টি-টোয়েন্টি খেলা যদি নাটকীয় হয়, তাহলে তার সর্বোচ্চটা মঞ্চস্থ হলো মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে। ১৫৯ রান তাড়া করতে নেমে ৩১ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলা ভারত অবিশ্বাস্যভাবে চির প্রতিদ্বন্দ্বীকে হারিয়ে দারুণ শুরু করল বিশ্বকাপ।
১৬০ রান তাড়া করতে নামা ভারতের শেষ ওভারে দরকার ছিল ১৬ রান। বল করার দায়িত্বে পাকিস্তানের স্পিনার মোহাম্মদ নাওয়াজ। প্রথম বলে হার্দিক পান্ডিয়া ফিরে যাওয়ার পর ক্রিজে আসেন দিনেশ কার্তিক। কার্তিক সিঙ্গেল নেয়ার পর ম্যাচ শেষ করার সুযোগ পান কোহলি।কোহলি নাওয়াজের তৃতীয় বল থেকে নেন দুই রান। শেষ ৩ বলে ১৩ রানের সমীকরণের সময় স্কয়ার লেগ দিয়ে ছক্কা হাঁকান কোহলি। নাওয়াজের ওই বলটিকে নো কল করেন অনসাইডের আম্পায়ার।
তিন বলে টার্গেট নেমে আসে ছয় রানে। ফ্রি হিটের প্রথম বলে নাওয়াজ করেন ওয়াইড। ওভারের চতুর্থ বলে ভিরাট বোল্ড হলেও তিনি আর কার্তিক দৌড়ে তিন রান নেন।
১৯তম ওভারের শেষ দুই বলেই ছক্কা হাঁকান ভারতের ব্যাটার ভিরাট কোহলি। ছবি: এএফপি
শেষ দুই বলে ভারতের প্রয়োজন ২ রান। কিন্তু স্নায়ুচাপের কাছে হেরে বসেন স্ট্রাইকে থাকা কার্তিক। অভিজ্ঞ এ ব্যাটার নাওয়াজের বলে সিঙ্গেল নিতে গিয়ে স্টাম্পড হন।
এক বলে যখন দুই রান দরকার তখন নাওয়াজ আবার ভুল করে বসলেন। ব্যাটার রভিচন্দ্রন আশউইনকে রান নেয়া থেকে বিরত রাখতে গিয়ে করে বসলেন ওয়াইড।স্কোর তখন দুই দলের সমান। আশউইন এরপর শেষ বলে মিড অনের ওপর দিয়ে এক রান নিয়ে নিশ্চিত করলেন জয়।
৫৩ বলে ৮২* রানের অনবদ্য ইনিংস খেলে ম্যাচ সেরা হয়েছেন কোহলি। আর কোহলিকে যোগ্য সঙ্গ দেয়া হার্দিক পান্ডিয়া ৩৭ বলে ৪০ রান করেন।
এর আগে, বিশ্বকাপের ফ্ল্যাগশিপ ম্যাচে টস জিতে পাকিস্তানকে ব্যাট করতে পাঠান ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা।
২০তম ওভারের চতুর্থ বলে একটি ছক্কা হাঁকান ভারতের ব্যাটার ভিরাট কোহলি, পরে বলটি নো ডাকেন লেগ আম্পায়ার, সেটি নিয়েই কথা বলেন পাকিস্তানের খেলোয়াড়রা
শুরুতে অধিনায়ক বাবর আজমকে আউট করে পাকিস্তানকে চাপে ফেলে ভারত। শূন্য রানে বাবরকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন আর্শদীপ সিং।
প্রথম ওভারে দলীয় ১ রানের পর দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলেই আউট হন ওপেনার বাবর। রিভিউ নিলেও রক্ষা পাননি তিনি।
দলীয় ১৫ রানের মাথায় দ্বিতীয় উইকেট হারায় পাকিস্তান। আর্শদীপের বলে বাউন্ডারি মারতে গিয়ে ভুবনেশ্বর কুমারকে ক্যাচ দেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। ১২ বলে ৪ রান করেন তিনি।
দুই সেরা ব্যাটারকে হারিয়ে রানের চাকা ধীরগতির হয়ে পড়ে পাকিস্তানের। ১০ ওভার শেষে তাদের সংগ্রহ ছিল ২ উইকেটে ৬০।
চাপের মুহূর্তে উইকেট থেকে দলকে টেনে তোলার চেষ্টা করেন শান মাসুদ ও ইফতিখার আহমেদ। তাদের ৫০ বলে ৭৬ রান যোগ হয় পাকিস্তানের স্কোরবোর্ডে। দ্বাদশ ওভারে ২১ রান নিয়ে ১২ ওভারে স্কোর যখন ২ ওভারে ছিল ৯১ রান, তখন বড় স্কোরের প্রত্যাশায় ছিল পাকিস্তান।
তবে এরপরই ছন্দপতন। ইফতিখারকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে বিদায় করেন মোহাম্মদ শামি। তার ব্যাট থেকে ৩৪ বলে ৫১ আসে রান।
ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ মানেই উত্তেজনা। সেই উত্তেজনার পারদ বোঝা যায় স্টেডিয়ামে দর্শক দেখলেই। ছবি: এএফপি
এরপর একাই দলের হাল ধরেন চোটের কারণে দল থেকে বাদ পড়ার শঙ্কায় থাকা শান মাসুদ। তার ব্যাট থেকে আসে ৪২ বলে ৫২ রান। অপরাজিত এই ব্যাটার ৫টি চারের মার মারেন। কিন্তু অন্য কোনো ব্যাটারের কাছ থেকে পাননি প্রত্যাশিত সহায়তা।
শাদাব খান, হায়দায় আলি, মোহাম্মদ নাওয়াজ কেউই স্পর্শ করতে পারেননি দুই অঙ্কের ঘর। শেষ দিকে মারকুটে ব্যাটিংয়ে শাহিন শাহ আফ্রিদির ব্যাট থেকে আসে ৮ বলে ১৬ রান। এ ছাড়া অপরাজিত আরেক ব্যাটার হারিস রউফের ব্যাট থেকে আসে ৪ বলে ৬ রান।
ভারতের হয়ে হার্দিক পান্ডিয়া ও আর্শদীপ সিং নেন ৩টি করে উইকেট এবং মোহাম্মদ শামি ও ভুবনেশ্বর কুমার নেন একটি করে উইকেট।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে পাকিস্তানের মতোই শুরুতে উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে ভারত। দ্বিতীয় ওভারের শেষ বলে ওপেনার ব্যাটার লোকেশ রাহুলের উইকেট তুলে নেন নাসিম শাহ। রাহুল ৮ বলে ৪ রান করে আউট হন।
ভারত দলের অধিনায়ক রোহিত শর্মার ব্যাট আলো ছড়াতে পারেনি এদিন। তার ব্যাট থেকে আসে ৭ বলে ৪ রান। সুরিয়াকুমার ইয়াদভ ১০ বলে ১৫ আর আক্সার প্যাটেল ৩ বলে ২ রান করে রানআউট হওয়ার পর ভারতের ম্যাচ থেকে ছিটকে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়।
৬ দশমিক ১ ওভারে যখন কোহলি আর পান্ডিয়া জুটি বাঁধেন তখন আস্কিং রেট ছিল ৯ দশমিক ৫৫। এরপরের পুরোটাই পান্ডিয়ার সহায়তায় কোহলির কৌশলগত ব্যাটিংয়ের জাদু।
পাকিস্তানের আক্রমণ সয়ে কাউন্টার অ্যাটাকের অপেক্ষায় থাকা কোহলি বিধ্বংসী রূপ ধারণ করেন ১৯তম ওভারে। হারিস রাউফের করা ওই ওভারের শেষ দুই বলে ২ ছক্কা হাঁকিয়ে ম্যাচকে ভারতের নাগালের মধ্যে এনে দেন তিনি।
শেষ ওভারের নাটকীয়তা শেষে জয়ের স্বাদ পায় ভারত।
পাকিস্তানের হয়ে হারিস রাউফ নেন ২ উইকেট, নাসিম শাহ নেন একটি উইকেট।