরকে বলে বসেন, 'আমি জানি আপনারা এটা বুঝবেন না!' মৌখিক পরীক্ষার সময় পরীক্ষকদের কেউ এ ধরনের কথা বলতে পারেন, এবং সেটি শুনেও পরীক্ষকরা তাকে ডিগ্রি দিতে পারেন- এরকম ঘটনা বোধহয় পৃথিবীর ইতিহাসে আর কখনো ঘটেনি।
শুধু এখানেই নয়, তার চরিত্রের অদ্ভুতত্ব আরও অনেক ক্ষেত্রেই ধরা পড়েছে। পৈতৃক সূত্রে পাওয়া সম্পত্তি তিনি বিলিয়ে দিয়েছিলেন, কারণ তিনি মনে করতেন, দার্শনিকের কোনো সম্পত্তির প্রয়োজন নেই! প্রায় ছ-বছর গ্রামের স্কুলে শিক্ষকতা করে কাটিয়েছেন। এই সময় কোলাহল এড়ানোর জন্য তিনি কিছুদিন এক সরাইখানার পরিত্যক্ত বাথরুমে থাকার ব্যবস্থা করেছিলেন! ক্যামব্রিজে ফিরে তিনি দর্শনের অধ্যাপক হিসেবে যোগ দিলেন বটে, কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে স্বেচ্ছায় সেই পদ ত্যাগ করে কাজ করলেন হাসপাতালে, প্রথমে পোর্টার এবং পরে ল্যাবরেটরি অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে। ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে নিজ চিকিৎসকের বাড়িতে মৃত্যুর আগে তিনি বলেছিলেন: `Tell them, I’ve had a wonderful life and I enjoyed it!’
হ্যাঁ, ওয়ান্ডারফুলই বটে। জীবন নিয়ে এইভাবে ছিনিমিনি কজনই বা খেলতে পারেন!
আমার ধারণা ফরিদ ভাইও এভাবে বলতে পারবেন- টেল দেম আই হ্যাভ হ্যাড আ পেইনফুল বাট ওয়ান্ডারফুল লাইফ, অ্যান্ড আই এনজয়েড ইট।
আহমাদ মোস্তফা কামাল: সমসাময়িক সময়ের গুরুত্বপূর্ণ কথাসাহিত্যিক। জন্ম ১৯৬৯ সালের ১৪ ডিসেম্বর মানিকগঞ্জ জেলায়। ২০০৩ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে এমফিল এবং ২০১০ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি।
ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক আহমাদ মোস্তফা কামালের লেখালেখির শুরু ১৯৯০ দশকের শুরুতে। প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘দ্বিতীয় মানুষ’ প্রকাশিত হয় ১৯৯৮ সালে। এরপর আরও ৯টি গল্পগ্রন্থ, আটটি উপন্যাস, একটি নভেলেট, চারটি প্রবন্ধগ্রন্থ এবং দুটি মুক্তগদ্যের সংকলন প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া সম্পাদনা করেছেন আরও ১১টি গ্রন্থ। সাহিত্যকর্মের জন্য তিনি একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কার পেয়েছেন।
কাঠফাটা রোদ আর ভ্যাপসা গরমে প্রকৃতি যেন পুড়ে যাচ্ছে। এমন বৈরী আবহাওয়াতে কুমিল্লার কৃষকরা মেতে উঠেছেন রোরো ধান ঘরে তোলার উৎসবে। পাকা ধানের ঘ্রাণে মোহিত হচ্ছে চারপাশ।
কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর কুমিল্লায় এক লাখ ৬১ হাজার ৭৯০ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ হয়েছে। এ মৌসুমে ব্রি ধান ৯৬, ব্রি ধান ৮৯, ব্রি ধান ৯২ ও বঙ্গবন্ধু ধান ১০০ আবাদে কৃষকের আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে।
গত ১৩ এপ্রিল দেবিদ্বার উপজেলার ইউসুফপুর ইউনিয়নের ইউসুফপুর গ্রামে বোরো ধান কাটার উদ্বোধন করেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপপরিচালক আইউব মাহমুদ। তিনি জানান, বোরো ধান তোলার উৎসবে শুরু হয়েছে। ভালো ফলনে খুশি কৃষকরা।
তিনি বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় মিধিলি ও মিগজাউমের আঘাতে রবি ফসলের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষকদের মৌসুমের শুরু থেকেই আধুনিক উফশী জাত ও হাইব্রিড জাতের বোরো ধান আবাদে উদ্বুদ্ধ করা হয়। বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে সেচ নিশ্চিতকরণ, কালবৈশাখি ঝড়, অতিবৃষ্টি, তাপদাহ, রোগ-বালাইয়ের প্রাদুর্ভাবসহ নানা প্রতিকূলতা ছিল।
‘নিয়মিত মাঠ পরিদর্শন ও সঠিক পরামর্শ প্রদানের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত মাঠের সার্বিক পরিস্থিতি ভালো লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ বছর বোরো মৌসুমে ভালো ফলন আশা করা হচ্ছে।’
জেলার দেবিদ্বার এলাকা ঘুরে শুক্রবার দেখা যায়, ফসলের মাঠে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। জমিতে ব্রি ধান ৯৬ জাতের একটি জমিতে প্রতি হেক্টরে ফলন পাওয়া গেছে ৪ দশমিক ১৮ টন।
কৃষি বিভাগের পরামর্শে প্রথমবারের মতো ব্রি ধান ৯৬ জাতটি চাষ করেছেন কৃষক আবুল কালাম আজাদ। মাত্র ১৩০ দিনের জীবনকালে বাম্পার ফলন পেয়ে বেজায় খুশি তিনি।
দেবিদ্বার উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ বানিন রায় জানান, এ বছর দেবিদ্বার উপজেলায় ১২ হাজার ৬৯০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। যা গত বছর ছিল ১২ হাজার ৬৩০ হেক্টর। বোরো ধানে ব্রি ধান ২৮ এর পরিবর্তে একই জীবনকালের, তবে অধিক ফলনের ব্রি ধান ৯৬ চাষের পরামর্শ প্রদান ও উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রম চলমান ছিল।
তিনি জানান, স্বর্ণা ধানের মতো রঙের এ ধানটিতে প্রোটিনের পরিমাণ ১০ দশমিক ৮ শতাংশ ও এমাইলোজের পরিমাণ ২৮ শতাংশ হওয়ায় ভাত খেতে সুস্বাদু ও ঝরঝরে।
আরও পড়ুন:মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভেতর দিয়ে যাওয়া শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ সড়কে রাস্তা পারাপারের সময় গাড়িচাপায় পিষ্ট হয়ে প্রাণ গেছে ১২ ফুট লম্বা একটি অজগরের।
মাগুরছড়া খাসিয়াপুঞ্জির সামনে বৃহস্পতিবার রাতে এ ঘটনা ঘটে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বন বিভাগের ভাষ্য, অজগরটিকে মাটিচাপা দেয়া হয়েছে।
বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ জানায়, লাউয়াছড়ায় বনের ভেতরে যানবাহন চলাচলের জন্য বন বিভাগ দিকনির্দেশনা দিয়ে সাইনবোর্ড লাগিয়েছে, কিন্তু কেউ সেটা মানে না। যেভাবে খুশি সেভাবে চলাচল করে সব ধরনের গাড়ি। ধারণা করা হচ্ছে কোনো এক সময় রাস্তায় চলাচলকারী গাড়ির চাপায় ১২ফুট লম্বা অজগরটি পিষ্ট হয়ে বৃহস্পতিবার রাতে মারা যায়।
বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘লাউয়াছড়া বনের মাগুরছড়া খাসিয়াপুঞ্জির সামনে শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ সড়কে শুক্রবার সকালে অজগর সাপকে মৃত অবস্থায় দেখেন স্থানীয়রা।
‘খবর পেয়ে বন বিভাগের লোকজন মৃত অজগরটিকে উদ্ধার করে জানকীছড়ায় মাটিচাপা দেন।’
কিশোরগঞ্জের আলোচিত পাগলা মসজিদের দানবাক্স খুলে এবার ২৭ বস্তা টাকা পাওয়া গেছে, যেগুলোর গণনা চলছে এ মুহূর্তে।
জেলা শহরের ঐতিহাসিক মসজিদটিতে ৯টি দানবাক্স আছে, যেগুলো প্রতি তিন মাস পরপর খোলা হয়। রমজানের কারণে এবার এবার খোলা হয়েছে চার মাস ১০ দিন পর।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও দানবাক্স খোলা কমিটির আহ্বায়ক কাজী মহুয়া মমতাজের তত্ত্বাবধানে জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ ও পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ রাসেল শেখের উপস্থিতিতে সকাল সাড়ে সাতটার দিকে দানবাক্সগুলো খোলা হয়। এবার ৯টি দানবাক্স খুলে ২৭ বস্তা টাকা পাওয়া গেছে।
এখন চলছে গণনার কাজ। গণনা শেষে টাকার পরিমাণ বলা যাবে।
ডিসি মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, সকাল সাড়ে সাতটার দিকে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সদস্যদের উপস্থিতিতে ৯টি দানবাক্স খোলা হয়েছে। এসব দানবাক্সে ২৭ বস্তা টাকা পাওয়া গেছে।
এসপি মোহাম্মদ রাসেল শেখ জানান, কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে পাগলা মসজিদের দানবাক্সগুলো খোলা হয়েছে। টাকা গণনা শেষে ব্যাংকে পৌঁছে দেয়া পর্যন্ত পুলিশ সদস্যরা নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবেন।
টাকা গণনার কাজে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা, কর্মচারীরা ছাড়াও মাদ্রাসার ১১২ ছাত্র, ব্যাংকের ৫০ কর্মী, মসজিদ কমিটির ৩৪ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১০ জন সদস্য অংশ নিয়েছেন।
দানবাক্সগুলো খোলার পর গণনা দেখতে মসজিদের আশপাশে ভিড় করছেন উৎসুক মানুষ। তাদের মধ্যে অনেকে এসেছেন দূরদুরান্ত থেকে।
এর আগে ২০২৩ সালের ৯ ডিসেম্বর তিন মাস ২০ দিন পর দানবাক্সগুলো খোলা হয়েছিল। তখন ২৩টি বস্তায় ছয় কোটি ৩২ লাখ ৫১ হাজার ৪২৩ টাকা পাওয়া গিয়েছিল।
ঐতিহাসিক এ মসজিদের দানবাক্সে একসঙ্গে এত টাকা পাওয়াটা তখন ছিল নতুন রেকর্ড। এবার সে রেকর্ড ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
মসজিদটিতে নিয়মিত হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগলসহ বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র দান করেন বিভিন্ন জেলা থেকে আসা অসংখ্য মানুষ।
জেলা শহরের হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে প্রায় ১০ শতাংশ জমিতে পাগলা মসজিদ গড়ে ওঠে। সম্প্রসারণের পর মসজিদের আওতাভুক্ত জমির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে তিন একর ৮৮ শতাংশে।
আরও পড়ুন:নাটোরের সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে অপহরণ ও নির্যাতনের অভিযোগ ওঠার পর চেয়ারম্যান প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লুৎফুল হাবীব রুবেলকে কারণ দর্শোনোর নোটিশ (শোকজ) দিয়েছে সিংড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ।
শুক্রবার দুপুরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওহিদুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মো. জান্নাতুল ফেরদৌস স্বাক্ষরিত চিঠিতে কারণ দর্শানোর নোটিশ ইস্যু করা হয়।
নোটিশে বলা হয়, ‘গত ১৫ এপ্রিল নাটোর জেলা নির্বাচন কমিশন অফিসের সামনে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন পাশার মনোনয়নপত্র জমাদানে বাধা প্রদান, মারপিট ও অপহরণের ঘটনা যা বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচারিত হয় এবং উক্ত ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার আসামি সুমনের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে আপনার সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়, যা দলীয় আচরণবিধি পরিপন্থির সামিল।
‘এমতাবস্থায় কেন আপনার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তার জবাব আগামী ৩ দিনের মধ্যে লিখিতভাবে জানানোর জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো।’
ওই সময়ের মধ্যে জবাব না দিলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়।
শোকজের বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ ঘটনায় দলীয় তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই তাকে শোকজ করা হয়েছে। শোকজের জবাবের প্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন সোমবার বিকেলে সিংড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন পাশা অনলাইনে আবেদনের পর জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে মনোনয়নপত্রের প্রতিলিপি জমা দিতে আসেন। সেখানে আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা দুর্বৃত্তরা তাকে মারধর করে কালো মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। পরে তাকে আবারও বেধড়ক মারধর করে বাড়ির সামনে ফেলে যায়। সেখান থেকে পরিবারের সদস্যরা তাকে সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে স্থানান্তরের পরামর্শ দেন।
এ ঘটনায় দেলোয়ার হোসেনের পরিবার লুৎফুল হাবীব রুবেল ও তার সমর্থকদের দায়ী করে আসছে। ইতোমধ্যে তাদের করা মামলায় গ্রেপ্তারকৃত সুমন নামের এক আসামি আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন যে, লুৎফুল হাবীব রুবেলের পক্ষ নিয়েই সুমনসহ অন্য আসামিরা দেলোয়ার হোসেন পাশাকে অপহরণ ও মারধর করেছেন।
এ ঘটনায় জড়িত থাকার প্রমাণ মেলায় রুবেলকে শোকজ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
লুৎফুল হাবীব রুবেল উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শেরকোল ইউনিয়ন পরিষদের সদ্য পদত্যাগ করা চেয়ারম্যান। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে তার। তিনি প্রতিমন্ত্রীর শ্যালক।
আরও পড়ুন:জমিজমা-সংক্রান্ত বিরোধের জেরে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলায় দুই গ্রুপের সংঘর্ষে খাইরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরও অন্তত ১২ জন আহত হয়েছেন, যাদের বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
শুক্রবার বিকেলে উপজেলার সাহাপুর ইউনিয়নের চরগড়গড়ী আলহাজ মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত ৪০ বছর বয়সী খাইরুল ইসলাম চরগড়গড়ী আলহাজ মোড় পশ্চিমপাড়ার মৃত নসিম উদ্দিন প্রামাণিকের ছেলে।
আহতদের মধ্যে কয়েক জনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন, ৫০ বছর বয়সী সাজু হুদী, জামাত ফকির ও নুর বেগম, ৫৫ বছর বয়সী মানু প্রামানিক, ৬০ বছর বয়সী মোসলেম উদ্দিন, ৩৫ বছর বয়সী খোকন প্রামাণিক, জিল্লুর, ওলিউর রহমান, মজিদ, ইছাই প্রামানিক ও মো. মিঠুন এবং ৩০ বছর বয়সী নাসিরউদ্দিন।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, কয়েকদিন আগে জমিজমা-সংক্রান্ত বিরোধের জেরে দুই গ্রুপের লোকজনদের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়। এ নিয়ে গত দুই দিনে দুই গ্রুপের মধ্যে ছোটোখাটো মারামারির ঘটনাও ঘটে। এইসব ঘটনার জের ধরে শুক্রবার বিকেল ৩টার দিকে তারা ফের সংঘর্ষে জড়ায়।
সংঘর্ষ চলাকালে ঘটনাস্থলেই খাইরুল নিহত হন। আর আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান স্থানীয়রা। তাদদের মধ্যে অন্তত ১০ জনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদের রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ঈশ্বরদী থানার ওসি (তদন্ত) মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় একজন মারা গেছেন। আমরা ঘটনাস্থলে রয়েছি। এ বিষয়ে পরে বিস্তারিত বলতে পারব।’
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় টাকা না পেয়ে আব্দুল কাদের নামে এক বৃদ্ধকে ছুরিকাঘাতে হত্যার অভিযোগ উঠেছে তারই ছেলের বিরুদ্ধে। ঘটনার পর পলাতক রয়েছে আরিফ হোসেন নামের ওই যুবক।
উপজেলার ফুলবাড়িয়া ইউনিয়নের আন্ধারিয়া পাড়া গ্রামে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন ফুলবাড়িয়া থানার ওসি মো. রাশেদুজ্জামান।
তিনি বলেন, ‘টাকার জন্য প্রায়ই বাবাকে চাপ দিত ২০ বছর বয়সী আরিফ। সম্প্রতি বাবার কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা নিয়ে মোবাইল কেনে সে। বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে আবারও ১০ হাজার টাকা চাইলে তা দিতে অস্বীকৃতি জানান আব্দুল কাদের। এতে আরিফ ক্ষিপ্ত হয়ে বাড়িঘর ভাঙচুর করার হুমকি দেয়। এমতাবস্থায় রাত সাড়ে ১০টার দিকে আব্দুল কাদের পাশে বড় ছেলের বাড়িতে যাওয়ার উদ্যোগ নিলে পেছন থেকে বাবার পেটে ও পিঠে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায় আরিফ। এ সময় স্থানীয়রা সঙ্গে সঙ্গে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।’
ওসি বলেন, ‘এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে আরিফ পলাতক রয়েছে। তাকে গ্রেপ্তার করতে চেষ্টা চলছে।’
সরকারি শ্রম অভিবাসন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কর্মসংস্থানের আশায় মালয়েশিয়ায় যাওয়া বাংলাদেশি প্রবাসীদের পরিস্থিতি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা।
শুক্রবার জেনেভা থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, কয়েক মাস বা তার বেশি সময় ধরে মালয়েশিয়ায় বসবাসরত বাংলাদেশি অভিবাসীদের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল ও অসম্মানজনক।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করা বিশেষজ্ঞরা হলেন- দাসত্বের সমসাময়িক রূপ, কারণ ও পরিণতি বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি টোমোয়া ওবোকাতা, মানবপাচার বিশেষ করে নারী ও শিশুপাচার সম্পর্কিত বিশেষ প্রতিনিধি সিওভান মুল্লালি, প্রবাসীদের মানবাধিকারবিষয়ক বিশেষ দূত গেহাদ মাদি ও রবার্ট ম্যাককরকোডেল (চেয়ার-র্যাপোর্টিয়ার), ফার্নান্দা হপেনহাইম (ভাইস-চেয়ার), পিচামন ইয়োফানটং, দামিলোলা ওলাউই, এলজবিয়েতা কারস্কা এবং ব্যবসা ও মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা দল।
জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘প্রবাসীদের ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতি মোকাবিলা এবং তাদের শোষণ, অপরাধীকরণ ও অন্যান্য মানবাধিকার লঙ্ঘন থেকে রক্ষা করার জন্য মালয়েশিয়ার জরুরি পদক্ষেপ নেয়া দরকার।’
তারা উল্লেখ করেন, অনেক প্রবাসী মালয়েশিয়ায় এসে দেখেন প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী চাকরি নেই এবং অনেক সময় তাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও থাকতে বাধ্য করা হয়।
এর ফলে এসব প্রবাসী গ্রেপ্তার, আটক, দুর্ব্যবহার ও বহিষ্কারের ঝুঁকিতে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
তারা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে প্রবাসী কর্মী নিয়োগের মাধ্যমে বড় অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে সক্রিয় অপরাধী চক্র। এতে প্রবাসীরা প্রতারিত হচ্ছেন, ঘন ঘন ভুয়া কোম্পানিতে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে এবং অতিরিক্ত নিয়োগ ফি দিতে বাধ্য করা হচ্ছে। যে কারণে তাদের ঋণের বোঝা বেড়ে যাচ্ছে।’
তারা বলেন, ‘আমরা রিপোর্ট পেয়েছি যে উভয় সরকারের কিছু উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বা এটি প্রশ্রয় দিচ্ছেন। এটা অগ্রহণযোগ্য এবং এর অবসান হওয়া দরকার।’
বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘এই শোষণমূলক নিয়োগের অপরাধীদের অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে। এখন পর্যন্ত এই বেসরকারি ব্যবসা এবং প্রতারণামূলক নিয়োগ সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া উভয় দেশের ভূমিকাই অপর্যাপ্ত।’
তারা আরও বলেন, ‘এরই মধ্যে অনেক অসহায় প্রবাসীদের অপরাধীতে পরিণত করা হয়েছে এবং শোষণের শিকার হওয়ার কথা জানাতে গিয়ে কেউ কেউ তীব্র প্রতিহিংসার মুখোমুখি হয়েছেন।’
বিবৃতিতে মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশকে এসব ঘটনার তদন্ত করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার আহ্বান জানান বিশেষজ্ঞরা।
ব্যবসা ও মানবাধিকার সম্পর্কিত জাতিসংঘের নীতিমালা মেনে চলতে মালয়েশিয়াকে আহ্বান জানিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘মালয়েশিয়াকে অবশ্যই পর্যাপ্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে শ্রম অভিবাসনকে আরও কার্যকরভাবে পরিচালনা করতে হবে।’
মালয়েশিয়ার ব্যবসাক্ষেত্রগুলোতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের হাত থেকে প্রবাসী শ্রমিকদের রক্ষা করতে এবং এই ব্যবসাগুলোতে মানবাধিকারের প্রতি সম্মান নিশ্চিত করতে পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।
এ বিষয়ে তাদের পরামর্শ হচ্ছে, নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের শনাক্তকরণ, সুরক্ষা ও সহায়তা, মানবপাচারের বিরুদ্ধে বিদ্যমান আইনি সুরক্ষা প্রয়োগ এবং দেশের আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের বাধ্যবাধকতা সমুন্নত রাখতে মালয়েশিয়াকে অবশ্যই প্রচেষ্টা জোরদার করতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা এর আগে এসব বিষয় নিয়ে মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য