বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

২০২২ ঘরোয়া ক্রীড়াঙ্গন: ফুটবলে ইতিহাস আর ক্রিকেটে হতাশা

  •    
  • ১ জানুয়ারি, ২০২৩ ১৭:০৭

২০২২ সালটি বাংলাদেশের নারী ফুটবল দলের জন্য ঐতিহাসিক একটি বছর। সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। নেপালে অনুষ্ঠিত সাফ চ্যাম্পিয়নশীপে প্রথমবারের মতো শিরোপা জয়ের মাধ্যমে গোটা জাতিকে গৌরবান্বিত করে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল।

নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট জয় দিয়ে ২০২২ সাল শুরু করলেও ঘরের মাঠে ভারতের কাছে হার দিয়ে বছর শেষ করে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। তবে ওয়ানডে ক্রিকেটে নিজেদের শক্তিশালী অবস্থান প্রতিষ্ঠা করেছে টাইগাররা।

সাউথ আফ্রিকার মাটিতে প্রথম ওয়ানডে সিরিজ জয়ের মধ্যে দিয়ে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরে সাকিব-তাসকিনরা।

২০২২ সালে বাংলাদেশ দলের বড় চ্যালেঞ্জ ছিল টেস্ট এবং টি-টোয়েন্টিতে নিজেদের আরও বেশি শক্তিশালী করে তোলার। সে প্রত্যাশা পুরোপুরি পূরণ না হলেও, দুই ফরম্যাটেই উল্লেখযোগ্য উন্নতি ছিলো বাংলাদেশের। টান টান উত্তেজনার ম্যাচগুলো জয়ের দিক থেকে এখনও অনেক পিছিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট।

এক নজরে কিছু পরিসংখ্যান

এ বছর ১০টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। মাত্র একটি জিতেছে তারা। বছরের শুরুতে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট জয় ঐতিহাসিক অর্জন। এরপর আট ম্যাচে হেরেছে ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ড্র হয়েছে।

১৫টি ওয়ানডের মধ্যে ১০টিতে জয় এবং পাঁচটিতে হেরেছে বাংলাদেশ। এরমধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল প্রথমবারের মতো সাউথ আফ্রিকার মাটিতে ওয়ানডে সিরিজ জয়।

বছরের শেষ দিকে ঘরের মাঠে ভারতকে টানা দ্বিতীয়বারের মতো তিন ম্যাচের সিরিজে হারিয়েছে টাইগাররা। তবে ভালো কিছুর সঙ্গে চোখে পড়ার মতো ব্যর্থতাও রয়েছে। ২০১৩ সালের পর প্রথমবারের মতো জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজও হেরেছে লাল সবুজের প্রতিনিধিরা।

২১টি টি-টোয়েন্টি খেলে মাত্র ছয়টিতে জিতেছে বাংলাদেশ। হেরেছে ১৪টি ম্যাচে, এক ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়। টেস্টের মতো টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটেও দুর্বল ছিল টাইগারদের। ২০০৭ সালের পর নেদারল্যান্ডস ও জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মূল পর্বে হারের বৃত্ত থেকে বের হয়ছিল দলটি।

টেস্টে বাংলাদেশ পরিবর্তন নেই

নিউজিল্যান্ডের মাটিতে অবিস্মরনীয় টেস্ট জয়ের পর ভাবা হয়েছিলো টেস্ট ফরম্যাটে শক্ত দল হবে বাংলাদেশ, কিন্তু ক্রাইস্টচার্চে পরের টেস্টে নিউজিল্যান্ডের কাছে ইনিংস ও ১১৭ রানে হেরে যায় টাইগাররা।

পরবর্তীতে শ্রীলঙ্কা, সাউথ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ভারতের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ হারে বাংলাদেশ।

টেস্ট অধিনায়কত্ব ছাড়েন মুমিনুল

২০১৯ থেকে ২০২২ পর্যন্ত মোমিনুলের অধীনে ১৭ টেস্টে মাত্র তিনটি জয় পায় বাংলাদেশ। টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে মুমিনুল হকের ভাগ্য নির্ধারণের জন্য যা যথেষ্টই ছিল। এছাড়া ব্যাট হাতে বাজে পারফরমেন্সের কারণে শেষ পর্যন্ত অধিনায়কের পদ থেকে সরে দাঁড়াতে হয় বাংলাদেশের সেরা টেস্ট এ ব্যাটারকে।

টেস্ট অধিনায়কত্ব পান সাকিব

মুমিনুলের পদত্যাগে টেস্ট দলের অধিনায়কত্ব দেয়া হয় সাকিব আল হাসানকে। এর আগেও টেস্ট অধিনায়ক ছিলেন সাকিব। ম্যাচ ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব আইসিসিকে না জানানোয় সাকিব নিষিদ্ধ হওয়ায় ২০১৯ সালে অধিনায়কের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল মুমিনুলকে।

সিনিয়দের অবসর

টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট থেকে তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিম অবসর নেন ২০২২ সালে। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে এই ফরম্যাট থেকে বাদ দেয়া হয়। সিনিয়রদের মধ্যে শুধুমাত্র সাকিব আল হাসান দলে জায়গা ধরে রাখেন।

টি-টোয়েন্টি দলকে গড়ে তোলার জন্য অধিনায়কত্বের দায়িত্ব দেয়া হয় সাকিবকে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৩-০ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজ জয়ে নেতৃত্ব দেয়ার পর টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট থেকে অবসর নেন তামিম। নিজের অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজে পোস্ট দিয়ে অবসরের ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি। তামিম লিখেন, ‘আজ থেকে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে আমাকে সাবেক হিসেবে বিবেচনা করুন। সবাইকে ধন্যবাদ।’

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ঠিক আগে অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপের পর সংক্ষিপ্ত ভার্সন থেকে অবসর নেন আরেক সিনিয়র ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম।

টি-টোয়েন্টিতে মাহমুদুল্লাহর পারফরমেন্সও ছিলো হতাশাজনক। বিশ্বকাপের দল থেকে বাদ পড়তে হয়েছিল তাকে।

নারী ক্রিকেটারদের ২০২২ সাল

বছরটি নারী ক্রিকেটারদের জন্য ছিল অম্লমধুর। প্রথমবারের মতো ওয়ানডে বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল। ওয়ানডে বিশ্বকাপে প্রথমবারের মত খেলতে নেমে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৯ উইকেটের ঐতিহাসিক জয় পেয়েছিল নারী দল। তবে পরের সব ম্যাচেই হারে তারা।

নারী দল ১০টি ওয়ানডে খেলে সাতটিতে হার ও একটিতে জিতে। দু’টি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়েছিল। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে রেকর্ড ভালো ছিল জ্যোতিদের। ১৭ ম্যাচে ১০টি জয় ছিল।

বছরের শেষ দিকে, নিউজিল্যান্ড সফরে তিন ম্যাচের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ৩২ রানে অলআউট হয় নারীরা। সিরিজের পরের দুই ওয়ানডেও হারে দলটি। এশিয়া কাপ টি-টোয়েন্টির শিরোপা ধরে রাখতে পারেনি। স্বাগতিক হওয়া সত্বেও বছর টুর্নামেন্টে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিতে হয়েছিল বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলকে।

বর্ষসেরা খেলোয়াড় লিটন দাস

ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটে বাংলাদেশের হয়ে পুরো বছরই দারুণ ছন্দে ছিলেন লিটন দাস। তার কোন প্রতিন্দ্বন্দিই ছিলো না। ক্রিকেটের সব ফরম্যাটে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী লিটন।

বছরের শেষের দিকে আইসিসি টেস্ট র‌্যাংকিংয়ে ১২ তম স্থানে জায়গা নেনলিটন। যা এখন পর্যন্ত একজন বাংলাদেশি ব্যাটারের সেরা র‌্যাংকিং। বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটার হিসেবে শীর্ষ ১০ এ জায়গা করে নেয়ার দ্বারপ্রান্তে লিটন। এ বছর তিনটি ফরম্যাটে ১৯২১ রান করেছেন তিনি। যা বাংলাদেশি ব্যাটারদের মধ্যে যে কোন বর্ষপঞ্জিতে সর্বোচ্চ এবং ২০২২ সালে বাবর আজমের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।

বাংলাদেশের হয়ে ওয়ানডেতে (৫৭৭), টি-টোয়েন্টিতে (৫৪৪) ও টেস্ট (৮০০) অর্থাৎ তিন ফর্মেটেই সর্বোচ্চ রান করেছেন লিটন। প্রতিটি পঞ্চাশোর্ধ ইনিংসও তার।

সেরা সাফল্য নারী সাফ জয়

২০২২ সালটি বাংলাদেশের নারী ফুটবল দলের জন্য ঐতিহাসিক একটি বছর। নেপালে অনুষ্ঠিত সাফ চ্যাম্পিয়নশীপে প্রথমবারের মতো শিরোপা জয়ের মাধ্যমে গোটা জাতিকে গৌরবান্বিত করে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল।

২০১৬ সালের পর সাফে এটি ছিল গোলাম রবাবানি ছোটনের শিষ্যদের দ্বিতীয় প্রচেস্টা। সেপ্টেম্বরে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর দশরথ রঙ্গশালায় অনুষ্ঠিত টুর্নামেন্টের ফাইনালে চার বারের রানার আপ স্বাগতিক নেপালকে ৩-১ গোলে হারিয়ে শিরোপা নিশ্চিত করে বাংলাদেশের মেয়েরা।

এর আগে পাঁচ বারের টানা চ্যাম্পিয়ন ভারতকে হারিয়ে ফাইনালে পৌঁছেছিল নেপাল। ফলে টুর্নামেন্টের ষষ্ঠ আসরে এসে আবসান ঘটে ভারতীয় নারীদের একচেটিয়া রাজত্বের।

শিরোপা জয়ের পাশাপাশি টুর্নামেন্টের সবগুলো পুরস্কারও জিতে নেয় বাংলাদেশের ফুটবলাররা। টাইগ্রেস অধিনায়ক ‘গোল মেশিন’ খ্যাত সাবিনা খাতুন টুর্নামেন্টের ভেল্যুয়েবল প্লেয়ার পুরস্কার জিতেন।

হকি

প্রথমবারের মতো আকর্ষনীয় ফ্র্যাঞ্চাজি টুর্নামেন্ট হকি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি আয়োজনের মাধ্যমে বছরটি বেশ জাঁকজঁমকভাবে শেষ করেছে বাংলাদেশ হকি ফেডারেশন। এই টুর্নামেন্টের মাধ্যমে নতুন এক যুগে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশের হকি।

প্রথমবারের মতো আয়োজিত এই টুর্নামেন্টের শিরোপা জয় করেছে একমি চট্টগ্রাম। মওলানা ভাসানী হকি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত রোমঞ্চকর ফাইনালে মোনার্ক মার্ট পদ্মাকে হারিয়ে শিারোপা জয় করে একমি চট্টগ্রাম।

আরচারি

চলতি বছর তুরস্কের কোনিয়ায় ৫৫ দেশের অংশ গ্রহণে অনুষ্ঠিত ৫ম ইসলামিক সলিডারিটি গেমসে আরচারিতে তিনটি পদক জিতে বাংলাদেশ।

গেমসে রোকসানা আকতার, শ্যামলী রায় ও পুস্পিতা জামানকে নিয়ে গঠিত বাংলাদেশ মহিলা কম্পাউন্ড দল রৌপ্য পদক জয় করে।

এছাড়া রিকার্ভের পদক নির্ধারনী ম্যাচে দিয়া সিদ্দিকী, নাসরিন আকতার ও বিউটি রায়ের সমন্বয়ে গঠিত বাংলাদেশ নারী দল ৬-২ সেট পয়েন্টে উজবেকিস্তানের আবদুসসাত্তোরোভা জিওদাখন, আবদুসসাত্তোরোভা জেবিনিসো এবং হামরোয়েভা নিলুফারকে হারিয়ে ব্রোঞ্জ পদক জয় করে।

এ বিভাগের আরো খবর