চলতি বিশ্বকাপে আজ নিজেদের সপ্তম ম্যাচে পরস্পরের মুখোমুখি হবে দুই হেভিওয়েট দল দক্ষিণ আফ্রিকা ও নিউজিল্যান্ড। দুই দলই পয়েন্ট টেবিলে ওপরের সারিতে অবস্থান করছে।
ছয় ম্যাচ খেলে দক্ষিণ আফ্রিকার অর্জন ১০ পয়েন্ট। টেবিলে দুই নম্বরে অবস্থান করছে তারা। দলটি পাঁচটি জয় পেয়েছে। অন্যদিকে দক্ষিণ আফ্রিকার সমান ম্যাচ খেলে নিউজিল্যান্ডের অর্জন ৮ পয়েন্ট। টেবিলে তাদের অবস্থান তিন নম্বরে। তারা চারটি ম্যাচ জিতেছে। সেমিফাইনালে খেলার লক্ষ্যে আজ এগিয়ে যাওয়ার পালা দুই দলের।
আজ জয় পেলে পয়েন্ট টেবিলে শীর্ষে উঠবে দক্ষিণ আফ্রিকা। কেননা শীর্ষে থাকা ভারতের অর্জন ১২ পয়েন্ট, তবে নেট রান রেটের হিসাবে এগিয়ে থেকে টেবিলে এক নম্বরে উঠে যাওয়ার সুযোগ হবে প্রোটিয়াদের। এ জন্য আজ পুনের মাঠে জয়ের লক্ষ্যেই মাঠে নামবে তারা। জয় ছাড়া অভিন্ন ভাবছে না কিউইরাও। কেননা টানা দুই ম্যাচে হেরে যাওয়ায় হতাশায় পুড়ছে দলটি। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষ্য থাকবে তাদেরও। ফলে দুই দলের মধ্যকার লড়াইটি হাই-ভোল্টেজ ম্যাচেই রূপ নিচ্ছে।
বাংলাদেশ সময় বেলা আড়াইটায় ম্যাচটি শুরু হবে। এ ম্যাচের চলতি ধারাবিবরণী সরাসরি সম্প্রচার করবে বাংলাদেশ বেতার।
এবারের বিশ্বকাপে নতুন ব্র্যান্ডের ক্রিকেট খেলছে দক্ষিণ আফ্রিকা। টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই ভিন্ন এক দক্ষিণ আফ্রিকাকে দেখছে ক্রিকেট বিশ্ব। শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে বিশ্বকাপে যাত্রা করে তারা। নিজেদের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৪২৮ রান করে বিশ্বকাপে রেকর্ড গড়ে দলটি। আগে কখনও কোনো দল বিশ্বকাপে এত বড় স্কোর গড়তে পারেনি। বিস্ফোরক ব্যাটিং প্রদর্শনী দেখিয়ে সেই কীর্তি গড়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা।
ওই ম্যাচে ১০২ রানের জয় তুলে নিয়ে বিশ্বকাপে দুর্দান্ত সূচনার পর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও জয় তুলে নেয় তারা। অজিদের বিপক্ষে ১৩৪ রানে জয় পায় প্রোটিয়ারা। এরপর নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে অঘটনের শিকার হয় আফ্রিকানরা, তবে ডাচদের কাছে হারের হতাশা কাটিয়ে উঠতে সময় নেয়নি তারা।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২২৯ রানের রেকর্ড জয়ে দুর্দান্তভাবে ঘুরে দাঁড়ায় দক্ষিণ আফ্রিকা। এরপর বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়ের ধারা অব্যাহত থাকে তাদের। টানা তিন জয়ের ছন্দে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকাকে আজ আটকানো এত সহজ হবে না নিউজিল্যান্ডের। তাদের জন্য কঠিন ম্যাচই হতে যাচ্ছে।
অন্যদিকে বিশ্বকাপে দুর্দান্ত সূচনা করে বর্তমান রানার্সআপ নিউজিল্যান্ডও। টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী ম্যাচে ইংল্যান্ডকে ৯ উইকেটে পরাজিত করে গত বিশ্বকাপে ফাইনালে হারের বদলা নেয় কিউইরা। এরপর নেদারল্যান্ডস, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয় তুলে নিতে তেমন বেগ পেতে হয়নি তাদের।
টানা চার জয়ে উড়তে থাকা নিউজিল্যান্ডকে মাটিতে নামিয়ে দেয় ভারত। স্বাগতিকদের কাছে ৪ উইকেটে হারের হতাশায় পুড়তে থাকা দলটি পরের ম্যাচেও ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। চার শর কাছাকাছি রান তাড়া করতে গিয়ে অস্ট্রেলিয়ার কাছে মাত্র পাঁচ রানে হেরে যায় নিউজিল্যান্ড। ওই ম্যাচে দুই দল ৭৭১ রান সংগ্রহ করে, যেটি রেকর্ড।
টানা হারের মধ্যে থাকা নিউজিল্যান্ড ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য ‘অলআউট’ ক্রিকেট খেলবে। দক্ষিণ আফ্রিকাকে চ্যালেঞ্জ জানাবে। সহজে ম্যাচ ছেড়ে দেবে না কিউইরা।
দক্ষিণ আফ্রিকা-নিউজিল্যান্ড উভয় দলই পূর্ণ ব্যাটিং শক্তিতে বলীয়ান। দুই দলেই অনেক পাওয়ার হিটার আছেন। লম্বা ইনিংস খেলার মতো দক্ষ ব্যাটার রয়েছেন। এ ছাড়া দল দুটিতে বেশ কিছু প্রতিভাবান অলরাউন্ডার রয়েছেন, যারা ব্যাটিং ও বোলিংয়ে অপশন বাড়িয়ে দিচ্ছেন। ম্যাচের রং যেকোনো মুহূর্তে বদলে দিতে সক্ষম তারা।
বিস্ফোরক ব্যাটিং লাইনআপের পাশাপাশি দুই দলের বোলিং লাইনআপও খুব বিধ্বংসী। পেস ও স্পিনে খুবই বৈচিত্র্যম তারা। ফলে কেউ কাউকে ছাড় দিয়ে কথা বলবে না। ধারণা করা হচ্ছে, দুই দলের মধ্যে একটি ক্লাসিক ক্রিকেট ম্যাচ দেখা যেতে পারে আজ, যে ম্যাচে থাকবে টানটান উত্তেজনা ও তুমুল লড়াইয়ের ঝাঁজ। উপভোগ্য ও মনে রাখার মতো একটি ম্যাচ হতে পারে।
এ পর্যন্ত বিশ্বকাপে পরস্পরের বিপক্ষে ৮টি ম্যাচ খেলেছে দক্ষিণ আফ্রিকা ও নিউজিল্যান্ড। এর মধ্যে জয়ের পাল্লা ভারী নিউজিল্যান্ডের। তারা ৬টি ম্যাচেই জিতেছে। ২টি ম্যাচে জয় দক্ষিণ আফ্রিকার।
১৯৯৯ সালের পর থেকে বিশ্বকাপের আসরে নিউজিল্যান্ডকে হারাতে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা। তাদের বিপক্ষে গত টানা পাঁচ আসরেই অপরাজেয় কিউইরা। ১৯৯৯ ও ১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডকে হারানোর রেকর্ড রয়েছে আফ্রিকানদের। এবার দীর্ঘ দিনের আক্ষেপ ঘুচিয়ে কী জয়ে ফিরবে তারা, নাকি অপরাজেয় থাকার কীর্তিটা ধরে রাখবে নিউজিল্যান্ড, সেটিই দেখার বিষয়।