৮০ বলে দক্ষিণ আফ্রিকার দরকার ৩৬ রান, হাতে রয়েছে পাঁচ উইকেট- এমন সহজ সমীকরণেও দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে ম্যাচ নিজেদের করে নিতে চলেছিল পাকিস্তান। তবে শেষের দৃঢ়তায় পাকিস্তানকে হতাশ করে জয় তুলে নিয়েই মাঠ ছেড়েছে টেম্বা বাভুমার দল।
টস জিতে প্রথমে ব্যাট করে ২৭০ রানে অল আউট হয়ে যায় পাকিস্তান। ২৭১ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ১৬ বল বাকি থাকতে এক উইকেটের নড়বড়ে ব্যবধানে জয় পেয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা।
এ হারের ফলে চলতি বিশ্বকাপে পাকিস্তানের সেমিফাইনাল খেলার স্বপ্ন আরও দূরে সরে গেল। অন্যদিকে সেমিতে নিজেদের অবস্থান আরও পাকাপোক্ত করল প্রোটিয়ারা।
লক্ষ্য তাড়ায় শুরুটা দারুণ করেন প্রোটিয়া ওপেনার কুইন্টাইন ডি কক। শুরু থেকেই মারমুখী ছিলেন তিনি। তবে ইনিংস বড় করতে পারেননি বাঁহাতি এই ব্যাটার। ১৪ বলে ২৪ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে বিদায় নেন ডি কক।
আরেক ওপেনার টেম্বা বাভুমা শুরুতে ডিফেন্সিভ খেললেও পরে ব্যাট চালিয়ে খেলতে থাকেন। তবে ডি ককের মতো তিনিও ইনিংস বড় করতে পারেননি। বিদায় নেন ২৭ বলে ২৮ রান করে। ওয়ান ডাউনে নেমে ২১ রানে আউট হন রাসি ভ্যান ডার ডুসেন।
তবে একপ্রান্ত আগলে রেখে ব্যাট চালিয়ে যান আইডেন মার্করাম। এর মাঝে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি প্রতি ম্যাচে ভালো পারফর্ম করা ব্যাটার হাইনরিখ ক্লাসেন। মাত্র ১২ রান করে আজ প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন মারকুটে এই ব্যাটার।
এরপর ডেভিড মিলারকে সঙ্গে নিয়ে দলকে জয়ের পথে আনেন মার্করাম। ভালো শুরু করলেও ৩৩ বলে ২৯ রান করে মিলার বিদায় নিলে কিছুটা চাপে পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। এরপর ১৪ বলে ২০ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে বিদায় নেন মার্কো ইয়ানসেন।
এর পর লুঙ্গি এনগিডিও বিদায় নিলে সত্যিকার অর্থেই চাপে পড়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। সমীকরণ তখন এমন যে, প্রোটিয়াদের দরকার ১১ রান, আর পাকিস্তানের এক উইকেট।
তবে সেখান থেকে জয় নিয়েই মাঠ ছাড়েন শেষ দুই ব্যাটার কেশভ মহারাজ ও তাবরাইজ শামসি।
এর আগে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা খুব বেশি ভালো হয়নি পাকিস্তানের। ইনিংস বড় করতে পারেননি দুই ওপেনার আব্দুল্লাহ শফিক ও ইমাম-উল-হক। দলীয় ৩৮ রানের মধ্যেই সাজঘরে ফেরেন তারা। ১৭ বলে ৯ রান করেন শফিক। অন্যদিকে ইমাম খেলেন ১৮ বলে ১২ রানের ইনিংস।
এরপর ওয়ানডাউনে নামা বাবর আজম কিছুটা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন। তাকে সঙ্গ দেন উইকেটরক্ষক ব্যাটার মোহাম্মদ রিজওয়ান। তৃতীয় উইকেটে তারা দুজন মিলে যোগ করেন ৪৮ রান। ২৭ বলে ৩১ রানের ইনিংস খেলে দলীয় ৮৬ রানের মাথায় বিদায় নেন রিজওয়ান।
এর মাঝে উইকেটে এসে ৩১ বলে ২১ রানের ইনিংস খেলে সাজঘরে ফিরে যান ইফতিখার আহমেদ। তবে একপ্রান্ত আগলে রেখে ব্যাটিং চালিয়ে যান বাবর। কার্যকরী ব্যাটিংয়ে দারুণ এক ফিফটি তুলে নেন তিনি। তবে ফিফটির পর ইনিংস বড় করতে পারেননি বাবর। ৬৫ বলে ৫০ রানের ইনিংস খেলে সাজঘরে ফিরে যান পাকিস্তানের অধিনায়ক।
বাবরের আউটের পর দলের হাল ধরেন শাদাব খান এবং সৌদ শাকিল। তাদের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে একটু একটু করে আগাতে থাকে পাকিস্তানের ইনিংস। ফিফটির খুব কাছে গিয়ে হতাশায় পড়েন শাদাব। ৩৬ বলে ৪৩ রানের ইনিংস খেলে দলের ২২৫ রানের মাথায় আউট হন তিনি। ৬ষ্ঠ উইকেট জুটিতে দুজন মিলে যোগ করেন ৮৪ রান।
তবে ফিফটি তুলে নেন শাকিল। দেখেশুনে খেলে নিজের ওয়ানডে ক্যারিয়ারের তৃতীয় ফিফটির দেখা পান তিনি। অধিনায়ক বাবরের মতো করে ফিফটির পরপর থামেন শাকিলও। সাজঘরে ফেরার আগে ৫২ বলে ৫২ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেন তিনি। এছাড়া শেষ দিকে ঝড় তোলেন মোহাম্মদ নওয়াজ। তার ২৪ বলে ২৪ রানের কার্যকরী ইনিংসের ফলে ২৫০ পার করে পাকিস্তান। শেষমেশ ৪৬.৪ ওভারের খেলা শেষে ২৭০ রান তুলে অলআউট হয় তারা।
দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট শিকার করেন তাবরিজ শামসি। ৩ উইকেট নেন মার্কো ইয়ানসেন। ২ উইকেট তোলেন কেশব মহারাজ। আর ১ উইকেট ঝুলিতে পোরেন লুঙ্গি এনগিডি।
বল হাতে ৬০ রানে ৪ উইকেট নেওয়ার পর ব্যাটিংয়ে মূল্যবান ৪ রান করে ম্যাচের সেরা বাঁহাতি রিস্ট স্পিনার শামসি।
চলতি আসরে ছয় ম্যাচের পাঁচটি জিতে ভারতকে টপকে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে উঠল দক্ষিণ আফ্রিকা।