বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

অগ্নিস্ফুলিঙ্গ রুদ্ররূপ ব্যাটিং বোলিংয়ের প্রদর্শনী হবে

  •    
  • ১৪ নভেম্বর, ২০২৩ ২৩:৩৬

লিগ পর্বে দুই দলের পারফরম্যান্স বিবেচনায় বুধবারেরর ম্যাচে পরিষ্কার ফেভারিট ভারত। ফর্মের এভারেস্টের চূড়ায় আছে দলটি। তবে ভারতকে যতই সুপারহিট টিমই বলা হোক না কেন, সেমিফাইনাল কিন্তু অন্য হিসাবের খেলা। এখানে অনেক ছক কষে খেলতে হয়। একটু পা হড়কালেই বড় বিপদ হতে পারে। ছোট একটি ভুলের জন্য ম্যাচজুড়ে মাশুল গুনতে হতে পারে। এখানে পেছনে ফেরে তাকানোর কোনো সুযোগ নেই।

ঘুরেফিরে গত বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের পুনরাবৃত্তি হলো এবারও। ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে আবারও পরস্পরের মুখোমুখি ভারত ও নিউজিল্যান্ড।

লিগ পর্বে ৯ ম্যাচ খেলে প্রতিটিতে জয় পেয়েছে ভারত। পূর্ণ ১৮ পয়েন্ট অর্জন করেই টেবিলের শীর্ষ দল হিসেবে শেষ চারে উঠেছে স্বাগতিকরা। কিন্তু লিগ পর্বজুড়ে সেভাবে দাপট দেখাতে পারেনি নিউজিল্যান্ড। চতুর্থ দল হিসেবে সেমিফাইনালে নাম লেখায় তারা।

লিগ পর্বে দুই দলের পারফরম্যান্স বিবেচনায় বুধবারেরর ম্যাচে পরিষ্কার ফেভারিট ভারত। ফর্মের এভারেস্টের চূড়ায় আছে দলটি। তবে ভারতকে যতই সুপারহিট টিমই বলা হোক না কেন, সেমিফাইনাল কিন্তু অন্য হিসাবের খেলা। এখানে অনেক ছক কষে খেলতে হয়। একটু পা হড়কালেই বড় বিপদ হতে পারে। ছোট একটি ভুলের জন্য ম্যাচজুড়ে মাশুল গুনতে হতে পারে। এখানে পেছনে ফেরে তাকানোর কোনো সুযোগ নেই।

এই পর্বে বিদায়ঘণ্টা বেজে গেলে আগামী চার বছরের জন্য অপেক্ষায় থাকতে হবে। তাই নকআউট পর্বের ম্যাচে সবচেয়ে বেশি দক্ষতা দেখাতে হয়, অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে হয়, খেলায় দূরদর্শিতার পরিচয় দিতে হয়, পরিস্থিতি বুঝে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হয়। মোট কথা, সর্বশক্তি দিয়ে নিত্যনতুন কৌশলে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে দুই দলকেই। অতীতে কী হয়েছে না হয়েছে, তা না ভেবে এসব ক্ষেত্রে যারা এগিয়ে থাকবে, আমার মতে তাদের কিন্তু জয়ের সম্ভাবনা ততই উজ্জ্বল হবে।

এবার অপ্রতিরোধ্য ভারত দলটি বেশি সতর্ক থাকবে। কেননা গত বিশ্বকাপে লিগ পর্বে ভালো ক্রিকেট খেলেও সেমিফাইনালে গিয়ে নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরে বিদায় নিতে হয়েছিল তাদের। তাই ঘরের মাঠে কোনো প্রকার ভুল তারা করবে না। লিগ পর্বের চেয়ে খেলায় আরও বেশি আগ্রাসী দেখা যেতে পারে তাদের। ফাইনালে ওঠার জন্য ‘অলআউট’ ক্রিকেট খেলবে ম্যান ইন ব্লুজরা।

অন্যদিকে, নিউজিল্যান্ড কিন্তু গত দুই আসরে ফাইনালে খেলা দল। এবার কষ্ট করে তাদের সেমিফাইনালের টিকিট কনফার্ম হয়েছে। তবে দলটি খুবই সম্ভাবনাময়। ইনজুরির কবলে পড়েও দলটি দুর্বল হয়নি। বড় ম্যাচে সব সময় প্রবল প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়ায় কিউইরা। গত বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ও বিশ্বকাপের ফাইনালে তাদের কাছে হারার অভিজ্ঞতা আছে ভারতের। ঘরের চেনা মাঠে খেলা হলেও রোহিতদের জন্য নিউজিল্যান্ডকে মোকাবিলা করা অনেক কঠিনই হবে। ‘বিগ হিটিং’ দল নিউজিল্যান্ড। অবশ্য ভারত দলেও ‘বিগ হিটার’ রয়েছে। সব মিলিয়ে আমি মনে করি, এই দুই দলের মধ্যে ফাইনালে ওঠার ক্রিকেট-যুদ্ধ হবে সমানে-সমানে।

নিউজিল্যান্ডের জন্য একটি বড় ইতিবাচক দিক হলো- ম্যাচে কিন্তু বেশি স্নায়ু চাপে থাকবে ভারতীয়রা। ঘরের মাঠে খেলা, টানা জয়ে প্রত্যাশা বেড়ে যাওয়া, গত আসরে কিউইদের কাছে হারসহ সংগত কারণেই বাড়তি চাপ থাকবে রোহিত শর্মাদের ওপর। অন্যদিকে, কিউইদের হারানোর কিছু নেই। তারা নির্ভার হয়ে খেলবে। তাদের আরেকটি ইতিবাচক দিক হলো- বেশ কিছু অভিজ্ঞ খেলোয়াড় তাদের দলে আছে। যারা ম্যাচের দৃশ্যপট পাল্টে দিতে পারেন। কেন উইলিয়ামসন টুর্নামেন্টে শুরু থেকে খেলেননি। এখন তার সেরাটা দেয়ার সময় এসেছে। তার ব্যাটের দিকে তাকিয়ে থাকবে দল। এ আসরে রাচিন রবীন্দ্রের কথা আলাদা করে বলতেই হবে। দুর্দান্ত খেলছেন এই অলরাউন্ডার। তিনি এখন টুর্নামেন্টে টপ স্কোরারদের একজন।

এই ভারতীয় বংশোদ্ভূত ক্রিকেটার ব্যাটিং-বোলিংয়ে ব্যবধান গড়ে দিতে পারেন। অন্যদিকে, ভারত দলের তুরুপের তাস হতে পারেন বিরাট কোহলি। ভারতীয় দলের সবচেয়ে বড় ব্যাটিং স্তম্ভ তিনি। এই সুপার ক্ল্যাসিক ব্যাটার যে কীর্তি দেখিয়ে যাচ্ছেন, কিউইদের জন্য আজ বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারেন। কোহলিকে ব্যর্থ না করতে পারলে বিপদে পড়তে পারে নিউজিল্যান্ড। এ ক্ষেত্রে ওপেনার রোহিত-গিলের উইকেটটি দ্রুত শিকারের দিকে বেশি মনোযোগ থাকবে তাদের। কেননা পাওয়ার প্লেতে যে ধরনের ব্যাটিং করে যাচ্ছেন ভারতের ওপেনাররা, তাদের উইকেট দ্রুত তুলে না নিলে কোহলিকে চাপে ফেলা যাবে না। অবশ্য চাপ সামলানোর মতো ব্যাটিং নৈপুণ্য দেখানোর অনন্য গুণ কোহলির মধ্যে। তাকে ব্যর্থ করতে হলে অসাধারণ কিছুই করে দেখাতে হবে কিউইদের। আমার মতে, ব্যাটিংয়ে যারা ইনিংসের প্রথম ১৫ ওভারের খেলা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে পারবে, তারাই ম্যাচে বেশি এগিয়ে যাবে।

বুমরাহ, শামি ও সিরাজ মিলে ভারতীয় পেস বোলিং খুবই ভয়ংকর। তাদের গতির তোপে পড়তে পারে কিউইরা। লিগ পর্বে খুবই বিপজ্জনক দেখা গেছে তাদের। পাওয়ার প্লেতে খুবই সফল হয়েছেন তারা। বোলিংয়ে নতুনত্ব এনে নকআউট পর্বে আরও বিধ্বংসী হয়ে উঠতে পারেন এই পেসাররা। হার্দিক পান্ডিয়া ইনজুরিতে পড়ায় পাঁচ বোলার নিয়ে খেলছে ভারত। বুধবার তাদের একাদশে ছয় বোলার দেখা যেতে পারে। নিউজিল্যান্ড দলে ডানহাতির তুলনায় বাঁহাতি ব্যাটারের সংখ্যা বেশি। তাই কুলদীপ ও জাদেজার সঙ্গে অশ্বিনকে যুক্ত করে স্পিনে শক্তি বাড়াতে পারে ভারত।

অপরদিকে, ভারতের চেয়ে কিন্তু বোলিংয়ে অপশন বেশি নিউজিল্যান্ডের। তাদের মূল পেসার হেনরি ইনজুরিতে পড়লেও পেস বোলিংয়ের ধার কমেনি। সাউদি, ফার্গুসন, বোল্টের বল খেলা খুবই কঠিন। বিশেষ করে ভারতের ব্যাটিং লাইনআপের জন্য বড় চ্যালেঞ্জে নাম হতে পারেন বাঁহাতি স্পিনার স্যান্টনার। কারণ হলো- ভারতের প্রথম ছয় ব্যাটারই হলেন ডানহাতি। টুর্নামেন্টে যে ১৬টি উইকেট শিকার করেছেন স্যান্টনার, এর মধ্যে ১৫টিই হলো ডানহাতি ব্যাটারের উইকেট। অবশ্য বাঁহাতি ব্যাটারের বিরুদ্ধেও ভালো বোলিং করছেন কিউই এই স্পিনার। তার সঙ্গে রাচিনও বাঁহাতি স্পিনে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেন। অফস্পিন ভালো করতে পারেন গ্লেন ফিলিপস। তাকে হয়তো সেভাবে ব্যবহার নাও করতে পারে নিউজিল্যান্ড।

দুই দলের জন্য কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার ব্যাপারটিও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়াবে। মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে এ খেলা অনুষ্ঠিত হবে। ভারতীয়রা যেভাবে কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারবে, কিউইদের জন্য তা সহজ নাও হতে পারে। ভারত দলের বেশ কিছু ক্রিকেটারের জন্য মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়াম হলো ঘরের মাঠ। এখানে কীভাবে খেলতে হবে, কী কৌশলে এগোতে হবে, তা তারা ভালো করেই জানে। তবে ওয়াংখেড়ের উইকেট বরাবরের মতোই ব্যাটিং-স্বর্গ। হাই-স্কোরিং ম্যাচ হবে। লম্বা ইনিংস খেলার সুযোগ থাকবে। এ ম্যাচে টস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। টসজয়ী দল আগে ব্যাটিং করলে বেশি সুবিধা আদায় করে নিতে পারবে। যাই হোক, সব মিলিয়ে পরিশেষে বলব, ফাইনালের আগে আমরা ভারত ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যে ফাইনালের মতোই একটি বিশ্বকাপের সেরা ও আকর্ষণীয় ম্যাচ দেখব বলে আশা করি।

এ বিভাগের আরো খবর