বহু আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) ফাইনাল মহারণ মাঠে গড়াবে আজ শুক্রবার। দেশের সবচেয়ে বড় টুর্নামেন্টের জ্বরে তাই কাঁপছে পুরো দেশ। মিরপুরের শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামেও বইছে ভিন্ন আমেজ। ভিন্ন সাজে সাজছে হোম অব ক্রিকেট।
ফাইনালে পঞ্চম ট্রফি জয়ের লক্ষ্যে মাঠে নামবে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন নাফিসা কামালের কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। অন্যদিকে এর আগে তিনবার ফাইনালে গেলেও ট্রফিখরা কাটেনি বরিশালের। তাই ভাগ্য পরিবর্তনের লক্ষ্যে মাঠে নামবে তামিম ইকবালের ফরচুন বরিশাল। তারকায় ভরপুর কুমিল্লা-বরিশাল দুই দলই। তাই লড়াইটাও হবে ধুন্ধুমার। যেটার আভাস দিয়েছেন ফাইনালের আগে ট্রফি নিয়ে ফটোসেশনে আসা দুই দলের সহ-অধিনায়ক; মেহেদী হাসান মিরাজ আর জাকের আলি অনিক।
মজার বিষয় হলো, এই দুই দলই ফাইনালে এসেছে একটি দলকেই হারিয়ে। প্রথম কোয়ালিফায়ার ম্যাচে রংপুরকে হারায় কুমিল্লা আর দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার ম্যাচে হারায় বরিশাল। আর এই দুই ম্যাচেই ব্যর্থ ছিল রংপুরের ব্যাটিং লাইনআপ।
বিপিএলের নবম আসরেও ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল ফরচুন বরিশাল আর কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। সেবার বরিশালকে নেতৃত্ব দিয়েছিল সাকিব আল হাসান। পরিবর্তন ছিল বরিশালের বেশকিছু খেলোয়াড়েরও। আর কুমিল্লাকে নেতৃত্ব দিয়েছিল ইমরুল কায়েস। ফাইনালের জমজমাট লড়াইয়ে ১ রানের হার পুড়িয়েছিল সাকিবের নেতৃত্বে খেলা বরিশালকে। এবার নিশ্চয়ই সেই প্রতিশোধ নিতে চাইবেন তামিম ইকবালরা।
এবার চলুন দুই দলের ফাইনালে খেলার পরিসংখ্যানে একটু নজর দেওয়া যাক। বিপিএলে ৬ বার অংশ নিয়ে ৪ বারই ফাইনাল খেলেছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স এবং প্রতিবারই পেয়েছে চ্যাম্পিয়নের স্বাদ। অর্থাৎ ফাইনালে অপ্রতিরোধ্য কুমিল্লা। অন্যদিকে সব মিলিয়ে ৩ বার ফাইনাল খেলেছে বরিশাল। কিন্তু একবারও ছুঁয়ে দেখা হয়নি ট্রফি। তবে অন্যান্য আসরের তুলনায় এবার বেশ শক্তিশালী তামিম-মুশফিক-মাহমুদউল্লাদের নিয়ে গড়া বরিশাল।
দুই দলের এই হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে স্বাভাবিকভাবেই চাপ থাকবে দলের অভিজ্ঞ ও নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড়দের ওপর। তবে দুই দলেই এমন কিছু পারফর্মার রয়েছেন, যারা হতে পারেন এক্সফ্যাক্টর, ঘুরিয়ে দিতে পারেন ম্যাচের মোড়। সে ক্ষেত্রে বরিশালের তালিকায় থাকবে কেইল মায়ার্স, ডেভিড মিলার, জেমস ফুলার আর সাইফুদ্দিনের নাম। গ্রুপ পর্ব এলিমিনেটর ম্যাচে ইতোমধ্যেই নিজেদের প্রমাণ করেছেন তারা। বিশেষ করে কেইল মায়ার্স আর সাইফুদ্দিন। দুজনই আছেন সেরা ছন্দে।
অন্যদিকে কুমিল্লার তালিকায় রয়েছেন আন্দ্রে রাসেল, মঈন আলি, আলিস ইসলাম, তৌহিদ হৃদয় কিংবা জাকের আলি। আন্দ্রে রাসেলকে নিয়ে খুব বেশি বলার কিছু নেই। তার শক্তিমত্তার কথা সবারই জানা। বিশেষ করে ২০১৯-২০২০ ফাইনালের কথা মনে থাকার কথা সবারই। সেবার পুরো টুর্নামেন্টে গড়পড়তা পারফরম্যান্স করা রাসেল জ্বলে উঠেছিলেন সেমিফাইনাল আর ফাইনালে। একাই জিতিয়েছিলেন রাজশাহীকে। তৌহিদ হৃদয় ব্যাটিং সামর্থ্য দেখিয়েছেন। ইতোমধ্যেই আসরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তিনি।
ফাইনালে কুমিল্লার বড় শক্তির জায়গা হবে তাদের অলরাউন্ডাররা। বিশেষ করে সুনীল নারিন, আন্দ্রে রাসেল আর মঈন আলি। টি-টোয়েন্টিতে বিশ্ব মাতানো এই তারকারা যেমন দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে, তেমনি ভয়ংকর বোলিংয়ে। আর মিরপুরের উইকেট তো সুনীল নারিনের জন্য স্বর্গরাজ্য। রাসেলের স্লোয়ারও বেশ কার্যকরী মিরপুরের পিচে।
তরুণ ক্রিকেটাররাও কুমিল্লার জন্য দারুণ কিছু করতে পারেন। সেখানে থাকবে শেষ ম্যাচে একাদশে সুযোগ পাওয়া অনূর্ধ্ব দলের খেলোয়াড় বর্ষণ, জাকের আলি অনিক, মুশফিক হাসানদের নাম।
অন্যদিকে বরিশালের বড় শক্তির জায়গা তাদের ব্যাটিং লাইনআপ এবং অভিজ্ঞতা। সর্বশেষ ম্যাচে বরিশাল ৯ জনের লম্বা ব্যাটিং লাইনআপ নিয়ে খেলেছে। কুমিল্লার চেয়ে যোজন ব্যবধানে এগিয়ে থাকবে বরিশালের খেলোয়াড়দের অভিজ্ঞতা। যে দলে মুশফিকুর রহিম, তামিম ইকবাল, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, ডেভিড মিলারদের মতো খেলোয়াড়; সেখানে অভিজ্ঞতার ঘাটতি থাকার কোনো কথাই নেই। যেটা বড় ম্যাচে এগিয়ে রাখবে বরিশালকে।
ফাইনালে বাড়তি দায়িত্ব থাকবে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ আর মুশফিকুরর রহিমের। সেই প্রথম আসর থেকে বিপিএলে নিয়মিত এ দুই ক্রিকেটার। ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সেও অন্য অনেকের চেয়ে এগিয়ে তারা। কিন্তু দলীয় সাফল্যের ঝুলি এখনো শূন্য তাদের। সবগুলো আসর খেলেও কেউই পাননি ট্রফির ছোঁয়া। বাংলাদেশ ক্রিকেটের দুই মহীরুহ এবার খেলছেন একই দলে। একসঙ্গেই তাই দুজনের সামনে সুযোগ শিরোপার তিয়াস মেটানোর। সেটা করতে তাই নিজেদের সেরাটা নিংড়ে দেবেন তারা।
সবশেষে ফাইনালে যে দলই চ্যাম্পিয়ন হোক না কেন, ট্রফি উঠবে নতুন কোনো অধিনায়কের হাতেই, যারা এর আগে অধিনায়ক হিসেবে ট্রফি জয় করেননি।