বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ইংলিশ বধের আখ্যান লিখল আফগানিস্তান

  •    
  • ১৫ অক্টোবর, ২০২৩ ২২:১৫

গত দুই আসরেই ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে খেলে হারে আফগানিস্তান। তবে এবার বিশ্বকাপের মঞ্চে আফগানদের প্রথম জয়টিই এসেছে সেই ইংল্যান্ডকে হারিয়ে। ক্রিকেটে পাতায় এমনই এক গল্পগাঁথা লিখল রশিদ-নবিরা।

সেই ২০১৫ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপের মাধ্যমে আইসিসির মেগা ইভেন্টে যাত্রা শুরু করে আফগানিস্তান। তারপর ২০১৯ সালে আরও একটি বিশ্বকাপ গেছে। বিশ্বসেরাদের এই মঞ্চে একবার মাত্র জয় পেয়েছিল আফগানিস্তান। সেটাও ২০১৫ সালে। তারপর থেকে টানা ১৪ ম্যাচ জয়বঞ্চিত আফগানিস্তান। তবে এবারের বিশ্বকাপে সেই খরা কাটিয়ে আফগানরা পেয়েছে জয়ের দেখা। তাও আবার ইংলিশদের বিপক্ষে।

গত দুই আসরেই ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে খেলে হারে আফগানিস্তান। তবে এবার বিশ্বকাপের মঞ্চে আফগানদের প্রথম জয়টিই এসেছে সেই ইংল্যান্ডকে হারিয়ে। ক্রিকেটে পাতায় এমনই এক গল্পগাঁথা লিখল রশিদ-নবিরা।

নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে আজ টস হেরে আগে ব্যাট করতে নামে আফগানিস্তান। প্রথম ইনিংসের এক বল বাকি থাকতে ২৮৪ রান করে অল আউট হন আফগান ব্যাটাররা। ২৮৫ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ৪০.৩ ওভারে ২১৫ রানে গুটিয়ে যায় ইংলিশ ব্যাটিং লাইন আপ। ফলে ৬৯ রানের বিশাল জয় পেয়ে ইতিহাস রচনা করে হাসমতউল্লাহ শহিদির আফগানিস্তান।

শুরু থেকেই আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রিত বোলিং আর প্রাণ দিয়ে করা ফিল্ডিং ম্যাচটি জিততে বড় ভূমিকা রেখেছে। এর মধ্যে নিয়মিত উইকেট পড়েছে ইংল্যান্ডের। হ্যারি ব্রুকের ৬৬ রানের ইনিংসটি ছাড়া বলার মতো রান ইংল্যান্ডের কেউ করতে পারেনি।

এবারের বিশ্বকাপের প্রথম অঘটন ঘটালো আফগানিস্তান।

২৮৫ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই সফলতার দেখা পায় আফগানিস্তান। ফজলহক ফারুকির লেগ স্টাম্পের ফুল লেংথ ডেলিভারিতে ফ্লিক করতে চেয়েছিলেন জনি বেয়ারস্টো। তবে বলের লাইন মিস করায় তা আঘাত হানে তার প্যাডে। আবেদন করলে আম্পায়ার আঙুল তুলে দেন। বেয়ারস্টো রিভিউ নিলে দেখা যায়, বলটি লেগ দিয়ে বের হতে হতেও সামান্য স্ট্যাম্প ছুঁয়ে গেছে। ফলে সাজঘরে ফিরতে হয় তাকে।

এরপর জো রুটের সঙ্গে বড় জুটি গড়ার পথে ছিলেন ডাউইড মালান। তবে তাদের জুটিটি বড় করতে দেননি মুজিব উর রহমান। ডানহাতি এই স্পিনারের নিচু হওয়া বলটি প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হন রুট। ফলে স্ট্যাম্প ভেঙে দিয়ে পেছনে বেরিয়ে যায় বল।

রুট ১১ রান করে ফেরার পর ইনিংস বড় করতে পারেননি মালানও। মোহাম্মদ নবির অফ স্টাম্পের বাইরের টসড আপ ডেলিভারিতে ড্রাইভ করতে গিয়ে শর্ট এক্সট্রা কভারে থাকা ইব্রাহীম জাদরানের হাতে ক্যাচ দেন তিনি। ফলে ব্যক্তিগত ৩২ রানে ফিরতে হয় মালানকে।

হ্যারি ব্রুক এর মধ্যে উইকেটের এক পাশ আগলে রাখলেও অন্য প্রান্তে সবাই এসেছে আর ফিরে গেছে। ১৮ বলে ৯ রান করে নাভিন-উল হকের বলে বোল্ড হয়ে ফিরেছেন ইংলিশ অধিনায়ক জস বাটলার। এরপর লিয়াম লিভিংস্টোনকে ফিরতে হয়ে ১০ রানে। ১০ রানে বিদায় নিয়েছেন স্যাম কারানও। আসা-যাওয়ার এই মিছিলের মাঝে ৪৫ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন ব্রুক।

তবে হাফ সেঞ্চুরির কিছুক্ষণ পরই ইংল্যান্ডের সব স্বপ্ন শেষ করে ৬৬ রানের মাথায় বিদায় নিতে হয় ব্রুককে। মুজিবের ক্যারম বলে কাট করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন ব্রুক। সেটি লুফে নিতে ভুল করেনি ইকরাম আলিখিলের বিশ্বস্ত গ্লাভস। ৬১ বলে ৬৬ রান করা ব্রুকের ইনিংসটি ছিল একটি ছক্কা ও ৭টি চারের মারে সাজানো।

ব্রুকের চলে যাওয়ার পর ইনিংসটিকে টেনে খুব বেশি লম্বা করতে পারেননি আদিল রশিদ (২০), মার্ক উড (১৮) ও রিস টপলি (১৫)। ফলে অল আউটের লজ্জা নিয়েই পরাজয় বরণ করতে হয় ইংল্যান্ডের।

আফগানিস্তানের হয়ে তিনটি করে উইকেট নিয়েছেন রশিদ খান ও মুজিব উর রহমান। মোহাম্মদ নবি পেয়েছেন দুই উইকেটের দেখা। আর ফজলহক ফারুকি ও নাভিন-উল হক নিয়েছেন একটি করে উইকেট।

এর আগে ব্যাটারদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ইংলিশদের ২৮৫ রানের বড় লক্ষ্য দেয় আফগানিস্তান।

টস জিতে আফগানদের আগে ব্যাট করতে পাঠান জস বাটলার। টস জিতলে ইংল্যান্ড যে আফগানদের আগে ব্যাটে নামাবে, সেটা ক্রিকেট বোঝা বেশিরভাগ মানুষই জানত। আফগানদের অল্প রানে আটকে দ্রুত পরে দ্রুত ব্যাট চালিয়ে নেট রান রেটটা উঠিয়ে নেয়াই ছিল ইংলিশদের লক্ষ্য। তবে তাদের সে আশার গুড়ে বালি দিয়েছেন গুরবাজরা।

ব্যাট করতে নেমেই আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে ইংলিশ বোলারদের কোনো পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সুযোগ দেননি রহমানুল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরান। ঝড়ো ব্যাটিংয়ে প্রথম পাওয়ার প্লেতে ৭৯ রান তোলে এই জুটি।

১৭তম ওভারে ১১৪ রানের মাথায় ইব্রাহিম জাদরান ফিরে গেলে তৃতীয় ব্যাটার হিসেবে নামা রহমত শাহও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। ৩ রান করে আউট হয়েছেন তিনি। রহমত শাহকে আউট করার পরের বলেই আউট হন আরেক ওপেনার গুরবাজ। ৫৭ বলে ৮০ রান করে তিনি ফিরে যাওয়ার সময় ১২২ রানে তিন উইকেট হারায় আফগানিস্তান।

সে সময় মনে হচ্ছিল, এই বুঝি শুরু হলো ইংলিশ বোলারদের দাপট। বেশকিছু সময়ের জন্য হয়েছিলও তা। রানের গতি তখন কিছু সময়ের জন্য শ্লথ হয়ে আসে। কিছু পর ২৪ বলে ১৯ করে বিদায় নেন আজমতউল্লাহ ওমরজাই। পরে হাশমতউল্লা শহিদি; ৩৬ বলে ১৯ রান করে প্যাভিলিয়নে ফেরেন তিনি। তিনি আউট হওয়ার পর মাত্র ৯ রান করে আউট হন মোহাম্মদ নবি।

তবে এমন শোচনীয় বাটিং বিপর্যয় থেকে আফগানিস্তানকে টেনে তোলেন ইকরাম আলিখিল ও রশিদ খান। দেখেশুনে খেলতে থাকেন তারা। দুজনে ৪৩ রানের জুটি গড়ে ২২ বলে ২৩ রান করে বিদায় নেন রশিদ। হাতে আর ৫.৫ ওভার বাকি থাকায় এসেই আক্রমণাত্মক ব্যাটিং শুরু করেন মুজিবুর রহমান। এর মাঝে ইকরাম ৬৬ বলে ৫৮ রান করে ফিরলে পরের বলে আউট হন ১৬ বলে ২৮ রান করা মুজিবুর। শেষ উইকেট জুটির জন্য ১১ বল বাকি থাকলেও এক বল বাকি থাকতেই আউট হন নাভিনুল হক। ৬ বলে ৫ রান করে নাভিনুল রান আউটের শিকার হলে ২৮৪ রানে অল আউট হয়ে যায় আফগানিস্তান।

ইংল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন আদিল রশিদ। ২টি উইকেট পান মার্ক উড। আর একটি করে উইকেট নেন রিস টপলি, জো রুট ও লিয়াম লিভিংস্টোন।

ম্যাচসেরার পুরস্কার পেয়েছেন মুজিব উর রহমান।

এ বিভাগের আরো খবর