বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শুরুটা জাম্বুরা দিয়ে ফুটবল খেলে

  •    
  • ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০৮:২৯

আনাই-আনুচিংয়ের বাবা রাপ্রু মগ বলেন, ‘একটা সময় অভাব-অনটনের সংসারে মেয়েদের ঠিকমতো খাবার ও পড়ালেখার খরচ বহন করতে হিমশিম খেতে হতো। ছোটবেলা থেকেই দুই বোনের ফুটবল খেলার প্রতি আগ্রহ।’

খাগড়াছড়ি সদরের পেরাছড়া ইউনিয়নের সাতভাইয়াপাড়া গ্রাম। এখানে জন্ম বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের খেলোয়াড় আনাই মগিনী ও আনুচিং মগিনীর।

শহরের অদূরে হলেও সাতভাইয়াপাড়া বিচ্ছিন্ন একটি গ্রাম। তবে গত কয়েক বছর ধরে আনাই আনুচিংয়ের গ্রাম হিসেবে লোকে এটিকে চিনতে শুরু করেছে। অথচ এ দুই বোনের শুরুর গল্পটা ছিল তাদের বাড়ির পথের মতোই দুর্গম।

সোমবার সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ নারী ফুটবল টুর্নামেন্টে শিরোপাজয়ী বাংলাদেশ দলের অন্যতম দুই খেলোয়াড় আনাই ও আনুচিং নেপালে অবস্থান করলেও তাদের বাড়িতে ও আশপাশে চলছে আনন্দের জোয়ার। গ্রামবাসী অপেক্ষা করে আছে তাদের বরণে।

মঙ্গলবার নিউজবাংলাকে আনাই-আনুচিংয়ের বাবা রাপ্রু মগ বলেন, ‘একটা সময় অভাব-অনটনের সংসারে মেয়েদের ঠিকমতো খাবার ও পড়ালেখার খরচ বহন করতে হিমশিম খেতে হতো। ছোটবেলা থেকেই দুই বোনের ফুটবল খেলার প্রতি আগ্রহ। বাড়ির উঠানে জাম্বুরা দিয়ে ফুটবল বানিয়ে খেলত। দেখে অনেক সময় বকা দিতাম।

‘একসময় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্টের প্রতিযোগিতা চালু হয়। সেখানে তাদের খেলতে নিয়ে যান বিদ্যালয়ের শিক্ষক। টুর্নামেন্ট শেষে তাদের আগ্রহ দেখে রাঙ্গামাটির ঘাগড়ায় নিয়ে যান আরেক ক্রীড়া শিক্ষক। তার তত্ত্বাবধানে সেখানে ফুটবল খেলার নানা নিয়ম রপ্ত করে দুই বোন।

‘এখন আমার মেয়েরা দেশের জন্য খেলছে, এটার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই। কারণ উনি যদি মেয়েদের জন্য খেলাধুলার ব্যবস্থা না করতেন, তাহলে আজ এ সুযোগ পেতাম না।’

২০১৮ সালে নেপালের মাটিতে প্রথম জয় ছিনিয়ে এনে দেশবাসীর কাছে পরিচিতি লাভ করে খাগড়াছড়ির মেয়ে আনাই, আনুচিং ও মনিকার। তাদের ফুটবল খেলার নিপুণতায় মুগ্ধ হয়েছিল পুরো দেশ। খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ সে সময় তিন খেলোয়াড়ের পাশে দাঁড়ায়। ঘর ছাড়া বাকি সব কিছু কেবলই প্রতিশ্রুতি রয়ে গেছে।

এ নিয়ে আক্ষেপ করে আনাই আনুচিংয়ের মা আপ্রুমা মগিনী বলেন, ‘পার্বত্য জেলা পরিষদ থেকে বাড়ির পাশের ছড়ার ওপর একটি কালভার্ট করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি ছিল। চার বছরেও এটি হয়নি। খেলাধুলা করে আনা মেয়েদের আয়ে এখন সংসার চলে। অনেক প্রতিশ্রুতি আছে, তা বাস্তবায়ন হলে আমাদের জীবন আরও পাল্টে যাবে।’

খাগড়াছড়ির সবচেয়ে দুর্গম উপজেলা লক্ষ্মীছড়ির সুমন্তপাড়ার মেয়ে মনিকা চাকমা। ভৌগোলিক দুর্গমতাকে পেছনে ফেলে মনিকাও রচনা করেছেন নিজের গল্প।

আনাই আনুচিংদের মতো প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ফুটবল টুর্নামেন্ট থেকে উঠে এসে বিশ্ববাসীর কাছে নিজেকে তুলে ধরেছেন মনিকা। অসচ্ছল পরিবারের মেয়ে মনিকা পরিবারের পক্ষ থেকে উৎসাহ পেয়েছেন। ফলে রাঙ্গামাটির ঘাগড়া ফুটবল অ্যাকাডেমি থেকে নিজেকে তিনি পৌঁছে দিয়েছেন বিশ্বদরবারে।

মনিকা চাকমার গ্রামের বাড়ি সুমন্তপাড়ার বাড়িতে গিয়ে আত্মীয়-স্বজনদের দেখা পাওয়া না গেলেও স্থানীয়দের মাঝে তাকে নিয়ে বেশ উল্লাস চলছে। বিদ্যুৎ ও ভালো ইন্টারনেট ব্যবস্থা না থাকায় রাতে খেলা দেখতে না পেলেও দিনের বেলায় অনেকে মোবাইল ফোনে খেলা দেখেছেন। নিজেদের গ্রামের মেয়ের এমন সফলতায় আনন্দে আত্মহারা পুরো উপজেলাবাসী। খুশিতে মিষ্টি বিতরণও চলে।

খাগড়াছড়ির তিন খেলোয়াড় ও জাতীয় দলের সহকারী কোচ তৃষ্ণা চাকমাকে তাৎক্ষণিক ১ লাখ টাকা করে ৪ লাখ টাকার অর্থ উপহারের ঘোষণা দিয়েছেন খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস। সোমবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিয়ে তিনি এ তথ্য জানান।

এ বিভাগের আরো খবর