এক কিংবদন্তি লিওনেল মেসির বিশ্বকাপ জয়ের পর আরেক কিংবদন্তির চিরবিদায় ছিল গত বছরের শেষ দুটি আলোচিত ঘটনা। ক্রীড়াঙ্গনের এই দুটি ঘটনা তরতাজা হলেও বছরের শুরুর অনেক আলোচিত গল্প আছে, যা অনেকের স্মরণে নেই। ২০২২ সাল শেষ করে নতুন বছরে পদার্পণ করার দিনে বেশ কিছু আলোচিত ঘটনা পাঠকদের আবারও মনে করিয়ে দেয়া যাক।
জকোভিচের নির্বাসন
করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন দিতে অস্বীকৃতি জানানোর কারণে জানুয়ারিতে মেলবোর্নে গিয়েও অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে কোর্টে নামতে পারেননি ওই সময়ের বিশ্বের এক নম্বর খেলোয়াড় নোভাক জকোভিচ।
দেশটির আইন অনুযায়ী টিকা না নেয়ায় সার্বিয়ান এ তারকা চেষ্টা করেও শেষ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে খেলতে পারেননি। মেলবোর্নে যাবার পর তার ভিসা বাতিল করা হয়। হোটেলে বন্দি অবস্থায় কাটাতে হয়েছে বেশ কয়েকদিন।
একই কারণে তিনি ফ্রেঞ্চ ওপেন থেকেও নিজের নাম প্রত্যাহার করেন। জুলাইয়ে লন্ডনে গিয়ে ঠিকই সপ্তমবারের মতো উইম্বলডনের শিরোপা জিতে নেন।
২০২৩ সালে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে অংশ নেবার ব্যাপারে সবুজসংকেত পেয়েছেন জকোভিচ। এর মাধ্যমে তিনি ক্যারিয়ারের ২২তম গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের লক্ষ্য নিয়ে কোর্টে নামবেন।
শেন ওয়ার্নের মৃত্যু
মার্চে থাইল্যান্ডের এক বিলাসবহুল অবকাশ কেন্দ্রে মৃত্যু হয় অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তি স্পিনার শেন ওয়ার্নের। ৫২ বছর বয়সী ওয়ার্ন হার্ট অ্যাটাকে মারা যান। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে টেস্টে ৭০৮ উইকেট পাওয়া ওয়ার্ন ৯০ দশকে লেগস্পিন শিল্পকে নতুন জীবন দেন।
আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারকে বিদায় জানিয়ে ধারাভাষ্যকার হিসেবে নতুন জীবন শুরু করেছিলেন। তার মৃত্যুর পর বাবা কিথ ওয়ার্ন বলেছিলেন, ‘শেনকে ছাড়া ভবিষ্যৎ দেখা অকল্পনীয়। কিন্তু একটি বিষয় আমাদের স্বস্তি দেয় যে ৫২ বছর ৫ মাস ১৯ দিন বয়সে শেন অনেক সম্মান পেয়েছে, অনেক কৃতিত্ব অর্জন করেছে। যা হয়তো অনেকে কল্পনাই করতে পারে না।’
রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা
ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনের ওপর সামরিক আগ্রাসনের কারণে রাশিয়া ও এর মিত্র বেলারুসের ওপর বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনের নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয়। বিশ্বকাপ ফুটবলের বাছাইপর্ব থেকে রাশিয়াকে নিষিদ্ধ করা হয়। অ্যাথলেটিক্সেও বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে তাদের কোনো খেলোয়াড়কে অংশ নিতে দেয়া হয়নি। উইম্বলডন থেকে দুই দেশের খেলোয়াড়দের নিষিদ্ধ করা হয়।
চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে বিশৃঙ্খলা
গত ২৮ মে প্যারিসের স্তাদে দি ফ্রান্সে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদের মুখোমুখি হয় লিভারপুল। সে ম্যাচে লিভারপুলের সমর্থক মাঠে প্রবেশ করতে পারেনি। তাদের কাছে টিকিট থাকা সত্ত্বেও বিশৃঙ্খল পরিবেশে তাদের স্টেডিয়ামে ঢোকা কষ্টসাধ্য ছিল।
কার্যত টিকিট না থাকা বেশ কিছু উচ্ছৃঙ্খল সমর্থক জোর করে অবৈধভাবে স্টেডিয়ামে প্রবেশ করতে গিয়ে সমস্যার সৃষ্টি হয়। পরবর্তী সময়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ রাস্তা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। আয়োজক ও নিরাপত্তায় নিয়োজিত প্রধানকে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে।
ফেডেরার ও সেরিনার বিদায়
টেনিসকে গত বছর বিদায় জানিয়েছেন দুই অন্যতম সেরা তারকা রজার ফেডেরার ও সেরিনা উইলিয়ামস। দীর্ঘদিনের হাঁটুর ইনজুরি কাটিয়ে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠতে না পারায় ৪১ বছর বয়সী ফেডেরার সেপ্টেম্বরে অবসরের ঘোষণা দেন।
তিনি ২০টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয় করেছেন, যা ইতোমধ্যেই পেরিয়ে গেছেন তার দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বী রাফায়েল নাদাল ও নোভাক জকোভিচ। পুরো ক্যারিয়ারে ফেডেরার ১০৩টি শিরোপা জিতেছেন ও প্রাইজমানি হিসেবে পেয়েছেন ১৩ কোটি ডলার।
ইউএস ওপেনে খেলতে এসে টেনিসকে বিদায় জানানোর সময় সেরিনা ‘অবসর’ শব্দটি বলেননি। ৪১ বছর বয়সী এই আমেরিকান তারকা জানান তিনি টেনিস থেকে দূরে চলে যাচ্ছেন।
২৩টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম বিজয়ী সেরেনা টানা ৩১৯ সপ্তাহ র্যাঙ্কিংয়ের নাম্বার ওয়ান পজিশনে ছিলেন।
মেসির ফাইনাল ফ্যান্টাসি
লিওনেল মেসির নেতৃত্বে ৩৬ বছরের শিরোপা কাটায় আর্জেন্টিনা। বিশ্বকাপের ফাইনালে পেনাল্টি শুট আউটে ফ্রান্সকে ৪-২ গোলে পরাজিত করে মরুর বুকে শিরোপা উঁচিয়ে ধরে স্কালোনির শিষ্যরা।
মেসির অসাধারণ নৈপুণ্য তাকে টুর্নামেন্ট সেরা ট্রফি গোল্ডেন বলের পুরস্কার দেয়া হয়। বিশ্বকাপ জয়ে আর্জেন্টিনাকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয়ায় পেলে ও দিয়েগো ম্যারাডোনার সঙ্গে সর্বকালের সেরা খেলোয়াড়ের তালিকায় জায়গা পেয়েছেন তিনি।
পেলের মৃত্যু
বছরের শেষটা হয়েছে বিষাদময়। ৮২ বছর বয়সে ব্রাজিলের সাও পাওলোর আলবার্ট আইনস্টাইন হাসপাতালে মারা যান পেলে। কোলন ক্যানসারে আক্রান্ত পেলে নভেম্বরের শেষ দিকে হৃদযন্ত্রের সমস্যা ও শরীর ফুলে যাওয়ায় সাও পাওলোর হাসপাতালে ভর্তি হন। চিকিৎসা কাজ না করায় তাকে প্যালিয়েটিভ কেয়ারে রাখা হয়েছিল, তবে শেষ লড়াইটা জিততে পারেননি তিনি।
১৯৫৮, ১৯৬২ ও ১৯৭০ বিশ্বকাপজয়ী এদসন অরান্তেস দো নাসিমেন্তো নামেই পরিচিত ছিলেন পেলে। ৩টি বিশ্বকাপ জয়ের এই নায়ক করেছেন হাজারের ওপরে গোল। বর্তমান ব্রাজিলের সমার্থক ‘জোগা বোনিতো’ বা সুন্দর খেলার প্রবর্তক ছিলেন তিনি।