চলমান বিশ্বকাপের পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষ দুই দল ভারত ও নিউজিল্যান্ড রোববার মুখোমুখি হচ্ছে। সবসময় এ দুই দলের লড়াই উত্তাপ-উত্তেজনা বাড়িয়ে দেয়। আজকের ম্যাচটিও ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে পারে।
এ ম্যাচে জয়ী দল পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষস্থান মজবুত করে সেমিফাইনালের পথ মসৃণ করবে। বিশ্বকাপের এবারের আসরে ভারত ও নিউজিল্যান্ড চারটি করে ম্যাচ খেলে প্রতিটিতে জয় তুলে নিয়েছে। দুই দলের অর্জন সমান ৮ পয়েন্ট করে, কিন্তু নেট রান রেটে পিছিয়ে থাকায় পয়েন্ট টেবিলের দুই নম্বরে রয়েছে স্বাগতিক ভারত। শীর্ষে অবস্থান করছে নিউজিল্যান্ড।
শক্তি, সামর্থ্য ও বর্তমান ফর্ম বিবেচনায় দুই দলের কেউই কারও চেয়ে পিছিয়ে নেই। তাই ম্যাচটি তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও উপভোগ্য হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ভারত ও নিউজিল্যান্ডের ম্যাচটি হিমাচল প্রদেশের ধর্মশালায় বাংলাদেশ সময় বেলা আড়াইটায় শুরু হবে। এ ম্যাচের চলতি ধারাবিবরণী সরাসরি সম্প্রচার করবে বাংলাদেশ বেতার।
বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে হারিয়ে বিশ্বকাপ মিশন শুরু করেছে নিউজিল্যান্ড। এরপর তারা যে তিনটি জয় পেয়েছে, সেগুলো অপেক্ষাকৃত কম শক্তির দলের বিপক্ষে। বাংলাদেশ, নেদারল্যান্ডস ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাকি তিনটি জয় তুলে নেয় কিউইরা। তাই বড় দল ও বিশ্বকাপের আয়োজক ভারতের বিপক্ষে তাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জের হতে পারে।
অন্যদিকে পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে বিশ্বকাপে যাত্রা করে ভারত। ঘরের মাটিতে বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের মিশন তাদের।
ফেভারিট অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে ভারতের দুরন্ত সূচনা পরের তিন ম্যাচেও আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছে, যে কারণে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের বিপক্ষে দাপুটে জয় তুলে নিতে পেরেছে তারা। এ ছাড়া বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে একপেশে ম্যাচ জিতেছে ভারতীয়রা।
টানা জয়রথ ছুটে চলা ভারতকে আটকানো কঠিন। জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে আজ মাঠে নামবে রোহিত শর্মার দল।
টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই নিয়মিত অধিনায়ক ও দলের প্রধান অস্ত্র কেন উইলিয়ামসনকে পায়নি নিউজিল্যান্ড। লিগামেন্টের ইনজুরি কাটিয়ে বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচে ফেরেন তিনি। ব্যাট হাতে দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন হয় তার, কিন্তু ওই ম্যাচে আঙুলে চোট পান। তার আঙুলে চিড় ধরার খবর পাওয়া গেছে, যে কারণে ভারতসহ সামনের বেশ কিছু ম্যাচ খেলতে পারছেন না উইলিয়ামসন।
দলের গুরুত্বপূর্ণ এই খেলোয়াড়ের অনুপস্থিতি অবশ্য অতটা টের পাচ্ছে না নিউজিল্যান্ড দল। কেননা ব্যাটিংয়ে টম লাথাম, কনওয়ে, ড্যারিল মিচেলরা দারুণ ফর্মে আছেন। অলরাউন্ডাররাও দলকে এগিয়ে দেয়ার জন্য প্রস্তুত। সব মিলিয়ে ভারতের বিপক্ষে এগিয়ে যেতে পারে নিউজিল্যান্ড।
অন্যদিকে হার্দিক পান্ডিয়া ইনজুরিতে পড়ায় ভারত শিবিরও একটি ধাক্কা খেয়েছে। বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচে পায়ের গোড়ালিতে টান লাগে তার, যে কারণে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলতে পারবেন না তিনি। তার জায়গায় একাদশে বিকল্প হিসেবে রবিচন্দ্রন অশ্বিন, ইশান কিষাণ কিংবা শার্দুল ঠাকুরকে দেখা যেতে পারে। ভারতের সাইড বেঞ্চের খেলোয়াড়রাও দুর্দান্ত।
ব্যাটিং ও বোলিংয়ে বিশ্বকাপের অন্যতম শক্তিমান দল ভারত। তাদের বিপক্ষে জয় পেতে হলে নিজেদের সেরা খেলাটাই উপহার দিতে হবে নিউজিল্যান্ডকে। অন্যদিকে জয়ের ছন্দ ধরে রাখতে হলে ভারতকেও নিজেদের নিংড়ে দিয়ে খেলতে হবে। ফলে দুই দলের লড়াই জমে উঠবে। ম্যাচটি খুবই উপভোগ্য হতে পারে। অবশ্য এ জন্য ধর্মশালার উইকেট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
এ উইকেটের আচরণ অনেকটা রহস্যময় বলা যায়। কেননা এখানে পেসারদের জন্য যেমন কিছু থাকে, স্পিনাররাও সুবিধা পেয়ে থাকেন। আবার ব্যাটাররাও বড় ইনিংস খেলে দলীয় স্কোর লম্বা করতে পারেন। এখন দেখার বিষয়, উইকেট কার পক্ষে কথা বলে।
অতীত ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে, বিশ্বকাপে এ পর্যন্ত ৯টি ম্যাচে পরস্পরের মুখোমুখি হয়েছে ভারত ও নিউজিল্যান্ড। এর মধ্যে ভারত তিনটি ম্যাচে জিতেছে। পাঁচটি ম্যাচে জয়ের রেকর্ড নিউজিল্যান্ডের। অপর ম্যাচের ফল হয়নি।
কিউইদের বিপক্ষে ভারতের সর্বোচ্চ দলীয় স্কোরের রেকর্ড ২৫২ রান। বিপরীতে নিউজিল্যান্ড সর্বোচ্চ ২৫৩ রান তুলেছে। আশা করা যায়, আজকের ম্যাচে এই রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে দুই দল। অন্যদিকে দিন দিন ভারত ও নিউজিল্যান্ডের লড়াই আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে। লড়াইয়ে দুই দল সেয়ানে সেয়ান।
অতীত পরিসংখ্যানে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হওয়া যায়। ১৯৭৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত দুই দল ১১৬টি আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ম্যাচে পরস্পরের মুখোমুখি হয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৫৮টি ম্যাচে জয়লাভ করে ভারত। ৫০টি ম্যাচে জিতে নিউজিল্যান্ড। একটি ম্যাচ টাই হয়েছে। বাকি সাত ম্যাচের ফল হয়নি।