বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘আকাশ থেকেও ঝরেছে অশ্রু’

  •    
  • ৩০ ডিসেম্বর, ২০২২ ০২:২৭

৩৭ বছরের পেলের বিদায়ী ম্যাচ হয়েছিল নিউ জার্সির জায়ান্টস স্টেডিয়ামে। প্রায় ৮০ হাজার দর্শকের পাশপাশি বিশ্বজুড়ে লাইভ টেলেকাস্ট দেখেছিলেন কোটিভক্ত। হয়তো বিশেষ এ ম্যাচে চোখ রেখেছিল প্রকৃতিও। কারণ ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে শুরু হয় ঝুম বৃষ্টি। যে প্রসঙ্গে পরদিন পত্রিকার ঐ শিরোনাম।

১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর, ব্রাজিলের অন্যতম প্রধান একটি দৈনিকের শিরোনাম ছিল ‘আকাশ থেকেও ঝরেছে অশ্রু’। যে প্রসঙ্গে শিরোনামটি লেখা হয়েছে সেটি ছিল আগের দিন হয়ে যাওয়া একটি ফুটবল ম্যাচ। আগের দিন অর্থাৎ ১ অক্টোবর নিউ ইয়র্ক কসমস বনাম সান্তোসের ম্যাচে শেষবারের মতো ফুটবল খেলতে নামেন পেলে।

৩৭ বছরের পেলের বিদায়ী ম্যাচ হয়েছিল আমেরিকার নিউ জার্সির জায়ান্টস স্টেডিয়ামে। প্রায় ৮০ হাজার দর্শকের পাশপাশি বিশ্বজুড়ে লাইভ টেলেকাস্ট দেখেছিলেন কোটিভক্ত। হয়তো বিশেষ এ ম্যাচে চোখ রেখেছিল প্রকৃতিও। কারণ ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে শুরু হয় ঝুম বৃষ্টি। যে প্রসঙ্গে পরদিন পত্রিকার ঐ শিরোনাম।

৪৫ বছর আগের ওই শিরোনাম হয়তো আজ ব্যবহার করার সময় এসেছে। কয়েক ঘণ্টা আগে (ব্রাজিলের তারিখ ২৯ ডিসেম্বর) বিদায় নিয়েছেন ফুটবল সম্রাট। এবারে শুধু মাঠ ছেড়ে নয়, ৮২ বছর বয়সে চির বিদায় জানিয়েছেন পুরো পৃথিবীকে।

পেলের বিদায়ের সঙ্গে শেষ হয়ে গেছে ফুটবলের সবচেয়ে বর্নাঢ্য ও সফল অধ্যায়। ১৯৪০ সালের ২৩ অক্টোবর ব্রাজিলের ত্রেস কোরাসোয়েস শহরে জন্ম তার। ছেলেবেলা থেকেই অন্যসব ব্রাজিলিয়ানের মতো তার ঝোঁক ছিল ফুটবলের দিকে।

তবে মাথায় ফুটবলের পোকা ঢুকে যায় ১৯৫০ সালে। ওই বছর ব্রাজিলিয়ানদের কাছে অভিশপ্ত। কারণ নিজ মাঠ মারাকানায় ২ লাখ স্বাগতিক ভক্তের সামনে ব্রাজিল উরুগুয়ের কাছে হেরে গিয়েছিল বিশ্বকাপ ফাইনাল। ‘মারাকানাজ্জো’ নামের সেই ফাইনাল হারের ব্যাথা আজও পোড়ায় ব্রাজিলিয়ানদের।

ওই ফাইনাল দেখে ১০ বছরের পেলের সামনে কেঁদেছিলেন তার ফুটবলার বাবা দনদিনিয়ো। বাবাকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে ছোট্ট এদসন বলেছিল ব্রাজিলকে সে নিজেই বিশ্বকাপ এনে দেবে!

ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা আর বিশ্বকাপ জয়ের নেশাকে পায়ের জাদুতে পরিণত করতে খুব বেশি সময় নেননি এদসন। স্কুলে থাকতেই তার প্রতিভার সঙ্গে পরিচয় হয় সবার। স্কুলে থাকতে তিনি পেয়ে যান অমর হয়ে যাওয়া নাম ‘পেলে’।

ব্রাজিলের লিগের বড় দল ভাস্কো দা গামার গোলকিপার বিলের সঙ্গে গড়নে মিল থাকায় স্কুলে বন্ধুরা তাকে ডাকা শুরু করে বিলে বলে। বিলে থেকে দ্রুত তার নাম হয়ে যায় পেলে। হারিয়ে যায় মা-বাবার দেয়া নাম এদসন।

Eterno. pic.twitter.com/N912VpCmVK

— Santos FC (@SantosFC) December 29, 2022

১৪ বছর বয়সে সাও পাওলোর শহর বাউরুর স্থানীয় ক্লাবে খেলতে খেলতে নজর কাড়েন কোচের। কোচ তাকে নিয়ে যান বিখ্যাত সান্তোস ক্লাবে।

সেখান থেকেই শুরু। ১৫ বছর বয়সে সান্তোসের হয়ে পেশাদার ফুটবলে অভিষেক। ১৭ বছর বয়সে ১৯৫৮ সালের বিশ্বকাপ জয়।

বাকিটা ফুটবল ইতিহাসেরই অংশ। একের পর এক গোল করেছেন, শিরোপা জিতেছেন, দলকে জিতিয়েছেন। ছোটবেলায় বাবাকে করা প্রতিজ্ঞা রাখতে একটা শুধু নয়, একে একে জিতেছেন তিনটি বিশ্বকাপ।

সারাজীবন ব্রাজিলের একটি ক্লাবের হয়েই খেলেছেন পেলে। ইউরোপ ও অন্যান্য লিগ থেকে বহু অফার থাকলেও সান্তোসের জার্সিতে কাটিয়েছে ১৯৫৬ থেকে ১৯৭৮-১৮ বছর।

ক্যারিয়ার শেষ করেন ২ বছর আমেরিকার ফুটবল লিগের নিউ ইয়র্ক কসমসের হয়ে খেলে। ক্যারিয়ারে করেছেন ১২৭৯ গোল। জিতেছেন ৬টি লিগ শিরোপা, ২টি কোপা লিবার্তাদোরেস।

ফিফার দৃষ্টিতে পেয়েছেন শতাব্দীর সেরা ফুটবলারের সম্মান। টাইম ম্যাগাজিনের দৃষ্টিতে ছিলেন শতাব্দীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ১০০ জনের একজন।

এত এত অর্জনের পাশাপাশি পেলেকে ফুটবল ভক্তরা মনে রাখবেন ব্রাজিলের ফুটবলকে নান্দনিকতা ও শিল্পের মোড়কে জড়ানোর কারিগর হিসেবে। ৬০-এর দশকে তার খেলা থেকেই প্রচলিত হয় ‘জোগা বোনিতো’ বা সুন্দর খেলার। ফুটবলকে তিনি নিজেও বলতেন ‘দ্য বিউটিফুল গেইম’।

ফুটবল মাঠে বল নিয়ে গোল করলেই হবে না, খেলা হতে হবে জাদুকরী ও মনোমুগ্ধকর। এটাই ছিল পেলের মূলমন্ত্র। যতদিন খেলেছেন ‘বিউটিফুল গেইম’ উপহার দিয়ে গেছেন ভক্তদের।

তার জার্সি থেকেই ফুটবলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে ১০ নম্বর। পেলে না থাকলে হয়তো ১০ নম্বরে খেলতেন না ম্যারাডোনা, জিকো, জিদান, মেসির মতো গ্রেটরা।

The king of football has left us but his legacy will never be forgotten. RIP KING 💔👑… pic.twitter.com/F55PrcM2Ud

— Kylian Mbappé (@KMbappe) December 29, 2022

তার মৃত্যুর শোক ছুঁয়ে গেছে পুরো বিশ্বকে। একে একে শোকবার্তা পাঠিয়েছেন মেসি, নেইমার, এমবাপে থেকে শুরু করে বিশ্বসেরা তারকারা।

বছর দুয়েক আগে আরেক কিংবদন্তি ডিয়েগো ম্যারাডোনার মৃত্যুর পর, পেলে তার শোকবার্তায় লিখেছিলেন, ‘একদিন তোমার সঙ্গে স্বর্গে ফুটবল খেলব’।

সে দিনটা যে এত তাড়াতাড়ি চলে আসবে সেটা বোধহয় খোদ ম্যারাডোনাও স্বর্গে বসে ভাবেননি।

এ বিভাগের আরো খবর