বিশ্বকাপের শুরুর দিকেই ইংল্যান্ড দলের করুণ দুর্দশা হবে, খাদের কিনারায় চলে যাবে দলটি- এমনটা কল্পনায় ছিল না। চার বছর আগে এক মনোমুগ্ধকর, রোমাঞ্চকর উত্তেজনাপূর্ণ ফাইনাল ম্যাচের মাধ্যমে যে দলটি বিশ্বকাপের শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পরেছে, সেটি ধরে রাখার অভিযান মোটেই সুখকর হলো না।
বাংলাদেশের কাছে ওই জয়টি বাদ দিলে বাকি তিনটি ম্যাচেই ‘হরর’ পারফরম্যান্স শো করেছে তারা। সবশেষ দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে বিশাল রানের যে হার, কোনোভাবেই বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের সঙ্গে যায় না। যাই হোক, অনুমান বলেন আর ভবিষ্যদ্বাণীই বলেন, তা সব সময় সঠিক হয় না। বাস্তবসম্মত হয় না। ইংল্যান্ডের ক্ষেত্রেও সেটাই ঘটেছে।
আমি মনে করি, চার ম্যাচ খেলে তিনটি ম্যাচে পরাজয়ের পর এখন ইংল্যান্ড ‘আহত সিংহে’র মতো। বৃহস্পতিবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গর্জে উঠতে পারে। শিরোপা ধরে রাখার যে অভিন্ন লক্ষ্য নিয়ে অভিযানে নামে ইংল্যান্ড- সামনের ম্যাচগুলোতে জয় ছাড়া বিকল্প রাস্তা খোলা নেই তাদের। প্রতিটি ম্যাচে সর্বশক্তি দিয়ে জয় তুলে নেয়ার চেষ্টা থাকবে দলটির। ফলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বৃহস্পতিবারের ম্যাচটি ফাইনাল পরীক্ষা মনে করেই খেলবে ইংলিশরা। ইতিবাচক ক্রিকেট খেলে সেই পরীক্ষায় লেটার মার্ক পেয়ে উত্তীর্ণ হতে চাইবে তারা।
অন্যদিকে যদি শ্রীলঙ্কার কথা বলি, ইংল্যান্ডের মতো একই দশা তাদেরও। টানা তিন ম্যাচ হারের পর দলটি জয়ের মুখ দেখেছে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে। ফলে এই দ্বীপ দেশটিও টুর্নামেন্টে এগিয়ে যাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টায় থাকবে।
শ্রীলঙ্কার ম্যাচে বেশ কিছু জায়গায় উন্নতি করতে হবে ইংল্যান্ডকে। এই দলটির বেশ কিছু জায়গায় দুর্বলতা দেখছি। যেগুলো তাদের অনেক পিছিয়ে রাখছে।
প্রথমত, পাওয়ার প্লের বোলিংয়ের কথা বলব। গত ম্যাচগুলোতে নতুন বলে তাদের পেসাররা সুবিধা আদায় করে নিতে পারেননি। প্রতিপক্ষ ব্যাটাররা স্বাচ্ছন্দ্যে স্কোরবোর্ডে রান তুলেছেন, শক্ত ওপেনিং স্ট্যান্ডিং হয়েছে। এই পাওয়ার প্লের বোলিংয়ে জ্বলে উঠতে হবে তাদের।
আগের ম্যাচে পেস অ্যাটাকের নেতৃত্বে ছিলেন রেস টপলি। কিন্তু ইনজুরি এই বাঁহাতি পেসারকে বিশ্বকাপ থেকেই ছিটকে দিয়েছে। ফলে ইংল্যান্ডের পেস অ্যাটাক আরও দুর্বল হয়ে গেল। যারা নতুন বলে দায়িত্ব পাবেন, সে সুযোগ কাজে লাগাতে হবে।
দ্বিতীয়ত, ইংলিশ অধিনায়ক জস বাটলার সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছেন। গত ম্যাচের কথাই যদি বলি, মুম্বাইয়ের মতো ব্যাটিং-স্বর্গ উইকেট ছিল এবং সেখানে প্রচণ্ড গরম পড়েছে। কিন্তু টস জিতে আগে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ব্যাটিংয়ে পাঠানোর ভুল সিদ্ধান্ত নেন বাটলার। এই ভুল সিদ্ধান্তের খেসারত দিতে হয়েছে রেকর্ড রানে হেরে। আমি মনে করি, আরও সচেতন হয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে তাকে।
তৃতীয়ত, রান তাড়া করতে গিয়ে অনেক বিপাকে পড়ছে বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। পরে ব্যাটিং করে বারবার ব্যর্থ হচ্ছে দল। এখানে তাদের আরও সতর্ক হতে হবে। চতুর্থত, অতটা আত্মবিশ্বাসী দেখা যাচ্ছে না ইংলিশদের। আবারও যে বিশ্বকাপ জয়ের মিশনে নেমেছে তারা, সেটি ‘বডি ল্যাঙ্গুয়েজ’-এ ফুটে উঠছে না। দেখা যাচ্ছে না আগ্রাসী মনোভাব। যদি আজ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এসব হতাশা কাটিয়ে উঠতে পারে তারা, তাহলে ইংল্যান্ড দলটি পাল্টে যাবে।
অন্যদিকে, গত এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কা ফাইনালে খেলেছে। কিন্তু সেটি আগে কল্পনায় ছিল না। দাপুটে ক্রিকেট খেলেই ফাইনালে ওঠে তারা। যদিও রানার্সআপ হয়েছে। বিশ্বকাপে যেহেতু জয়ের ছন্দে ফিরেছে লঙ্কানরা, আমার মনে হয়, সামনের ম্যাচগুলোতে তারা সফল হতে পারে। যদিও চোটের কারণে তাদের বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় দলে নেই। তবে যারা এসেছেন, তাদেরও ভালো করার সামর্থ্য রয়েছে। দলকে টেনে নেয়ার শক্তি আছে।
বেঙ্গালুরুতে বৃহস্পতিবার ইংল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কার লড়াইয়ের ভেতরে আরও বেশ কিছু লড়াই জমে উঠতে পারে। এক, ডেভিড মালান বনাম দিলশান মাদুশঙ্কার লড়াই। বাংলাদেশের বিপক্ষে ১৪০ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলেন মালান। বেয়ারস্টোর সঙ্গে উদ্বোধনীতে লম্বা জুটি গড়েন। এই ওপেনারকে ব্যর্থ করতে পারেন লঙ্কান বাঁহাতি পেসার মাদুশঙ্কা।
দুই, আদিল রশিদ বনাম সামারাবিক্রমার লড়াইও জমতে পারে। ইনিংসের মাঝের ওভারগুলোতে বিধ্বংসী বোলিং করেন রশিদ। দলের পক্ষে বিশ্বকাপে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকার করে সে প্রমাণ রেখেছেন এই লেগ স্পিনার। তার মুখোমুখি হতে গিয়ে বিপদে পড়তে পারেন লঙ্কান ‘ইনফর্ম’ ব্যাটার সামারাবিক্রমাও। পাকিস্তানের বিপক্ষে ১০৮, নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ৯১ রানের ইনিংস খেলেন তিনি।
তিন, অ্যাথিনসন বনাম কুশল মেন্ডিসের রণ। টপলির বিশ্বকাপ শেষ হয়ে যাওয়ায় ইংল্যান্ড পেস অ্যাটাকের নেতৃত্বে থাকবেন অ্যাথিনসন। আর তার গতির তোপে ব্যর্থ হতে পারেন মেন্ডিস। এরই মধ্যে শ্রীলঙ্কার হয়ে বেশ কয়েকটি ম্যাচে ব্যাট হাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তিনি। পাকিস্তানের বিপক্ষে ১২২ রানের ইনিংস খেলেন। ফলে এই দুজনের মধ্যে লড়াইটাও দেখার মতো হতে পারে।