একেক করে পাঁচটি, হ্যাঁ পাঁচটি শট গোল পোস্টে লেগে ফিরে আসলো রিয়াল মাদ্রিদের। আর শুরুতে গোল দিয়ে ম্যাচে টিকে থেকে শেষে চমক দেখালো বার্সেলোনা। এতেই মৌসুমের প্রথম এল ক্লাসিকো জিতে নিল কাতালানরা।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রাক-মৌসুমের ম্যাচে বার্সেলোনার কাছে তিন গোলের ব্যবধানে হেরেছে কার্লো আনচেলত্তির দল। এ নিয়ে আমেরিকার মাটিতে রিয়ালের বিপক্ষে অপরাজিতই থাকল বার্সেলোনা।
যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের এটিঅ্যান্ডটি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচটি ৩-০ গোলের ব্যবধানে জিতেছে বার্সেলোনা।
ফ্রেন্ডলি ম্যাচ হলেও দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর খেলায় যে বৈরিতা, প্রতিযোগিতা থাকা দরকার, তার কোনোকিছুরই অভাব ছিল না এ ম্যাচে। প্রতিদ্বন্দ্বিতা, গোলের সুযোগ তৈরি, উত্তেজনা, মারামারি, গোল- সবকিছু মিলিয়ে চিরায়ত এক ক্লাসিক ফুটবল উপহার দিয়েছে দুই স্প্যানিশ জায়ান্ট।
ম্যাচের শুরুটা দারুণভাবে করে বার্সেলোনা। খেলার শুরুতেই এগিয়ে যেতে পারত তারা। ম্যাচের পঞ্চম মিনিটে ডি বক্সের ভেতর থেকে কামাভিঙ্গার ক্লিয়ার করা বল বক্সের বাইরে পেয়েই জোরালো শটে লক্ষ্যভেদের চেষ্টা করেন বার্সার নতুন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার ওরিয়ল রোমেউ। শটটি রিয়ালের গোলরক্ষক থিবো কোর্তোয়াকে পরাস্ত করলেও পোস্টে লেগে ফিরে আসে। এর দশ মিনিট পর অবশ্য আর হতাশ করেনি গোলপোস্ট।
ম্যাচের ১৫তম মিনিটে ডি বক্সের ডানপাশে ফাউল থেকে ফ্রি কিক পায় বার্সেলোনা। সেটপিস থেকে ডি বক্সের সামনে পেদ্রিকে পাস দেন ম্যানচেস্টার সিটি থেকে কিছুদিন আগে বার্সায় যোগ দেয়া জার্মান মিডফিল্ডার ইলকায় গুনডোগান। প্রথম টাচেই প্রেদ্রি বক্সের মধ্যে দৌড় শুরু করা দেম্বেলেকে পাস দিলে বুলেট শটে লক্ষ্যভেদ করে বার্সার গোলের খাতা খোলেন তিনি।
এর পাঁচ মিনিট পরই অবশ্য সমতা ফেরাতে পারত রিয়াল মাদ্রিদ। ডি বক্সের মধ্যে উড়ে আসা বল হেডে ক্লিয়ার করতে গিয়ে হাতে লাগে রোনালদ আরাউহোর। ফলে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। ভিনিসিউসের শটে বার্সা গোলরক্ষক মার্ক আন্দ্রে টের স্টেগেন পরাস্ত হলেও উড়িয়ে মারা বল উপরের গোলপোস্টে লেগে ফিরে আসে। ফলে সে যাত্রায় ব্যবধান ধরে রাখতে সক্ষম হয় কাতালুনিয়ার দলটি।
ম্যাচের ৩২তম মিনিটে ডি বক্সের বাইরে ফাউল হলে ফ্রি কিক পায় রিয়াল মাদ্রিদ। সেটপিস থেকে চমৎকার এক বাঁকানো শটে দূরের পোস্ট দিয়ে লক্ষ্যভেদ করার চেষ্টা করেন রদ্রিগো। কিন্তু নিপুণ দক্ষতায় সে শট বাইরে পাঠিয়ে দেন টের স্টেগেন।
সাত মিনিট পর আবারও গোলের সুযোগ তৈরি করে রিয়াল। কিন্তু পরপর দুবার পোস্টে লেগে ফিরে আসে বল।
৪১তম মিনিটে ম্যাচের সবচেয়ে ভালো সুযোগটি পান উসমান দেম্বেলে। লেভানডোভস্কির কাউন্টার অ্যাটাক কোনোরকমে সামলান রিয়ালের ফুলব্যাক এদুয়ার্দ মদিঁ। কিন্তু ভারসাম্য রাখতে না পেরে বল তার পায়ে লেগে চলে যায় দেম্বেলের পায়ে। সামনে কোনো ডিফেন্ডার না থাকায় এগিয়ে আসেন কোর্তোয়া। একা কোর্তায়াকে পেয়েও জোরে শট নিতে গিয়ে তার গায়ে মারেন ফ্রেঞ্চ ফরওয়ার্ড। ফলে ব্যবধান ২-০ হতে হতেও হয় না।
এর কিছুক্ষণ পর রিয়ালের ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার এদের মিলিতাওকে লেট ফাউল করেন ফ্রাঙ্কি ডি ইয়ং। সঙ্গে সঙ্গে মাঠের পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। দুই দলের খেলোয়াড়রা জড়িয়ে পড়েন সংঘর্ষে। অবশ্য খুব দ্রুতই আবার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন রেফারি।
এর পর কোনোপাশেই তেমন কোনো সুযোগ তৈরি না হওয়ায় ১-০ স্কোরলাইনে বিরতিতে যায় দু’দল।
প্রথমার্ধে ম্যাচ শুরুর বিশ মিনিট বার্সেলোনা বলের দখল রেখে খেললেও পরে দাপট দেখায় রিয়াল মাদ্রিদ। একের পর এক আক্রমণে কাঁপিয়ে দেয় বার্সার রক্ষণ। তবে প্রথমার্ধে বার্সার রক্ষণ ছিল খুবই শক্ত।
বিরতির পর ফের গুছিয়ে খেলতে শুরু করে বার্সেলোনা। কিন্তু ঘণ্টা পূর্ণ হওয়ার কিছুক্ষণ আগে একটি ভালো চাল দেন কার্লো আনচেলত্তি। তরুণ দুই মিডফিল্ডার ফেদেরিকো ভালভার্দে ও এদুয়ার্দ কামাভিঙ্গাকে মাঠ থেকে উঠিয়ে নিয়ে দুই অভিজ্ঞ মিডফিল্ডার টনি ক্রুস ও লুকা মদ্রিচকে নামান তিনি। ফলে হঠাৎই মোড় ঘুরে যায় খেলার।
দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম সুযোগটি তৈরি করে রিয়াল মাদ্রিদই। ৬২তম মিনিটে ডি বক্সের বাইরে থেকে জোরালো শট হাঁকান ভিনিসিউস। বল টের স্টেগেনের হাত ফাঁকি দিয়ে চলে গেলেও পোস্টে লেগে ফিরে এসে তার পিঠে লেগে মাঠের বাইরে চলে যায়। ফলে আরও একবার হতাশ হতে হয় লস ব্লাঙ্কোসদের।
এরপর মাঝ মাঠের শক্তি বাড়ানোর পরিবর্তে অদ্ভূতভাবে অভিজ্ঞ মিডফিল্ডারদের উঠিয়ে নিয়ে এক তরুণ ও চার স্ট্রাইকার নামান বার্সা বস শাভি এরনান্দেস। ফলে মাঝমাঠে বার্সার খেলোয়াড় হয়ে যায় মাত্র দু’জন; তাও আবার রাইট ব্যাক সার্জি রবের্তো এবং বার্সার অ্যাকাডেমি থেকে নিয়ে আসা তরুণ মিডফিল্ডার ফারমিন লোপেজ।
এসময় ৪-২-৪ ফর্মেশনে খেলা বার্সেলোনা খানিকটা খেই হারিয়ে ফেলে। এদিকে আরাউহোকে উঠিয়ে নিলে ভিনিসিউসও নিজের ছন্দে ফিরে আসেন। মাঝমাঠ দখলে নিয়ে বারবার বল নিয়ে আক্রমণে উঠে আসে রিয়াল মাদ্রিদ। তবে টিম ওয়ার্কের মাধ্যমে লক্ষ্য অভেদ্য রাখেন বার্সার খেলোয়াড়রা।
ম্যাচের ৮৫তম মিনিটে চমক দেখান তরুণ ফারমিন লোপেজ। কাউন্টারে বল পেয়ে ডি বক্সের বেশ খানিকটা বাইরে থেকে দর্শনীয় শট নেন তিনি। নিপুণভাবে কোর্তোয়াকে পরাস্ত করে জালে আছড়ে পড়ে বল। এর সঙ্গে গ্যালারিতে থাকা বার্সেলোনা সমর্থকদের ওপর আছড়ে পড়ে আনন্দের ঢেউ। ম্যাচ শেষ হওয়ার মাত্র পাঁচ মিনিট আগে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায় বার্সেলোনা।
ম্যাচের নির্ধারিত সময়ের পর অতিরিক্ত সময়ের প্রথম মিনিটে আবারও ফারমিন চমক। এবার কাউন্টারে বল নিয়ে রিয়ালের তিন খেলোয়াড়ের মাথার উপর দিয়ে অসাধারণ দক্ষতায় ফেররান তোরেসকে পাস দেন তিনি। কোর্তোয়া এগিয়ে আসলে তার মাথার উপর দিয়ে বল নিয়ে ঘুরে জালে জড়িয়ে দেন ফেররান। দর্শনীয় খেলোয়াড়ি কায়দায় রিয়ালের কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকে দেন তিনি।
ফলে ৩-০ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে ক্লাসিক ম্যাচটি শেষ করে বার্সেলোনা।
প্রাক-মৌসুমের প্রথম ম্যাচটি আর্সেনালের কাছে ৫-৩ ব্যবধানে হারার পর রিয়ালের বিপক্ষে জয়ে ফিরল বার্সেলোনা। অন্যদিকে এসি মিলান ও ম্যানচেস্টার ইউনাউটেডকে হারিয়ে প্রাক-মৌসুম শুরু করলেও চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বার্সেলোনার কাছেই হেরে বসল রিয়াল মাদ্রিদ।
বুধবার বাংলাদেশ সময় সকাল নয়টায় এসি মিলানের বিপক্ষে পরবর্তী ম্যাচ খেলবে কাতালানরা। অন্যদিকে রিয়ালের পরবর্তী ম্যাচ রয়েছে ইউভেন্তুসের বিপক্ষে। বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে পাঁচটায় ম্যাচটি শুরু হবে।
আগামী ১২ আগস্ট রাত দেড়টায় আথলেতিক বিলবাউয়ের বিপক্ষে অ্যাওয়ে ম্যাচ দিয়ে লা লিগার নতুন মৌসুম শুরু করবে রিয়াল মাদ্রিদ। একদিন পর একই সময়ে গেতাফের বিপক্ষে লা লিগা শুরু করবে বার্সেলোনা। তাদের প্রথম ম্যাচটিও অ্যাওয়ে, গেতাফের স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে।