২০০৮ সালে সর্বপ্রথম ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি লিগ নিয়ে বিশ্ব ক্রিকেটে হাজির হয় ভারত, জনপ্রিয়তা পায় বিশ্বব্যাপী। এমনকি অনেক ক্রিকেটার তো আইপিএলকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের চেয়ে বেশি প্রতিযোগিতাপূর্ণ মনে করে থাকেন।
ঠিক একই আদলে ২০১২ সালে শুরু হয় বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল)। এখন পর্যন্ত মোট ৯টি আসর মাঠে গড়িয়েছে এই টুর্নামেন্টের। এরই মধ্যে এই টুর্নামেন্ট নিয়ে ক্রিকেটপাড়ায় আছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা। তবুও বাংলাদেশ ক্রিকেটে এই টুর্নামেন্টের অবদান কিন্তু কম নয়।
বিপিএল-এর মাধ্যমে দেশের ক্রিকেটে উঠে এসেছে বিশ্বমানের ক্রিকেটার। সাকিব, তামিম, মুশফিকরা এই বিপিএলে খেলেই দিনের পর দিন হয়েছেন আরও শাণিত, পরিশীলিত।
এ ছাড়াও এবারের বিপিএলে দেশীয় তারকাদের পাশাপাশি বেশ কিছু নামীদামি বিদেশি ক্রিকেটারকে মাঠে ভিড়িয়েছে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো। এই টুর্নামেন্ট মাতাতে এবার বাংলাদেশে আসছেন ডেভিড মিলার, ফখর জামান, শোয়েব মালিক, কুইন্টন ডি ককদের মতো তারকারা। এ ছাড়াও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বেশ কিছু বড় তারকাকে খেলতে দেখা যাবে এই টুর্নামেন্টে।
বিপিএল-এর গত আসরে অভিযোগ উঠেছিল যে প্রযুক্তি আধুনিক মানের নয়। এমনকি ছিল না ডিআরএস ব্যবস্থাও। এবার এই টুর্নামেন্টে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিপিএল কর্তৃপক্ষ।
আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার না করা, রিভিউ না থাকা, ভালো খেলোয়াড় সংকটসহ নানা কারণে অন্যান্য ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের চেয়ে পিছিয়ে গেছে বিপিএল। তবে এবার অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারসহ বিশ্বমানের সম্প্রচারে নজর দিয়েছে বিসিবি।
উন্নতমানের সম্প্রচারের ফলে আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে এবারের আসর। মোট ৩৪ থেকে ৩৬টি অত্যাধুনিক ক্যামেরার মধ্যে ১৮টি থাকবে অপারেটর বা ক্রুদের হাতে। বাকি ১৬টি থাকবে স্বয়ংক্রিয়। ভিডিও কোয়ালিটি থাকবে ন্যূনতম ৪কে রেজল্যুশন। থাকছে জুম লেন্স, যাতে থাকবে ১২ গুণ বা ২৪ এমনকি ৯০ গুণও।
এবারের বিপিএলে সম্প্রচারকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য নতুন শর্ত আনছে বিসিবি। বিশ্বমানের সম্প্রচার নিশ্চিত করার জন্য শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে যে, সম্প্রচারকারী প্রতিষ্ঠানের থাকতে হবে আইপিএল, বিগব্যাশের মতো টুর্নামেন্ট বা আইসিসি টুর্নামেন্টের অভিজ্ঞতা। সম্প্রচারে ব্যবহার হবে ৩৪ থেকে ৩৬টি আধুনিক ক্যামেরা।
শর্ত দেয়া হয়েছে গ্রাফিকস নিয়েও। গ্রাফিকসের মান হতে হবে এশিয়া কাপ অথবা বিশ্বকাপের মানের। প্রোডাকশন কোম্পানিকে দিতে হবে সেরা কোয়ালিটির নিশ্চয়তা। তার জন্য বিসিবিকে দিতে হবে দুই কোটি ২০ লাখ টাকা। যেকোনো সময় প্রোডাকশনের দায়িত্বে থাকা কোম্পানির চুক্তি বাতিল করতে পারবে বিসিবি। অত্যাধুনিক অডিও মিক্সার বা ভিডিও মিক্সার তো থাকছেই।
গ্রাফিক্সের নান্দনিক ব্যবহারে থাকবে হিল প্লটার, ট্রাগেট এয়ার, ওয়াপস আর ড্রোনের উপস্থিতি। এসিসি বা আইসিসির মতো আন্তর্জাতিক মানের ইভেন্টের মতো গ্রাফিক্স কোয়ালিটি। অত্যাধুনিক স্টুডিও সাজানো হবে আধুনিক লাইট, রিফ্লেক্টিং চেয়ার, পিজিএম মনিটর দিয়ে। ইঞ্জিনিয়ার ক্রুতে থাকবেন অভিজ্ঞ প্রোডিউসার, ক্যামেরাপারসন ও এডিটররা, যাদের থাকতে হবে দশ বছরের লাইভ স্পোর্টস ম্যানেজমেন্টের অভিজ্ঞতা।
থার্ড আম্পায়ার এবং ধারাভাষ্যেও থাকছে আধুনিকতার ছোঁয়া। মাঠেও থাকছে জিং বেল ও এলইডি স্টাম্পস। সবক্ষেত্রেই থাকবে বিসিবির কড়া নজরদারি। তাই এবার বিপিএলে বিশ্বমানের সম্প্রচার পেতে যাচ্ছেন সমর্থকরা- যা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়।
আজ শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে বিপিএলের এবারের আসর। তা চলবে এক মাসেরও বেশি সময়। যথারীতি তিন ভেন্যুতে হবে এবারের আসর। সাত দলের টুর্নামেন্টের ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে ১ মার্চ। উদ্বোধনী দিনে প্রথম ম্যাচে দুর্দান্ত ঢাকার মুখোমুখি হবে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স এবং দ্বিতীয় ম্যাচে সিলেট স্ট্রাইকার্সের মুখোমুখি হবে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স।