মিরপুরের স্লো পিচ নিয়ে ক্রিকেট মহলে আলোচনা-সমালোচনার শেষ নেই। নিজেদের সুবিধার্থেই এমন পিচ বানিয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করে বাংলাদেশ- এমন কথাও শোনা যায় হরহামেশা। তবে মিরপুরের উইকেট যে স্লো, সেটি সবার জানা। তবে নিজেদের সেই উইকেটেই আজ কাটা পড়েছে বাংলাদেশ।
নিউজিল্যান্ডকে ২৫৪ রানে বেঁধে ফেললেও নিজেরা দুইশ’ পার করতে পারেনি লিটনবাহিনী। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে তাই হারতে হয়েছে ৮৬ রানে।
বিশ্বকাপের আগে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজটি নানা কারণেই গুরুত্বপূর্ণ। গুরুত্বপূর্ণ এ সিরিজের প্রথম ওয়ানডে ইতোমধ্যে পরিত্যক্ত হয়েছে বৃষ্টির বাধায়।
দ্বিতীয় ওয়ানডেতে জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা বেশ সতর্কভাবেই করেছিলেন তামিম ইকবাল ও লিটন দাস। প্রথম ৫ ওভারে দুজনই খেলেছেন সতর্কভাবে। ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে কাইল জেমিসনের অফ স্টাম্পের বাইরের শর্ট বল কাট করতে গেলে থার্ডম্যানে সহজ ক্যাচ পেয়ে যান রাচিন রবীন্দ্র। যদিও দীর্ঘদিন পর দলে ফিরে ৫৭ বলে ৪৪ রান করেন তামিম ও মাহমুদউল্লাহ করে ৭৬ বলে ৪৯ রান। শেষ দিকে নাসুম ২১ রান করেন। এ ছাড়া আর কোনো ব্যাটসম্যান বলার মতো কোনো রান করতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত ৮৬ রানের বড় ব্যবধানে হেরেছে টিম টাইগার্স।
নিউজিল্যান্ডের পক্ষে কাইল জেমিসন নেন ২টি এবং স্পিনার ইশ সোধি একাই নেন ৬ উইকেট। সোধিই মূলত বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনকে গুঁড়িয়ে দেন। এমন ম্যাচের পর প্রশ্ন উঠেছে- মিরপুরের কন্ডিশনে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি আদৌ হবে কি?
এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে স্বাগতিকদের বোলিং তোপের মুখে পড়ে ব্লাক ক্যাপসরা। নিউজিল্যান্ডের হয়ে টম ব্লান্ডেল সর্বোচ্চ ৬৮ রান করেন। টাইগারদের হয়ে খালেদ আহমেদ ও শেখ মেহেদী নেন তিনটি করে উইকেট।
প্রথম ওয়ানডের মতো গতকালও নতুন বলে দুর্দান্ত শুরু করেন মুস্তাফিজুর রহমান। আরেক প্রান্তে খালেদও ভালো বোলিং করেছেন। এই দুই পেসার মিলেই কিউইদের টপ অর্ডার ভেঙে দেন। টপ অর্ডার ব্যর্থতার পর আরও একবার সফরকারীদের হাল ধরেন হেনরি নিকোলস। নিউজিল্যান্ড ইনিংসের তৃতীয় ওভারে উইল ইয়াংকে সাজঘরে পাঠিয়েছেন মুস্তাফিজুর রহমান। ওভারের তৃতীয় বলে মুস্তাফিজের করা শর্ট ডেলিভারিতে কাটা পড়েন ইয়াং, ক্যাচ দেন উইকেটরক্ষক লিটনের হাতে। প্রথম ওয়ানডেতে দারুণ ব্যাট করা ইয়াং এই ম্যাচে করেছেন ৮ বলে শূন্য রান। এর পরের ওভারেই দ্য ফিজ তুলে নেন আরেক ওপেনার ফিন অ্যালনের উইকেট। মোস্তাফিজের বলে স্লিপে সৌম্য সরকারের দারুণ ক্যাচে আউট ফিন অ্যালেন। আউট হন ১৫ বলে ১২ রান করে।
বাংলাদেশের ১৪৬তম ওয়ানডে ক্রিকেটার হিসেবে অভিষেক হয়েছে পেসার খালেদ আহমেদের। মুস্তাফিজের সঙ্গে এবার উইকেট নেয়ার দৌড়ে যোগ দেন খালেদ। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে প্রথম উইকেটটি পেতে খুব একটা অপেক্ষা করতে হয়নি। অষ্টম ওভারে এসে তৃতীয় উইকেট হারিয়েছে নিউজিল্যান্ড।
দ্রুত তিন উইকেট পড়ার পর উইকেটে এসে এক প্রান্ত আগলে রাখার চেষ্টা করেছেন হেনরি নিকোলস। টম ব্লান্ডেলকে সঙ্গে নিয়ে চতুর্থ উইকেট জুটিতে দলের হাল ধরেন নিকোলস। এ দুজনের ব্যাটে ভর দিয়ে ম্যাচে ফিরেছে কিউইরা। প্রথম ৫০ রান তুলতে নিউজিল্যান্ড খরচ করেছিল ৭১ বল। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রানের গতি বাড়িয়েছে তারা। পরের ৫০ রান তুলেছে মাত্র ৫০ বলে। ২৬তম ওভারের শেষ বলে নাসুম আহমেদের ওভার পিচ ডেলিভারি লং অনে ঠেলে দিয়ে ফিফটি স্পর্শ করেন ব্লান্ডেল। পরের ওভারে একই মাইলফলকের সামনে ছিলেন নিকোলস। কিন্তু গত ম্যাচের মতো এবারও ফিফটি না পাওয়ার আক্ষেপ নিয়ে সাজঘরে ফেরেন তিনি।
উইকেটে এসেই রানের গতি বাড়ানোয় মনোযোগ দিয়েছিলেন রাচিন রবীন্দ্র। তবে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। বাকি ব্যাটারদের আসা-যাওয়ার মাঝে এক প্রান্ত আগলে রেখে ব্যাটিং করছিলেন ব্লান্ডেল। তবে ৩৪তম ওভারে হাসানের ইয়র্কার সামলাতে পারেননি। ৬৬ বলে ৬৮ রান করে হাসানের দুর্দান্ত ডেলিভারিতে বোল্ড হয়েছেন তিনি।
শেষ দিকের ব্যাটসম্যানদের ছোট ছোট জুটি বাংলাদেশের বিপক্ষে লড়াকু এক স্কোর দাঁড় করায় নিউজিল্যান্ড। অষ্টম উইকেটে কাইল জেমিসন ও ইশ সোধি যোগ করেন ৪০ বলে ৩২ রান। এরপর ২০ রান করা জেমিসনকে কট অ্যান্ড বোল্ড করেন শেখ মেহেদী। এরপর অধিনায়ক লকি ফার্গুসনের সঙ্গে ২১ রানের জুটি গড়েন স্পিনার সোধি। পরে অবশ্য আরও কয়েক ওভার স্থায়ী হয়েছে নিউজিল্যান্ডের ইনিংস। কিন্তু অলআউট থেকে রেহাই পায়নি। ৮ বলের ব্যবধানে শেষের দুই ব্যাটারকে ফিরিয়ে ২৫৪ রানে কিউইদের আটকে দেয় বাংলাদেশ।
যদিও ছোট এই লক্ষ্য তাড়া করে জিততে পারেনি টাইগাররা। বলা যায় নিজেদের পাতানো ফাঁদে নিজেরাই ধরা খেয়েছে।