বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

অ্যাথলেটিকসের চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায় দ্বারার দুর্নীতির কলঙ্ক

  •    
  • ১৫ মে, ২০২৩ ২৩:০৩

শেখ কামাল আন্তঃস্কুল ও মাদ্রাসা অ্যাথলেটিকস প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় সারা দেশের বিশ লক্ষাধিক ছাত্র-ছাত্রী। প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বে ভুয়া প্রতিযোগী পাঠিয়ে পুরো আয়োজনকে বিতর্কিত করেছেন খুলনা বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সাম্পাদক এসএম মোর্ত্তজা রশিদী দ্বারা। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য খুলনা বিভাগীয় কমিশনারকে অনুরোধ করেছেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ও বাংলাদেশ অ্যাথলেটিকস ফেডারেশন।

বিশ লক্ষাধিক ছাত্র-ছাত্রীর অংশগ্রহণে জানুয়ারিতে শুরু হয়েছিল শেখ কামাল আন্তঃস্কুল ও মাদ্রাসা অ্যাথলেটিকস প্রতিযোগিতা। বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় এই অ্যাথলেটিকস প্রতিযোগিতার ফাইনাল পর্ব অনুষ্ঠিত হয় ১৩ ও ১৪ মার্চ ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামে।

চূড়ান্ত পর্বে ভুয়া প্রতিযোগী পাঠিয়ে পুরো আয়োজনকে বিতর্কিত করেছেন খুলনা বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সাম্পাদক এসএম মোর্ত্তজা রশিদী দ্বারা। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য খুলনা বিভাগীয় কমিশনারকে অনুরোধ করেছেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ও বাংলাদেশ অ্যাথলেটিকস ফেডারেশন।

বাংলাদেশ অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ফাইনাল প্রতিযোগিতায় ১০ জন ভু্য়া অ্যাথলেট অংশ নেয়। তাদের মধ্যে খুলনা বিভাগেরই ছিল ৮ জন। বাকি দু’জন রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের।

নিয়ম অনুযায়ী, চূড়ান্ত পর্বে অংশ নেয়ার জন্য এক প্রতিযোগীকে ধারাবাহিকভাবে ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায় থেকে বিজয়ী হতে হয়।

খুলনা বিভাগ থেকে অংশ নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে কয়েকজন প্রথম বা দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছিল। তবে ভুয়া অ্যাথলেট হওয়ায় ওইদিন তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেয়া হয়নি। ফলে ৭ কোটি টাকা খরচের পুরো আয়োজনটি ভেস্তে যায়।

১০০ মিটার ‘ক’ ছাত্র গ্রুপে চূড়ান্ত পর্যায়ে প্রথম হয়েছিল মো. রামিম শেখ। খুলনা বিভাগ থেকে তাকে জাতীয় পর্যায়ে পাঠানো হলেও সে পূর্ব বিভাগীয়, জেলা বা উপজেলা পর্যায়ের কোনো অ্যাথলেটিকসে অংশ নেয়নি। নিয়মবর্হিভূতভাবে অংশ নেয়ার কারণে তার পদক বাতিল করা হয়েছে।

১৫০০ মিটার ‘খ’ ছাত্র গ্রুপে চূড়ান্ত পর্যায়ে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছিল সাখাওয়াত হোসেন। খুলনা বিভাগের হয়ে অংশ নিলেও তার বাড়ি চট্টগ্রাম বিভাগে। সেও পূর্ব বিভাগীয়, জেলা বা উপজেলা পর্যায়ের কোনো অ্যাথলেটিকসে অংশগ্রহণ করেনি। সে কারণে তার পদক বাতিল করা হয়েছে।

এছাড়া খুলনা বিভাগ থেকে গিয়ে ২০০ মিটার ‘ক’ ছাত্র গ্রুপে চূড়ান্ত পর্যায়ে প্রথম ও লং জাম্প ‘ক’ ছাত্র গ্রুপে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছিল ইফতে আহম্মেদ দীপু। লং জাম্প ‘খ’ ছাত্র গ্রুপে প্রথম স্থান অর্জন করেছিল মনিরুল মোল্যা। তাদেরও একই অভিযোগে পদক বাতিল করা হয়।

এছাড়াও খুলনা বিভাগ থেকে নিয়মবর্হিভূতভাবে রুমা খাতুনকে ৮০০ মিটার ইভেন্টে, নিশিতা কর্মকারকে ৪০০ মিটার ইভেন্টে ও রিলে ইভেন্টে একজনকে বিভাগের বাইরে থেকে অংশ নেয়ার জন্য পাঠানো হয়েছিল।

বাংলাদেশ অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের সাধারণ অ্যাডভোকেট আব্দুর রকিব (মন্টু) লিখিতভাবে এসব অভিযোগ জানিয়েছেন খুলনা বিভাগীয় কমিশনারকে। তাতে বলা হয়েছে, অ্যাথলেটিকসের চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায় বিভাগীয় ফলের ভিত্তিতে প্রথম ও দ্বিতীয় স্থান অধিকারীর নাম পাঠানোর কথা ছিল। তবে সাধারণ সম্পাদক এস এম মোর্ত্তজা রশিদী দ্বারা স্বাক্ষরিত চূড়ান্ত এন্ট্রিতে বহিরাগতদের নাম পাওয়া যায়। টিম ম্যানেজার বেনজির আহমেদ ও প্রশিক্ষক মুরাদুন ইসলাম তাদের বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে অংশ নেয়ার প্রত্যয়ন দেখাতে পারেননি। শেখ কামালের নামে আয়োজিত এই অনুষ্ঠান বিনষ্টের পাঁয়তারায় লিপ্ত ছিলেন সংশ্লিষ্টরা।

অ্যাডভোকেট আব্দুর রকিব (মন্টু) বলেন, ‘দেশের প্রতিভাদের উন্মেষণ করার জন্য আমরা যে চেষ্টা করছি তা ধুলিসাৎ করার জন্য কিছু মানুষ উঠেপড়ে লেগেছে। দেশকে পিছিয়ে দেয়ার জন্য তারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে এটা করেছে। তারা দুর্নীতি ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে।’

আয়োজকরা জানিয়েছেন, দেশের ৫০০টি উপজেলা, ৬৪টি জেলা ও ৮টি বিভাগের মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসার ২০ লক্ষাধিক শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে ১৪ জানুয়ারি শুরু হয় ‘শেখ কামাল আন্তঃস্কুল ও মাদ্রাসা অ্যাথলেটিকস প্রতিযোগিতা-২০২৩’।

প্রতিটি পর্যায়ে ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রথম ও দ্বিতীয় স্থান অর্জনকারীদের দিয়ে অনুষ্ঠিত হয় ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ের প্রতিযোগিতা। সেখান থেকে সেরাদের নিয়ে ১ থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয় জেলা পর্যায়ের খেলা। ৯ থেকে ১৩ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় বিভাগীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতা।

শ্রেণিভিত্তিক দুটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় শিক্ষার্থীরা। ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীরা ‘ক’ গ্রুপ এবং নবম ও দশম শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীরা ‘খ’ গ্রুপের হয়ে অংশ নেয় এই প্রতিযোগিতায়।

‘ক’ গ্রুপের ছাত্র-ছাত্রীরা ১০০ ও ২০০ মিটার দৌড়, হাই জাম্প ও লং জাম্পে অংশ নেয়। ‘খ’ গ্রুপের ছাত্র-ছাত্রীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ১০০, ২০০, ৪০০, ৮০০ ও ১৫০০ মিটার দৌড় এবং হাই জাম্প, লং জাম্প, ট্রিপল জাম্প, বর্শা নিক্ষেপ, শর্টপুট, ডিসকাস থ্রো ও ৪ গুণীতক ১০০ মিটার রিলেতে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘একটা অত্যন্ত সেনসিটিভ কাজে প্রতারণা করা হয়েছে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আমাকে মুখ্য সচিব জানিয়েছেন। কয়েকদিন আগে বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সভা হয়। সেখানে সাধারণ সাম্পাদক এসএম মোর্ত্তজা রশিদী দ্বারাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তবে তিনি নত হসনি। তিনি বলছেন, বিদেশেও এমন দুর্নীতি করা হয়। তাকে প্রাথমিকভাবে শো-কজ করা হয়েছে। সদুত্তর না পেলে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যাপারে তদন্ত কমিটি সুপারিশ করবে।’

বিষয়টি নিয়ে এসএম মোর্ত্তজা রশিদী দ্বারার ব্যবহৃত ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরে কল করা হলে তিনি রিসিভ করেন। বিষয়গুলো শুনে তিনি কোনো কথা না বলে কল কেটে দেন। পরবর্তীতে তার নম্বরে আরও কয়েকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত এসএম মোর্ত্তজা রশিদী দ্বারা প্রায় ১০ বছর ধরে বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সাম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি, খুলনা জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

এ বিভাগের আরো খবর