৪০০ রানের যে পাহাড়সম লক্ষ্য দিয়েছিল ক্যাঙ্গারু বাহিনী, তার নিচে যেন পিষে গেল ডাচদের ব্যাটিং লাইন-আপ। ৪০০ রানের লক্ষ্য তাড়া তো দূরের কথা, একশর আগেই গুটিয়ে গেছে তাদের ইনিংস। ফলে বিশ্বকাপের ইতিহাসে রানের ব্যবধানে সবচেয়ে বড় জয় পেয়েছে অস্ট্রেলিয়া।
৪০০ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই উইকেট হারাতে থাকে নেদারল্যান্ডস। শেষ পর্যন্ত উইকেটে রক্তক্ষরণ থামাতে পারেননি ডাচদের কেউই। ফলে ২১ ওভারে মাত্র ৯০ রান করেই গুটিয়ে যায় তাদের ইনিংস।
বল হাতে অ্যাডাম জ্যাম্পা নেন সর্বোচ্চ চার উইকেট। মিচেল মার্শ দুই উইকেট নেন। আর বাকি বোলারদের পকেটে গেছে একটি করে উইকেট।
বিশ্বকাপে এটিই কোনো দলের সর্বনিম্ন রানের ইনিংস। এর মাধ্যমে আফগানিস্তানকে লজ্জার হাত থেকে বাঁচিয়েছে ডাচরা। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তাদের ১৩৯ রানের ইনিংসটি আজকের আগ পর্যন্ত সবচেয়ে কম রানের ইনিংস ছিল।
এদিন নিজেদের রেকর্ডই ভেঙে তা নতুন করে লিখল প্যাট কামিন্সের দল। ২০১৫ বিশ্বকাপে পার্থে আফগানিস্তানের বিপক্ষে তাদের ২৭৫ রানের জয়টিই এতদিন একদিনের বিশ্বকাপে সর্বাচ্চ রানের জয় ছিল। ওয়ানডেতে এটিই ছিল অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে বড় জয়।
তবে বিশ্বকাপে হলেও ওয়ানডে ক্রিকেটে এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের জয়ের রেকর্ড। এ বছরের শুরুতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৩১৭ রানের জয় পায় ভারত। এখন পর্যন্ত এটিই এক দিনের ক্রিকেটে সর্বাচ্চ রানের ব্যবধানে জয়ের রেকর্ড।
এমন জয়ের দিনে আরও কয়েকটি পরিবর্তন এসেছে রেকর্ড বুকে। প্রথম ইনিংসে ৪০ বলে বিশ্বকাপের ইতিহাসের দ্রুততম সেঞ্চুরি করেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল।
মাত্র ৪০ বলে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে বিশ্বকাপের ইতিহাসে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ডটি নিজের করে নিয়েছেন ম্যাক্সওয়েল। ছবি:ক্রিকইনফো
এছাড়া আজকের সেঞ্চুরির মাধ্যমে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির রেকর্ড তালিকায় ভারতীয় কিংবদন্তি শচীন টেণ্ডুলকারের পাশে বসেছেন ডেভিড ওয়ার্নার। তাদের দুজনেরই মোট শতকের সংখ্যা ছয়টি। সাতটি সেঞ্চুরি নিয়ে রেকর্ড বইয়ে সবার উপরে হিটম্যান রোহিত শর্মা।
২৩ বিশ্বকাপ ম্যাচে ৫৬ উইকেট নিয়ে বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারীদের তালিকায় এখন তিনে উঠে এসেছেন মিচেল স্টার্ক। তার উপরে এখন শুধু গ্লেন ম্যাকগ্রা (৭১) ও মুত্তিয়া মুরালিধরন (৬৮)। স্টার্কের সমান ৫৬ উইকেট নিয়ে বেশি ম্যাচ খেলার কারণে এ তালিকার চারে অবস্থান করছেন লাসিথ মালিঙ্গা এবং এক উইকেট কম নিয়ে পঞ্চম অবস্থানে ওয়াসিম আকরাম।
বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি বোল্ড আউটের রেকর্ডেও নিজের নাম লিখেছেন স্টার্ক। আজ নেদারল্যান্ডসের ম্যাক্স ওডাউডকে বোল্ড করে সাজঘরে ফেরান তিনি। এর মাধ্যমে ওয়াসিম আকরামের ২৫ বোল্ডের রেকর্ডে ভাগ বসিয়েছেন তিনি।
এছাড়া বিশ্বকাপে পরপর তিন ম্যাচে চার উইকেট শিকারের বিরল কীর্তি গড়েছেন অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডাম জ্যাম্পা। তার আগে এমন কীর্তি আছে মাত্র দুজন বোলারের। ২০১১ বিশ্বকাপে পাকিস্তানের কিংবদন্তী স্পিনার শহীদ আফ্রিদি ও ২০১৯ বিশ্বকাপে ভারতীয় পেসার মোহাম্মদ শামি এই কীর্তি অর্জন করেছিলেন।
এক উইকেটের দেখা পেলেও রেকর্ড বইয়ে জায়গা করে নিতে কষ্ট হয়নি মিচেল স্টার্কের। ছবি:ক্রিকইনফো
এদিন ডেভিড ওয়ার্নারের ১০৪ ও গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের ৪৪ বলে ১০৬ রানের ইনিংসে ভর করে ডাচদের ৪০০ রানের বিশাল লক্ষ্য দেয় অস্ট্রেলিয়া।
ম্যাক্সওয়লের ৪০ বলে সেঞ্চুরিটিই বিশ্বকাপের ইতিহাসে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড। এর আগে ২০১১ বিশ্বকাপে আয়ারল্যান্ডের কেভিন ও’ব্রায়েনের ৫০ বলে করা দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড ভাঙেন দক্ষিণ আফ্রিকার আইডেন মার্করাম। গত ৭ অক্টোবর এবারের বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৪৯ বলে সেঞ্চুরি তুলে নেন মার্করাম। তিনি প্রায় ১২ বছরের রেকর্ড ভাঙলেও তার রেকর্ডটি টিকল মাত্র ১৮ দিন।
আজ টস জিতে শুরুতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন অজি অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। বিশ্বকাপে তুলনামূলক দুর্বল ডাচদের বিপক্ষে নেট রানরেট বাড়িয়ে নেয়াই ছিল অস্ট্রেলিয়া অধিনায়কের উদ্দেশ্য। তার সে সিদ্ধান্তের প্রতি পূর্ণ সুবিচার করেছেন ব্যাটাররা।
তবে ব্যাটিংয়ে নেমেই ভালো শুরুর মুখ দেখেনি গত ম্যাচে দুই শতাধিক রানের জুটি গড়া দুই উদ্বোধনী ব্যাটার ডেভিড ওয়ার্নার ও মিচেল মার্শ। লোগান ভ্যান বিকের আউটার অফসাইড লেংথে করা শর্ট ডেলিভারিটি উড়িয়ে মারতে গিয়ে কভারে কলিন অ্যাকারমানকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন মিচেল মার্শ। মার্শ দলীয় ২৮ রানের মাথায় মাত্র ৯ রান করে ফিরলে উইকেটে থিতু হন ওয়ার্নার ও ওয়ান ডাউনে নামা স্টিভেন স্মিথ। দ্বিতীয় উইকেটে ১৩২ রানের জুটি গড়ে বিদায় নেন স্মিথ। ইনিংসের ২৩.৩তম ওভারে আরিয়ান দত্তের বলে পয়েন্ট অঞ্চলে ক্যাচ দেন তিনি। সেখানে থাকা ভ্যান ডার মারওয়ে ক্যাচটি লুফে নিলে ৬৮ বলে ৭১ রান করে ফিরতে হয় স্মিথকে।
স্মিথের ফেরার পর মারনস লেবুশানেকে সঙ্গে নিয়ে সমানতালে রান তুলতে থাকেন ওয়ার্নার। এর মধ্যে শতকের কাছাকাছি গিয়ে ওয়ার্নার ধীর লয়ে খেলতে থাকেন, অন্যপ্রান্তে নিজের হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন লেবুশানে। পরে ৪৭ বলে সাতটি চার ও দুটি ছক্কা মেরে ৬২ রান করে ফিরে যান লেবুশানে।
ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ২২তম ও চলতি বিশ্বকাপে নিজের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি করে ওয়ার্নারের উল্লাস। ছবি: ক্রিকইনফো
লেবুশানে ফেরার কিছু পর ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ২২তম ও চলতি বিশ্বকাপে নিজের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি তুলে নেন ওয়ার্নার। তার সেঞ্চুরির পর ৩৯তম ওভারের শেষ বলে ১২ বলে ১৪ রান করে জস ইংলিশ প্যাভিলিয়নে ফেরেন। পরের ওভারে লোগান ভ্যান বিকের প্রথম বলেই ফিরে যান ওয়ার্নার। ৯৩ বলে ১০৪ রানের ইনিংস খেলে ফেরার আগে ১১টি চার ও তিনটি ছক্কা হাঁকান তিনি।
এরপর ক্রিজে আসেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। এসেই স্বরূপে অবতীর্ণ হন তিনি। একের পর এক চার-ছক্কায় বেশ দ্রুতই অর্ধশতক তুলে নেন তিনি। এরপর রান তোলার গতি আরও বাড়িয়ে দেন ম্যাক্সওয়েল। শুরুর ২০ বলে ৩৪ রান করা ম্যাক্সওয়েল ৪৪ বলে ১০৬ রান করে ইনিংসের শেষ ওভারে বিদায় নেন। এ সময় ৯টি চার ও ৮টি ছক্কার মার মারেন তিনি।
ম্যাক্সওয়েলের ব্যাটিং ঝড়ের মাঝে ৮ রান করে ক্যামেরুন গ্রিন ও তার আউট হওয়র পরের বলে মিচেল স্টার্ক শূন্য রানে ফেরেন। আর ৯ বলে ১২ রানে অপরাজিত থাকেন প্যাট কামিন্স।
বল হাতে লোগান ভ্যান বিক চারটি উইকেট নেন। ব্যাস ডি লিড নিয়েছেন দুটি ও একটি উইকেট নিয়েছেন আরিয়ান দত্ত।