বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

চিত্তাকর্ষক খেলার অন্তিম পরিণতি যেন না হয়

  •    
  • ৪ নভেম্বর, ২০২৩ ২৩:৩৫

সবদিক বিবেচনা করে রোববার ইডেন গার্ডেনসে ফাইনালের আগে আমরা ফাইনালের মতোই উপভোগ্য ও ঝাঁঝালো প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ একটি ম্যাচ দেখতে পারব বলে আশা করি।

বিশ্বকাপে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার রোববারের ম্যাচটি নানা কারণে ফাইনাল ম্যাচের রূপ নিয়েছে। এর পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হলো- বিশ্বকাপে দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছে দল দুটি। ভিন্ন ধারার ক্রিকেট খেলে অন্য দলগুলোর চেয়ে নিজেদের অপ্রতিরোধ, দুর্ধর্ষ ও প্রভাবশালী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে তারা।

পয়েন্ট টেবিলে এক নম্বরে ভারত এবং দুই নম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকা। ভারতকে হারাতে পারলে এক নম্বরে উঠে যাবে দক্ষিণ আফ্রিকা দলটি। আর না পারলে ভারত তাদের অবস্থান আরও মজবুত করবে।

পয়েন্ট টেবিলের এক নম্বর দল সেমিফাইনালে চার নম্বর দলের বিপক্ষে খেলবে। আরেক সেমিফাইনালে দুই ও তিন নম্বর দল পরস্পরের বিপক্ষে খেলবে। বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে খেলার এই নিয়ম অনুযায়ী ফাইনালে আবার সাক্ষাৎ হয়ে যেতে পারে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার। তাই ফাইনালে আগে কলকাতার ইডেন গার্ডেনসে দুদলের ‘মহড়া’ হয়ে যাবে!

আমি মনে করি, বিশ্বকাপের সেরা দুদলের রোববারের ম্যাচটি চলতি টুর্নামেন্টের সেরা একটি আকর্ষণীয় ম্যাচ হতে পারে। যে ম্যাচ উত্তেজনা ও উত্তাপের বারুদ ছড়াচ্ছে সবার মধ্যে।

এবারের আসরে অপ্রতিরোধ্য ভারত দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স বলেন আর দলীয় পারফরম্যান্স বলেন, সব দিক থেকেই দুর্দান্ত ভারত দলটি। দলের প্রত্যেকটি খেলোয়াড় ফর্মের তুঙ্গে আছেন। প্রথম সাত ম্যাচে অপরাজিত থেকে বিশ্বকাপের প্রথম দল হিসেবে সেমিফাইনালে খেলা নিশ্চিত করেছে দলটি।

সম্পূর্ণ নতুন ব্র্যান্ডের ক্রিকেট খেলছে ভারত। অনিন্দ্যসুন্দর পারফরম্যান্স দেখিয়ে দিন দিন বিশ্বকাপের শিরোপা জয়ের দাবি আরও জোরালো করছেন রোহিত অ্যান্ড কোং। তারা যে পারফরম্যান্স শো করছে, চ্যাম্পিয়ন দলের মতোই দেখছি তাদের। ঘরের মাঠে বিশ্বকাপে ভারতকে এতটা ভয়ংকর হতে দেখিনি আগে।

ঐতিহ্যগতভাবেই ভারতের লাইনআপ অনেক শক্তিশালী ও গভীর। প্রতিপক্ষ দলের বোলারদের নির্ধারিত ওভারের বোলিং শেষ হয়ে গেলেও তাদের ব্যাটিং শক্তি নিস্তেজ হয় না সহজে। তাদের লেজের ব্যাটাররাও মারকাটারি ক্রিকেট খেলে প্রতিপক্ষকে চরম হতাশায় ভুগিয়ে থাকেন। যদিও এই বিশ্বকাপে এই দৃশ্যটা তেমন দেখছি না। কারণ তাদের টপ অর্ডারের ব্যাটাররা এমন ফর্মে আছেন যে, মিডল অর্ডার পুরোপরি ব্যবহার করতে হচ্ছে না। ফলে লোয়ার অর্ডারে চাপ পড়ছে না।

ব্যাটিংয়ের মতো বোলিংয়ে ও ফিল্ডিংয়েও নতুন ভারতকে দেখছি। যেমন ধারালো পেস, তেমনি বিষাক্ত স্পিন শক্তি তাদের। জাসপ্রিত বুমরাহ, মোহাম্মদ সিরাজ, মোহাম্মদ শামিদের দ্রুতগতির বল খেলাই যাচ্ছে না।

সর্বশেষ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এই টুর্নামেন্টে বোলিংয়ের সেরা প্রদর্শনী দেখাল ভারত। তাদের ধারালো ও বিধ্বস্ত গতির বোলিংয়ে শ্রীলঙ্কানরা নাস্তানাবুদ হয়েছে। মাত্র ৫৫ রানে অলআউট হয়ে বিশাল হারের লজ্জা পেয়েছে তারা। এ ছাড়া স্পিনে ‍কুলদীপ, জাদেজা, অশ্বিনরাও বিপজ্জনক হয়ে উঠছেন।

আমি মনে করি, ভারতের যে বোলিং শক্তি, তা বেশ ভালোভাবেই চ্যালেঞ্জ জানাবে দক্ষিণ আফ্রিকাকে। তবে এটাও ঠিক, এই বিশ্বকাপে কুইন্টন ডি কক, ডুসেন, ক্লাসেনরা যে বিধ্বংসী ব্যাটিং শো করছেন, সবাই মুগ্ধ বিমোহিত হচ্ছেন। প্রায় প্রতি ম্যাচেই ব্যাটকে যেন তলোয়ার বানিয়ে প্রতিপক্ষ বোলারদের কচুকাটা করেন তারা! গত সাত ম্যাচের মধ্যে চারবার সাড়ে তিনশর বেশি রান করেছেন তারা। এর মধ্যে ৪২৮ রানের রেকর্ড গড়া স্কোরও রয়েছে।

মেশিনের মতো রান করছেন ডি ককরা। ভারতের বোলিংয়ের বিরুদ্ধে শক্ত করে দাঁড়াতে পারে যে ব্যাটাররা, সেটি পারবেন দক্ষিণ আফ্রিকানরাই। ফলে ইডেন গার্ডেনসে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে বিধ্বংসী বোলিং বনাম শক্তিশালী ব্যাটিং লড়াইয়ের একটি দারুণ প্রদর্শনী দেখা যেতে পারে।

আবার যদি উল্টোভাবে বলি, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে ব্যাটিং বনাম বোলিংয়ের লড়াইটাও জমজমাট হবে, সেটিও হয়তো ভুল হবে না। কেননা এই বিশ্বকাপে দুর্দান্ত ফর্মে আছেন কোহলি। প্রায় প্রতি ম্যাচেই তার ব্যাটে রান আসছে। এরই মধ্যে চারশর বেশি রান সংগ্রহ করেছেন তিনি। কোহলির সঙ্গে তাদের অন্য ব্যাটাররাও ফর্মের তুঙ্গে। ফলে রাবাদা, লঙ্গি, জানসেনদের সামনে শক্ত হয়ে দাঁড়াতে পারেন তারাও।

তবে যে ধারালো ও বৈচিত্র্যময় পেস আক্রমণ দক্ষিণ আফ্রিকার- সেটি খুবই বিপজ্জনক। এই প্রমাণ আগে দিয়েছেন তারা। তাদের স্পিন শক্তিও ভারতের উইকেটে ভালো কথা বলছে। ফলে দক্ষিণ আফ্রিকার বোলিংও বিধ্বংসী। তারাও চ্যালেঞ্জ জানাবে ভারতীয়দের।

দুদলের লড়াইয়ে বড় ভূমিকা রাখতে পারে উইকেট। ঐতিহ্যগতভাবেই ইডেনের উইকেটে প্রচুর রান হয়। হাই-স্কোরিং ম্যাচ হয়ে থাকে। ব্যাটাররা বেশ সহায়তা পান। এবারও ব্যতিক্রম হবে না আশা করি। পেসারদের জন্যও উইকেটে বাড়তি সুবিধা থাকবে। তবে স্পিনের জন্য উইকেট অতটা কার্যকরী না-ও হতে পারে।

কলকাতার মাঠে ভারতীয়রা গ্যালারি ভর্তি দর্শকের সমর্থন পাবেন। হোম অ্যাডভান্টেজের সর্বোচ্চ সুবিধা কাজে লাগানোর সুযোগ নেবে ভারত। ফলে গত সাতটি দলের মতো দক্ষিণ আফ্রিকাকেও হারিয়ে অপরাজেয় থাকার খেতাবটা ধরে রাখার চেষ্টা করবে স্বাগতিকরা।

এ পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকা যে একটি ম্যাচে হেরেছে- সেটি হলো নেদারল্যান্ডস বিপক্ষে। এই ম্যাচটিকে স্রেফ অঘটন হিসেবে ধরলে বাকি ম্যাচগুলোতে তারাও অপ্রতিরোধ্য ছিল। তারাও ভারতের জয়রথ থামানোর চেষ্টায় থাকবে।

পরিশেষে বলব, সবদিক বিবেচনা করে রোববার ইডেন গার্ডেনসে ফাইনালের আগে আমরা ফাইনালের মতোই উপভোগ্য ও ঝাঁঝালো প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ একটি ম্যাচ দেখতে পারব বলে আশা করি।

এ বিভাগের আরো খবর