ফুটবলের মৌসুম শেষ হতে এখনও প্রায় দেড় মাস বাকি। এর মধ্যেই দলবদলের বাজারে শুরু হয়ে গেছে উত্তেজনা। এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় নাম লিওনেল মেসি।
আগামী মৌসুমে কোথায় খেলবেন আর্জেন্টাইন এই মহাতারকা, এ নিয়ে ফুটবল জগতের মানুষের ভাবনার শেষ নেই।
গতকাল ইতালির বিখ্যাত ক্রীড়া সাংবাদিক ফাব্রিৎসিও রোমানো এক টুইটে জানিয়েছেন, পিএসজিতে আর চুক্তি নবায়ন করবেন না মেসি। তার বাবা ও অ্যাজেন্ট হোর্গে মেসি ইতোমধ্যেই পিএসজি কর্তৃপক্ষকে নিজেদের সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানিয়ে দিয়েছেন। ক্লাবের খেলোয়ড়ি পরিকল্পনা পছন্দ না হওয়ায়ই মেসি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ফাব্রিৎসিও রোমানো।
তাহলে প্রশ্ন ওঠে, আগামী মৌসুমে কোথায় খেলবেন মেসি?
এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি সম্ভাবনা অপেক্ষা করছে মেসির জন্য। তার মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত তিনটি অপশন হলো তার সাবেক ক্লাব ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনা, যুক্তরাষ্ট্রে ডেভিড বেকহ্যামের ক্লাব ইন্টার মায়ামি ও সৌদি প্রো লিগের ক্লাব আল-হিলাল।
এদের মধ্যে আল-হিলাল গত ৫ এপ্রিল বিরাট অঙ্কের অর্থ অফার করেছে মেসির জন্য। আল-হিলালের অফিশিয়াল বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মেসি তাদের ক্লাবের হয়ে খেললে বছরে ৪০০ মিলিয়ন ইউরো (৪ হাজার ৬৮০ কোটি টাকা) উপার্জন করবেন।
কিন্তু মেসি আরও কয়েক বছর ইউরোপীয় ফুটবল খেলতে চান। তাই প্রস্তাবটি এখনও আলোর মুখ দেখেনি।
ইন্টার মায়ামিও বড় অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে মেসিকে দলে টানতে চায় বলে বিভিন্ন ক্রীড়া সংবাদমাধ্যম থেকে জানা গেছে। তবে তারা এখনও মেসির সাথে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক যোগাযোগ করেনি।
এদিকে বার্সেলোনাও চাইছে মেসিকে ফেরাতে। দুই মৌসুম আগে যে তিক্ত অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে মেসিকে বিদায় দিতে হয়েছে, সেই ক্ষতে প্রলেপ দেয়ার সুযোগ হাতছাড়া করতে চান না ক্লাব সভাপতি হুয়ান লাপোর্তা।
ক্লাবের আর্থিক টানাপোড়েনের মাঝে সাবেক সভাপতি জোসেপ বার্তোমেউয়ের পদত্যাগের পর ‘সভাপতি হলে মেসিকে ফেরাবেন’ বলে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েই সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।
মেসির সাবেক সতীর্থ ও বর্তমান বার্সেলোনা ম্যানেজার শাভি এরনান্দেসও আগামী মৌসুমে আর্জেন্টাইন সুপারস্টারকে বার্সায় চান। মেসিকে রেখেই তিনি আগামী মৌসুমের জন্য তার দল সাজানোর পরিকল্পনা করছেন বলে মার্কা, মুন্দো দেপর্তিভো, স্পোর্তসহ ইউরোপের একাধিক পত্রিকায় খবর হয়েছে।
স্প্যানিশ সাংবাদিকদের তথ্য অনুযায়ী, কাতার বিশ্বকাপ জেতার পর মেসিরও ইচ্ছা বার্সায় ফিরেই তার খেলোয়াড়ি জীবনের ইতি টানা। ইতোমধ্যে শাভিসহ বার্সার পরিচালনা পর্ষদের বেশ কয়েকজনের সাথে এ বিষয়ে কথাও হয়েছে তার।
স্পেনের মুন্দো সেরো রেডিওর বার্সেলোনা বিভাগের সাংবাদিক আলফ্রেদো মার্তিনেসের বরাতে বার্সেলোনার আভ্যন্তরীণ খবর প্রচারের জন্য জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব রিশাদ রহমান এক টুইটে জানিয়েছেন, বছরে মাত্র ১৩ মিলিয়ন ইউরো বেতনে ২ বছরের জন্য (১+১) মেসিকে প্রস্তাব দেবে বার্সেলোনা।
রিশাদ রহমান টুইটে লিখেছেন, ২০২৫ সালে নতুন ক্যাম্প ন্যু’র অভিষেক অনুষ্ঠানে মেসিকে বিদায় দিতে চায় ক্লাব কর্তৃপক্ষ।
তিনি আরও জানিয়েছেন, মেসিও নাকি বার্সেলোনায় ছেলেদের পুরনো স্কুলে তাদের জন্য অগ্রীম সিট বুকিং দিয়ে রেখেছেন।
কিন্তু আর্থিক সমস্যায় জর্জরিত বার্সেলোনার জন্য সমস্ত পরিকল্পনা এখনও ‘গাছে কাঁঠাল, গোঁফে তেল’ দেয়ার মতো বিষয়। কারণ সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হলে আগামী দেড় মাসের মধ্যে অনেকগুলো জটিল হিসাব মেলাতে হবে তাদের।
প্রথমত, লা লিগার ফেয়ার প্লে নীতি অনুযায়ী নিজেদের খরচের হিসাব থেকে আরও ২০০ মিলিয়ন ইউরো কমাতে হবে বার্সেলোনার। এই খরচের মধ্যে অন্যতম খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক।
কিছু খেলোয়াড় বিক্রি করে বেতনের হিসাবে ভারসাম্য আনতে পারে তারা। কিন্তু সমস্যা অন্য জায়গায়।
যেসব খেলোয়াড়দের বার্সেলোনা বিক্রি করে দিতে চায়, তাদের বেশিরভাগ দীর্ঘমেয়াদে চুক্তিবদ্ধ। কর্তৃপক্ষ চাইলেও তারা ক্লাব ছেড়ে যেতে নারাজ। আবার অনেকেই ফর্মহীনতায় ভুগছেন। ফলে দলবদলের বাজার তাদের নিয়ে অন্য ক্লাবগুলোর আগ্রহ নেই বললেই চলে।
গত মৌসুমে বেশ কয়েকজন খেলোয়াড়কে তারা ধারে অন্য ক্লাবে পাঠিয়ে বেতনে ভারসাম্য আনে। ধারের মেয়াদ শেষে তারা আবার ক্লাবে ফিরছে যা বেতন কাঠামোর সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তুলবে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তাই দলবদলের সময় খেলোয়াড় বিক্রি, বাধ্যতামূলক চুক্তি স্থগিত ও অন্য ক্লাবে ধারে পাঠানোর মাধ্যমে বার্সেলোনার বেতন সীমা নিয়ন্ত্রণে আনতেই হবে।
দ্বিতীয়ত, আগামী মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে প্রতিযোগিতা করার জন্য স্কোয়াড আরও শক্তিশালী করতে হবে বার্সেলোনার। নতুন খেলোয়াড় কিনতে টাকাও লাগবে যা এই মুহূর্তে নেই বার্সেলোনার।
এর মধ্যেও ভক্তদের জন্য আশার আলো এই যে সমস্ত পরিকল্পনা বাস্তবায়নে চেষ্টা করে যাচ্ছে হুয়ান লাপোর্তার টিম।
এর মধ্যে তারা বার্সা টিভির ৩৩ শতাংশ বিক্রি করে দিয়েছে বলে স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম থেকে জানা গেছে। দলের বেশ কয়েকজন তরুণ ও উদীয়মান খেলোয়াড় বিক্রির সিদ্ধান্তও নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
মেসিও নাকি বার্সার স্বল্প বেতনের প্রস্তাবে রাজি হয়েছেন। অবশ্য বেতনের অঙ্ক কম হলেও স্পন্সরশিপ থেকে আয়ের একটা অংশ মেসিকে দেয়া হবে বলেও পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।
রিশাদ রহমান টুইটে বলেছেন, ঘাটতির ২০০ মিলিয়ন ইউরোর ১২০ মিলিয়ন ইতোমধ্যে জোগাড় করে ফেলেছে।
সবকিছু যদি পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোয়, তাহলে মৌসুম শেষেই বার্সেলোনার জার্সিতে আবারও ক্যাম্প ন্যু মাতাতে দেখা যাবে ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় লিওনেল মেসিকে।