বিশ্বকাপে সেমিফাইনালের স্বপ্ন ভঙ্গ হওয়ার পর বাংলাদেশের নতুন লক্ষ্য দাঁড়ায় পয়েন্ট টেবিলে সেরা আটের মধ্যে থাকার। কেননা আটের মধ্যে থাকতে না পারলে ২০২৫ সালে পাকিস্তানে অনুষ্ঠেয় আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি টুর্নামেন্টে খেলতে পারবে না বাংলাদেশ। এরই মধ্যে ৮ ম্যাচ খেলে ৪ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের আট নম্বরে অবস্থান করছে। এ অবস্থান ধরে রাখতে হলে আজ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে জয় না পেলেও অন্তত পরাজয়ের ব্যবধান কমাতে হবে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে পয়েন্ট অর্জনের চেয়ে নেট রানরেটে এগিয়ে থাকার ব্যাপারটি বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে বাংলাদেশের কাছে। এ জন্য হিসাবি ক্রিকেট খেলতে হবে টাইগারদের।
অন্যদিকে আগেই সেমিফাইনালে খেলা নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় আজ আনুষ্ঠানিকতার ম্যাচ অস্ট্রেলিয়ার, তবে জয়ের আত্মবিশ্বাস নিয়ে সেমিফাইনালে যেতে চাইবে তারা। তাই ম্যাচটি গুরুত্ব দিয়েই খেলবে অস্ট্রেলিয়া। ফলে বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে আজ ভালো লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
পুনের মহারাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে দুই দলের ম্যাচটি শুরু হবে বেলা ১১টায়। এ ম্যাচের চলতি ধারাবিবরণী সরাসরি সম্প্রচার করবে বাংলাদেশ বেতার।
বিশ্বকাপে নিজেদের শেষ ম্যাচে দলীয় অধিনায়ক সাকিব আল হাসানকে পাচ্ছে না বাংলাদেশ। হাতের আঙুলে চোট পেয়েছেন তিনি। ফলে দেশে ফিরেছেন অভিজ্ঞ এ অলরাউন্ডার। তার জায়গায় দলে নেয়া হয়েছে ওপেনার এনামুল হক বিজয়কে।
ম্যাচের আগের দিন শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে জানান, অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচে সাকিবকে মিস করবেন তারা। গত ম্যাচে ব্যাটিং ও বোলিংয়ে উজ্জ্বল ছিলেন সাকিব। ফর্মে ফেরার ইঙ্গিত দেন। এর আগে ইনজুরির কারণে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচেও খেলতে পারেননি তিনি।
হাথুরুসিংহে বলেন, ‘যখন দলে সাকিবের মতো খেলোয়াড় থাকবে, এক নম্বর অলরাউন্ডার, একজন ক্রিকেটার দুজনের কাজ করে, তাকে ছাড়া নতুন কম্বিনেশনে খেলা কঠিন। সাকিব না থাকায় বোলিংয়ে যে শূন্যতা তৈরি হবে, তা একজন স্পিনার কিংবা একজন পেসার দিয়ে পূর্ণ করার চেষ্টা করব। ব্যাটিংয়ে সাকিবকে মিস করতে যাচ্ছি, তার নেতৃত্বও।’
সাকিব না থাকায় আজ দলের নেতৃত্বে থাকবেন নাজমুল হোসেন শান্ত। গত ম্যাচে ৯০ রানের ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। আজ তাকে বাড়তি দায়িত্ব পালন করতে হবে।
অবশ্য এর আগে সাকিবের অনুপস্থিতিতে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক ছিলেন শান্ত। ওই ম্যাচে জয় না পেলেও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ভালো ক্রিকেট খেলতে চায় বাংলাদেশ। এ জন্য বিশেষ করে ব্যাটিংয়ে জ্বলে উঠতে হবে টাইগারদের। গত ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয়ের আত্মবিশ্বাস কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
টানা ছয় জয়ে উড়তে থাকা অস্ট্রেলিয়া নিজেদের নামের পাশে আরেকটি জয় লেখাতে চাইবে। সেমিফাইনাল ম্যাচের আগে বাংলাদেশের বিপক্ষে নিজেদের প্রস্তুতিটাও সেরে নেয়ার সুযোগ তাদের সামনে। তাদের জন্য ম্যাচটি আনুষ্ঠানিকতার হলেও মাঠের লড়াইয়ে কম গুরুত্ব পাবে না। অন্য ম্যাচের মতো স্বাভাবিক ম্যাচ হিসেবেই খেলবে তারা।
বাংলাদেশকে হালকাভাবে নেবে না অস্ট্রেলীয়রা। কেননা নিজেদের দিনে বাংলাদেশ ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে। তাই বাংলাদেশকে সমীহ করেই মাঠে নামবেন প্যাট কামিন্সরা। ব্যাটিং ও বোলিংয়ে খুবই শক্তিশালী তারা। ফিল্ডিংয়েও দুর্দান্ত অস্ট্রেলিয়া। সব মিলিয়ে আজকের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার সামনে কঠিন পরীক্ষা দিতে হতে পারে বাংলাদেশকে।
আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে ৩৪ বছর হতে চলল। এখনও সেই ২০০৫ সালে কার্ডিফে ৫ উইকেটে পাওয়া জয় ছাড়া আর কোনো ম্যাচেই অস্ট্রেলিয়াকে হারাতে পারেনি বাংলাদেশ। দ্বিপক্ষীয় সিরিজ, বিভিন্ন টুর্নামেন্ট মিলিয়ে এ পর্যন্ত ২১টি ওয়ানডে ম্যাচে পরস্পরের মুখোমুখি হয়েছে দুই দল। এর মধ্যে ১৯টি ম্যাচেই জিতেছে অস্ট্রেলিয়া। একটি ম্যাচের ফল হয়নি।
বিশ্বকাপের মঞ্চে দুই দল চারটি ম্যাচ খেলেছে। এর মধ্যে তিনটি ম্যাচেই জিতেছে অস্ট্রেলিয়া। অপর ম্যাচটি পরিত্যক্ত হয়।
আজ বাংলাদেশের বিপক্ষে অপরাজেয় থাকার রেকর্ডটি অস্ট্রেলিয়া বাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা যে করবে, সেটি অনুমেয়। তবে যদি জয় পায় বাংলাদেশ, তাহলে নতুন ইতিহাস রচনা হবে।