চলমান বিশ্বকাপে ‘সাইলেন্ট কিলার’ দল হলো শ্রীলঙ্কা। গত বিশ্বকাপের পর থেকে দলটি নানা প্রক্রিয়া ও সংকটের মধ্য দিয়ে গেছে। তবে মাঠের পারফরম্যান্সে সব সময় উজ্জ্বল লঙ্কানরা।
গত এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কা দলটি যে ফাইনালে খেলবে, সেটি আগে থেকে কেউ আন্দাজ করতে পারেনি। সাইলেন্ট কিলারের মতোই পারফরম্যান্স দেখিয়ে ফাইনালে ওঠে তারা। যদিও ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতা জমিয়ে তুলতে পারেনি লঙ্কানরা।
এবার বিশ্বকাপে ভালো দল গড়তে পারেনি তারা। ইনজুরির কারণে বেশ কয়েকজন ভালো মানের খেলোয়াড় দলে নেই। বলতে গেলে অনেকটা ভাঙাচোরা দল নিয়ে খেলছে শ্রীলঙ্কা। ফলে টুর্নামেন্টের শুরুর দিকে তেমন সুবিধা করতে পারেনি অর্জুনা রানাতুঙ্গা, সনাৎ জয়সুরিয়াদের উত্তরসূরিরা।
তবে টানা তিন ম্যাচ হারের পর দলটিকে যেভাবে ঘুরে দাঁড়াতে দেখলাম, এ দলটি অনেক দূর যাওয়ার সামর্থ্য রাখে। দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে ঐক্য আছে। দেশের জন্য জান-প্রাণ দিয়ে খেলার মানসকিতাও তাদের আছে।
গত ম্যাচে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে হারিয়ে যে মোমেন্টাম পেয়েছে শ্রীলঙ্কা, সেটি কাজে লাগিয়ে সামনের ম্যাচগুলোতে আরও ভালো করতে পারবে বলে মনে করি।
সোমবার পুনের মাঠে আফগানিস্তানের বিপক্ষে লড়াইয়ে নামবে তারা। এ ম্যাচে আমার ফেভারিট শ্রীলঙ্কাই। সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন তারা। বড় আসরে খেলার যে অভিজ্ঞতা, চাপ নেয়ার দৃঢ় মানসিকতা, ভালো খেলার যে তৃষ্ণা, এসব কিছুই তাদের মধ্যে আছে। এগুলো দলটিকে বেশ এগিয়ে রাখছে।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে কোনো ছাড় পাবে না শ্রীলঙ্কা। এখানে ছাড় দেয়ার কোনো সুযোগও নেই। টানা দুই ম্যাচ হেরে আফগানিস্তানের বিশ্বকাপ যাত্রা হলেও দুই ম্যাচে যে পারফরম্যান্স শো করেছে দলটি, সেটি বিস্ময়কর ও প্রশংসার দাবিদার।
বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে বেশ দাপটের সঙ্গে হারিয়েছে আফগানরা। ইংলিশদের মাটিতে নামিয়ে দেয়ার পর প্রতিবেশী শক্তিশালী পাকিস্তানের দর্পও চূর্ণ করে দিয়েছেন রশিদ, মুজিবরা। এই যে বড় দুই দলকে হারাল আফগান যোদ্ধারা, বিশ্বকাপের মতো বড় মঞ্চে নিজেদের শক্তি, সামর্থ্য ও প্রতিভার দারুণ প্রদর্শনী দেখাল তারা। এই দলটি এমন সুন্দর ও উপভোগ্য ক্রিকেট উপহার দেবে, তা আগে ভাবিনি।
আমি মনে করি, শ্রীলঙ্কার জন্যও বড় চ্যালেঞ্জের নাম এখন আফগানিস্তান। সেমিফাইনালে খেলার স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখার ক্ষেত্রে দুই দলের জন্য ম্যাচটি সমান গুরুত্বপূর্ণ। এই ম্যাচে যারা ভালো ফল করবে, তাদের সেমিফাইনালে খেলার আশা বড় হতে থাকবে। ফলে সোমবারের ম্যাচে এই দুই দলের মধ্যে বিশ্বকাপের অন্যতম একটি আকর্ষণীয় ক্রিকেট শক্তির মহড়া দেখতে পারব আশা করি।
বিশ্বকাপে এ পর্যন্ত যে পাঁচটি ম্যাচ খেলেছে শ্রীলঙ্কা, তাদের বৈচিত্র্যময় বোলিং ও পাওয়ার ব্যাটিং সবার নজর কেড়েছে। প্রথম দুই ম্যাচে পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হারলেও তিনশর বেশি স্কোর করে ব্যাটিং শক্তির জানান দিয়েছে দলটি। তাদের ব্যাটাররা যথেষ্ট স্কিলফুল ও মেধাবী। বিশ্বের যেকোনো বোলিং লাইনআপের বিরুদ্ধে বড় স্কোর গড়তে সক্ষম তারা।
তবে আফগান স্পিনের সামনে লঙ্কান ব্যাটারদের কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে। রশিদ, মুজিব, নবিদের বল খেলা সহজ হবে না। তাদের পেস অ্যাটাকও খুব ধারালো ও কার্যকর।
অন্যদিকে, যদি শ্রীলঙ্কার বোলিংয়ের কথা বলি, স্পিনে অনেক বিকল্প রয়েছে তাদের। তাদের লেগ স্পিনার হাসারাঙ্গা বিশ্বকাপে নেই। আরও বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় ইনজুরিতে পড়েছেন। তারপরও তাদের বোলিং অনেক শক্তিশালী। পেস অ্যাটাকেও তারা এগিয়ে।
ভারতের মাঠে বেশ কার্যকর তারা। আফগান ব্যাটারদের ভালো পরীক্ষা নিতে পারে। লঙ্কান বোলিংয়ের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ নিতে হবে আফগানদের। তাদের জন্য ম্যাচটি কঠিন হবে। কেননা তাদের সবকিছু ভালো হলেও ব্যাটিংয়ে কিছুটা দুর্বলতা রয়েছে। তা কাটিয়ে উঠতে না পারলে বিপদ হতে পারে।
সব মিলিয়ে শেষ দিকে আমি এটাই বলব যে, ইতিহাস-ঐতিহ্যে দুই দলের ব্যবধান অনেক হলেও মাঠের লড়াইয়ে সমানে সমান হতে পারে। দুই দলের মধ্যে মনে রাখার মতো একটি ঝাঁঝালো ম্যাচ আমরা দেখতে পারব বলে প্রত্যাশা করছি।