দক্ষিণ আফ্রিকার আগুনঝরা বোলিংয়ের সামনে যেভাবে ব্যাট হাতে প্রতিরোধ গড়ার কথা ছিল, অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটাররা করলেন ঠিক তার উল্টোটা। ফলে ১৩৪ রানের বিশাল ব্যবধানে হেরে বিশ্বকাপে জয়ের দেখা পাওয়ার অপেক্ষা আরও বাড়ল তাদের। অপরদিকে দুই ম্যাচে দুই জয় নিয়ে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষস্থানে বসল দক্ষিণ আফ্রিকা।
এদিন টস জিতে প্রথমে বোলিং করার সিদ্ধান্ত নেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। কিন্তু বোলিংয়েও তেমন যুত করতে পারেননি কামিন্সের বোলাররা। তারা উইকেট পেলেও দক্ষিণ আফ্রিকা রান তুলেছে সমান তালে।
কুইন্টন ডি ককের সেঞ্চুরিতে ৩১১ রান সংগ্রহ করেন প্রোটিয়ারা। ৩১২ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ৪০.৫তম ওভারে ১৭৭ রানেই অল আউট হয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। ফলে ১৩৪ রানের বড় জয় পায় দক্ষিণ আফ্রিকা।
শুরুর ব্যাটিং ধস সামাল দিতে হাল ধরেছিলেন মারনস লেবুশানে। কিন্তু তিনি একপাশ আগলে রাখলেও শেষ পর্যন্ত পেরে ওঠেনি তার দল। দ্বিতীয় ইনিংসের বলার মতো একটিমাত্র ইনিংস খেলেছেন লেবুশানেই। ৭৪ বল খেলে ৪৬ রান করেন তিনি।
শুধু তাই নয়, মিচেল স্টার্ককে সঙ্গে নিয়ে ইনিংসের সবচেয়ে বড় জুটিটিও তার। ৭০ রানে ৬ উইকেট হারানো অস্ট্রেলিয়াকে সপ্তম উইকেটে ৬৯ রানের জুটি গড়েন তিনি। এ সময় স্টার্ক ৫১ বল খেলে ২৭ রান করেন।
বাকি ব্যাটারদের কেউই ৩০-এর ঘরে পৌঁছাতে পারেননি।
পেস ও স্পিন আক্রমণে সমান দক্ষতা দেখিয়েছেন প্রোটিয়া বোলাররা। কাগিসো রাবাদা তিন উইকেট নিয়েছেন। মার্কো ইয়ানসেন, কেশব মহারাজ ও তাবরাইজ শামসি পেয়েছেন দুটি করে উইকেটের দেখা। বাকি উইকেটটি লুঙ্গি এনগিডির।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে এসেই বড় ইনিংসের ইঙ্গির দেন দক্ষিণ আফ্রিকার দুই ওপেনার। ডি কক মারমুখী ব্যাটিংয়ে মনোযোগী হলে টেম্বা বাভুমা দেখেশুনে খেলতে থাকেন। ১০৮ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়েন এই দুজন। বাকিরা তাদের রানের প্রবাহ ধরে রেখে খেলে গেছেন আজ।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ব্যাট হাতে নামলেই যেন অন্য মুর্তি ধারণ করেন কুইন্টন ডি কক। আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ১০৬ বল খেলে ১০৯ রান করে ক্রিজ ছেড়েছেন তিনি। এ সময় মেরেছেন পাঁচটি ছক্কা ও আটটি চারের মার।
অন্যদিকে গত ম্যাচে দ্রুততম শতক হাঁকানো আইডেন মার্করাম ৪৪ বলে করেছেন ৫৬ রান। এছাড়া আর কেউই অর্ধশতকের ইনিংস করতে পারেননি।
চলতি বিশ্বকাপ আসরের প্রথম ম্যাচের পর আজও ব্যাট হাতে স্বচ্ছন্দে খেলতে পারেননি টেম্বা বাভুমা। ব্যাটিংয়ে তার আত্মবিশ্বাসের অভাব ছিল চোখে পড়ার মতো। দেখেশুনে খেলে ইনিংস বড় করার চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত তিনি থামেন ৩৫ রানে।
১০৮ রানের মাথায় তাকে আউট করেই অস্ট্রেলিয়াকে ব্রেক থ্রু এনে দেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। ম্যাক্সওয়েলের স্লোয়ার ডেলিভারিটি ঘুরিয়ে উইকেটের পেছন দিয়ে ছক্কা হাঁকাতে গিয়েছিলেন বাভুমা। কিন্তু দুর্বল শটটি উপরে উঠে গেলে সেটি লুফে নেন ডেভিড ওয়ার্নার।
এরপর রাইলি ভান ডার ডুসেনকে সাজঘরে পাঠান অ্যাডাম জ্যাম্পা। বদলি হিসেবে ফিল্ডিং করতে নামা শন অ্যাবটের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ডুসেন। এরপর বিশ্বকাপে প্রোটিয়া উইকেটরক্ষক হিসেবে নিজের চতুর্থ সেঞ্চুরি তুলে নেন ডি কক। তবে সেঞ্চুরির পর বেশিক্ষণ উইকেটে থাকতে পারেননি তিনি। ম্যাক্সওয়েলের বলে বোল্ড হয়ে ফিরে যান তিনি।
ডি ককের বিদায়ের পর গত ম্যাচের মতোই অজি বোলারদের পিটিয়ে দ্রুত হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন মার্করাম। তবে তার কিছু পরই ৪৪ বলে ৫৬ রান করে বিদায় নেন তিনি। তার ফিরে যাওয়ার পরের ওভারেই ২৭ বলে ২৯ রান করে প্যঅভিলিয়নের পথ ধরেন হাইনরিখ ক্লাসেন।
শেষের দিকে মার্কো ইয়ানসেনকে নিয়ে ইনিংস শেষ করতে চেয়েছিলেন ডেভিড মিলার। কিন্তু শেষ ওভারের প্রথম বলে ছক্কা মারতে গিয়ে ক্যাচ হয়ে যান মিলার। সাজঘরে ফিরে যাওয়ার আগে ১৩ বলে ১৭ রান করেন তিনি। আর ইনিংসের দুই বল বাকি থাকতে ২২ বলে ২৬ রান করে আউট হন ইয়ানসেন। শেষের দুই ব্যাটার কাগিসো রাবাদা ও কেশব মহারাজ কোনো রানই করতে পারেননি। ফলে শেষমেষ ৩১১ রানের পুঁজি পায় দক্ষিণ আফ্রিকা।
বল হাতে গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ও মিচেল স্টার্ক দুটি করে উইকেট নিয়েছেন। জশ হ্যাজলউড, অ্যাডাম জ্যাম্পা ও প্যাট কামিন্স পেয়েছেন একটি করে উইকেটের দেখা।
ইনিংসের একমাত্র সেঞ্চুরিয়ান কুইন্টন ডি ককের হাতেই উঠেছে ম্যাচসেরার পুরস্কার।