অনেকদিন ধরেই হাসছিল না মুশফিকুর রহিমের ব্যাট। চলতি ডিপিএলে মোহামেডানের জার্সিতেও কাটছিল না সুন্দর সময়। অবশেষে হাসলো অভিজ্ঞ এই তারকার ব্যাট। দায়িত্ব নিয়ে হাল ধরলেন দলের। মুশফিকের রানে ফেরার দিনে বৃথা গেছে অমিত হাসানের সেঞ্চুরি। মোহামেডানের জয়ের দিনে বড় জয় পেয়েছে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী। গুলশান হারিয়েছে শাইনপুকুরকে।
বিকেএসপির তিন নম্বর মাঠে প্রথমে ব্যাট করে ৭ উইকেট হারিয়ে ২৮৭ রানের পুঁজি দাঁড় করায় মোহামেডান। জবাব দিতে নেমে ৪৭.২ ওভারে ২১৩ রান তুলতে পেরেছে অগ্রণী ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব। ৭৪ রানের বড় জয় পেয়েছে সাদা-কালোরা। চার নম্বর মাঠে আবাহনীর ২৯০ রানের জবাবে প্রাইম ব্যাংক গুটিয়ে গেছে মোটে ১৫৭ রানেই। আবাহনীর জয় ১৩৩ রানের। মিরপুরে গুলশানের দেওয়া ১৭৮ রানের লক্ষ্যও ছুঁতে পারেনি শাইনপুকুর। গুটিয়ে গেছে ১৭৩ রানেই।
১০ ম্যাচে ১৩ পয়েন্ট নিয়ে গুলশানের সুপার লিগ খেলার ভালো সম্ভাবনা আছে। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচটিতে প্রাইম ব্যাংকের সাথে জিততে পারলে কারও দিকে না তাকিয়ে সরাসরি সুপার লিগে চলে যেতে পারবে গুলশান। ১৮ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে আবাহনী। আর ১৬ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে আছে মোহামেডান।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই উইকেট হারায় মোহামেডান। তবে সেই চাপ সামলে বড় লক্ষ্যই দাঁড় করায় দলটি। এর পেছনে সবচেয়ে বেশি অবদান মুশফিকুর রহিমের। ৫৭ বলে ৬ চার ১ ছক্কায় ৭৫ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছেন তিনি। এছাড়াও মহিদুল ইসলাম অঙ্কান ৮৩ বলে ২ চার ৩ ছক্কায় ৬৪, ওপেনার রনি তালুকদার ৪৬, অধিনায়ক তাওহীদ হৃদয় ৪২ রান করেছেন।
বিকেএসপির তিন নম্বর মাঠে মোহামেডানের দেওয়া ২৮৮ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই উইকেট হারায় অগ্রণী ব্যাংক। এক অমিত হাসান ছাড়া দলের কেউই প্রতিরোধ গড়তে পারেননি। একপ্রান্ত আগলে রেখে অমিত দারুণ ইনিংস খেলে পান সেঞ্চুরিও। নবম ব্যাটার হিসেবে তিনি সাজঘরে ফেরার আগে ১০৫ রানের ইনিংস খেলেন। ১২৩ বলে ৭ চার ও ১ ছক্কায় অমিত নিজের ইনিংসটি সাজান। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৭ রান আসে মার্শাল আইয়ুবের ব্যাট থেকে।
মোহামেডানের হয়ে ২২ রানে মিরাজ তিনটি এবং ৩৪ রানে ইবাদত আরও তিনটি উইকেট শিকার করেন। দুই বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদ ও তাইজুল ইসলাম নেন দুটি করে উইকেট। অগ্রণী ব্যাংকের হয়ে ৪৭ রানে ৩ উইকেট শিকার করেছেন আরিফ আহমেদ।
বিকেএসপিতে টস জিতে শান্ত ও পারভেজের জোড়া হাফ সেঞ্চুরিতে ৯ উইকেট হারিয়ে ২৯০ রান সংগ্রহ করে আবাহনী। কঠিন লক্ষ্যে খেলতে নেমে আবাহনীর বোলাদের তোপে পড়ে প্রাইম ব্যাংক। ওপেনার নাঈম শেখ (৭৩) ও মিডল অর্ডার ব্যাটার শামীম হোসেন (৪০) ছাড়া আর কেউই বড় সংগ্রহ দাঁড় করাতে পারেনি। এর বাইরে দুজন কেবল দুই অঙ্কের ঘর ছুঁতে পেরেছেন।
আবাহনীর এই জয়ে বড় অবদান মোসাদ্দেকের, ব্যাট হাতে ৩৭ রানের পর বল হাতে তিন উইকেট নিয়ে প্রাইম ব্যাংককে হারানোর মূল নায়ক তিনিই। তার অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে হাফ সেঞ্চুরি করা নাজমুল হোসেন শান্ত ও পারভেজ হোসেন ইমন পার্শ্বনায়ক হয়ে উঠেছেন।
মিরপুরে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ৩৬ রানের ওপেনিং জুটি পায় গুলশান। অধিনায়ক আজিজুল তামিম ১৬ রানে আউট হলে ভাঙে জুটি। এরপর শাইনপকুরের বোলারদের তোপে নিয়মিত বিরতিতে একের পর এক উইকেট হারাতে থাকে তারা। গুলশানের মিডল অর্ডার ব্যাটার সাকিব শাহরিয়ারের দায়িত্বশীল ইনিংসে ৪১ ওভারে ১৭৮ রান করতে পারে ঢাকা লিগে প্রথমবার খেলতে নামা দলটি। শাহরিয়ার সর্বোচ্চ ৩৮ রানের ইনিংস খেলেন। ওপেনার জাওয়াদ আবরার খেলেন ৩৭ বলে ৩৭ রানের ইনিংস।
জবাবে শাইনপুকুর জয়ের সম্ভাবনা তৈরি করেছিল। ৮ রানে প্রথম উইকেট হারানোর পর দ্বিতীয় উইকেটে মইনুল ইসলাম তন্ময় ও নিয়ন জামান ৪০ রানের জুটি গড়েন। দলীয় ৪৮ রানে দ্বিতীয় উইকেট পতনেই মোড়ক লাগে শাইনপুকুরের। স্কোরবোর্ডে কোনও রান না উঠিয়ে দ্রুত তিন ব্যাটার সাজঘরে ফেরেন। এই বিপর্যয় অবশ্য কাটিয়ে উঠেছিল শাইনপুকুর। রায়হান রাফসান ও শাহরিয়ার সাকিব চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু গুলশানের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে ৪৩ ওভারে ১৭৩ রান তুলে অলআউট হয় তারা। সর্বোচ্চ ৪০ রান আসে সাকিবের ব্যাট থেকে।
গুলশানের বোলারদের মধ্যে আজিজুল হাকিম তামিম নেন তিনটি উইকেট। তিনটি উইকেট শিকার করেন নিহাদুজ্জামান। শাইনপুকুরের নিয়ন জামান সর্বোচ্চ তিনটি উইকেট। রাহিম আহমেদ নেন দুটি উইকেট।