বিশ্বকাপে যত দিন যাচ্ছে- বাংলাদেশের পারফরম্যান্সে যেন ভাটা পড়ছে! এ কথাটা বলার কারণ হলো- আফগানিস্তানকে হারিয়ে বিশ্বকাপে যে দুরন্ত সূচনা করেছিল বাংলাদেশ, সেই পারফরম্যান্সের প্রভাব কিন্তু পরের তিন ম্যাচে দেখা যায়নি।
শক্তিশালী ভারত, নিউজিল্যান্ড ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে প্রতিদ্বন্দ্বিতাই তো জমিয়ে তুলতে পারেনি বাংলাদেশ। দল যেভাবে হেরেছে- এমন পারফরম্যান্সে বিশ্বকাপে কত দূর যাওয়া যাবে?
তবে সেমিফাইনালে খেলার সুযোগ যে একেবারে শেষ হয়ে গেছে, তা কিন্তু নয়। হাতে থাকা বাকি পাঁচ ম্যাচে ভালো কিছু করে দেখাতে পারলে শেষদিকে নেট রান রেটের মারপ্যাঁচের হিসাব কষে সেমিফাইনালে যাওয়ার সম্ভাবনা জাগতে পারে। পয়েন্ট টেবিলের দিকে তাকালে দেখা যাবে, বাংলাদেশের পরের সারিতে রয়েছে ইংল্যান্ডসহ পাঁচটি দল।
যাই হোক, মঙ্গলবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে কঠিনতম একটি ম্যাচ খেলতে নামবে বাংলাদেশ। এই ম্যাচটির কঠিন রূপ দিয়েছে বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকানদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স। টুর্নামেন্টে নিজেদের প্রথম ম্যাচে বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৪২৮ রানের রেকর্ড দলীয় স্কোর গড়েছে তারা। গত ম্যাচে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে জয়ের জন্য ৪০০ রানের লক্ষ্য ছুড়ে দেয় প্রোটিয়ারা। তাদের মারকুটে ব্যাটিং আতঙ্ক ছড়িয়েছে।
প্রতিপক্ষের বোলারদের ওপর যেভাবে চড়াও হন আফ্রিকানরা- মনে হয় ব্যাট নয়, যেন ধারালো তলোয়ার নিয়ে কচুকাটা করতে মাঠে নামেন! তাদের দাপুটে ব্যাটিংয়ের যে অসাধারণ দক্ষতা, সেটিই বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। নিঃসন্দেহে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটারদের সামনে অগ্নিপরীক্ষা দিতে হবে বোলারদের।
এই ম্যাচে বাংলাদেশের অনুপ্রেরণা হতে পারে নেদারল্যান্ডস। দক্ষিণ আফ্রিকার বিধ্বংসী ব্যাটিংদর্প চূর্ণ করে দিয়ে টুর্নামেন্টে অঘটনের জন্ম দিয়েছে ডাচরা। প্রোটিয়াদের মাটিতে নামিয়ে দিতে হলে বাংলাদেশকে ‘অলআউট’ ক্রিকেটই খেলতে হবে। আমি মনে করি, স্পিন শক্তি কাজে লাগিয়ে আফ্রিকানদের আটকানো সম্ভব।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বিশ্বকাপে নিজেদের পঞ্চম ম্যাচে বাংলাদেশের দুশ্চিন্তার কারণ ব্যাটিং। টুর্নামেন্টে এখনো স্বস্তিদায়ক ব্যাটিং প্রদর্শনী দেখাতে পারেননি তারা। অবশ্য গত ম্যাচে উদ্বোধনী জুটিতে লিটন ও নতুন তামিমের ব্যাটে আলোর রেখা দেখা গেছে। বিশ্বকাপে রেকর্ড জুটি গড়েছেন এই দুই ওপেনার। ভারতের বিপক্ষে পাওয়ার প্লেতে ৬৩ রান করেন তারা। এরপর আরও ৩০ রান তোলার পর উদ্বোধনী জুটি ভাঙে। কিন্তু শুরুর মতো শেষটা হয়নি।
আমি মনে করি, গত ম্যাচের ভুলগুলো শুধরে মাঠে নামতে হবে। কেননা কাগিসো রাবাদা, লুঙ্গি এনগিডি, মার্কো জেনসেনদের ধারালো পেস বোলিং সামলাতে হবে তাদের। প্রোটিয়া স্পিনাররাও বেশ কার্যকর। তবে নিজেদের স্বাভাবিক খেলাটা খেলতে পারলে বড় স্কোর গড়তে পারে বাংলাদেশ।
ওয়াংখেড়ে মাঠে খেলা। সবার জানা, এখানে হাই-স্কোরিং ম্যাচই হয়ে থাকে। এমন ব্যাটিংবান্ধব উইকেটে তাণ্ডবলীলা চালাতে হয়। বল ব্যাটে আসবে, রান তুলতে হবে প্রচুর। কিন্তু এই মাঠে ব্যাটিংয়ের সময় আরেকটি চ্যালেঞ্জ নিতে হবে ব্যাটারদের। মুম্বাইজুড়ে প্রচুর গরম পড়েছে। গত ম্যাচে আফ্রিকান ব্যাটার ক্লাসেন যে বিস্ফোরক সেঞ্চুরির ইনিংস উপহার দেন, সেই ম্যাচে উত্তপ্ত রোদে পুড়ে প্রচণ্ড গরমের সঙ্গেও সংগ্রাম করতে হয়েছে তাকে। এই বৈরী পরিস্থিতিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যাটিং করা সত্যিই অনেক কষ্টসাধ্য কাজ হবে। মঙ্গলবারের ম্যাচে এই চ্যালেঞ্জটা যারা নিতে পারবে, তাদের ভালো করার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।
আমি আগেই বলেছি, দক্ষিণ আফ্রিকাকে আটকাতে হলে স্পিন শক্তিকেই কাজে লাগাতে হবে। আগের ম্যাচে সাকিব না খেলায় বাঁহাতি স্পিনার নাসুম একাদশে সুযোগ পেয়েছেন। আজকের ম্যাচে সাকিব খেললে অপশন বেড়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে নতুন করে একাদশ সাজানোর সুযোগ পাবে টিম ম্যানেজমেন্ট। প্রতিপক্ষের ডানহাতি ও বাঁহাতি ব্যাটার বিবেচনায় স্পিন বোলিং অ্যাটাক সেভাবে সাজানো উচিত। অন্যদিকে, তিন পেসার নিয়ে গত ম্যাচেও খেলেছে বাংলাদেশ। তাসকিনের জায়গায় হাসান মাহমুদ সুযোগ পেলেও অনেক ব্যয়বহুল বোলিং করেছেন। হতাশা কাটিয়ে উঠতে হলে পেস অ্যাটাককেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।
পরিশেষে এটাই বলব যে, জয় পেতে হলে বাংলাদেশকে নিজেদের সবকিছু উজাড় করে দিয়ে খেলতে হবে। আত্মবিশ্বাস হারানো যাবে না। মাঠে শরীরী ভাষা থাকতে হবে আগ্রাসী এবং ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে খেলতে হবে। তা হলেই কাঙ্ক্ষিত জয়ের দেখা মিলতে পারে।