গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের অবিশ্বাস্য ডাবল সেঞ্চুরিতে অসম্ভবকে সম্ভব করেছে অস্ট্রেলিয়া। বিশ্বকাপে নিজেদের অষ্টম ম্যাচে মঙ্গলবার আফগানিস্তানকে ৩ উইকেটে হারিয়েছে তারা। একইসঙ্গে তৃতীয় দল হিসেবে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে প্যাট কামিন্স বাহিনী।
মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে এদিন আফগানিস্তানের ছুড়ে দেয়া ২৯২ রানের টার্গেট তাড়া করতে নেমে ৯১ রানেই ৭ উইকেট হারিয়ে ফেলে অস্ট্রেলিয়া। সেখান থেকে অজিরা এই ম্যাচ জিতবে- কেউ হয়তো কল্পনাও করেনি। কিন্তু গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের অপরাজিত ডাবল সেঞ্চুরিতে ভর করে অসম্ভবকে সম্ভব করেছে তারা। ৪৬.৫ ওভারে ৭ উইকেটে ২৯৩ রান করে জয় নিশ্চিত করে অস্ট্রেলিয়া। অনবদ্য ডাবল সেঞ্চুরি করে ম্যাচসেরা হয়েছেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল।
লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই ট্রাভিস হেডকে হারায় অস্ট্রেলিয়া। ডাক খেয়ে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন এই ওপেনার। এরপর ওয়ানডাউনে নেমে ঝড়ো শুরু করেন মিচেল মার্শ। তবে খুব বেশিদূর যেতে পারেননি তিনি। নাভিনের বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ার আগে ১১ বলে করেন ২৪ রান।
মার্শ ফেরার পর আর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি আরেক ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার। এই অভিজ্ঞ ওপেনার উইকেটে এসে সময় নিয়ে থিতু হয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি। সাজঘরে ফেরার আগে ২৯ বলে করেছেন ১৮ রান।
মার্কাস স্টইনিস-জশ ইংলিশরাও রান পাননি। এই দুই ব্যাটার ফেরেন দুই অঙ্ক ছোঁয়ার আগেই। গোল্ডেন ডাক মারেন ইংলিশ আর ৬ রান করেন স্টইনিস। মিচেল স্টার্ক ফেরেন মাত্র ৩ রান করে। মাত্র ৯১ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে বড় ধরনের চাপে পড়ে অজিরা।
তবে একপ্রান্ত আগলে রেখে লড়াই চালিয়ে যান গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। শুরুটা ধীরগতিতে করলেও ফিফটির পর মারমুখী হন তিনি। এরপর মাত্র ৭৬ বলে দেখা পান তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগারের। সেঞ্চুরি করার পথে বেশ কয়েকবার জীবন পান ম্যাক্সওয়েল।
অপর প্রান্তে তাকে যোগ্য সঙ্গ দেন অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। সেঞ্চুরির পর আরও মারমুখী হন ম্যাক্সওয়েল। তার বাউন্ডারির ফুলঝুরিতে আস্তে আস্তে জয়ের পথে এগোতে থাকে অস্ট্রেলিয়া। ৪৭তম ওভারের পঞ্চম বলে ছক্কা হাঁকিয়ে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন ম্যাক্সওয়েল। নিজেও পূর্ণ করেন ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি। শেষ পর্যন্ত ম্যাক্সওয়েল অপরাজিত থাকেন ১২৮ বলে ২০১ রানের দুর্ধর্ষ ইনিংস খেলে। আর কামিন্স অপরাজিত থাকেন ১২ রানে, মোকাবিলা করেন ৬৮ বল।
আফগানদের হয়ে দুটি করে উইকেট নেন আজমতউল্লাহ ওমরজাই, রশিদ খান ও নাভিন-উল হক।
এর আগে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা খুব ভালোভাবেই করেন দুই আফগান ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজ এবং ইবরাহিম জাদরান। গত তিন ম্যাচের মতো আজও ঠাণ্ডা মাথার ব্যাটিং উপহার দিয়েছেন আফগান ব্যাটাররা।
অষ্টম ওভারের শেষ বলে ২৫ বলে ২১ রান করা গুরবাজ ফিরে গেলে রহমত শাহকে নিয়ে বড় জুটি গড়েন ইব্রাহিম। ৮৩ রানের জুটি গড়ে রহমত সাজঘরে ফেরেন। জস হেজলউডের বলে ম্যাক্সওয়েলের হাতে সহজ ক্যাচ দিয়ে আউট হন তিনি। ফেরার আগে তিনি ৪৪ বলে ৩০ রান করেন। এর মাঝে অবশ্য ৬২ বলে নিজের হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন ইব্রাহিম।
কিছুক্ষণ পরপর ব্যাটারদের যাওয়া-আসার মধ্যে উইকেটের একপাশে শেকড় গাড়েন ইব্রাহিম। রহমত ফিরে গেলে অধিনায়ক শহীদিকে নিয়ে আরেকটি অর্ধশত রানের জুটি গড়েন এ আফগান ওপেনার। পরে আজমতউল্লাহ ওমরজাইয়ের সঙ্গে ৩৭ রান ও মোহাম্মদ নবীর সঙ্গে ২৩ রানের জুটি গড়েন তিনি। শেষ রশিদ খানকে নিয়ে আর্কেটি পঞ্চাশোর্ধ (৫৮) জুটি গড়ে দলকে ২৯১ রানের সংগ্রহ এনে বিশ্রামে যান ইব্রাহিম।
১৪৩ বল খেলে ১২৯ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি। এ সময় মেরেছেন তিনটি ছক্কা ও আটটি চারের মার। শেষে তিন ছক্কা ও দুই চারে রশিদ খানের ১৮ বলে ৩৫ রানের ক্যামিও ইনিংসটি আফগানদের সংগ্রহ তিন শর কাছাকাছি নিয়ে যেতে সহযোগিতা করেছে।
বল হাতে এদিন জস হেজলউড দুটি এবং মিচেল স্টার্ক, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ও অ্যাডাম জ্যাম্পা একটি করে উইকেট নেন।