বেঙ্গালুরুর স্টেডিয়ামে শুক্রবার বিশ্বকাপে মুখোমুখি হচ্ছে অস্ট্রেলিয়া ও পাকিস্তান। টুর্নামেন্টের বড় ম্যাচগুলোর মধ্যে এটি একটি। আশা করি, এ ম্যাচে ‘ব্র্যান্ড ক্রিকেট’ দেখতে পারব আমরা।
বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার শক্তিশালী ব্যাটিং শক্তির প্রদর্শনী দেখা যায়নি। ডেভিড ওয়ার্নার, লাবুশেন, স্মিথ, ম্যাক্সওয়েলের যে নাম-ডাক, সে অনুযায়ী তাদের সেই পাওয়ার ব্যাটিংটা দেখাতে পারেননি।
বিবর্ণ ব্যাটিংয়ের কারণে এবার বিশ্বকাপের যাত্রাটাও সুখকর হয়নি পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের। ভারত ও সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে দলীয় রান দুই শর ঘরে পৌঁছানোর আগেই ইনিংস গুটিয়েছে তাদের। এমন ব্যাটিং দুর্দশা আশা করিনি।
মূলত স্পিন খেলার দুর্বলতাই অজি ব্যাটারদের জন্য কাল হয়েছে। ওই দুই ম্যাচে যে ২০টি উইকেট হারাল অস্ট্রেলিয়া, এর মধ্যে স্পিনাররা শিকার করেছেন ১০টিই। এরপর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কষ্টের জয় পেয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে প্যাট কামিন্সের দল। মূলত তাদের এ জয় এনে দিয়েছেন বোলাররা। ম্যাচে বড় পার্থক্যটা গড়ে দেন লেগ স্পিনার অ্যাডাম জাম্পা। বোলাররা শ্রীলঙ্কাকে দুই শর আশপাশে আটকানোয় ব্যাটারদের জন্য কাজটা সহজ হয়ে যায়।
যাই হোক, এই জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে হলে শুক্রবার পাকিস্তানের বিপক্ষে কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে অজিদের। বিশেষ করে ব্যাটারদের নিজেদের প্রমাণ করতে হবে।
পাকিস্তানের বিধ্বংসী পেস ইউনিটের নেতৃত্ব দিচ্ছেন শাহিন শাহ আফ্রিদি। তার ইন সুইং ইয়র্কার সামলানো কঠিন। আজকের ম্যাচে আরও ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারেন এই বাঁহাতি পেসার। নাসিম শাহর অনুপস্থিতিতে পাকিস্তানের বোলিংয়ের মূল অস্ত্র এখন শাহিন আফ্রিদি। কিন্তু ইনজুরি কাটিয়ে ওঠার পর থেকে তার বলে যেমন পেস কমেছে, তেমন সঠিক লেংথও। প্রতি ঘণ্টায় বলে ১৪০ কিলোমিটার গতি উঠাতে পারছেন না। তাকে নিয়ে কথা হচ্ছে। ফিটনেস নেই বলে অভিযোগ অনেকের। এ জন্য অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বড় ম্যাচে শাহিন আফ্রিদি নিজেকে মেলে ধরতে হবে।
ডানহাতি পেসার হ্যারিস রউফের গতির তোপেও পড়তে পারেন ওয়ার্নাররা। হাসান আলিও আছেন দারুণ ফর্মে। ফলে দুনিয়া কাঁপানো পাকিস্তানি পেস ইউনিটের সামনে সংগ্রাম করতে দেখা যেতে পারে অজি ব্যাটারদের।
এটা সবার জানা, ঐতিহ্যগতভাবেই স্পিন খেলার দুর্বলতা অস্ট্রেলিয়ার রয়েছে। উপমহাদেশে খেলতে এলে এই স্পিনারদের সামনে বিপাকে পড়েন তারা। লেগ স্পিনার শাদাব খান, বাঁহাতি স্পিনার মোহাম্মদ নাওয়াজ বাজিমাত করতে পারেন। গত ম্যাচে তারা ভারতের বিপক্ষে হাই-ভোল্টেজ ম্যাচে সুবিধা করতে না পারলেও বেঙ্গালুরুতে জ্বলে উঠতে পারেন। এতে বিপাকে পড়তে পারেন অজিরা।
অবশ্য বিশ্বকাপের আগ মুহূর্তে ভারতের মাটিতে ওয়ানডে সিরিজ ও আইপিএল খেলার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে সফল হতে চাইবেন ওয়ার্নাররা।
এদিকে পাকিস্তান প্রথম দুই ম্যাচ জিতে যে মোমেন্টাম পেয়েছিল, সেটি চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের বিপক্ষে মহারণে ধরে রাখতে পারেনি। মাঠে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঝাঁঝ ছড়াতে ব্যর্থ হয়েছেন বাবররা। স্বাগতিক ভারতের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করেছেন তারা, যেটি কাম্য ছিল না কারও।
ভারতের বিরুদ্ধে হঠাৎ ব্যাটিং ধসেই ডুবেছে পাকিস্তান। অধিনায়ক বাবর আজম ও রিজওয়ান মিলে দলকে বড় সংগ্রহের আভাস দিলেও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। দলীয় ১৫৫ রানে ৩ উইকেট হারানোর পরে মাত্র ৩৬ রান তুলতে গিয়ে পাকিস্তানের ব্যাটাররা উইকেটে যাওয়া-আসার প্রতিযোগিতা করেন। ফলে ১৯১ রানে অলআউট হয় তারা। মহা উত্তাপ ও উত্তেজনার ম্যাচটি একপেশে রূপ নেয়। সহজ জয় পায় ভারত।
এই হারের হতাশায় পুড়তে থাকা পাকিস্তানকে আজ নিজেদের খোলস থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। বোলিংয়ের পাশাপাশি তাদের যে বাবর আজমের নেতৃত্বে শক্তিধর ব্যাটিং লাইনআপ রয়েছে, এর প্রদর্শনী দেখাতে হবে। তা না হলে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ধরা খাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে তাদের।
জয় পেতে হলে দু’দলকেই সব দিক দিয়ে শক্তি প্রদর্শন করতে হবে। স্কোর বোর্ডে রান তুলতে হবে। দলীয় সংগ্রহ বড় হলে আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়ে যায় বোলারদের। আর সেটি কাজে লাগিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া যায়। আশা করি, দু’দলের ম্যাচটি অনেক প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে, উপভোগ্য হবে এবং ওয়ানডে ক্রিকেটের আসল আমেজ ছড়াবে।