বাংলাদেশ আশা জাগিয়েছিল সাফ ফুটবলের ফাইনালে খেলার। শক্তির বিচারে এগিয়ে থাকা দল কুয়েতের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে লড়াইও চালিয়ে গেছে। কিন্তু অতিরিক্ত সময়ে সব স্বপ্ন তছনছ করে মূহুর্তে বাংলাদেশের জালে বল পাঠায় কুয়েত।
ওই এক গোলেই এবারও বাংলাদেশের বিদায়। তবে এ খেলায় বাংলাদেশ শিখেছে, ভয়কে জয় করে আত্মবিশ্বাসী হলে শক্তিশালীর সঙ্গেও সমানতালে লড়াই করা যায়।
এ হিসেবে কুয়েত জিতেছে ভাগ্যের জোরে। আর বাংলাদেশ সামনের দিনে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে নিজেদের প্রস্তুত করতে নতুন রসদ-উদ্দীপনা পেল।
বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জটাও ছিল স্বপ্নের সমান বড়। প্রতিপক্ষ যে অতিথি দুই দলের একটি কুয়েত। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ১৯২তম বাংলাদেশের চেয়ে ৫১ ধাপ এগিয়ে থাকা কুয়েত! বাস্তবতা বলছিল, এশিয়ান কাপে নিয়মিত কুয়েতের বিপক্ষে বাংলাদেশের জয়ের সম্ভাবনা ক্ষীণ।
বাংলাদেশ জেতেনি, বেঙ্গালুরুতে আজ প্রথম সেমিফাইনালে শেষ পর্যন্ত জিকো-ইসা-মোরসালিনরা হেরে গেছেন ১-০ গোলে। সেমিফাইনালেই শেষ হয়ে গেল এবারের সাফে বাংলাদেশের দুর্দান্ত যাত্রা।
কিন্তু হারের আগে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত কী দারুন লড়াই করল বাংলাদেশ!
স্কোরলাইনই কিছুটা বলে দেয় বাংলাদেশের লড়াইয়ের গল্প। বাংলাদেশের মন ভেঙে দেয়া গোলটা হয়েছে অতিরিক্ত সময়েরও যোগ করা সময়ে।
নির্ধারিত ৯০ মিনিটে কুয়েতকে রুখে দেয়ার পর অতিরিক্ত সময়েও কুয়েতের সঙ্গে লড়ে গেছে বাংলাদেশ।
লড়াইটা সমানে-সমান হওয়ার কথা ছিল না, হয়ওনি। বাংলাদেশ রক্ষণ ১২০ মিনিটের প্রায় পুরোটা জুড়েই চাপে ছিল, গোলকিপার জিকো চার-পাঁচবার বাজপাখির ক্ষীপ্রতায় দারুণ সেইভ করেছেন। কিন্তু উল্টো প্রান্তে বাংলাদেশও দারুণ কয়েকটি সুযোগ পেয়েছে, শেষ পর্যন্ত যে সুযোগগুলো দীর্ঘশ্বাসই হয়ে থাকছে।
দুই মিনিটে মোরসালিনের অবিশ্বাস্য সুযোগ মিসে শুরু আক্ষেপের গল্প ১২০ মিনিটের পর যোগ করা সময়ে একজনকে কাটিয়ে বক্সে ঢুকে সুমনের তাড়াহুড়ো করে নেয়া শটেও শেষ হলো না। দ্বিতীয়ার্ধে রাকিবের জোরাল শট বার কাঁপিয়ে ফিরে এলে আক্ষেপ বাড়ে বাংলাদেশের।
প্রথমার্ধে বল পায়ে পেলে পাসিং ফুটবল খেলার চেষ্টা করেছে বাংলাদেশ। ৪-১-২-১-২ ছকে দুই ফরোয়ার্ড রাকিব ও মোরসালিনের পেছনে সুযোগ পাওয়া জামাল ভুঁইয়া বেশ কয়েকবার পাস বাড়িয়েছিলেন দুই ফরোয়ার্ডের দিকে। কিন্তু শক্তিতে-উচ্চতায়-দক্ষতায় বেশ এগিয়ে থাকা কুয়েতি রক্ষণ সেসব সামলে নিয়েছে ভালোভাবেই।
উচ্চতা কাজে লাগিয়ে বারবার লম্বা পাসে আক্রমণে উঠেছে কুয়েত, দ্বিতীয়ার্ধে তাদের আক্রমণের তোড় সামলাতে বেশ কয়েকবার বাজপাখি হতে হয়েছে বাংলাদেশ গোলকিপার জিকোকে। বাংলাদেশ যে ৯০ মিনিট ছাড়িয়ে অতিরিক্ত সময়ে নিয়ে যেতে পেরেছে ম্যাচটা, সে কৃতিত্ব জিকোরই।
অতিরিক্ত সময়েও একই চিত্রনাট্য মেনে এগোচ্ছিল ম্যাচ, তবে আস্তে আস্তে দম হারাতে থাকা বাংলাদেশ এ সময়ে ধীরে ধীরে পিছু হটতে শুরু করেছে।
তবু অতিরিক্ত ৩০ মিনিটের প্রথমার্ধও প্রায় শেষের পথে চলে এসেছিল। প্রথমার্ধের শেষে রেফারি যোগ করা সময় ঘোষণা করেন ২ মিনিট। বাংলাদেশের কপাল পুড়েছে তখনই।
কুয়েতের মাঝমাঠ থেকে পাস আসে বাংলাদেশ বক্সের বাঁ দিকে কিছুটা ফাঁকা জায়গা পেয়ে যাওয়া ফরোয়ার্ড আবদুল্লাহর কাছে। বাংলাদেশ ডিফেন্ডার তপু বর্মন দ্রুত দৌড়ে গিয়ে তার সামনে দাঁড়ান, এরপর চার্জে না গিয়ে বলের সঙ্গে সঙ্গে পিছুও হটছিলেন।
কিন্তু এর মধ্যেই সেকেন্ডের ভগ্নাংশ সময়ে তপুর দুপায়ের ফাঁক গলে শট নিয়ে নেন আবদুল্লাহ। মাটি কামড়ানো শটটা দূরের পোস্ট দিয়ে জড়িয়ে যায় জালে। জিকোর কিছু করারই ছিল না, তপু যে তার ‘দৃষ্টিপথ’ আটকে ছিলেন! শট কখন হয়েছে, সেটা ঠিকমতো বোঝারই সাধ্য ছিল না জিকোর। যতক্ষণে বলটা দেখতে পেলেন জিকো, ততক্ষণে বল জালের খুব কাছে।
আগের দুই ম্যাচে মালদ্বীপ আর ভুটানের বিপক্ষেও আগে গোল খেয়ে বাংলাদেশ পরে ঝাঁপিয়েছে। তিনটি করে গোলও পেয়েছে।
আজ প্রতিপক্ষ আরও শক্তিশালী, সময়ও ছিল কম। তবু বাংলাদেশ ঝাঁপিয়েছে। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চেষ্টাও করেছে। কিন্তু কুয়েতই জিতল।
জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়ে ফুটবল মাঠে নতুন করে মর্যাদা পেয়েছে বাংলাদেশ। তেমনি এত কাছে গিয়েও ফাইনালের মাঠে পা রাখতে না পারায় হারার দুঃখ বেড়েছে সমর্থকদের।