কাতার ফুটবল বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচে মুখোমুখি আর্জেন্টিনা-ফ্রান্স। সেমিফাইনালের ম্যাচ ছাড়া বিশ্বকাপের শুরু থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বড় পর্দায় খেলা দেখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ফাইনাল ম্যাচ ঘিরে ক্যাম্পাসে সেই আয়োজনের কলেবর আরও বেড়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, মুহসীন হল মাঠ এবং ডাস চত্বরে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহযোগিতায় মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান নগদ খেলা দেখানোর আয়োজন করেছে।
ইতোমধ্যে দর্শকেরা খেলা দেখানোর স্থলের দিকে আসতে শুরু করেছে। তবে গল্প করতে করতে আসা দুই আর্জেন্টাইন সমর্থকের কথায় থমকে যেতে হলো। আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে বাইশ বছর বয়সী এক তরুণ সঙ্গে থাকা বন্ধুকে বলছেন- ‘আজ আমার প্রত্যাশা মেসি কান্না করুক।’
গায়ে আর্জেন্টিনার জার্সি। অথচ তিনি চাচ্ছেন মেসি কান্না করুক। এ কেমন প্রত্যাশা!
কাছে গিয়ে জানা গেল এই তরুণের নাম আরমান হোসেন। থাকেন পুরান ঢাকায়। কেন এমন প্রত্যাশা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আজ আর্জেন্টিনা হেরে গেলে মেসি বিষণ্ন মনে কেবলই আকাশের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকবেন। বেদনায় তার চোখের পানি শুকিয়ে যাওয়ার কথা। কান্না আসবে না। আর আর্জেন্টিনা জিতে গেলে খুশিতে নিশ্চিতভাবেই কাঁদবেন মেসি। আমি সেই কান্নাটা দেখতে চাই। মেসির খুশির কান্না।’
ফাইনাল ম্যাচ দেখতে রোববার সন্ধ্যা ৭টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ভিড় জমান দর্শকরা। ছবি: নিউজবাংলাপ্রত্যাশা জানতে চাইলে আর্জেন্টিনার আরেক সমর্থক নুরুল হোসাইন বলেন, ‘আমরা যারা তরুণ তারা কিন্তু আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ হাতে নেয়াটা দেখিনি। সুযোগ এসেছে প্রিয় দলের হাতে বিশ্বকাপ দেখার। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আজ আর্জেন্টিনার সবাই তাদের সর্বোচ্চটা দিয়ে খেলে বিশ্বকাপ জয় করবে।’
সিদ্দিক ফারুক নামের আর্জেন্টাইন সমর্থক এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ফ্রান্স শক্ত প্রতিপক্ষ। ২০১৮ সালে রাউন্ড ১৬তে আমরা তাদের কাছে হেরেছি। তবে সেই সময়ের আর্জেন্টিনা শিবির থেকে এই সময়ের শিবিরে অনেক পরিবর্তন এসেছে। সে হিসেবে আমরা বলতেই পারি যে আর্জেন্টিনা জিতবে।’
‘অন্তত ব্রাজিলের সমর্থকদের খোঁচা থেকে বাঁচতে হলেও আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপটা জয় করা চাই।’ হেসে যোগ করেন তিনি।
আর্জেন্টিনা-ফ্রান্স ফাইনাল ম্যাচ। সেই মহারণ দেখতে ব্রাজিলের জার্সি গায়ে এক তরুণকে ভুভুজেলা হাতে মুহসীন হলের মাঠের দিকে যেতে দেখা যায়।
আজকের ম্যাচে ব্রাজিলের জার্সি গায়ে কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি ব্রাজিলের সমর্থক। কিন্ত আজকে আর্জেন্টিনার হয়ে চিল্লাচিল্লি করব। চূড়ান্ত পর্বের লড়াইয়ে আমরা যেহেতু নেই, তাই আমার চাওয়া- এবারের কাপটা মেসির হোক। কারণ এটিই মেসির শেষ....।’
ব্রাজিল সমর্থকের এই কথা শেষ না হতেই পাশে থাকা এক আর্জেন্টিাইন সাপোর্টার তাকে থামিয়ে দেয়।
এদিকে এই ম্যাচ ঘিরে আর্জেন্টাইন সমর্থকদের মাঝে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। যদিও ক্যাম্পাসে ফ্রান্সের জার্সি গায়ে কাউকে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়েছে।
নাদিম নাহাম নামে এক আর্জেন্টিনা সমর্থকের দাবি, ‘ফ্রান্সের সাপোর্টার খুব কম। যা আছে সব হাইব্রিড। জার্মানি, পর্তুগাল ও ব্রাজিলের সাপোর্টাররাই আজকে আর্জেন্টিনার হার দেখতে ফ্রান্স সমর্থকের ছদ্মবেশে থাকবে।’
এদিকে এই খেলা দেখানোকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ভ্রাম্যমাণ কিছু দোকান বসে গেছে। তারা ভ্যানে করে বা হেঁটে আর্জেন্টিনার পতাকার আদলে তৈরি ঘাড় বন্ধনি, আর্জেন্টিনার জার্সি আর ভুভুজেলা বিক্রি শুরু করেছে। অনেকেই তাদের কাছ থেকে এসব পণ্য কিনছে।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থীকে দেখা গেছে, তারা দোকানিদের অনুরোধ করছেন যেন ভুভুজেলা বিক্রি না করে। যারা কিনছেন তাদের অনুরোধ তারা করছেন যেন তারা ভুভুজেলা বাজানো ছাড়া উৎসব করেন।
তাদের একজন ফারহান আহমেদের কাছে এমন অনুরোধে কারণ জানতে চাইলে বলেন, ‘আজ ফাইনাল ম্যাচ। সবাই আনন্দ করবে, উৎযাপন করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু উচ্চ শব্দে ভুভুজেলা বাজিয়ে উৎসব করাটা অস্বস্তিকর। প্রচণ্ড শব্দ দূষণ হয়।
‘রাস্তার পাশে কয়েকটি ছাত্রী হল আছে। তাদের অনেকের আবার কাল পরীক্ষা। এসব ভুভুজেলার কারণে রুমের দরজা বন্ধ করেও শব্দ আটকানো দুষ্কর। এতে অনেকের কানে সমস্যা হচ্ছে। পড়ার পরিবেশও নষ্ট হচ্ছে। তাই আমরা কয়েক বন্ধু মিলে ভুভুজেলা না বাজানো ও বিক্রি না করার অনুরোধ করছি।