বিশ্বকাপে আলাদাভাবে দৃষ্টি কাড়ছে আফগানিস্তান দলটি। এ পর্যন্ত যে কটি ম্যাচ জিতেছে তারা- সবগুলো জয় বড় দলের বিপক্ষে। ইংল্যান্ড, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কাকে হারানোর বীরত্ব দেখাল আফগান-যোদ্ধারা।
একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ, যারা অনেক সীমাবদ্ধতা, নানা সংকট ও সমস্যায় জর্জরিত- এতসব প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে বিশ্বকাপের মতো মঞ্চে অনিন্দ্যসুন্দর, দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলছে! এটি অসাধারণ ও গর্ব করার মতো বিষয়। এ জন্য তাদের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করতেই হবে।
এই দলটি বিশ্বের অনেক দেশকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল যে, সবকিছুতে পরিপূর্ণ থাকলেই কেবল সাফল্য আসে না, প্রতিকূলতা পেরিয়েও বড় মঞ্চে উচ্চপর্যায়ে যাওয়া যায়।
আফগানিস্তানের মতো নেদারল্যান্ডসও কিন্তু বিস্ময়কর পারফরম্যান্স শো করছে। এই দলটিও যে কটি ম্যাচ জিতেছে, সবগুলো জয় বড় দলের বিপক্ষেই। দক্ষিণ আফ্রিকা ও বাংলাদেশকে হারিয়েছে তারা। শুধু পেশাদারি ও টেস্ট খেলুড়ে দেশ হলেই যে বড় সাফল্য পাওয়া যায়, বিষয়টি কিন্তু এমন নয়। আর সেটির বাস্তব দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করল নেদারল্যান্ডস। তারাও নানা বাধা অতিক্রম করে বিশ্বকাপের মঞ্চে এসে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করছে।
বিশ্বকাপে এই দুই দল একে অপরের বিপক্ষে শুক্রবার লড়বে। দুই দলের ম্যাচটি নিঃসন্দেহে উত্তেজনা-উত্তাপের বারুদ ছড়াবে এবং দুই দলের মধ্যে রুদ্ধশ্বাস লড়াই হবে বলে আশা করি। আর এখানেই প্রমাণ হয়ে যাবে- দুই দলের মধ্যে আসলে শ্রেষ্ঠ কারা?
মাঠের লড়াইয়ে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ফেভারিট আফগানিস্তান। এ দলটিই এগিয়ে থাকবে। এর পেছনে অনেক কারণ রয়েছে।
প্রথমত, ভারতের মাঠে খেলা হওয়ায় নিজ দেশের মতো প্রায় একই রকম কন্ডিশনে খেলছে আফগানরা।
দ্বিতীয়ত, তাদের ধারালো বিশ্বমানের স্পিন শক্তি রয়েছে। রশিদ খান, মুজিব উর রহমান, মোহাম্মদ নবি- এই ত্রয়ী মিলে আফগানিস্তানের স্পিনকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। বিশ্বের বাঘা বাঘা ব্যাটাররাও তাদের সামনে অসহায় আত্মসমর্পণ করে।
তৃতীয়ত, আফগানদের ব্যাটাররা যে রিদমে আছেন, বড় স্কোর খেলার অভ্যাস হয়ে গেছে তাদের। যেকোনো বোলিং শক্তির বিরুদ্ধে সফল হতে পারেন, সেই স্কিল দেখিয়েছেন তারা।
চতুর্থত, দেশের জন্য জান-প্রাণ উজাড় করে খেলার যে মানসিকতা, সেটি আফগানিস্তানের প্রত্যেকটি খেলোয়াড়ের মধ্যে দেখা যায়।
পঞ্চমত, ফিল্ডিং বিভাগটি তাদের খুবই চমৎকার। সিঙ্গেল রান আটকাতে গিয়েও তাদের যে তৎপরতা দেখি, সত্যি সেটি খুবই প্রশংসার দাবি রাখে।
ষষ্ঠত, আফগান দলে যে ঐক্য খেলোয়াড়দের মধ্যে তৈরি হয়েছে, সেটি তাদের একসঙ্গে লড়তে সাহায্য করছে।
সপ্তমত, একজন ভালো কোচ পেয়েছে আফগানিস্তান। ইংল্যান্ডের সাবেক ক্রিকেটার জনাথন ট্রট তাদের কোচ। এই কোচের দূরদর্শিতা ও কৌশলে অনেক এগিয়ে যাচ্ছে দলটি। এ ছাড়া টানা জয়ের মোমেন্টামসহ আরও বেশ কিছু ইতিবাচক দিক রয়েছে দলটির। আর সেগুলো আফগানদের এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।
অন্যদিকে, বেশ কিছু ইতিবাচক দিক রয়েছে ডাচ দলেরও। তাদের দলের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার বাস ডি লিড। সে ব্যাটে-বলে যেকোনো সময় ম্যাচের রং বদলে দিতে পারে। এ ছাড়া তাদের বেশ কয়েকজন স্পিনার রয়েছে, যারা ভারতের উইকেটে বেশ কার্যকর। পেস ইউনিটও তাদের দুর্দান্ত। সব মিলিয়ে আফগান দলটির বিপক্ষে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পারে নেদারল্যান্ডস।
একটি জিনিস মনে রাখতে হবে, বাছাই পর্ব খেলে অনেক দলকে হারিয়েই এই পর্যায়ে এসেছে ডাচরা। তাদের আটকানো অত সহজ হবে না। খুবই সাবধান হয়ে খেলতে হবে আফগানদের। আশা করি, দুই দলের ম্যাচটি রোমাঞ্চ ছড়াবে এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে।
আফগানিস্তান ও নেদারল্যান্ডসের ম্যাচটি লক্ষ্ণৌর মাঠে অনুষ্ঠিত হবে। এই বিশ্বকাপের উইকেটে ব্যাটাররা ভালো করছে। বোলিংয়ে নতুনত্ব এনে বোলাররাও কম যাচ্ছেন না। তবে স্কোরবোর্ডে যারা বেশি রান তুলতে পারছে, তাদের জয়ের সম্ভাবনা বেড়ে যাচ্ছে। এ জন্য টস গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
টস জেতা দল আগে ব্যাটিং নিয়ে দিনের আলোর সুবিধা কাজে লাগানোর চেষ্টা করে। পরে রাতের শিশির একটা ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়ায়। সেটি কাজে লাগিয়ে বোলাররা সুবিধা আদায় করে নিতে পারেন। এতে রান তাড়া করা দল বিপদে পড়ে। যে কারণে হারের মুখ দেখতে হয়। এ জন্য টসের দিকে তাকিয়ে থাকবে দল দুটি। তবে আমি বলব যে, মাঠের লড়াইয়ে যারা নৈপুণ্য দেখাতে পারবে, তারাই শুক্রবারের ম্যাচে এগিয়ে থাকবে।