বিশ্বকাপ প্রায় মাঝামাঝিতে চলে এসেছে। এর মধ্যে আমরা বেশ কয়েকটি অঘটন দেখেছি। অপেক্ষাকৃত কম শক্তির দলও যে বড় দলগুলোকে হারিয়ে রূপকথার জম্ম দিতে পারে, সেটি দেখিয়েছে নেদারল্যান্ডস ও আফগানিস্তান দল। বিশ্বকাপে প্রথম দুই ম্যাচে প্রচণ্ড প্রতাপ দেখিয়ে দোর্দণ্ড জয় পাওয়া দক্ষিণ আফ্রিকাকে নিমিষেই মাটিতে নামিয়ে দেয় নেদারল্যান্ডস। বিশ্ব ক্রিকেটকে বিস্ময় উপহার দেন ডাচরা। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড তো বলতে গেলে শোচনীয়ভাবে হেরেছে রশিদ, নবি, মুজিবদের কাছে। এই সফলতা তাদের জন্য বিরাট অর্জন।
বিশ্বকাপের মঞ্চে বড় দল ও ছোট দলের মধ্যে যে তেমন ব্যবধান থাকে না- এই ম্যাচগুলো তার বড় উদাহরণ। যাই হোক, বিশ্বকাপে ‘আপসেট’-এর কবলে পড়া শক্তিশালী দুই দল ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকা শনিবার পরস্পরের বিপক্ষে খেলবে। নিঃসন্দেহে অনেক বড় ম্যাচ এটি। দুদলের মধ্যে আগুনে লড়াই হবে এবং বিশ্বকাপের সুন্দরতম একটি ম্যাচ আমরা উপভোগ করব আশা করি।
আমি মনে করি, আফগানিস্তানের কাছে এক ম্যাচ হেরেই সব শেষ হয়ে যায়নি ইংল্যান্ডের। ‘আত্মবিশ্বাস হারানো যাবে না’- এমন দৃঢ় মনোবল এখন ইংলিশ শিবিরে। বড় দলগুলো মূলত এমনই হয়। একটি বাজে ম্যাচ খেলার পর কীভাবে ঘুরে দাঁড়াতে হবে- অতীত অভিজ্ঞতা ও কৌশল ভালো জানা থাকে তাদের। বর্তমান ইংল্যান্ড দলে পারফরমারের অভাব নেই। যদিও তারা তাদের প্রকৃত ব্যাটিং-শক্তিটা এখনো শো করতে পারেনি।
শনিবার মুম্বাইয়ের ঐতিহ্যবাহী ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামের উইকেটে জস বাটলার, ডেভিড মালান, হেনরি ব্রুক, জো রুটরা তাদের ক্লাসিক ব্যাটিংটাই প্রদর্শন করবে বলে আশা করি। বিশ্বকাপে আপনি দেখবেন, অন্য দলের তুলনায় ইংল্যান্ডের ব্যাটিং গভীরতা কিন্তু অনেক। তাদের দলে ব্যাটিং ও বোলিং অলরাউন্ডারের ছড়াছড়ি। তারা যেকোনো সময় ম্যাচের চিত্রনাট্য বদলে দিতে পারে। আর এটাই হলো ইংল্যান্ড দলের বিশেষত্ব। সবার উজ্জ্বল পারফরম্যান্সে আজ ম্যাচে এগিয়ে থাকতে পারে ইংল্যান্ড।
অবশ্য ইংল্যান্ডের ব্যাটিং-শক্তির দারুণ পরীক্ষা নেবেন দক্ষিণ আফ্রিকান বোলাররা। তাদের পেস ইউনিট খুবই ভয়ংকর। কাগিসো রাবাদা, লুঙ্গি এনগিডি, মার্কো জেনসেনের তুফান গতির বিধ্বংসী বল সামলানো কঠিন হবে। তাদের সামনে বিশ্ব মানের দক্ষ ব্যাটাররাও আতঙ্কে থাকেন। রাতের ঘুম ঠিকমতো হয় না। জস বাটলারদের জন্য যে প্রোটিয়াদের এই ধারালো গতির বোলিং বড় চ্যালেঞ্জ জানাবে- তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। একই সঙ্গে একাদশে দুই স্পিনার রাখতে পারে দক্ষিণ আফ্রিকা। বাঁহাতি স্পিনে কেশব মহারাজ ভালো খেলছেন। গত ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলা বাঁহাতি রিস্ট স্পিনার তাবরিজ শামসিও বেশ কার্যকর ছিলেন। প্রতিপক্ষের ডানহাতি-বাঁহাতি ব্যাটারের কম্বিনেশন বিবেচনায় সেভাবেই আক্রমণাত্মক বোলিং অ্যাটাক সাজাবে দক্ষিণ আফ্রিকা।
ইউরোপের দেশ নেদারল্যান্ডসের কাছে হারের পর স্বস্তিতে নেই আফ্রিকানরা। সর্বশক্তি কাজে লাগিয়ে জয়ের ধারায় ফিরতে মরিয়া এখন তারা। ব্যাটাররাই দক্ষিণ আফ্রিকাকে এগিয়ে রাখতে পারেন। গত ম্যাচে ডাচদের সামনে ব্যাটাররা সুবিধা করতে পারেননি। তবে কেশব মহারাজরা প্রমাণ করেছেন যে শুধু টপ অর্ডার কিংবা মিডল অর্ডারই নয়, তাদের লোয়ার অর্ডারও শক্তিধর। ব্যাটাররা নাম অনুযায়ী খেলতে পারলে রান-বন্যা হবে। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে ৪২৮ রানের রেকর্ড সর্বোচ্চ স্কোর গড়ে প্রোটিয়ারা বার্তা দিয়েছেন যে বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা ব্যাটিং-শক্তির দল তারা।
ওয়াংখেড়ের উইকেটেও তাদের সেই শক্তির প্রদর্শনী হতে পারে এদিন। ডি কক, ডুসেন, মারক্রামরা ফর্মের তুঙ্গে আছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটারদের থামাতে হিমশিম খেতে পারেন ইংলিশ বোলাররা। তবে বিধ্বংসী বোলিং অ্যাটাক নিয়ে মাঠে নামবে ইংল্যান্ড। রেস টপলি, মার্ক ওড, ক্রিস ওকসের ধারালো গতির বৈচিত্র্যময় বোলিং যেকোনো ব্যাটারের জন্য ধাঁধা হতে পারে। স্পিনে আদিল রশিদ, মইন আলিরাও কম যাবেন না। ফলে বোলাররা দলকে এগিয়ে দিতে পারেন।
এদিকে নেদারল্যান্ডস ও শ্রীলঙ্কার ম্যাচও রয়েছে শনিবার। আমি মনে করি, এ ম্যাচটি আকর্ষণীয় হতে পারে। কেননা দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে আসা ডাচরা মোমেন্টাম কাজে লাগিয়ে এই ম্যাচেও জয় তুলে নেয়ার চেষ্টা করবে। অপরদিকে টানা তিন ম্যাচ হেরে অনেক হতাশ লঙ্কানরা। সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে কঠিন হবে তাদের। নিজেদের সেরা ক্রিকেট উপহার দেয়ার চেষ্টা করবেন তারা। ফলে দুদলের ম্যাচটি উত্তাপ-উত্তেজনার ঝাঁঝ ছড়াবে।