আজ বিশ্বকাপের ২২তম ম্যাচে দুই প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান ও আফগানিস্তান পরস্পরের মুখোমুখি হচ্ছে। দুই দলেরই নিজেদের পঞ্চম ম্যাচ এটি।
টানা দুই ম্যাচ হারের পর ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে আজ আফগানদের বিপক্ষে জয় ছাড়া বিকল্প ভাবছে না পাকিস্তান। অন্যদিকে গত ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের কাছে হারের হতাশা কাটিয়ে উঠতে চাইবে আফগানিস্তান। ফলে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের ম্যাচটিতে তুমুল লড়াই জমে উঠবে বলে আশা করা হচ্ছে।
চেন্নাইয়ের এম এ চিদাম্বরাম স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় বেলা আড়াইটায় দুই দলের ম্যাচটি শুরু হবে। এ ম্যাচের চলতি ধারাবিবরণী সরাসরি সম্প্রচার করবে বাংলাদেশ বেতার।
বিশ্বকাপে নিজেদের শুরুটা দুরন্ত ছিল পাকিস্তানের। শ্রীলঙ্কা ও নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে পরপর দুই জয় তুলে নেয় বাবর আজমের দল, কিন্তু এরপর দুই ম্যাচে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে হতাশায় পুড়ছে পাকিস্তানিরা। বোলারদের ব্যর্থতায় অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৬২ রানে হার মানে তারা।
এ পর্যন্ত চার ম্যাচ খেলে দুটি জয়ে চার পয়েন্ট অর্জন করে পাকিস্তান। পয়েন্ট টেবিলের পাঁচ নম্বরে আছে পাকিস্তান। সেমিফাইনালে খেলতে হলে সামনের ম্যাচগুলোতে জয় তুলে নেয়া ছাড়া বিকল্প নেই তাদের। গত চার ম্যাচের মধ্যে শেষ তিনটিতে পাকিস্তানের বোলারদের পারফরম্যান্স সন্তোষজনক ছিল না। তাদের বিশ্বসেরা বোলিং লাইনআপের বিপক্ষে শ্রীলঙ্কা ৯ উইকেটে ৩৪৪ রান করে।
পাকিস্তানি বোলারদের ওপর তাণ্ডবলীলা চালিয়ে ৯ উইকেটে ৩৬৭ রানের পাহাড় গড়ে অস্ট্রেলিয়া। আরেক ম্যাচে পাকিস্তানের ছুড়ে দেয়া ১৯২ রানের টার্গেট স্পর্শ করতে ১৮৩ বল খেলতে হয় ভারতকে। এতে বোলারদের ব্যর্থতা ফুটে উঠেছে।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে রানবন্যার ম্যাচে ৫ উইকেট শিকার করে ফর্মে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছেন পাকিস্তান দলের সেরা পেসার শাহিন শাহ আফ্রিদি। টুর্নামেন্টে পাকিস্তানের পক্ষে সর্বোচ্চ ৯ উইকেট শিকার করেন তিনি, কিন্তু তার ইকোনমি ছয়ের ওপরে। আফ্রিদির মতো হাসান আলিরও ইকোনমি ছয়ের ওপর। ইকোনমি সাত টপকে গেছেন হ্যারিস রউফ। নিজেকে মেলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছেন দলের প্রধান স্পিনার শাদাব খানও। সাড়ে ছয় ইকোনমিতে মাত্র দুই উইকেট শিকার করেন তিনি।
স্পিনিং অলরাউন্ডার মোহাম্মদ নওয়াজের ইকোনমি ছয়ের নিচে হলেও তার শিকার মাত্র দুই উইকেট। সামনের ম্যাচে জয় পেতে হলে বোলারদের ভালো পারফরম্যান্স দেখাতে হবে।
পাকিস্তান দলের কোচ গ্রান্ট ব্র্যাডবার্ন বলেছেন, তাদের দলের বোলাররা বিশ্বমানের। গত ম্যাচগুলোয় তারা নিজেদের সেরাটা দিয়ে খেলতে না পারলেও অচিরেই ঘুরে দাঁড়াবে দলটি। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের দিকেই দৃষ্টি তাদের।
আফগানিস্তান শক্ত প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়াতে পারে। কেননা তারা ইংল্যান্ডের মতো দলকে মাটিতে নামিয়ে দিয়েছে। পাকিস্তানকেও হারানোর সামর্থ্য আছে আফগানদের। এই সামর্থ্যের প্রমাণ বিশ্বকাপের মঞ্চে দিয়েছে তারা। পাকিস্তানকে জিততে হলে সব বিভাগে তাদের সেরাটা দিয়েই খেলতে হবে। এ লক্ষ্য নিয়েই মাঠে নামবে পাকিস্তান। এমনটাই জানিয়েছেন তাদের কোচ ব্র্যাডবার্ন।
এদিকে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের কাছে হেরে আফগানদের মিশন শুরু হয়। এরপর ভারতের কাছেও হেরেছে তারা। টানা ম্যাচে হারলেও আত্মবিশ্বাস হারায়নি তারা। নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে বিশ্ব ক্রিকেটকে চমকে দেয় আফগানরা। আফগানিস্তানের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড, কিন্তু এই জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে পারেনি তারা।
পাকিস্তানকে হারিয়ে আরেকটি ‘আপসেট’ দেখাতে মরিয়া রশিদ, মুজিব, নবিরা। পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম জয়ের লক্ষ্য তাদের।
আফগানিস্তানের ওপেনার রহমানুল্লাহ গুরবাজ জানান, ওয়ানডে ক্রিকেটে এখনও পাকিস্তানের বিপক্ষে জিততে পারেননি তারা। এ জন্য পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়ের জন্যই মাঠে নামবে আফগানরা। পাকিস্তানকে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ হিসেবেই মানছে আফগানিস্তান।
গুরবাজ আরও জানান, পাকিস্তানের বোলাররা সেরা ফর্মে নেই, কিন্তু এসব নিয়ে চিন্তিত নন তারা। পাকিস্তান ভয়ংকর দল, তবে তাদের মোকাবিলা করতে প্রস্তুত আফগানযোদ্ধারা।
অতীর পরিসংখ্যানে দেখা যায়, এ পর্যন্ত ওয়ানডে ক্রিকেটে সাতবার পরস্পরের মুখোমুখি হয় পাকিস্তান ও আফগানিস্তান। এর মধ্যে সবগুলো ম্যাচেই জয় পায় পাকিস্তান। গত আগস্টে ওয়ানডেতে সর্বশেষ দেখা হয়েছিল দুই দলের।
শ্রীলঙ্কার মাটিতে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজে আফগানদের হোয়াইটওয়াশ করেছিল পাকিস্তান। সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে পাকিস্তানের কাছে এক উইকেটে হেরে জয়বঞ্চিত হয় আফগানিস্তান।
অন্যদিকে বিশ্বকাপে মাত্র একবারই দেখা হয় পাকিস্তান-আফগানিস্তানের। গত বিশ্বকাপ আসরে ওই ম্যাচে পাকিস্তানকে হারানোর সুযোগ তৈরি করেছিল আফগানরা। এটি তাদের জন্য বড় অনুপ্রেরণা জোগাবে।