জিততে হলে ইতিহাস গড়তে হতো বাংলাদেশকে। তবে সেটি আর হলো কই? একাই লড়াই করলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তবে তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি টাইগারদের। তার করা সেঞ্চুরি শুধু হারের ব্যবধান কমিয়েছে। চলমান বিশ্বকাপে নিজেদের পঞ্চম ম্যাচে মঙ্গলবার দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ১৪৯ রানে পরাজিত হয়েছে সাকিব আল হাসান বাহিনী।
মুম্বাইয়ে এদিন টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে কুইন্টাইন ডি ককের ঝোড়ো ১৭৮ রানের সঙ্গে হেনরিখ ক্লাসেনের ৯০ রানের সুবাদে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ৩৮২ রানের পাহাড় গড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ৪৬ দশমিক ৪ ওভারে ২৩৩ রান তুলে অলআউট হয় বাংলাদেশ।
পাহাড়সম লক্ষ্য তাড়ায় দেখেশুনে খেলতে শুরু করেন দুই টাইগার ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম ও লিটন দাস। রান তোলায় কিছুটা ধীরগতি থাকলেও প্রথম ৬ ওভার টিকেছিলেন তারা। তবে সপ্তম ওভারে তানজিদকে ১২ রানে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন মার্কো জনসেন। পরের বলে আউট হন নাজমুল হোসেন শান্ত। জেনসেনের লেগ সাইডের বলে ফ্লিক করতে গিয়ে ক্লাসেনের গ্লাভসে ধরা পড়েন তিনি। ফলে গোল্ডেন ডাক মেরে ফিরে যেতে হয় শান্তকে।
দলীয় অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ফেরেন মাত্র ১ রান করে। দ্রুতই তিন উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। সেই চাপ থেকে দলকে উদ্ধার করতে পারেননি অভিজ্ঞ উইকেটরক্ষক ব্যাটার মুশফিকুর রহিম। মাত্র ৮ রান করে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন তিনি।
মুশফিক ফেরার পর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি লিটনও। কাগিসো রাবাদার বলে লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে পড়ে ২২ রান করে আউট হন এই ওপেনার। উইকেটে থিতু হলেও বড় ইনিংস খেলতে পারেননি মেহেদী হাসান মিরাজ। সাজঘরে ফেরেন ১১ রান করে। এদিকে তিন চারে ১৯ বলে ১৯ রান করে আউট হন নাসুম আহমেদ।
ব্যাটারদের আসা-যাওয়ার মিছিলে একপ্রান্ত আগলে রেখে হারের ব্যবধান কমানোর চেষ্টা করেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ৬৭ বলে অর্ধশত পূর্ণ করেন তিনি। ফিফটির পর এগুতে থাকেন সেঞ্চুরির দিকে। অবশেষে ১০৪ বলে তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগারের দেখা পান তিনি। শেষ পর্যন্ত ১১১ বলে ১১১ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলে আউট হন রিয়াদ। তার সব ওয়ানডে সেঞ্চুরি আইসিসি ইভেন্টে। একইসঙ্গে বিশ্বকাপে এখন বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৩টি সেঞ্চুরির রেকর্ডটাও অভিজ্ঞ এই ব্যাটারের।
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের আউটের পর বেশিক্ষণ টিকতে পারেনি বাংলাদেশ। শেষ ব্যাটার হিসেবে মোস্তাফিজুর রহমান ১১ রানে আউট হলে চন্ডিকা হাথুরুসিংহের শিষ্যরা গুটিয়ে যায় ২৩৩ রানে।
প্রোটিয়াদের হয়ে সরবরাহ ৩টি উইকেট নেন কোটজিয়া। ২টি করে উইকেট নেন কাগিসো রাবাদা ও মার্কো জনসেন। একটি উইকেটের দেখা পান কেশব মহারাজা।
এর আগে ব্যাটিংয়ে নেমে সাবধানী শুরু করেন দুই প্রোটিয়া ওপেনার কুইন্টাইন ডি কক ও রেজা হেন্ডরিক্স। ওপেনিং জুটিতে তারা তোলেন ৩৩ রান। দলীয় সপ্তম ওভারে ১২ রান করা হেন্ডরিক্সকে বোল্ড করে এই জুটি ভাঙেন পেসার শরিফুল ইসলাম। ওয়ানডাউনে নামা রাসি ভন ডার ডুসেনকে পরের ওভারেই প্যাভিলিয়নের পথ ধরান মেহেদী হাসান মিরাজ। দলীয় ৩৬ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। ডুসেন ফেরেন মাত্র ১ রানে।
এরপর তৃতীয় উইকেটে অধিনায়ক এইডেন মার্করামকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন ডি কক। তারা দুজন মিলে গড়েন ১৩১ রানের জুটি। ফিফটিরও দেখা পান দুজনেই। ৬৯ বলে ৬০ রান করে মার্করাম বিদায় নিলে ভাঙে এই জুটি।
তার বিদায়ের পর চতুর্থ উইকেটে আবারও হেনরিখ ক্লাসেনকে নিয়ে ১৪২ রানের জুটি গড়েন ডি কক। এর মাঝেই ১০১ বলে চলমান বিশ্বকাপে নিজের তৃতীয় সেঞ্চুরির দেখা পান এই প্রোটিয়া ওপেনার। সেঞ্চুরির পর হাত খুলে খেলতে থাকেন তিনি। দলীয় ৪৬তম ওভারে হাসান মাহমুদের বলে নাসুম আহমেদকে ক্যাচ দেয়ার আগে ১৪০ বলে ১৭৪ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলে বিদায় নেন ডি কক।
তার বিদায়ের পরও রানের চাকা সচল রাখেন ক্লাসেন। যদিও অল্পের জন্য সেঞ্চুরিবঞ্চিত থাকতে হয় তাকে। শেষ ওভারে সাজঘরে ফেরার আগে মাত্র ৪৯ বলে ৯০ রান করেন ২টি চার ও ৮টি ছক্কায়।
আর শেষদিকে ডেভিড মিলারের ১৫ বলে অপরাজিত ৩৪ রানের সুবাদে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ৩৮২ রানের পাহাড় গড়ে প্রোটিয়ারা। একই সঙ্গে কোনো এক বিশ্বকাপে প্রথম দল হিসেবে ৩টি ৩৫০ এর বেশি দলীয় সংগ্রহের রেকর্ড গড়ে তারা।
বাংলাদেশের পক্ষে হাসান মাহমুদ দুটি এবং মেহেদী হাসান মিরাজ, শরিফুল ইসলাম ও সাকিব আল হাসান একটি করে উইকেট শিকার নেন।